মানুষ তার পরিবারকে নিয়ে সূখে থাকার উদ্দেশ্যেই বিভিন্ন পেশায় ব্যস্ত হয়ে থাকে। ব্যস্ততার এক পর্যায়ে কাজের সঙ্গে পরিবারের ভারসাম্য বজায় রাখা অনেকের পক্ষে অসম্ভব একটা কাজ বলে মনে হয়। কাজের চাপ সামলাতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তারা। তবে শত ব্যস্ততার পরও কতিপয় লোক পারিবা্রের সাথে যথাযথ সম্পর্ক বজায় রেখে চলেন। নিশ্চয়ই তারা এ ক্ষেত্রে কোন কৌশল অবলম্বন করেন। আমরা এখানে কিছু সম্ভাব্য কৌশল সম্পর্কে জেনে নেবো যা প্রয়োগ করলে আমাদের জন্যেও কাজের সঙ্গে পরিবারের ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব হয়ে উঠবে ইনশাআল্লাহ।
১. কাজ এবং পরিবার মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখুন:
কখোনো পরিবার বাদ দিয়ে শুধু কাজ নিয়ে ব্যস্ত হওয়া যাবে না। দুইটির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে চলতে হবে। এভাবে কোন জায়গাতেই ভালো করা যাবে না। আমরা যেমন পরিবারের জন্য কাজ করি তেমনি কাজের শক্তি যোগানের জন্যেও আমাদের পরিবারের প্রয়োজন। কাজে গতি সঞ্চারের জন্যে পরিবারের পক্ষ থেকে আমদের শারিরিক ও মানসিক শক্তি অর্জন করতে হবে। একটির সম্পর্কে ভাটা পড়লে অন্যটির গায়ে তার আঘাত লাগবেই।
২. কাজের দায়িত্ব সম্পন্ন করে রাখুন:
অফিসের কাজ কোন ধরনের গড়িমসি ছাড়া যথাসময়ের মধ্যে সম্পন্ন করে ফেলতে হবে। একটি সুসম্পন্ন কাজ মনকে দেয় পরিতৃপ্তির আনন্দ আর একটি অপূর্ণ কাজ মনকে কুরে কুরে আহত করে।কাজ সবসময় যথাসময়ে সম্পন্ন করে রাখলে পরিবারে ফুরফুরে মেজাজে ভালো সময় কাটানো সম্ভব হবে।
৩. অফিসের কাজ অফিসেই সম্পন্ন করে ফেলুন:
অফিসের কাজ অফিসেই সম্পন্ন করে ফেলতে হবে। অনিবার্য কারণ ছাড়া অফিসের কাজ পরিবারে নিয়ে যাওয়া ঠিক নয়। আবার পরিবারের কাজও অফিসে নিয়ে যাওয়া ঠিক নয়। এ অভ্যাস গড়ে তুললে পরিবারের সাথে সুসম্পর্ক অব্যাহত রাখা সম্ভব। নতুবা পরবারের সদস্যরা একসময় আপনার থেকে বিমুখ হয়ে যেতে পারে। তবে ক্ষেত্র বিশেষে কিছু কাজ যদি অফিস থেকে বাড়িতে নিয়ে যান, তবে কাজ এবং পরিবারকে সময় দেয়া দুটিই এক সাথে হতে পারে।
৪. কর্মস্থলে সুসম্পর্ক বজায় রাখুন:
কর্মস্থলের সকল সহকর্মীর সাথে সুসম্পর্ক রেখে চলতে হবে। সুবিধা হলো- আপনার কোন পারিবারিক প্রয়োজনে তাদের সহযোগিতায় পরিবারকে সময় দিতে পারবেন। আপনার পারিবারিক কাজে আপনার নৈমিত্তিক ছুটিগুলো তাদের সহযোগিতায় আপনার সুবিধামতো সময়ে নিতে পারবেন। পরিবারের সদস্যরা তাদের প্রয়োজনে আপনাকে পাশে পাবে।
৫. সাধারণ ছুটিতে পরিবারকে সময় দিন:
সাপ্তাহিক ও সাধারণ ছুটিতে পরিবারকে সময় দেয়ার জন্য আগে থেকে পরিকল্পনা তৈরী করে রাখুন। পরিবারের বিভিন্ন কাজ এই সময়টিতে সেরে ফেলুন। কাছে অথবা দূরে কোথাও ঘুরে আসুন পরিবারের সবাইকে নিয়ে।
৬. পরিবারের প্রয়োজনে নৈমিত্তিক ছুটি নিন:
পরিবারেরে প্রয়োজনে নৈমিত্তিক ছুটি নিন। পরিবারের জন্যে শুধু অর্থের যোগানদাতা না হয়ে পরিবারের সদস্যদের সূখ-দুঃখের ভাগিদার হওয়ার চেষ্টা করুন। জরুরী প্রয়োজনে পরিবারের পাশে থাকুন।
৭. পরিবারের মধ্যে সমানভাবে দায়িত্ব বন্টন করুন:
পরিবারের কাজগুলো পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সমানভাবে বন্টন করে দিন। এতে পরিবারের সদস্যরা সক্রিয় ও দায়িত্বশীল হয়ে উঠবে। এতে পরিবারের সাধারণ কাজগুলো জমে থাকবে না। ফলে আপনার অবসরের সময়টাতে পরিবারের জন্য ভালো কিছু করতে পারবেন। হয়ে উঠবেন তাদের আপন জন।
৮. পরিবারের সদস্যদের অবদান স্বীকার করুন:
পরিবারের সদস্যদের সকল অবদানকে স্বীকার করুন। তাদের আঞ্জাম দেয়া কাজগুলোর প্রশংসা করুন, তাদেরকে পুরস্কৃত করুন।
৯. পারিবারিক বৈঠক:
প্রত্যেক মাসে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কমপক্ষে একটি পারিবারিক বৈঠক করুন। বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করুন এবং সমাধান বের করুন। বিগত মাসের কাজের পর্যালোচনা করুন। পরিবারের আগামী এক মাসের কাজের পরিকল্পনা গ্রহণ করুন এবং দায়িত্ব বন্টন করুন।এভাবেই আপনি পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ট হয়ে থাকুন।
১০. পরিবারের মধ্যে খোলামেলা যোগাযোগ রক্ষা করুন:
পরিবারের মধ্যে খোলামেলা যোগাযোগ রক্ষা করুন। সকলের কথা শুনুন, সহযোগিতায় এগিয়ে আসুন। সবার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলুন। সবাইকে যার যার কাজে উৎসাহিত করুন।
১১. পরিবারের সদস্যদের জন্য নির্ধারিত সময় বৃদ্ধি করুন:
পরিবারের সদস্যদের জন্য নির্ধারিত সময় বৃদ্ধি করুন। তাদের জন্যে সুনির্দিষ্ট একটি সময় বরাদ্ধ করুন, যাতে তারা বুঝতে পারে যে এই সময়টি শুধু তাদের জন্য।
১২. পরিবারের সদস্যদের থেকে প্রতিক্রিয়া এবং মতামত নিন:
পরিবারের সদস্যদের থেকে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিক্রিয়া এবং মতামত নিন। তাদের কাছে প্রিয় হয়ে উঠুন।
১৩. সময় সংরক্ষণ করুন:
এক কাজের ফাঁকে আরেকটি কাজ করে ফেলুন এবং সময় সংরক্ষণ করুন। যেমন- বাচ্চাদেরকে স্কুলে আনা নেয়ার ফাঁকে বাজারের কাজ সেরে ফেলুন। একটি কাজের জন্যে বের হতে হলে সাথে আরো কিছু কাজ নিন। যাতে এক যাতায়াতে অনেকগুলো কাজ সেরে ফেলতে পারেন।
১৪. মাঝে মধ্যে দায়িত্ব পরিবর্তন করুন:
মাঝে মধ্যে স্ত্রীর দায়িত্ব পরিবর্তন করে দিন। মাঝে মধ্যে আপনি আমি রান্নার কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করুন অথবা ঘর গোছানোর দায়িত্ব পালন করুন। স্ত্রীকে অবসর দিন অথবা সাধারণত ঘরে যে কাজটি আপনি সে কাজটি স্ত্রীকে করতে দিন। এতে তাঁর একঘেয়েমি দূর হবে এবং আপনি তার কাছে আরো প্রিয় হয়ে উঠবেন।
১৫. বাড়ি ফিরুন ফুরফুরে মেজাজে:
ফুরফুরে মেজাজে বাড়ি ফিরুন। ইসলামের নবী মোহাম্মদ সাঃ বাহিরের কোথাও থেকে বাড়ি ফেরার সময় পার্শ্ববর্তী মসজিদে নামাজ পড়ে হেলে দোলে হাসিমুখে বাড়িতে ফিরতেন। সুতরাং আপনিও বাইরে যতই সমস্যায় জর্জরিত থাকুন না কেন পরিবারে ফেরার সময় সবকিছু ঝেড়ে ফেলে বাড়িতে ফিরুন।
১৬. সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করুন:
হাদিসের মধ্যে আছে মানুষ যখন বাহির থেকে ঘরে ফিরে তখন তার সাথে একটি শয়তান ঘরের মধ্যে প্রবেশ করে এবং ঘরের মধ্যে ঝগড়া বাধানোর চেষ্টা করে। সুতরাং ঘরে প্রবেশের সময় সালাম দিয়ে প্রবেশ করলে তখন শয়তান প্রবেশ করতে পারে না, ফিরে চলে যায়। এজন্য ঘরকে ঝগড়া মুক্ত করতে এবং রাখতে সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করুন এবং ঘরের সময়টাকে এনজয় করুন।
১৭. ঘরের মধ্যে সব সময় ধৈর্য ধরে থাকুন:
ঘরের মধ্যে সব সময় ধৈর্য ধরে থাকুন, কখনো রেগে যাবেন না। কথায় আছে, রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। রাগ নিয়ন্ত্রণ করে ঘরের মধ্যে শান্তির পরিবেশ বজায় রাখুন। ঘরের সদস্যদেরকে শান্তি দিন, তাদের কাছ থেকে আপনিও শান্তি নিন।
নিজের পরিবারকে ভালো রাখার জন্যেই আমাদের জব, অন্য সকল প্রচেষ্টা ও ব্যস্ততা। সুতরাং পরিবারের বিষয়টি সবসময় আমাদের মাথায় রেখেই চলতে হবে। যে কাজের দায়িত্ব গ্রহণ করলে আমরা পরিবারের সাথে যথাযথ যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে পারবো না প্রয়োজনে আমরা সে ধরনের দায়িত্ব এড়িয়ে চলবো অথবা দায়িত্ব পরিবর্তন করবো।
ক্যারিয়ার করার যাত্রা আমরা প্রায় নিজেদের একটি বিভ্রান্তিকর অবস্থায় খুঁজে পাই। আপনি যদি স্বাধীনতার জন্য আকুল হন আবেগ অনুসরণ করার ক্ষমতা ও অসাধারণ কিছু তৈরি করতে চান, তাহলে উদ্যোক্তা হতে পারেন। লেখক এর কথাগুলো অসাধারণ