প্রতিবন্ধীরা কিভাবে ক্যারিয়ার গঠন করবে

Spread the love

প্রতিবন্ধী অর্থ  এমন ব্যক্তি যিনি জন্মগতভাবে বা রোগাক্রানত হয়ে  বা দুর্ঘটনায়  আহত হয়ে বা অপচিকিৎসায  বা অন্য  কোন কারণে দৈহিকভাবে বিকলাঙগ  বা মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। ফলে স্থায়ীভাবে আংশিক  বা সম্পূর্ণ  কর্মক্ষমতাহীন এবং স্বাভাবিক  জীবনযাপনে অক্ষম।

প্রকারভেদ:

 বাংলাদেশে বারো ধরনের প্রতিবন্ধীদের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।

১)অটিজম/অটিজমস্পেকট্রাম  ডিজঅর্ডারস।

২)দৃষ্টি প্রতিবন্ধী

৩)শারীরিক প্রতিবন্ধী

৪)শ্রবণ প্রতিবন্ধী

৫)বাক প্রতিবন্ধী

৬)মানসিক  প্রতিবন্ধী

৭)বুদ্ধি প্রতিবন্ধী

৮)সেরিব্রাল পালসি

৯)শ্রবণও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী

১০)ডাউন  সিনড্রোম

১১)বহুমাত্রিক  প্রতিবন্ধী

১২)অন্যান্য  প্রতিবন্ধী।

বাংলাদেশের  মোট জনসংখ্যার  ১০ শতাংশ  প্রতিবন্ধী যা সংখ্যায় প্রায় ১৬লক্ষ। অবহেলিত এই বিপুল  জনগোষ্ঠীকে সঠিকভাবে  পরিচর্যা  করলে হতে পারে সম্ভাবনাময়  এক জনসম্পদ। 

সরকারি উদ্যোগের  পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন  এলাকায় প্রতিবন্ধী শিশুদের  শিক্ষার অধিকার  নিশ্চিত  করার লক্ষ্যে বেসরকারি বিভিন্ন  এনজিও  বা প্রতিষ্ঠানের  উদ্যোগে প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য  বিশেষায়িত বিদ্যালয় পরিচালিত  হচ্ছে।  এ সকল  বেসরকারি উদ্যোগকে সরকারিভাবে পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তা করার  লক্ষ্যে সরকার ”প্রতিবন্ধীতা সম্পর্কিত সমন্বিত  বিশেষ  শিক্ষানীতিমালা-২০০৯”প্রণয়ন  করেছে।

বিশেষ শিক্ষা :

প্রতিবন্ধী শিশুদের  জন্য  প্রয়োজন  বিশেষ শিক্ষার। 

 বিশেষ শিক্ষা বলতে বোঝায় বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে যুক্ত করে তাদের বিশেষ শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করা । 

এই শিক্ষার বেশ কয়েকটি বৈশিষ্ট হলো:

১)এই শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীর চাহিদাকে আলাদা ভাবে মর্যাদা দেওয়া হয়। 

২)-শিক্ষার্থীর জন্য আলাদা আলাদা শিক্ষক বিশেষ নজরদারির মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করেন। 

৩)-শিক্ষার্থীর শিক্ষা দানে বেশ কিছু উপাদান ব্যবহার করা হয়,যা শিক্ষার্থীকে খুব সহজে শিখতে সহায়তা করে। 

৪)শিক্ষকগন শিক্ষার্থীর পরিবারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এবং শিক্ষার্থীর বুদ্ধির স্তর বুঝে ক্রমশই শিক্ষা দেন। 

৫)এই সকল শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় কাঠামো যুক্ত শ্রেণীকক্ষে শিক্ষা দানের ব্যবস্থা থাকে। 

৬)শিক্ষার্থীদের শিক্ষার জন্য বিশেষ ধরনের পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।যথা-ব্রেইল পদ্ধতি

 ৭)বিশেষ শিক্ষায় শিক্ষার্থীর শেখার প্রবণতার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়।

বিশেষ  শিক্ষার  প্রয়োজনীয়তা:

প্রতিবন্ধকতার মাত্রা এবং ধরন (অন্ধ, কালা, বোবা, মানসিক প্রতিবন্ধী ধরণ) অনুযায়ী প্রতিবন্ধী শিশুদের অবশ্যই কিছু বিশেষ চাহিদা আছে। দৈনন্দিন জীবন যাপনের জন্য তাদের বিশেষ বিশেষ কিছু উপকরণগত চাহিদা থাকে। আমাদের সমাজে এবং  অনেক পরিবারে প্রতিবন্ধীদের সহজে  মেনে নিতে চায় না। 

ফলে নিজের পরিবার থেকে উপযুক্ত গুরুত্ব পায় না। এতে তারা একদিকে যেমন নিরাপত্তার অভাব বোধ করে তেমনি অন্যদের সঙ্গে অভিযোজনে ও এদের সমস্যা হয়। 

তাই প্রয়োজন প্রতিবন্ধী শিশুদের বিশেষ শিক্ষার। প্রতিবন্ধীদের  বিশেষ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করলে দেশ তথা সমাজ পিছিয়ে পড়বে। নানান সমস্যা দেখা দেবে। 

   প্রতিবন্ধী শিশুদের  বিশেষ  বিদ্যালয়:

সমাজকল্যাণ  মন্ত্রণালয় নিয়ন্ত্রণাধীন সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী শিশুদের  জন্য  সরকারিভাবে বিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। এ সকল বিদ্যালয়গুলো হচ্ছে  বাক -শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়,দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। ৫টি পিএইচ পি সেন্টার  নামে পরিচিত  কেন্দ্রে বাক-শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের  পাশাপাশি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় ও আছে।এছাড়াও ২টি পৃথক 

বাক -শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় রয়েছে।মানসিক  প্রতিবন্ধী শিশুদের  প্রতিষ্ঠানটি চট্টগ্রামের রৌফাবাদে  অবস্থিত। 

বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়:

এ সকল বিদ্যালয়ে ইশারা ভাষা শিক্ষা প্রদানের পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষা প্রদান করা হয়।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়:

ঢাকা,চট্টগ্রাম,খুলনা,রাজশাহী ও বরিশালে অবস্থিত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়গুলোতে ব্রেইল পদ্ধতিতে শিক্ষা দেওয়া হয়।  ৬-১৬ বছর  বয়সের  দৃষ্টি প্রতিবন্ধী  শিশুরা এখানে শিখতে পারে।

বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের  শিক্ষা কার্যক্রম:

যে সকল শিশু তাদের বয়সের তুলনায়  মানসিক  দিক দিয়ে কম বিকশিত  ও সমস্যাগ্রস্ত  তাদের আচার-ব্যবহার,শিক্ষা ,চিকিৎসা ইত্যাদির  উপর গুরুত্ব  দিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তর  চট্টগ্রামের রৌফাবাদে  একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন  করেছে ।

 এ প্রতিষ্ঠানে ১০০ জন মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুকে সাধারণ  শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন  বিষয়ে কারিগরী  প্রশিক্ষণ  প্রদানের ব্যবস্থা আছে। শিক্ষার  পাশাপাশি ফিজিওথেরাপি,স্পিচথেরাপি ও সাইকোথেরাপি প্রদান  করা হয়।

স্পেশাল স্কুল ফর চিলড্রেন উইথ অটিজম কার্যক্রম পরিচালনা:

জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন  ফাউন্ডেশন ক্যাম্পাসে একটি সম্পূর্ণ অবৈতনিক স্পেশাল স্কুল ফর চিলড্রেন উইথ অটিজম চালু করা হয়েছে। পরবর্তীতে ঢাকা শহরের মিরপুর, লালবাগ, উত্তরা ও যাত্রাবাড়ী, ৬টি বিভাগীয় শহরে ৬টি (রাজশাহী, খুলনা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, রংপুর ও সিলেট) এবং গাইবান্ধা জেলায় ১টি সহ মোট ১১টি অটিজম স্পেশাল স্কুল চালু করা হয়েছে।

 উক্ত স্কুলগুলোতে অটিজম ও এনডিডি সমস্যাগ্রস্থ শিশুদের অক্ষর জ্ঞান, সংখ্যা, কালার ম্যাচিং, এডিএল, মিউজিক, খেলা-ধূলা, সাধারণ জ্ঞান, যোগাযোগ, সামাজিকতা, আচরণ পরিবর্তন এবং পুনর্বাসন ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষা প্রদান করা হয়। এসব স্কুলে অটিজম সমস্যাগ্রস্থ শিশু ছাত্র-ছাত্রী বিনামূল্যে লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের  উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ:

দক্ষ  জনশক্তির ব্যাপক  চাহিদা রয়েছে দেশ-বিদেশ সবর্ত্র ।জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন  নীতি( এন এস ডি পি)

২০১১ তে বেশ কিছু বিধান  রাখা হয়েছে যেন প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও 

প্রশিক্ষণের  সুযোগ  পায়।যেমন-৫% ভর্তি  কোটা রাখা। সব ধরনের কারিগরি  ও বৃত্তিমূলক  শিক্ষা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধীদের জন্য  ৫ শতাংশ ভর্তি কোটা রাখা।

বাংলাদেশ  সরকার ১৯৮৫ সাল  থেকে প্রতিবন্ধী উন্নয়ন  কাজ শুরু করে। ২০০১সালে ‘বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন ২০০১’ পাস হয় যা জাতীয় সংসদ অনুমোদিত। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার বিষয় সনদে স্বাক্ষর  করে।

এছাড়া সরকারি তৃতীয় ও চতুর্থ  শ্রেণির  চাকরিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও অনাথদের জন্য  ১০% কোটা সংরক্ষণ  করা হয়। আবার  প্রাথমিক বিদ্যালয়ের  শিক্ষক ও মাধ্যমিক  বিদ্যালয়ের  সহকারী শিক্ষক  

নিয়োগের  ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের  জন্য  কোটা সংরক্ষিত আছে।

 বি সি এস ক্যাডারে ১% কোটা সংরক্ষণের  প্রস্তাব রয়েছে।পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী কোটা সংরক্ষিত  রয়েছে।

আবার  জাতীয় রাজস্ব  বাজেটে প্রতিবছর প্রতিবন্ধীদের  জন্য নির্দিষ্ট  পরিমাণ  অর্থ বরাদ্দ  দেওয়া হয়। 

এ অর্থ  ভাতা,উপবৃত্তি ও বিভিন্ন  প্রকল্পে ব্যয় হয়। প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।শিক্ষা ,প্রশিক্ষণ ও স্বাস্থ্যসহ নানাবিধ  বিষয়ে প্রতিবন্ধীরা সুযোগ পাচ্ছে।

প্রতিবন্ধীদের  জন্য  চাকরির  সুযোগ:

শীর্ষ চাকরির ওয়েবসাইট বিডিজবস ডটকম তাদের ওয়েবসাইটটি প্রতিবন্ধী চাকরি প্রার্থীদের জন্য সহজে ব্যবহার যোগ্য করার জন্য সম্প্রতি চালু করেছে ‘আইটুআই ক্যারিয়ার অ্যাডভাইজার।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা এ প্ল্যাটফরমে বাংলা এবং ইংরেজি উভয় ভাষাতেই তাদের যোগ্যতা যাচাই করতে এবং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত পরামর্শ নিতে পারবেন।

আইটুআই ক্যারিয়ার অ্যাডভাইজার’ একটি নতুন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম যার মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা খুব সহজেই চাকরি খুঁজতে এবং আবেদন করতে পারবেন।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের  জন্য  অনলাইন  চাকরির  মেলা- 

এই মেলার উদ্দেশ্য  হল প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে কর্মক্ষম ও দক্ষ প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রার্থীদের সাথে কর্মদাতা প্রতিষ্ঠানের সংযোগ ঘটানো, যেন তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পায়।

Adjobsbd- Autistic and Disable’s job in Bangladesh- প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের  জন্য  বাংলাদেশে প্রথম  ও একমাত্র  জব পোর্টাল। এখানে চাকরির  পাশাপাশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের  চাকরির জন্য  প্রস্তুত  করা হয়।

প্রতিবন্ধীদের  জন্য  চাকরির  সুযোগ  তৈরি করার জন্য  প্রযুক্তিগত  জ্ঞান  আহরণের গুরুত্ব  অপরিসীম।

কারণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের  জন্য  কর্মক্ষেত্র খুবই সীমিত। তাই  বিকল্প  কার্যকর পন্থা হিসেবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা প্রযুক্তিতে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারে এবং আয়ের  ব্যবস্থা করতে পারে।

প্রতিবন্ধীদের  বোঝা না ভেবে বরং সম্পদে পরিণত  করতে হবে। ধৈর্যের  সাথে আল্লাহর দেয়া দানকে সহজভাবে গ্রহন করে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হবে। তবেই সুন্দর  ক্যারিয়ার  গড়ে তোলা সম্ভব  হবে।সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপ যথাযথ বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা করতে হবে।

1 thought on “প্রতিবন্ধীরা কিভাবে ক্যারিয়ার গঠন করবে”

  1. প্রতিবন্ধীরাও দেশের জনসম্পদ।তারা পরিবার থেকে অনেক বেশি প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়ে থাকে।পরিবার তাদের সহজে মেনে নিতে চাই না।বাংলাদেশে ১২ ধরনের প্রতিবন্ধী রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের সরকারি প্রতিষ্ঠান সহ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলো প্রতিষ্ঠান গুলো প্রতিবন্ধীদের নিয়ে উন্নয়ন মূলক কাজ করে দেশকে সমৃদ্ধ করছে।

    তাই আমাদের সকলের উচিৎ প্রতিবন্ধীদের বোঝা মনে না করে তাদের সহায়তা করা,এতে আল্লাহও খুশি হবেন।সরকারের এমন উদ্যোগ গুলোও সফল হবে ইন শা আল্লাহ।

    Reply

Leave a Comment