ডিপ্রেশন হলে কি কি সমস্যা হয়

Spread the love

ডিপ্রেশন, এই শব্দটা এখন সবার কাছে এখন অতি পরিচিত শব্দ। ডিপ্রেশনের বাংলা অর্থ হল বিষণ্ণতা। সাধারণত মন খারাপ কেই অনেকে ডিপ্রেশন বলে থাকেন। কিন্তু শুধু মন খারাপ থাকলেই কী তাকে ডিপ্রেশন বলা যায়?

বাংলাদেশের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে ঢাকা পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে শিশু কিশোরদের আঠার শতাংশের বেশি বিষণ্ণতায় আক্রান্ত।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ধারণা ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বে আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে বড় সংকটের তৈরি করতে যাচ্ছে এই বিষণ্ণতা।

গবেষক ও চিকিৎসকরা মনে করে সাধারণভাবে প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন তার জীবদ্দশায় কখনো না কখনো বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন বা হতে পারেন।

বিষণ্ণতা আসলে কি?

বিষণ্ণতাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ শুরুতেই এর প্রতি যথাযথ দৃষ্টি না দিলে এ থেকে গুরুতর সমস্যা তৈরি হতে পারে।

মনঃচিকিৎসকরা বলছেন বিষণ্ণতায় আক্রান্তদের মধ্যে পনের শতাংশের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা তৈরি হয়ে থাকে। তবে বিষণ্ণতা বলতে অনেকে মন খারাপকে বুঝে থাকেন।

মনোবিদরা বলেছেন বিষণ্ণতা মানুষের মনের একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। একজন মানুষের কোনো বিষয়ে প্রত্যাশা পূরণ না হওয়া বা এ ধরণের নানা কারণে মন বিষণ্ণ হতেই পারে।

“কিন্তু যখনি এটা রোগ হবে সেটা একটু ভিন্ন। বিষণ্ণতা হতে পারে বিভিন্ন মাত্রা কিংবা গভীরতায়। মনে রাখতে হবে টানা দুই সপ্তাহ মন খারাপ থাকা বা আগে যেসব কাজে আনন্দ লাগতো সেসব স্বাভাবিক কাজগুলোতে আনন্দ না পাওয়ার মতো হলে এটিকে বিষণ্ণতার লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।”

বিষণ্ণতার লক্ষ্মণগুলো কী কী? কিভাবে বুঝবেন আপনার বিষণ্ণতা

আমেরিকান সাইক্রিয়াটিক এসোসিয়েশন বিষণ্ণতার নয়টি লক্ষ্মণ উল্লেখ করে বলেছে কারও মধ্যে এর মধ্যে অন্তত পাঁচটি টানা দু সপ্তাহ বা তারচেয়ে বেশি সময় দেখা গেলে সেটি বিষণ্ণতা হতে পারে।

আমাদের শরীরের হরমোনের প্রভাবই এর মূল কারণ। আমাদের জীবনের সমস্ত দুঃখ, কষ্ট, আনন্দ নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের মস্তিস্ক থেকে নিঃসৃত সেরাটোনিন, ডোপামিন, নর-এপিনেফ্রিন নামের হরমোন গুলো। যদি কোনো কারণে কারো এই হরমোনের নিঃসরণ ঠিকঠাক না হয় তাহলেই যত উৎপাতের শুরু।

তবে শরীরে সেরাটোনিন, ডোপামিন, নর-এপিনেফ্রিন নামক হরমোনদের ক্ষরণ কমই সব মনের রোগের গোড়ার কথা তা আমরা শুনতেই চাইনা। তার আবার চিকিৎসা! সাইক্রিয়াটিস্ট এর  কাছে যেতে হবে শুনলেই প্রথমে যেটা মনে আসে সেটা দুর বাবা ওতো পাগলের ডাক্তার। আমি কি পাগল? অথচ সারাদিন চুপচাপ থাকি, কারও সাথে কথা বলতে ভালো লাগেনা, মনে হয় যেন আমার কেউ নেই, আমায় কেউ ভালোবাসে না। কিন্তু চিকিৎসার কথা উঠলেই; আর যাইহোক আমিতো পাগল নই। কেন সাইক্রিয়াটিষ্টের কাছে যাব? মেন্টাল ডিসওর্ডার ওসব বড়লোকের রোগ।

আরও পড়ুন

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির ঔষধ বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় কি ? বিস্তারিত জানতেভিজিট করুন

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির আমল বিস্তারিত জানতে – ভিজিট করুন

নিম্নে ১৩টি লক্ষ্মণ তুলে ধরা হলো

  •  দিনের বেশির ভাগ সময় মন খারাপ থাকা।
  • যেসব কাজে আনন্দ পেতো সেসব কাজে আনন্দ ও আগ্রহ কমে যাওয়া।
  •  ঘুম অস্বাভাবিক কম বা বাড়তে পারে।
  •  খাবারে অরুচি তৈরি হওয়া বা রুচি বেড়ে যাওয়া।
  •  ওজন কমে যাওয়া।
  •  কাজে ও চিন্তায় ধীরগতি হয়ে যাওয়া।
  •  নিজেকে নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা করা বা নিজেকে দায়ী মনে হওয়া সবকিছুতে।
  •  সিদ্ধান্তহীনতা বা মনোযোগ কমে যাওয়া এবং খুব তীব্র হলে আত্মহত্যার চিন্তা পরিকল্পনা ও চেষ্টা করে।
  • যদি দেখেন কারো কাজকর্মে আগের মতো উৎসাহ নেই। তার সঙ্গের সবাই আনন্দ করছে কিন্তু তার মাঝে সে ভাবছে সে একা।
  •  খুব সামান্য কারণে খুব উত্তেজিত হয়ে পড়া, আবার বিরাট কিছু ঘটে গেলেও কোনো অনুভুতি না আসা।
  • সব কিছুতেই ক্লান্তি বোধ করা।
  •  কাজ কর্মে মনসংযোগ নেই। সবসময় সিদ্ধান্ত না নিতে পারার গ্লানিতে ভোগা।
  •  কারো ভালো কিছু হচ্ছে দেখলে নিজের মধ্যে হিংসে জাগে, ইচ্ছে হয় সব নষ্ট করে ফেলি।

এছাড়াও মনোবিদরা বলছেন, বিষণ্ণতার প্রতিক্রিয়া দুভাবে হতে পারে যেমন ঘুমের সমস্যার ক্ষেত্রে কারও ঘুম কমে যেতে পারে আবার কারও ঘুম বেড়েও যেতে পারে, আবার কারও ছাড়াছাড়া ঘুম হতে পারে।

“আবার দেখা যাচ্ছে ঘুম হচ্ছে কিন্তু ঘুম থেকে যে শক্তি আসার কথা শরীরে তা না এসে উল্টো ক্লান্তি অনুভূত হচ্ছে। সেটিও বিষণ্ণতার লক্ষ্মণ হতে পারে।”

আবার অনেকের ক্ষেত্রে খাবারের স্বাদে পরিবর্তন হয়। ফলে খাবার বেড়েও যেতে পারে, তেমনি আবার কমেও যেতে পারে কিন্তু সব মিলিয়ে শরীরের ওজন কমে যায় অনেকের ক্ষেত্রে। কেউবা আবার মুটিয়ে যায়।

এর বাইরেও কিছু লক্ষ্মণের কথা চিকিৎসকরা বলে থাকেন যার মধ্যে রয়েছে- নানা ধরণের শারীরিক উপসর্গ দেখা দেয়া, হাত পা জ্বালা পোড়া করা, কান দিয়ে গরম ধোয়া বের হওয়ার অনুভূতি কিংবা ভীষণ মাথা ধরা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য।

শেষ কথা

ডিপ্রেশন আবার মাত্রা হিসেবে আলাদা। স্বল্পমাত্রার ডিপ্রেশনের রোগীরা মনের কষ্ট নিয়েও স্বাভাবিক কাজ কর্ম চালিয়ে যেতে পারে। আপনি পাশে থেকেও বুঝতে পারবেন না পাশের লোকটি এই রোগে আক্রান্ত।

তবে যদি অবসাদের মাত্রা বাড়ে বিশেষ করে যেখানে নিয়মিত টার্গেট, ডেডলাইন, কম্পিটিশন ইত্যাদি সময় মতো সম্পন্ন করার চাপ থাকে সব সময় ভয় থাকে আপনি পিছিয়ে যাবেন প্রতিযোগিতা থেকে; ভোকাট্টা হবে নাতো চাকরিটা। তেমন পেশার মানুষরা এই রোগে আক্রান্ত হলে পেশাদারি চিকিৎসা ছাড়া মুক্তি অসম্ভব। তাই সঠিক সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া খুব জরুরি।