বহু প্রচলিত একটি কথা হলো – “পরিশ্রম সৌভাগ্যের চাবিকাঠি”। “সঠিক বয়স সৌভাগ্যের চাবিকাঠি”, এমন কথা আজ পর্যন্ত কোথাও কেউ শুনে নি।
আমরা বয়স বলতে কি বুঝি? কোনো সংখ্যা, নাকি সময়, নাকি অস্তিত্বের কাল? সে যা ই হোক, বয়স কেবলই কিছু সংখ্যা। আর যদি বলি- ক্যারিয়ার কি? ক্যারিয়ার হলো সেই পেশা বা কাজ যা আমাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য করে থাকি।
মানুষের জীবন চালনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে- ক্যারিয়ার। প্রতিটি মানুষের লক্ষ্য ই থাকে তার ক্যারিয়ার গোছানো। আর তার পেছনের উদ্দেশ্য হলো ভালভাবে বাচা। ক্যারিয়ারে সাফল্যের মূল মন্ত্র হলো- নিজেকে নিজের যোগ্যতা অনুসারে সঠিকভাবে প্রকাশ করা। নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা প্রকাশ করার মাধ্যমে এবং নিজের ইচ্ছার শক্তি সাথে কঠোর পরিশ্রম এর মিশ্রণের মাধ্যমে মানুষ ক্যারিয়ারে সফল হতে পারে। মানুষ যে পেশাতেই হোক, সেখানে থেকে হাল ছাড়া যাবে না। সাফল্য অর্জনের ক্ষেত্রে মানুষের মনোবল, সাহস,ইচ্ছাশক্তি, চিন্তা-ভাবনাই হচ্ছে মূল চালিকাশক্তি।
পৃথিবীতে বর্তমান সময় দাঁড়িয়ে আমরা অনেক ধরনের ইতিহাসের সাক্ষী হচ্ছি। এখানে ক্যারিয়ার গড়া, সাফল্য অর্জন করা, লক্ষ্যে পৌঁছানো, এসবের পিছনে বয়স কোন ব্যাপারই না। এমন অনেক মানুষ আছেন যারা কেবলমাত্র ১৮ বছর পেরোতেই নিজের ক্যারিয়ার বৃহৎভাবে তৈরি করে নিজের পথ গড়ে নিয়েছে এবং সফলও হয়েছে। আবার এমনও দেখতে পাই, যাদের বয়স ৫০ এরও বেশি হওয়ার পরেও তারা সাফল্যের সাথে তাদের ক্যারিয়ার গঠন করতে পেরেছে।
ক্যারিয়ারে সাফল্য অর্জনে কি আদৌ বয়সের কোনো ভূমিকা আছে?
সাফল্যের ক্ষেত্রে বয়স কোন বাধা নয় বা বয়স কোনো সহযোগী ও নয়। সাফল্য কখনো বয়সের সংখ্যা দেখে আসেনা। যদি তাই ই হতো তবে, বয়সের কোটার সাথে সব মানুষের সাফল্য অটোম্যাটিক যুক্ত হয়ে যেতো। বয়স তখনই কারো জন্য বাধা হবে যখন, সেই মানুষটি নিজেই তার বয়সকে বাধা মনে করবে। বয়স কোন ভাবেই আমাদের কোন কাজে বাধা দেয় না। যদি কোন কিছু বাধা দিয়েই থাকে তবে সেটি আমাদের চিন্তা ভাবনা, আমাদের ধ্যান ধারণা। আর এই দোষ টি আমরা কখনোই বয়সের উপর চাপিয়ে দিতে পারি না।
ধরুন একজন মাঝ বয়সী মানুষের কথায ই বলি। যদি সেই মানুষটি তার বয়স কম বা বেশি বলে, সব সময় এই ধরনের চিন্তা পোষণ করে যে, সে এখন এই কাজ করতে পারবে না অথবা সে তার ক্যারিয়ারে সাফল্য অর্জন করতে পারবেনা, তবে এটি তার ভুল ধারণা। তার এই ভুল ধারণাই তাকে ধীরে ধীরে পেছনের দিকে ঠেলে নিয়ে যাবে। আর অগ্রগতির দিকে বাধা সৃষ্টি করবে। মানুষ যখন তার বয়স নিয়ে যতটুকু সময় চিন্তা করতে থাকে ঠিক ততটুকু সময় ই ধরতে গেলে সে নষ্ট করে। কিন্তু সে যদি এসব চিন্তা ভাবনা না করে তার ক্যারিয়ার গঠনের দিকে মনোনিবেশ করতো, তবে সে সফল হয়ে যেত।
বয়স কেবল ই অজুহাত মাত্র
আমাদের আশেপাশে এমন অনেক মানুষ আছে যারা বয়সের অজুহাতে জীবন থেকে পিছিয়ে পড়ে আছেন। যখন ই কোনো মানুষের সাফল্য সবার সামনে আসে, তখন অন্যরা মনে করে যে, সে লোক সেই বয়সের আছে বলেই পেরেছেন। আমি সেই বয়সে নেই,তাই পারবো না। তারা সব সময়ই মনে করেন যে, এই কাজটি আমি করতে পারবো না অথবা আমার এই কাজটি করার সময় পেরিয়ে গিয়েছে বা সময় এখনো আসে নি। সেসব মানুষ আরো চিন্তা করে – সে যদি কোন নির্দিষ্ট বয়সের হতো তবে সে কাজটি ঠিকই করতে পারতো। কিন্তু তার এ সকল ধারণাই ভুল। মানুষ চেষ্টা করলে কি না করতে পারে! মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষ পরিশ্রমের দ্বারা যেকোনো কাজই সফল ভাবে করে নিতে পারে। এক্ষেত্রে বয়স কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়।
ক্যারিয়ারে সাফল্যের মূলমন্ত্র কি?
ক্যারিয়ার গঠনের মূল মন্ত্র বয়স, এই কথাটি কেউ কোথাও দেখেনি,শোনেনি। এমনকি কেউই বলতে পারবে না যে, ক্যারিয়ার গঠনের ক্ষেত্রে বয়সের ভূমিকা থাকে। ক্যারিয়ার গঠনে যদি কোন কিছুর ভূমিকা থাকে তবে সেটি হল- সেই মানুষটি ইচ্ছা শক্তি, তার চিন্তা ভাবনা আর তার কঠোর পরিশ্রম। আর এটিই ক্যারিয়ারে সাফল্যের মূলমন্ত্র।
যদি বয়সের কথা চিন্তা করি তবে বলতে পারি যাদের বয়স কম তারা নতুন ধরনের জীবন ধারায় তাদের ক্যারিয়ার গড়ে তুলবে। আর যাদের বয়স বেশি হয়ে গিয়েছে তাদের জীবনে রয়েছে অভিজ্ঞতা নামক একটি বিশাল অধ্যায়। যেখানে, তারা অন্যদের থেকে বেশি অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। তারা পৃথিবীকে আরো বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই জানে। তারা অন্যদের থেকে খুব ভালো মতোই জানে যে, কোন পথটি সুগম এবং কোন পথটি দুর্গম!
বয়সভেদে কিছু সফল মানুষজন
আমাদের চারপাশে খেয়াল করলে দেখা যাবে এমন অনেক মানুষ আছেন, তারা অনেক বয়স হয়েছে সত্ত্বে ও নিজেকে পূনরায় নতুন করে আবিষ্কার করে, নিজের ইচ্ছাশক্তি ও নিজের পরিশ্রাম ব্যয় করে একটা প্রতিষ্ঠীত জায়গায় নিজেকে নিয়ে যেতে পেরেছে। আবার কম বয়সী মানুষেরাও নতুন উদ্দীপনায় সফল হয়েছেন।
এখন যদি বলা হয়, বেশি বয়সের মানুষেরা আধুনিক জীবন যাত্রার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না, তবে সে ভুল। আমরা যদি একটু চারপাশে খেয়াল করি, তবে দেখতে পাই- অনেক বয়ষ্ক মানুষ অনলাইন ভিত্তিক প্ল্যাটফরমের সাথে যুক্ত হয়ে নানা রকম কাজ করে নিজেকে সফল করে তুলতে পেরেছে। অনলাইন ব্যবসা হোক আর ফ্রিল্যান্সিং হোক, যেকোনোটিতেই সব বয়সের মানুষের অবাধ বিচরন দেখায় যায় এখন। এই পেশায় যুবক – বয়ষ্ক সবাই পুরোদমে কাজ চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
যদি ৭৪ বছর বয়সি “কে এফ সি” এর প্রতিষ্ঠাতা হারল্যান্ড স্যান্ডার্স এর কথা ই চিন্তা করি, তবে আমরা দেখতে পাই তার সাফল্যের পেছনে বয়স কোনো বাধাই নয়। বরং এই বয়সেই তিনি আর দশ জন যুবকের চেয়ে বেশি এগিয়ে। তিনিও শুরুর দিকে কখনো ই ভাবেন নি যে, তিনি একজন সুনামধন্য মিলিয়নিয়ার হয়ে বিশ্ব দরবারে সবাই কে তাক লাগিয়ে দিবেন।
যদি বিবর্তনবাদ ধারণার প্রবর্তক “চার্লস ডারউইনের” কথা চিন্তা করি, তবে দেখতে পাই, ৫০ বছর বয়সের পর তিনি অঢেল সম্পদের অধিকারী হয়েছিলেন। যদিও তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে বেশ সম্পদশালী ছিলেন। এর পরেও নিজ উদ্যোগে ৫০ বছর বয়সে বিপুল সম্পদের অধিকারী হয়েছিলেন।
কম বয়সে সফলতা অর্জনকারী দের মধ্যে আমরা এমন কিছু মানুষদের চিনি যারা শুধুমাত্র বয়সের দিকে গুরুত্ব না দিয়ে, নিজের কাজ এবং নিজের ক্যারিয়ারের দিকে মনোনিবেশ করে সফলতা অর্জন করেছে। এর মধ্যে একজন হলেন “কাইলি জেনার” যিনি বর্তমান বিশ্বের সবথেকে কম বয়সে ধনী নারী। মাত্র ২১ বছর বয়সে তিনি বিপুল সম্পদে অধিকারী হয়েছেন। ফেইসবুক প্রতিষ্ঠাতা, “মার্ক জাকারবার্গ “ মাত্র ২৩ বছর বয়সে বিপুল সম্পদের অধিকারী হয়েছেন।তার এই সাফল্যের পেছনে তার ইচ্ছাশক্তিই মূল ভিত্তি।
পরিশেষে এটাই বলা যায় যে, জীবনে ক্যারিয়ার গঠন করা, সাফল্য অর্জন করা, কোনটির পেছনে নির্দিষ্ট কোন বয়স সীমা নেই। যদি ব্যক্তির মনে সত্যিকারের সাফল্য অর্জনের ইচ্ছা থাকে তাহলে সে যেকোনো বয়সেই তার ক্যারিয়ার গঠন করতে পারে এবং সাফল্য অর্জন করতে পারে। এখানে বয়সের বাধা বলে কিছু নেই।