কাজের চাপ সামলিয়ে মানসিক শান্তি বজায় রাখা

Spread the love

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে  আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের কাজের চাপের সম্মুখীন হই এবং এর ফলে আমাদের মানসিক শান্তি খুঁজে পাওয়া প্রায় সময়ই অসম্ভব হয়ে পড়ে।আধুনিক যুগের বিভিন্ন প্রতিযোগীতামূলক পরিবেশের কারনে সমস্যাটি আরও প্রকটভাবে পরিলক্ষিত হয়। কাজের চাপ থাকবেই,কিন্তু সেটাকে নিয়ন্ত্রন করে আমাদের জীবন সামঞ্জস্যপূ্র্ণ রূপে পরিচালিত করতে হবে। 

কাজের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ে উদ্বিগ্ন থাকা, প্রত্যেক বিষয়কে ব্যক্তিগতভাবে নেওয়া, অতিরিক্ত প্রত্যাশা এবং অহেতুক ঈর্ষান্বিত হওয়া প্রভৃতির কারনেও অনেক সময় আমাদের মানসিক প্রশান্তি নষ্ট হয়ে যায়। দিন শেষে এগুলো একত্রিত হয়ে পরিণত হয় প্রচন্ড মানসিক চাপে  ,ধীরে ধীরে একটি নীরব ঘাতকরূপে আমাদেরকে গ্রাস করে নেয়। মানসিক প্রশান্তির শক্তি আমাদের মনকে  রাখে শান্ত, উৎফুল্ল এবং চলার পথকে আরও মসৃণ করে দেয় ও লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট থাকতে সাহায্য করে।

কাজের ক্ষেত্রে কিভাবে আমাদের মানসিক সমস্যাগুলো সৃষ্ট হয় সে সম্পর্কে আমাদের সম্যক ধারনা থাকা দরকার।আমাদের কর্মক্ষেত্রে আমরা যদি প্রায়ই প্রচণ্ড চাপ অনুভব করি তাহলে এটি  আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এর ফলে সৃষ্টি হতে পারে মারাত্মক হতাশা এবং উদ্বিগ্নতা যা আগে থেকে বিদ্যমান মানসিক সমস্যাগুলোর সাথে মিলে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।

কাজের চাপের স্বরূপ এবং মানসিক শান্তি বজায় রাখার জন্য করণীয়

কর্মক্ষেত্রে আমরা যে সমস্ত ভিন্ন ভিন্ন ধরনের কাজের চাপের সম্মুখীন হয়ে থাকি তার মধ্যে অন্যতম হলো- কাজের স্বরূপ সম্পর্কে অস্বচ্ছ ধারনা, নির্দিষ্ট সময়ে অনেক বেশী কাজ সম্পন্ন করার চাপ, কর্মক্ষেত্রে অসহযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ, পর্যাপ্ত বিরতির অভাব ইত্যাদি।এ সকল পরিস্থিতি সামলে মানসিক শান্তি বজায় রাখার জন্য আমাদের

কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে।নিচে কিছু সাধারন ধারনা দেয়া হল যার মাধ্যমে বিষয়টি সম্পর্কে আমরা আরও স্পষ্টভাবে বুঝতে পারব। 

১. কাজকে সময়ের সাথে ভাগ করে নেয়াঃ

আমাদের একই সাথে অনেকগুলো কাজ একসাথে করার চেষ্টা থেকে বিরত থাকতে হবে।এভাবে কাজ করার চেষ্টা করলে আমাদের মনের ভিতর অশান্তি শুরু হয়ে যায়।তাই কাজের পরিমাণ দেখে ভয় না পেয়ে বরং পুরো কাজটাকে কয়েকটি ছোট ছোট অংশে ভাগ করে নিতে হবে এবং প্রত্যেক অংশের জন্যে নির্দিষ্ট সময় ঠিক করতে হবে।এতে করে পুরো কাজের চাপ মাথায় না নিয়ে বরং কাজের ঐ অংশটুকু ভালভাবে শেষ করার চেষ্টা করলে কাজের চাপ থেকে বাঁচা যাবে  এবং ঐ অংশ শেষ হলে এক ধরনের মানসিক প্রশান্তিও অনুভূত হবে।

২.চাপ সৃষ্টিকারী বিষয়সমুহ এবং তা থেকে মুক্তির উপায়গুলো সম্পর্কে অবগত থাকাঃ

কাজের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়গুলো আমাদের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং কোন কোন বিষয়গুলো আমাদের ভালো রাখে সে সম্পর্কে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে গঠনমূলক আলাপ আলোচনা করা যেতে পারে।ফলশ্রুতিতে তারা হয়তো আমাদের কাজের পরিবেশে কিছুটা পরিবর্তন আনতে পারেন।

৩.পরিস্থিতি সামলানোর কিছু কৌশল আয়ত্ত করাঃ

এক এক মানুষ এক এক ভাবে পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করে থাকে।তাই এক্ষেত্রে নিজের সবচেয়ে ভালো কৌশলটি সম্পর্কে সম্যক ধারনা থাকতে হবে এবং তা সমস্যার শুরুতেই প্রয়োগ করতে হবে।

৪.মননশীলতা অনুশীলন করাঃ 

এটি হলো,বর্তমান কোনো একটি বিষয়ের উপর সচেতনভাবে পূর্ণ মনোযোগ প্রদান করা । এর মাধ্যমে কঠিন পরিস্থিতিকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়  এবং ধৈর্য্য ধারন করা সম্ভবপর হয়। 

৫.বাস্তববাদী হওয়াঃ

আমাদের সবসময়ই নিখুঁত হওয়ার চেষ্টা করা উচিত নয়।অনেক সময় আমরা প্রয়োজনের অতিরিক্ত আমাদের কাজের ভুলগুলো খুঁজে বের করি। এটা না করে আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করার এবং নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়ার  চেষ্টা করব।

৬.নিজেকে পুরস্কৃত করাঃ 

প্রতিটা মুহূর্ত কাজের পরবর্তী ধাপ সম্পন্ন করার চিন্তা থেকে বের হয়ে এসে যতটুকু কাজ শেষ হয়েছে ততটুকুর জন্য নিজেকে পুরস্কৃত করতে হবে।এটি হতে পারে বই বা পত্রিকা পড়ার জন্য ছোট্ট বিরতি নেয়া বা সহকর্মীদের সাথে একটু গল্প করা অথবা বাহিরে কিছুটা সময় অতিবাহিত করা ইত্যাদি।

৭.ব্যক্তিগত জীবনের উপর মনোনিবেশ প্রদানঃ 

কাজের পরিবেশের বাহিরে অন্যান্য সম্পর্কগুলোর প্রতি যত্নশীল হওয়া, কাজের সাথে সম্পর্কিত নয় এমন কিছু দক্ষতা অর্জন -এ বিষয়গুলো আমাদের ব্যক্তি জীবন এবং কর্ম জীবনের মধ্যে দেয়াল তৈরি করতে সহায়তা করে যার দ্বারা আমরা  ব্যক্তি জীবনে তুলনামূলক বেশী মানসিক শান্তি বজায় রাখতে সক্ষম হব। 

৮.সহকর্মীদের সাথে সম্পর্কের উন্নয়নঃ

সহকর্মীদের সাথে সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখার মাধ্যমে আমরা কর্মক্ষেত্রে একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারি যা আমাদের কাজকে আনন্দদায়ক করে তুলতে সাহায্য করে। 

৯.দিনের সুন্দর পরিসমাপ্তিঃ

 কাজ শেষে কাজের জায়গার পরিছন্নতা বজায় রাখার পাশাপাশি পরবর্তী দিনের করণীয় তালিকা তৈরি করা গেলে কাজের চাপ সামলানো অনেক সহজতর হয়ে উঠে।  

১০.ছুটি গ্রহনঃ

 কাজের চাপকে মোকাবেলা করে নিজেকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলার জন্য পর্যাপ্ত ছুটি গ্রহন করতে হবে।লম্বা ছুটি না হলেও অন্তত মাসের একটা বা দুটো দিন কাজের পরিবেশ থেকে নিজেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করতে হবে। এর ফলে দেখা যাবে নতুন করে কাজের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়েছে এবং আর কাজটাকেও আর বোঝা বলে মনে হচ্ছে না। 

১১.শারীরিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়াঃ 

সুষম খাদ্য গ্রহন ,পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুম এবং পরিমিত ব্যায়ামের চর্চা আমাদের  শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক  স্বাস্থ্যের উন্নয়নেও যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে। 

কাজের চাপ , পারিপার্শ্বিক অবস্থা  সব মিলিয়ে আমাদের মন বিক্ষিপ্ত থাকতেই পারে। অনেক সময় যথাসাধ্য পরিশ্রম করেও উপযুক্ত ফল পাওয়া সম্ভবপর হয় না। সেখান থেকেও মানসিক অশান্তি শুরু হয়।  কাজের চাপ সামলিয়ে মানসিক শান্তি বজায় রাখার জন্য নিজেকে সৎ রাখার পাশাপাশি আমাদের আত্মবিশ্বাসকে মজবুত রাখতে হবে।স্বার্থক জীবনধারণ বলতে কি বোঝায় সে সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। অতীতে কি ছিল তা ভেবে হতাশ না হয়ে, ভবিষ্যতে কি হবে তা ভেবে উদ্বিগ্ন না হয়ে বর্তমানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। অনর্থক বাক্যব্যয়, উদ্দেশ্যহীন কাজকর্ম ,তুচ্ছ বাকবিতণ্ডা, পরনিন্দা- পরচর্চা পরিহার করতে হবে। এবং সর্বোপরি মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণের মাধ্যমেই  চূড়ান্ত মানসিক শান্তি অর্জন করা সম্ভবপর হবে। 

Leave a Comment

You cannot copy content of this page