জীবনে অনেক স্বপ্ন থাকে। এই স্বপ্নগুলো পূরণ করতে হলে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়। কখনো কখনো নিরন্তর চেষ্টার পরও স্বপ্ন পূরণ হয় না। জীবনে অনেক সময় ব্যর্থতা আসবে। ব্যর্থতায় হতাশ হয়ে পড়লে চলবে না। ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আবার চেষ্টা করতে হবে। সত্যিকারের লড়াকু তারাই যারা সহস্র বিপদ-আপদ বালা-মুসিবত ডিঙ্গীয়ে জীবনের কাছে হার মানে না, লক্ষ্যপানে সে এগিয়ে যায়। যারা জীবনের কঠিন বাধাগুলোকে অতিক্রম করে লক্ষ্যে পৌঁছায়, তারাই সত্যিকারের লড়াকু। এই লড়াকুরা কখনো জীবনের কাছে হার মানে না। তারাই পারে স্বপ্ন পূরণ করতে।সময় খুবই সীমিত, কাজেই সেটা অপচয় করার কোনো মানে হয় না। স্বপ্নগুলোকে সত্যি করতে সহজ কিছু ধাপ অনুসরণ করে কাজ করতে হবে ।
বাস্তববাদী স্বপ্ন নির্ধারণ:
জীবনে সফল হতে হলে স্বপ্ন নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই স্বপ্ন নির্ধারণ করতে হবে বাস্তবসম্মতভাবে। অনেক সময় আমরা আমাদের বর্তমান পরিস্থিতির বাইরে অনেক বেশি স্বপ্ন দেখি। এই স্বপ্নগুলো অর্জন করা আমাদের জন্য অসম্ভব। ফলে আমরা এই স্বপ্নগুলোকে পরিত্যাগ করে দিই। এই স্বপ্নের অপমৃত্য ঘটে।
স্বপ্ন অর্জনের উপযুক্ত পরিকল্পনা ও কৌশল নির্ধারণ:
বাস্তববাদী স্বপ্ন নির্ধারণ করার পর সেই স্বপ্ন অর্জনের জন্য একটি কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। এই কৌশলটি এমন হতে হবে যা স্বপ্ন অর্জনের পথে সহায়ক হবে। এই কৌশলটি বাস্তবায়নের জন্য ধৈর্য ও নিরালস পরিশ্রম অপরিহার্য।
ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়া:
স্বপ্ন অর্জনের জন্য ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়া জরুরি। একবারে অনেক কিছু অর্জন করার চেষ্টা করলে তা কখনো সম্ভব হয় না। তাই স্বপ্নকে ছোট ছোট লক্ষ্যে ভাগ করে নিতে হবে। এই লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে। এই সময়সীমার মধ্যে এই লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে হবে।
আত্মবিশ্বাস ধরে রাখা:
আত্মবিশ্বাস অভিজ্ঞান এবং সহানুভূতি উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। নিজেকে পজিটিভ ভাবে দেখতে হলে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ।
ইতিবাচক চিন্তা:
স্বপ্ন পূরণে সবসময় ইতিবাচক চিন্তা থাকা উচিত। যদি ভালো চিন্তা করি তাহলে ভালোই হবে। এর পেছনের কারণ হলো যেভাবে চিন্তা করা হয় কাজের উপর তার প্রভাব ফেলে এবং এর সাফল্য ও ব্যর্থতা নিশ্চিত হয়। উভয় দিক ভালোভাবে বুঝে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং গৃহীত সিদ্ধান্তের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব অবলম্বন করে সাফল্যের আশাও রাখতে হবে, যাতে সাফল্যের কাছাকাছি যেতে পারা যায়।
স্বপ্ন বাস্তবানের পরিবর্তনশীল কৌশল:
স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে বারবার ব্যর্থতার সম্মুখীন হলে পথটি ভুল কিনা তা বিবেচনা করতে হবে অর্থাৎ যে কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে সেগুলো কি ভুল এবং সে কারণেই স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না। অতএব, এটি গুরুত্বপূর্ণ যে সময় সাপেক্ষে কৌশলটি পরীক্ষা করা প্রয়োজন। এতে পরিবর্তন আনা অর্থা্ৎ কৌশল এ ব্যর্থ হলে কৌশল বি পথ অবলম্বন করা।
ধৈর্য্য ধারন করা:
স্বপ্ন বাস্তবায়নের সময় প্রথম প্রচেষ্টায় সফল্য পায়ে চুম্বন করবে এমন তো নয়, ব্যর্থতা আসতে পারে। অতএব, এটি গুরুত্বপূর্ণ যে উভয় পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে এবং ধৈর্যের সাথে কৌশল তৈরি করে সেই অনুযায়ী এগিয়ে যেতে হবে। এভাবে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে গেলে অবশ্যই সফলতা হাতে এসে ধরা দেবে। একটি ব্যর্থতার কারণে হতাশ হয়ে কখনই সফল হওয়া যাবে না। অতএব, ধৈর্য ধরে এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
ভুল থেকে শেখা:
স্বপ্ন বাস্তবায়নের যেকোনো পদক্ষেপই যেকোনো সময় ভুল হতে পারে এবং স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে এক পা বা কয়েক পা পিছিয়ে যেতে হতে পারে, তার মানে মোটেও এটা নয় যে হার মানতে হবে। এখানে দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। এই ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে এবং হতাশ না হয়ে স্বপ্নের পথে এগিয়ে যেতে হবে। একটি ছোট ব্যর্থতা পিছিয়ে যাওয়ার অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করা কখনো উচিৎ না।
অন্যের সাফল্য থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়া:
যখন কারো সাফল্য সম্পর্কে জানা যায়, তখন তার কাছ থেকে অনুপ্রেরণা নেওয়া এবং কীভাবে সাফল্য অর্জন করা যায় সেটা জানার চেষ্টা করা।একজন সফল ব্যক্তির নেতিবাচক বিষয়গুলোর দিকে না তাকিয়ে তার ইতিবাচক বিষয়গুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। কীভাবে সেই ব্যক্তি তার স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়িত করেছে তার খুটিনাটি বিশ্লেষণ করা।
কিছু উদাহরণ দেখা যায়, যারা প্রথম প্রচেষ্টায় সফলতা না পেলেও সাহস হারায়নি এবং নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়েছে। ফলে সাফলতা তার হাতে ধরা দিয়েছে। তাদের মধ্যে একজন হলেন ড. গৌরাঙ্গ চন্দ্র দেবনাথ, একজন সত্যিকারের লড়াকু। তিনি এইচএসসি পরীক্ষায় পরপর দুইবার ফেল করেন। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। তিনি আবার চেষ্টা করেন এবং তৃতীয়বার ১৯৯৯ সালে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড এ প্রথম স্থান অধিকার করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। বর্তমানে তিনি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
ভয়কে জয় করা:
স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করার জন্য, যখন লক্ষ্য অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়, প্রথমে ভয় অনুভুত হয় যে গৃহীত পদক্ষেপসমূহের মাধ্যমে সফল হবো তো! স্বপ্ন ভেঙ্গে যেতে পারে এই ভয়ে স্বপ্ন দেখা বন্ধ না করে, ভয় পাওয়া বন্ধ করে স্বপ্ন পূরণের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাওয়া তাহলে ভয়ও ধীরে ধীরে কমবে এবং ভয়কে করতে পারব জয়।
সিদ্ধান্তের উপর বিশ্বাস রাখা:
স্বপ্ন পূরণে গৃহিত পদক্ষেপের উপর দৃঢ় সংকল্প এবং আত্মবিশ্বাস স্থাপন করা যাতে সফলতা পাওয়া যায়। অনেক সময় শুরুতেই অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয় এবং প্রাথমিক ব্যর্থতার সম্মুখীন হতে হয়, তবে এই সময়ে দৃঢ় সংকল্প মনে রাখা এবং এতে বিশ্বাস বজায় রাখা অবশ্যই সাফল্য এনে দেবে। এর জন্য মৌলিক মন্ত্রটি মনে রাখতে হবে- “সংকল্প + বিশ্বাস = সাফল্য”
ঝুঁকি নেওয়া সাহস:
জীবনে সফল হতে হলে স্বপ্ন পূরণ করতে হয়। কিন্তু স্বপ্ন পূরণের জন্য অনেক কষ্ট এবং ঝুঁকি নিতে হয়। ঝুঁকি ছাড়া কোনো কিছুই অর্জন করা সম্ভব নয়। তাই স্বপ্ন পূরণের জন্য ঝুঁকি নেওয়া সাহসী কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম।
যারা স্বপ্ন পূরণের জন্য ঝুঁকি নেয়, তারাই সফল হয়। কারণ তারা কখনো থেমে থাকে না। মার্ক জুকারবার্গ একজন সফল ব্যবসায়ী। তিনি ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি তার স্বপ্ন পূরণের জন্য ঝুঁকি নিয়েছিলেন। তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাদ পড়েন এবং ফেসবুক প্রতিষ্ঠা করেন। আজ তিনি বিশ্বের একজন সফল ব্যক্তি।
সময়ের সঠিক ব্যবহার:
সময় হল জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। সময় নষ্ট হলে তা আর ফিরে পাওয়া যায় না। তাই স্বপ্ন পূরণের জন্য সময়ের সঠিক ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সময়ের সঠিক ব্যবহারের উপায়:
- স্বপ্ন নির্ধারণ করা এবং সেই স্বপ্ন অর্জনের জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করা।
- সময়কে ছোট ছোট লক্ষ্যে ভাগ করে নেওয়া।
- প্রতিটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা।
সময়ের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
সুতরাং, যখনই কোনো স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে মন চায় এবং সাফল্য ছুতে ইচ্ছে করে, তখন আপনার উপরোক্ত বিষয়গুলিকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করতে হবে। স্বপ্ন পূরণের পথে অবিচল থাকতে যেমন ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন ঠিক তেমনি যথাপোযুক্ত কর্মপরিকল্পনা নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া জরুরি।
স্বপ্নকে সফলতার রূপ দিতে প্রয়োজন কঠিন পরিশ্রম ও নিরন্তন সাধনা। ব্যর্থতায় হতাশ হয়ে পড়লে চলবে না। ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আবার চেষ্টা করতে হবে। সুতারাং, স্বপ্ন পূরনে সর্বদা তৎপর থাকতে হবে।