সঞ্চয় মূলত কি এটা আগে আমাদের বুঝতে হবে।সঞ্চয় বাংলা শব্দ , যার আরো অর্থ রয়েছে। পুঁজি,জমা,আহরন বা অর্থসংস্থান। প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় খরচ আমাদের বেশ। যেন প্রতিদিনই নিত্যনতুন খরচ বেড়েই চলছে। এ সময়টা বাড়তি কিছু যদি পাশে রাখা যায় সেটা দিনশেষে আমাদের জন্য অনেক বড় একটা পাওয়া ।
নিত্যদিনে প্রয়োজনীয় খরচ করার পর যেটা বাকি থাকে আমরা সেটাকে সঞ্চয় করে রাখতে পারি।অর্থাৎ কোন ব্যক্তি তার পরিবারের উপর খরচ করে যেমন বাজার-ঘাট করা, দোকান বা বাড়ি ভাড়া, সন্তানের উপর স্কুল বা কলেজের বেতন বাবদ খরচ শেষ করে যেটা আমাদের বেচে যায়,সেই পরিমান টা জমিয়ে রাখাকেই সঞ্চয় বলে। কিছু বিষয় খেয়াল করে জমালে আমাদের জন্য সুবিধা হবে।
খরচ বাবদ:
সঞ্চয়ের পূর্বে দৈনিক খরচের কিছু তালিকা করা। ব্যক্তিগত খরচ হোক অথবা সাংসারিক প্রয়োজনের তালিকা করে নিলে খরচ করার পর সঞ্চয় সহজ হবে। যার দ্বারা প্রয়োজন বাদ যাওয়ার সুযোগ কম থাকে।
বাজেট খেয়াল রাখা :
আপনার খরচের তালিকা নির্ভর করবে আপনার বাজেটের উপর। সঞ্চয় করার উদ্দেশ্যে আপনি আপনার বাজেটটা ঠিক রাখতে পারেন। যেমন (যেকোন প্রয়োজন চলতি মাসে দরকার না হলে সেটা রেখে দিতে পারেন পরবর্তী মাসের জন্য)। প্রতি মাসের বাজেটের ভেতর আপনার জরুরি প্রয়োজনের জন্য অবশ্যই কিছু অর্থ রাখা।
সঞ্চয় এর জন্য ব্যয় কম করা :
১.কিছু কেনার পর বিল পরিশোধের সময় নগদ পরিশোধ করার চেষ্টা করুন। কার্ড অথবা বিকাশের মাধ্যমে নয়। তবে আপনার ব্যয় করার নিদিষ্ট টার্গেট রাখতে সক্ষম হবেন।
২. খরচ লেখার জন্য একটা ডাইরি নির্বাচন করুন যাতে সবকিছু আপনি সেখানে লিখে রাখতে পারেন।
৩.বাজেটের উপর লক্ষ্য রেখে কেনাকাটা করুন।
সঞ্চয় করার পদ্ধতি :
সঞ্চয় করার জন্য সবথেকে বড় জিনিস হচ্ছে আপনার ইচ্ছা শক্তি। বহু বহু আগে থেকেই মানুষ তার প্রয়োজনীয় জিনিস কেনার পর জমিয়ে থাকা অর্থকে বিভিন্নভাবে সংরক্ষণ করে আসছে বা সঞ্চয় করছে। প্রাচীনকালের কথা যদি বলে থাকি, তাহলে সেসময়ের মানুষ তার মূল্যবান সম্পদ বা সঞ্চয়কে কোন পাত্রের ভিতর সিল করে লোকালয়ের অগোচরে মাটির নিচে পুতে রাখত।অথবা আমানত হিসাবে কারো কাছে জমা করত।
বর্তমান সময়ের ডিজিটাল যুগে মানুষের হাতের কাছে বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে তার মূল্যবান সঞ্চয়কে সংরক্ষণ করার জন্য। সব থেকে কাছের যদি বলতে পারি তাহলে হাতের মুঠোফোনে রয়েছে বিকাশ,নগদ ও আরো অনেক নতুন উপায়। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ব্যাংক, বীমা বা বিভিন্ন পলিসি। যেখানে আপনি আপনার সুযোগ সুবিধা পেয়ে যাবেন।এ ছাড়া আগে থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে মাটির ব্যাংক, যেখানেও আপনি আপনার প্রতিদিনের জমানো থেকে সঞ্চয় করে ঘরেই রেখে দিতে পারেন।
সঞ্চয় এর উপকারিতা:
জীবনে একটা সময় পর সবাই অর্থ উপার্জন করার প্রতি ধাবিত হয়। কিন্তু সঞ্চয় জিনিসটা সবার ভিতর থাকে না। সঞ্চয় আপনাকে আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করবে। সঞ্চয় হচ্ছে আপনার বিপদে বন্ধু। বিপদের সময় কাছের একজন বন্ধুর মাধ্যমে সাহায্য না পেলেও,সঞ্চয় থাকলে সেই আপনাকে বন্ধুরূপে কাজে দিবে ।
সঞ্চয়ের অনেক উপকার ছোটকালের মা ও দাদিকে দেখেছি প্রত্যেক বেলার চালের পাতিল থেকে এক মুঠ করে চাল অন্য কোন পাত্র রেখে দিতেন। যার দ্বারা কখনো মাসের শেষে চাল আনতে দেরি হলে সেটা কাজে লাগাতেন অথবা অন্য কোন সময়, কাজে লাগতো। ছাত্র জীবনে যদি আপনি কিছু সঞ্চয় করে রাখতে পারেন যেটা কর্মজীবনের শুরুতে চাকরি অথবা ব্যবসা ইনভেস্ট করতে পারেন। এছাড়া সংসার জীবনে মাস শেষে কিছুটা জমা রাখলে বিপদ আপদে কাজে দিবে।
ছাত্র বয়সের সঞ্চয় :
একজন ছাত্র হিসেবে অর্থ সঞ্চয় করা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে তবুও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে করা অপরিহার্য। প্রতিদিনের খরচ থেকে ব্যয়ে কম করে সঞ্চয় করা যেমন ধরেন আপনি আপনার খাবারকে ঘরে রান্না করা শুরু করুন,অনলাইন অথবা বিভিন্ন বইয়ের মাধ্যমে রেসিপিগুলোকে সংগ্রহ করুন। বাহির থেকে অর্ডার করা অথবা খেয়ে আসা থেকে খরচ কম হবে।
খুব কাছাকাছি এমন কোন জায়গায় চেষ্টা করুন হেটে যাওয়ার।কিছু কেনার ক্ষেত্রে স্টুডেন্ট বাজেট অথবা ডিসকাউন্ট ফলো করুন। বিভিন্ন বইয়ের স্টল অথবা অনলাইন পেজগুলোতে আপনি ডিসকাউন্ট পাবেন। বর্তমান সময় প্রাতিষ্ঠানিক স্টুডেন্ট কার্ড ব্যবহারে আপনি আপনার বাসে ভাড়া কে সাশ্রয় করতে পারবেন। প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনকে মাথায় রাখুন অতিরিক্ত থেকে বিরত থাকুন।
পড়ালেখার পাশাপাশি যেগুলো করলে আপনি আয় করতে পারবেন আবার আপনার পড়ালেখা কোন অসুবিধা হবে না।
১.মার্কেটপ্লেসে আইডি খুলে বায়ার থেকে কাজ নিতে পারেন। (তবে ব্যাপারটা অতটা সহজ নয়)
২.ইউটিউব চ্যানেল খুলতে পারেন । (যখন ইচ্ছা কনটেন্ট বানাতে পারেন)
৩.ফেসবুকের মাধ্যমে আপনি ব্লক করতে পারেন।
৪.সব থেকে ভালো হয় টিউশনি করলে।
এভাবে আপনি আপনার ছাত্র জীবনের যদি পড়ালেখার পাশাপাশি কিছু করতে পারেন তাহলে আপনার পরিবার থেকে যে সাপোর্টটা পাচ্ছেন সেটার পাশাপাশি আপনার ইনকাম করা অর্থ সঞ্চয় করাতে সহজ হবে। ছাত্র জীবন থেকে কিছুটা হলো আর্ন করতে পারলে আপনার জীবনের সঞ্চয় করাটা সহজ হবে।
কর্ম জীবনের সঞ্চয় :
ছাত্র জীবন শেষ করার পর আপনার কর্মজীবন শুরুতে চাকরি হোক বা ব্যবসা হোক সাংসারিক জীবনের আগে আপনি আপনার ব্যয়কে তালিকাবদ্ধ করে দৈনিক, সাপ্তাহিক অথবা মাসিক সঞ্চয় করতে চেষ্টা করুন। এছাড়া মাসিক বীনা করে রাখতে পারেন,যার দ্বারা নিদিষ্ট একটা এমাউন্ট জমা হবে। যেটা আপনার ভবিষ্যৎ পরবর্তী সাংসারিক জীবনের শুরুতে কাজে দিবে।
সংসার জীবনের সঞ্চয় :
সংসার জীবনের সমস্ত ব্যয় কে মাসিক হিসেবে তালিকাভুক্ত করার চেষ্টা করুন। যারদ্বারা প্রয়োজনীয় জিনিস একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে হিসাব রাখতে পারবেন,যে মাসে আপনার কোন জিনিস কতটুকু দরকার পড়ে।
অবসর জীবনের সঞ্চয় :
অবসর জীবনের সঞ্চয়টা মূলত নির্ভর করে আপনার পূর্ববর্তী ছাত্র এবং সংসার জীবনের সঞ্চয় করার অভ্যাস এর উপর। আপনি যদি পূর্বে থেকে সঞ্চয় করা অভ্যস্ত হন তাহলে অবসরকালেও আপনি আপনার পুঁজি থেকে খরচের পরও কিছু অবশিষ্ট রাখতে সক্ষম হবেন।
ইসলামের দৃষ্টিতে সঞ্জয় :
অর্থ প্রাচুর্যের সময় খরচের অপব্যয়ে মেতে না উঠে হারাম খরচ সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে মিতব্যয়িতার পথ অবলম্বন করে উদ্বৃত্ত অর্থ ভবিষ্যতের জন্য রেখেই উত্তম কাজ।ভাইয়া সৎ পথে উপার্জন করে মিতব্যায় হওয়ার পর ভবিষ্যতে নিজের স্ত্রী ও সন্তানাদিনের জন্য হালাল অর্থ রেখে যাওয়া। ইসলামে নির্দেশিত আছে সন্তানদের জন্য কিছু রেখে যাওয়া। সন্তানদেরকে কারো মুখাপেক্ষী রেখে যাওয়া নবীজি পছন্দ করতেন না । হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ফরজ ইবাদাতের পরে হালাল রুজির সন্ধান করাও ফরজ। (বাইহাকী, শোআবুল ঈমান)
মোটকথা জীবন চলার পথে সঞ্চয় আমাদের এক প্রকার হাতিয়ার। যেটা প্রয়োজন অথবা বিপদের সময় আমরা বুঝতে পারবো।
অসাধারণ কন্টেন্ট।ধন্যবাদ আপনাকে।