কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেকে যেভাবে শান্ত রাখবেন

Spread the love

যেকোনো পরিস্থিতিতে সব সময় আমাদের স্থির মনোভাব প্রদর্শন করা উচিত। হুট করে রেগে গিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া কখনোই ইতিবাচক আচরন নয়।

কঠিন পরিস্থিতি বা কঠিন সময় কখনো আসেনি জীবনে এমন কোন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। আর, খারাপ সময় কোন না কোন ভাবে মানুষ অতিক্রম করতে পেরেছে,  করতে হয়েছে, তাই সে মানুষ।

যেকোনো কঠিন অবস্থা থেকে উত্তরণের ক্ষমতা জেনেটিক ভাবে মানুষের মধ্যে রয়েছে।  তা যদি না থাকতো তবে বহু পূর্বেই থেমে যেতে হতো সভ্যতার রথযাত্রা।

নিজেকে শান্ত রাখার বৈশিষ্ট্য গুলো

কর্মক্ষেত্রে অত্যাধিক কাজের চাপে দীর্ঘমেয়াদী উদ্বেগ, মানসিক চাপ সৃষ্টি হওয়ার কারণে বিরাট ক্ষতির শিকার হচ্ছেন অনেকেই। বিশ্বের গ্রেটেস্ট আচিভার যেমন : ক্রীড়াবিদ,  শিল্পীরা অত্যাধিক কাজের ও মানসিক চাপের মধ্যে কিভাবে অত্যন্ত শান্ত থাকতে হয় তা না শিখে কখনো তারা সাফল্যের স্তরে পৌঁছাতে পারতেন না। কঠিন পরিস্থিতিতে মানুষের বেশি তাড়াহুড়ো করে কাজ করার প্রবণতা রয়েছে। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেকে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী দেখানোর পরিবর্তে এক ধাপ পিছিয়ে থেকে কাজ করার মানসিকতা করতে হবে। এতে আবেগপ্রবণ না হয়ে ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হবে।

শান্ত রাখার কার্যাবলী সমূহ

  • ধৈর্য ধারণ করা:  কেউ কোনো কথা বললে তা ধৈর্য ধরে শোনার অভ্যাস করতে হবে ।  প্রথমে শুনতে হবে। এর পর ভালোভাবে বুঝে উত্তর দিতে হবে ।
  • সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা : একসাথে একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভ্যাস বর্জন করুন । খুব সহজে সিদ্ধান্ত নেওয়ার একটি উপায় হলো একসাথে অনেক সিদ্ধান্ত না নেওয়া ।
  • বিবেচনা করা : আপনার মতে সিদ্ধান্তটি  ভালো কিনা, তা বিবেচনা করুন। সিদ্ধান্ত সবসময় পারফেক্ট হবে না। তবে পারফেক্ট সিদ্ধান্ত না নিতে পারলেও এমন সিদ্ধান্ত নেবেন না যেটা আপনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
  • লক্ষ নির্ধারণ করা : আপনার লক্ষ্য চিহ্নিত করুন আপনি যখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার উপযুক্ত কারণটি জানবেন তখন সহজেই সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে পারবেন। 
  • দৃঢ় মনোবল : নিজের মনোবল দৃঢ় রাখুন। যদি নির্দিষ্ট কোন কাজকে সামনে রেখে খুব অল্প সময়ের মধ্যে আপনি  সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে চান তাহলে আপনাকে আপনার লক্ষ্যে অটুট থাকতে হবে। তাই নিজের মনোবল দৃঢ় রেখে যে কোন বিষয়ে আপনি চাইলে কম সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।
  • দৈতাবস্তা পরিহার করা  : কোনো কাজের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে গেলে আপনাকে মানসিকভাবে স্থির হতে হবে। আপনি যদি আপনার কাজের কথা চিন্তা করার পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়গুলো আপনার মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে নেন তাহলে সহজেই আপনার মনোযোগ বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়বে।
  • নিয়ন্ত্রণ : নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে কিছু করা যাবে না।
  • অভিজ্ঞতা : অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে গেলে সর্বপ্রথম আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা নিয়ে ভাবা উচিত। অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে যে কোন বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিলেও সেটা কার্যকরী হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।
  • গুরুত্বাভাব : সিদ্ধান্ত যেহেতু আপনি নিচ্ছেন তাই অন্যদের তুলনায় নিজের মনোভাবই সবার আগে বিবেচনা করুন।
  • উপযোগী সিদ্ধান্ত  : সেরাটা নয় উপযোগী সিদ্ধান্ত  নেওয়ার চেষ্টা করুন। ছোট বড় যাই হোক না কেন, সব সিদ্ধান্তেরই আমাদের জীবনের উপর রয়েছে অনেক প্রভাব। তাই সিদ্ধান্ত গ্রহণে যেন উপযোগী সিদ্ধান্তই গ্রহণ করা হয় সেই দিকে নজর দিন।
  • কাছের বন্ধুর নিকট হতে সাহায্য : কঠিন পরিস্থিতি থেকে একমাত্র উদ্ধার করতে পারেন একজন প্রকৃত বন্ধু। সামাজিক কল্যাণের জন্য এই কাছের বন্ধুগুলির সাহায্যই সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে। হতাশা,  মানসিক চাপ অবসর থেকে মুক্তি পেতে কাছের বন্ধুর সাহায্য চাওয়া কোন ভুল কাজ নয়। এক্ষেত্রে তাকে ফোন করে তার সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।

প্রশ্ন উত্তর

1. হঠাৎ কোন খবর  শুনে আপনি উত্তপ্ত  হয়ে গেলে এই অবস্থায়  কি করবেন?

ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ুন। খানিক হেঁটে বা দৌড়ে আসুন। যাতে শারীরিক পরিশ্রম হয়। হাঁটার ফলে এন্ডরফিনস, অক্সিটোসিন, ডোপামিন, এড্রেনালিন এমন সব ‘ফিল গুড’ হরমোন নিঃসৃত হয়। তাতে আপনার বেশ খানিকটা ভালো লাগবে।

২. অফিসে কোন প্যারা খেলে বা কাজে মন না বসলে এ অবস্থায় কি করবেন?

  সবকিছু থেকে এক দিনের জন্য ছুটি নিন। ছুটি নিয়ে ফোন বন্ধ করে কাছে কোথাও ঘুরে আসুন বা আপনার যা করতে ইচ্ছা করে, সেটা করুন। পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিন। মনের কথা ভাগাভাগি করে নিন বা পরিবারের সঙ্গে আনন্দময় সময় কাটান।

৩. কি করলে মনের আহত চিহ্নগুলো বিলীন হয়ে যাবে?

এমন একজন মানুষের জন্য কিছু করুন, যাঁকে আপনি চেনেন না। ভবিষ্যতেও আর দেখা হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।  এ ধরনের কাজ আপনাকে ভেতর থেকে দীর্ঘ সময় একটা ভালো অনুভূতি দেবে, যা কিছু স্যাঁতসেঁতে বা আহত চিহ্ন আছে, সেগুলো সব ঢেকে যাবে, বিলীন হয়ে যাবে।

৪. কি করলে আপনার ভিতরের জমে থাকা হতাশা, বিষন্নতা বা ক্ষোভ  ছোট হয়ে আসবে?

➤  এমন কোথাও বসুন, যেখানে আপনাকে কেউ দেখবে না। কিন্তু আপনি অনেককেই দেখতে পাবেন।আপনার অফিসেই আপনি এমন একটি জায়গা খুঁজে পেতে পারেন। বাসার ছাদও হতে পারে এমন একটি স্থান। সেখান থেকে আশপাশের ব্যস্ততা, মানুষের জীবনযাপন, এককথায় ‘হ্যাপেনিং লাইফ অফজার্ভ’ করতে হবে। ‘লাইফ হেক্সের’গবেষণামতে    আপনি নিজের জীবনকে ওই সামগ্রিকতার একটা ক্ষুদ্র অংশ হিসেবে জুড়ে দিতে পারবেন। তখন আপনার নিজের ভেতরজুড়ে যে হতাশা, বিষণ্নতা বা ক্ষোভ জমে আছে, সেটা ছোট হয়ে আসবে।

৫. মনকে আনন্দিত রাখার জন্য এবং নেতিবাচক দিকগুলো দূর করার জন্য কি করা উচিত?

আপনি যে অবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন, সেই বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করুন। ডায়েরিতে পুরো বিষয়ের খুঁটিনাটি লিখে ফেলুন। এক পাশে আপনার নিজের শক্তিশালী দিকগুলোও নোট করে রাখতে পারেন। পুরোনো শখ, অভ্যাস বা কোনো সৃজনশীল কাজ নতুন করে শুরু করতে পারেন। পুরোনো সে রকম কোনো শখ না থাকলে নতুন করে শুরু করুন। এমন কিছু করুন, যেটা আপনি ছোটবেলায় করতেন। জীবন এত ‘সিরিয়াসলি’ নেবেন না। আনন্দে থাকুন। নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলুন। নেতিবাচক আলাপচারিতা থেকে দূরে থাকুন। পর্যাপ্ত ঘুমান। ৮ ঘণ্টা ঘুমিয়ে উঠে দেখবেন, মন খারাপের ভাব অনেকটাই কমে গেছে।

উপসংহার

: জীবন এমন একটা জিনিস যার সাথে জড়িয়ে রয়েছে গোটা ইনভার্সের প্রক্রিয়া। আপনি ইচ্ছে করলেও সে থামবে না। তাই আপনার জীবনের লক্ষ্য বিন্দুতে মনোযোগ পুন:স্থাপনের চেষ্টা করুন। সেখান থেকে লক্ষ্য স্থলের উঁচু স্থলে যখন পৌঁছে যাবেন এবং নিচের দিকে তাকাবেন – সেদিন উপলব্ধি করতে পারবেন জীবন কি, জীবনকে ভালোবাসার মতো সুখের কিছু আর হতে পারে না। তাই নিজেকে জীবনমুখী করে গড়ে তুলতে হবে  এবং কঠিন পরিস্থিতিতে  ধৈর্যধারণ ও সবর অবলম্বন করতে হবে।

Leave a Comment