মানসিক দুর্বলতা দূর করবেন যেভাবে 

Spread the love

আমরা অনেক সময় শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা পেয়ে থাকি। ঠিক তেমনি আমাদের মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে আমরা মনের ভিতরেও ব্যথা পেয়ে থাকি যা আমরা কাউকে বলতে পারি না। এর ফলে সৃষ্টি হয় হতাশা, একাকীত্ব, উদ্বেগ ও ভয়সহ নানা বিধি মানসিক দুর্বলতা।

পরিবার বা কর্মক্ষেত্রে সমস্যা, সম্পর্কে অবনতি, অর্থনৈতিক সংকট, খারাপ স্বাস্থ্য, এমনকি ঘনিষ্ঠ কারো মৃত্যু— এসব বিভিন্ন কারণে আমরা মানসিক দুর্বলতায় ভুগতে থাকি।মানসিক ভাবে দুর্বল এই মানুষেরা কথা কম বলে ও শান্ত থাকে । তারা কারো সাথে কথা বলতে চায় না । তারা ভাবে এসব কথা মানুষকে বললে মানুষ  তাদেরকে মানসিক রোগী  বলে আখ্যায়িত করবে।

 মানসিকভাবে দুর্বল মানুষেরা জীবনে ভালো কিছু করতে পারেননা। তাদেরকে কেউ সম্মান করে না  ।সকলেই তাদের উপর বিরক্ত হয় । তাই জীবনে সফল হতে চাইলে এবং জীবন যুদ্ধে টিকে থাকতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে মানসিকভাবে শক্তিশালী হতে হবে ।এই মানসিক  দুর্বলতা দূর করতে না পারলে মানসিক সমস্যার সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা ও শুরু হবে। তবে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ এবং কিছু কৌশল অবলম্বন করে এই মানসিক দুর্বলতা দূর করে সহজ ও সুন্দর জীবন   যাপন করা সম্ভব। 

মানসিক ভাবে শক্তিশালী হওয়ার ১৩ টি শ্রেষ্ঠ উপায়

মানসিক দুর্বলতা দূর করে মানসিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠার কিছু উপায় তুলে ধরা হলো

সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ

আপনি যদি মানসিক ভাবে দূর্বল হয়ে থাকেন তাহলে আপনি অতি শীঘ্রই একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এর সাথে পরামর্শ নিন।চিকিৎসককে আপনার সকল সমস্যার কথা খুলে বলুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ   মত চলুন। ডাক্তারের পরামর্শ মত চললে  দেখবেন আপনার সমস্যার সমাধান করতে পারছেন।

মানসিক দুর্বলতা বিষয়ক জ্ঞান অর্জন

মানসিক দূর্বলতা বিষয় নিয়ে সঠিক জ্ঞান অর্জন করুন। মানসিক দূর্বলতা কেন হয়? এর প্রতিকার এবং চিকিৎসা কি সে সম্পর্কে জানুন। প্রথম দিন থেকেই নিজের চিকিৎসায় লেগে যান।  দেখবেন, আপনি নিজেই নিজের চিকিৎসা করে ফেলেছেন।

নিজেকে জানুন

নিজের ক্ষমতা অনেকাংশেই মনের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু মানসিকভাবে দুর্বল ব্যক্তিরা অনেকাংশেই নিজের দুর্বলতা সম্পর্কে জানে না। ফলে দিন দিন হতাশায় নিমজ্জিত হওয়া ছাড়া তার আর কোনো পথ খোলা থাকে না।। প্রত্যেক মানুষেরই নিজের সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা জরুরি। নিজের সম্পর্কে জানলে আত্মবিশ্বাস অটুট থাকে। নিজের ক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কেও জানা যায়। 

ভালো চিন্তা করুন 

আমরা চেষ্টা করলেও সব সময় খারাপ চিন্তা কে এড়াতে পারি না।  তবে আমাদের  চেষ্টা করা উচিত ইতিবাচক চিন্তা করার । বিশেষ করে যখন মানসিক  অস্থিরতা দেখা দেয় তখন সব রকম খারাপ চিন্তা থেকে বিরত  বিরত থাকা উচিত।   এমন কিছু চিন্তা করুন যেটা আপনাকে মানসিক শান্তি প্রদান করে । সুন্দর কিছু ভাবনা বা চিন্তা মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে। 

নিয়মিত ব্যায়াম

 নিয়মিত ব্যায়াম শরীর কে সুস্থ রাখার পাশাপাশিব্যায়াম মানসিক চাপ তৈরিকারী হরমোনের নিঃসরণ কমায়।এনডোরফিনের নামক সুখী হরমোনের মাত্রা বাড়ায়।আবার যোগব্যায়াম ও ধ্যান আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে।তাই মানসিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম ও ধ্যান করা  উচিত।

ভালো লাগার কাজগুলো করা

মানসিক দুর্বলতার সময় নিজের পছন্দের কাজগুলো শুরু করুন এবং নিজেকে সময় দিন।মানসিক অস্থিরতা কমানোর একটি সহজ ও সুন্দর উপায় হল নিজের ভালোলাগার কাজগুলো করা। হতে পারে সেটা ছবি আঁকা,গান শোনা, সিনেমা দেখা,, বই পড়া বা প্রিয় মানুষটির সাথে কথা বলা। আপনার যা করতে ভালোলাগে তাই করুন। ভালোলাগার কাজগুলো করতে করতে দেখবেন আপনার মানসিক দুর্বলতা স্শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে।

রাগ ও আবেগ সংবরণ করুন

যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজের রাগ ও আবেগকে সংবরণ করতে হবে।  কোনভাবেই মন দুর্বল করা চলবে না, নিজেকে শান্ত রাখতে হবে।  অতিরিক্ত আবেগকে পাত্তা দিবেন না। আপনি কোন কিছু করার যোগ্য নয় এরকম চিন্তা ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসুন।  নিজের চিন্তা ,রাগ এবং আবেগকে সংবরণে মনোযোগী হন। 

একাকী না থাকা

আপনি যদি মানসিক ভাবে অসুস্থ হন তাহলে কখনোই একা থাকবেন না।  একা থাকলে আরো বেশি হতাশায় আক্রান্ত হবেন। নিজেকে তুচ্ছ মনে হবে। ধীরে ধীরে জীবনে দিশেহারা হয়ে যাবেন। তাই চেষ্টা করবেন বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে,গান শুনতে বা শখের কাজ করতে। এতে করে আপনার মস্তিষ্ক অন্য দিকে ধাবিত হবে। জীবনের প্রতি আশা জাগবে।

পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ

পুষ্টিকর খাবার শুধু শরীরের জন্য নয়, বরং মনের জন্যও উপকারী। কিছু খনিজ যেমন- আয়রন ও ভিটামিন বি ১২ এর ঘাটতি মেজাজ পরিবর্তনের জন্য দায়ী। তাই মানসিক দুর্বলতা দূর করতে সুষম খাবার খাওয়া জরুরি।এবং অ্যালকোহল, ধূমপান ও মাদক পরিহার করতে হবে।

পর্যাপ্ত ঘুম

মানসিক দুর্বলতা দূর করতে ঘুমের কোন বিকল্প হয়না। যখনই আপনি মানসিকভাবে দুর্বল অনুভব করবেন তখন চেষ্টা করুন একটা ভালো ঘুম দিতে। ঘুম শরীরকে সতেজ রাখে । একটা লম্বা ঘুম আপনার মানসিক অস্থিরতা কমিয়ে দিতে পারে। নিয়মিত সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুম আপনার মানসিক দুর্বলতা অনেকটাই দূর করে দিতে পারে । 

পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া

সবকিছু পরিবর্তন করা যায় না। সব সময় সবকিছু আমাদের মনের মত  হয় না।  তাই পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার দক্ষতা অর্জন করুন। হয়তো কোন ঘটনা আপনাকে এতটাই ভঙ্গুর করে দিয়েছে যে সে চাপ বহন করে আপনার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।  কিন্তু অতিত পরিবর্তন করা সম্ভব নয় তাই পরিস্থিতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখুন । সব সময় সবকিছু আমাদের হাতে থাকে না। 

ভুল থেকে শেখা

মানুষ মাত্রই ভুল করে।ভুল করে লজ্জা  পাওয়ার কিছু নেই। যত ভুল করবেন সেগুলো থেকে আরও শিখতে পারবেন। এটি আপনাকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করে তুলবে। একই সঙ্গে দুর্বল দিকগুলো যা আপনাকে আটকে রেখেছে সেগুলো ছেড়ে দিন।

অন্যের জন্য কিছু করা

কাউকে সাহায্য করলে নিজের মধ্যেও অন্যরকম ভালো লাগার অনুভূতি কাজ করে। তাই অন্যের জন্য কিছু করার চেষ্টা করুন। কোনো দরিদ্রকে খাবার বা পোশাক কিনে দিন কিংবা সামান্য অর্থ দিয়ে সাহায্য করুন। দেখবেন আপনার মন ভালো হয়ে যাবে

মানসিক দুর্বলতা দূর করতে না পারলে কি সমস্যা হতে পারে 

মানসিক দুর্বলতা প্রতি যথাযথ দৃষ্টি না দিলে এ থেকে গুরুতর সমস্যা তৈরি হতে পারে।যেমন- 

  • হঠাৎ করে অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে ওঠা 
  • নিজেকে সবার কাছ থেকে সরিয়ে রাখা 
  • অকারণে ঝগড়া বিবাদ করা
  •  অতিরিক্ত সন্দেহপ্রবণ হয়ে  ওঠা
  •  সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা
  •  ঘুম অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে যাওয়া অথবা কমে যাওয়া
  •  খাবারের অরুচি তৈরি হওয়া
  •  বাসার ও অফিসের কাজে মনোযোগ হারিয়ে ফেলা
  •  মানসিক দুর্বলতা খুবই তীব্র হলে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করা ও চেষ্টা করা 

আমরা অনেকেই মনে করি মানসিক দূর্বলতা একটি রোগ অথবা কলঙ্কিত জিনিস।কিন্ত না এট আমাদেরভুল ধারণা।  আমাদেরকে অবশ্যই এসব ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের চেষ্টা করতে হবে নিজেকে সাহায্য করার । আশা করি আপনারা কেউ যদি মানসিক দুর্বলতা দূর করে মানসিকভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠতে চান তাহলে এই লিখা আপনার উপকারে  আসবে।

Leave a Comment