সফলতার গল্পতো আমরা অনেক শুনি। কিন্তু ব্যর্থতার গল্পগুলো অজানাই রয়ে যায়। ছোট্ট শিশুটি যখন হাটতে শেখে, সবাই কতইনা আনন্দিত হয়। কিন্তু শেখার শুরুটা তো বার বার হোঁচট খাওয়া, কান্না, ব্যাথা পাওয়া এসবেই পরিপূর্ণ ছিল তাইনা?তাই বলে কি হাঁটা বন্ধ থাকে? না,সে যতবার হোঁচট খেয়েছে ততবারই আবার উঠে দাঁড়িয়েছে। ঠিক আপনার ক্যারিয়ার এর পথটাও কিন্তু একই রকম। আপনার সফলতা তখনই আসবে যখন আপনি প্রতিবার ব্যর্থ হবার পর আবার ঘুরে দাঁড়াবেন। ব্যর্থতার কথা কিন্তু কেউ মনে রাখবে না। ব্যর্থতাকে আপনি সফলতার চাবিতে পরিণত করতে পেরেছেন কিনা মানুষ কিন্তু সেটাই দেখবে।
প্রতিটি সফল ব্যক্তির সফলতার পেছনের গল্পটাও ব্যর্থতায় ভরা। যে ব্যক্তি যত সফল সে কিন্তু তার থেকে আরও বেশি বার ব্যর্থ হয়েছেন বলেই আজ সফল হতে পেরেছেন। টমাস আল্ভা এডিসনকে তো আমরা সবাই চিনি। বৈদ্যুতিক বাতি, অডিও রেকর্ডিং , আধুনিক ব্যটারী এরকম এক হাজারের ও বেশি আবিষ্কার তার ই কৃতিত্ব।
তিনি ১৯৪৭ সালে আমেরিকা তে জন্ম নেন। ছোট বেলায় স্কারলেট ফিভার নামে একটি জটিল অসুখের ফলে তিনি কানে প্রায় শুনতেনই না। পড়াশুনায় অমনোযোগীতার কারনে তাকে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল। এরপর বাড়িতেই তার পড়াশুনা চলতে থাকেছতার মায়ের আত্মবিশ্বাসই তাকে প্রেরনা যোগায় ।তিনি জটিল বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করতে থাকেন। বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কারের সময় ১০ হাজার বার তার এক্সপেরিমেন্ট ব্যর্থ হয়। কিন্তু শেষমেশ কিন্তু তিনি ঠিকই সফল হয়েছিলেন। কেননা তিনি কিছুতেই ব্যর্থতাকে মেনে নিতেন না।
আমরা সবাই ব্যর্থতাকে ভয় পাই। বিশেষ করে আমরা যদি পেশাগত জীবনে অন্যদের থেকে পিছিয়ে পড়ি বা একবার কোন কারনে ব্যর্থ হই আমরা তা মেনে নিতে পারিনা। হাল ছেড়ে দেই। ধরেই নেই আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। আর এ কারনেই অনেক প্রতিভাবান তরুন তরুণীরাই তাদের সম্ভাবনাময় উজ্জ্বল ক্যারিয়ার থেকে দূরে সরে যায়। হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে যায়।
ব্যর্থতা হচ্ছে আমাদের কিছু ভুল পদক্ষেপের ফলাফল মাত্র। আমরা প্রতিটা ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিতে পারি ।যেমনঃ
লক্ষ্য নির্ধারণ করাঃ
আপনি আপনার ক্যারিয়ার কিভাবে সাজাতে চান,পেশা হিসেবে চাকরি, ব্যবসায় যেটাই নির্ধারণ করেন না কেন , আপনার লক্ষ্য কিন্তু স্থির হতে হবে। আপনি কোন বিষয়ে পারদর্শী, সেটা আপনাকেই বের করতে হবে এবং অগ্রসর হতে হবে। একজন নিউরো সায়েন্টিস্ট এর মতে – মানুষের মস্তিস্ক মুলত মাল্টিটাস্কিং করার উপযোগী নয়। তাই একবারে একটি বিষয়েই দক্ষতা অর্জন করে সে অনুযায়ী লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে।
নিজের ভুল শনাক্ত করাঃ
আপনি যখন কোন কাজে ব্যর্থ হবেন তখন কেন আপনি ব্যর্থ হলেন প্রথমে তার কারন খুজে বের করতে হবে।এবং যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। ভুল শনাক্ত হওয়ার পর আপনি নিজেই বুঝে যাবেন যে ওই কাজে কাঙ্ক্ষিত সফলতা পেতে হলে আপনাকে কোন কোন বিষয় গুলো বারংবার অনুশীলন করতে হবে।কোথায় আপনার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। কোন কোন জায়গায় আপনার কাজের দক্ষতা আরও বাড়াতে হবে।
হাল ছাড়া যাবেনাঃ
আমরা বেশিরভাগ মানুষই খুব সহজেই হাল ছেড়ে দেই। কিন্তু এটা করা যাবে না। যতবার ব্যর্থ হবেন ততবার ই নতুন করে হাল ধরতে হবে। নিজের লক্ষ্যের দিকে দৃষ্টি দিন। ব্যর্থতার গ্লানিকে সফলতার শক্তি বানিয়ে ফেলুন।মনে রাখতে হবে – ‘’ব্যর্থ হওয়া কঠিন, তবে সফল হওয়ার চেষ্টা না করা আরও খারাপ।‘’থিও্ডোর রোজভেল্ট।
সঠিক পরিকল্পনা তৈরি করা ঃ
সঠিক পরিকল্পনাই হচ্ছে কাজে সফলতা পাবার মূলমন্ত্র। আপনার পেশা যাই হোক না কেন, সফল হতে চাই, স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়ন। এজন্য প্রথমেই আপনার ক্যারিয়ার নিয়ে সঠিক পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। এবং কিভাবে তা বাস্তবায়ন করবেন তার রূপরেখা নির্ধারণ করতে হবে।
আত্মবিশ্বাসী হওয়াঃ
নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে, হতাশ হওয়া যাবেনা । সফল হওয়ার জন্য আত্মবিশ্বাস থাকাটা সবচেয়ে জরুরী। আপনি নিজেই নিজের উপর আস্থা রাখতে না পারলে ব্যর্থতাকে শক্তি তে রুপান্তর করা সম্ভব নয়। নিজেকে এমনভাবে তৈরি করুন যেন আপনার প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও আত্মবিশ্বাস সকল ব্যর্থতার গ্লানিকে মুছে দেয়।
সময়ের সঠিক ব্যবহারঃ
আপনি লক্ষ্য নির্ধারণ করলেন, বাস্তবায়নের যাবতীয় ব্যবস্থা করলেন, কিন্তু সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে পারলেন না। তাহলে আবারও আপনি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবেন। এজন্য সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে হবে। প্রতিটা কাজ এর জন্য সময় নির্ধারণ করতে হবে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে।
অন্যের অপেক্ষা না করাঃ
বেশিরভাগ মানুষ তাদের ব্যর্থতার জন্য বাহ্যিক অবস্থাকেই দায়ী করে । ভাবে সে ওটা করলনা কেন? এটা আনলনা কেন?তাহলে এমনটা হত না। আপনিও হয়ত আপনার কাজের ক্ষেত্রে অন্যের উপর নির্ভর ছিলেন, আর তাই আজকের এই ব্যর্থতা। এবার আর এই ভুল না করে আপনি নিজের কাজ নিজেই সেরে ফেলুন।
চ্যালেঞ্জ গ্রহনের মানসিকতাঃ
আপনি ক্যারিয়ারের শুরুতেই হোঁচট খেলেন আর ভাবলেন এতেই শেষ ! না এটাই শেষ নয়। এই ব্যর্থতাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহন করতে হবে। প্রতিকূলতাকে কাটিয়ে ওঠা জানতে হবে।ব্যর্থতাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে নিন।সফলতা অর্জন সহজ হয়ে যাবে।
অতীত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো ঃ
বার বার ব্যর্থ হতে হতে একসময় আপনি ঠিকই সফল হবেন, তখন আপনার অতীতের ব্যর্থতা থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতাগুলোকে আপনাকে আপনার সাফল্যকে ধরে রাখতে সহায়তা করবে । কেননা আপনি জানেন ঠিক কি কি কারনে আপনি ব্যর্থ হয়েছিলেন,এবং কিভাবে তা থেকে উত্তরণ হয়েছেন।
ব্যর্থ হলে যে শিক্ষা নিতে হবে তা কি শুধুমাত্র নিজের জীবন থেকেই? না, কখনই নয়। আপনার আশে পাশে দেখুন, এমন অনেক উদাহরণ পেয়ে যাবেন, যারা বার বার ব্যর্থ হতে হতেই আজ সফল। এখান থেকে নিজের জীবনের অনুপ্রেরনা তৈরি করুন।
পরিশেষে বলব,ব্যর্থতা জীবনেরই অংশ।কোন বড় স্বপ্নই চাওয়া মাত্র পূরণ হয় না। বার বার চেষ্টা করেই স্বপ্ন পূরণ করতে হয়। ক্যরিয়ার আপনার, তাই ক্যরিয়ারের পিছনে শ্রম টাও কিন্তু আপনাকেই দিতে হবে। ব্যর্থতাকে নেতিবাচক হিসেবে বিবেচনা না করে সাফল্যের চাবিকাঠি মনে করতে হবে।