এই বর্ষায় পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় স্পট

Spread the love

পর্যটন (ইংরেজি: Tourism) এক ধরনের বিনোদন, অবসর অথবা ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে এক স্থান থেকে অন্য স্থান কিংবা এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণ করাকে বুঝায়। ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পর্যটন শিল্প হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এছাড়াও, বিশ্বব্যাপী অবসরকালীন কর্মকাণ্ডের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। যিনি আমোদ-প্রমোদ বা বিনোদনের উদ্দেশ্যে অন্যত্র ভ্রমণ করেন তিনি পর্যটক নামে পরিচিত। ট্যুরিস্ট গাইড, পর্যটন সংস্থা প্রমূখ সেবা খাত পর্যটনের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ – উভয়ভাবেই জড়িত রয়েছে।

১. বরিশালের লাল শাপলার বিল

এক পলকে মনে হবে, লাল শাপলার কোনো চাদর। পুরো বিল জুড়ে বিছানো শাপলা। তাই গ্রামটির নামই হয়ে গেছে ‘শাপলা বিল’। সবাই এই নামে ডাকে উত্তর সাতলা গ্রামটিকে।

এভাবেই বর্ণনা করা হয়েছে বরিশাল জেলার সরকারি ওয়েবসাইটে।

বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের কালবিলা গ্রামে প্রাকৃতিকভাবে শাপলার এই বিলটি তৈরি হয়েছে। সাধারণত সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে এই বিলে লাল শাপলা ফোটে। তখন সেই সৌন্দর্য দেখতে আশেপাশের অনেক জেলা থেকে মানুষ এসে ভিড় করেন।

বরিশাল জেলার ওয়েবসাইটে বর্ণনা করা হয়েছে, ঠিক কত বছর ধরে বিলে এভাবে শাপলা জন্মাতে শুরু করেছে সঠিকভাবে সে তথ্য কেউ দিতে না পারলেও স্থানীয় ষাটোর্ধ কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, তাদের জন্মের পর থেকেই এ বিলে এভাবে শাপলা ফুটতে দেখছেন তারা। বছরের অধিকাংশ সময় জলমগ্ন এ বিলে লাল, সাদা ও বেগুনি রঙয়ের তিন ধরনের শাপলা জন্মালেও লাল শাপলার আধিক্য বেশি।

২. পিরোজপুরের ভিমরুলির ভাসমান পেয়ারা বাজার

তাজা শাকসবজি, ফলমূলের পসরা সাজানো ভাসমান বাজারের কথা ভাবলে প্রথমে মাথায় আসে ফিলিপাইনের কাবিয়াও বা থাইল্যান্ডের ড্যামনোয়েন সাদুয়াক বাজারের নাম। তবে, বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগেও যে এমন কয়েকটি ভাসমান বাজার আছে, তা জানা নেই অনেকের।

তাজা শাকসবজি, ফলমূলের পসরা সাজানো ভাসমান বাজারের কথা ভাবলে প্রথমে মাথায় আসে ফিলিপাইনের কাবিয়াও বা থাইল্যান্ডের ড্যামনোয়েন সাদুয়াক বাজারের নাম। তবে, বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগেও যে এমন কয়েকটি ভাসমান বাজার আছে, তা জানা নেই অনেকের। পিরোজপুরের ভাসমান পেয়ারা বাজার সেগুলোর মধ্যে একটি। পেয়ারার মৌসুমে এই ভাসমান বাজারে বেচাকেনা হয় সর্বোচ্চ।

বাজারের অবস্থান

ভাসমান পেয়ারার বাজারটি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার অন্তর্গত স্বরূপকাঠির কীর্তিপাশা খালের উপর অবস্থিত। সাধারণত পেয়ারার মৌসুম শুরু হয় জুলাই মাসে, চলে টানা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তাই পাইকারি বাজারের দেখা পেতে হলে সেখানে যেতে হবে জুলাইয়ের শেষ দিকের সময়টাতে।

যেভাবে যাবেন পেয়ারা বাজারে

‘পেয়ারা বাজারে যাওয়ার জন্য দুই দিন সময় হাতে থাকলে, রাতের লঞ্চ যাত্রা হবে সবচেয়ে আরামের। সেজন্য প্রথমে সদরঘাট থেকে উঠতে হবে বরিশালগামী লঞ্চে। লঞ্চ থেকে নামার পর সিএনজি বা অটোতে করে যেতে হবে বানারীপাড়া লঞ্চ ঘাটে। সেখান থেকে ট্রলার বা নৌকা ভাড়া করে পৌঁছাতে হবে ভিমরুলি নামক স্থানে।’

তবে পদ্মা সেতুর কল্যাণে দুই দিনের যাত্রা শেষ করা যাবে একদিনেই, যা কিছুদিন আগেও প্রতিকূল আবহাওয়া ও নদী পারাপারের বিপদশঙ্কা আর সময়সাপেক্ষতা এত দ্রুত ফেরি পারাপারকে করে তুলেছিল অচিন্তনীয়। এখন মাত্র ৬ থেকে ৮ ঘণ্টার বাস যাত্রায় যাওয়া যাবে পিরোজপুরে। অর্থাৎ, খুব ভোরে রওয়ানা দিলে দুপুরের মধ্যেই দেখা যাবে বাজারের জমজমাট পরিবেশ। সারাদিন বাজার ঘুরে আবার রাতেই ফিরে আসা যাবে চিরচেনা রাজধানীতে।

৩. পদ্ম ফুলে সেজেছে রাজবাড়ীর বুড়োর বিল

চোখ জুড়ানো সবুজ দিগন্ত বিলে গাড় সবুজ পাতার মাঝে হালকা গোলাপি রংয়ের পদ্ম ফুলের উঁকি। ফোটা পদ্মের সাথে কুঁড়িগুলো মাথা তুলেছে নতুন করে ফোটার আশায়। সবুজ পাতা আর গোলাপী পদ্মের মিলন মেলায় মনের আনন্দে নির্ভয়ে বিচরণ করছে পানকৌড়ি আর ডাহুক। ফুটন্ত পদ্মের মাথায় খেলা করছে প্রজাপতি আর ভ্রমরের দল। প্রকৃতির এমন প্রেমের আলিঙ্গণের নয়নাভিরাম অপরূপ দৃশ্যের দেখা মিলেছে রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের মটবাড়িয়া পদ্ম ফুলের বিলে। জেলার এ পদ্ম বিলটি বর্তমানে বুড়োর বিল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

হালকা গোলাপি রংয়ের পদ্ম ফুলের সৌরভ ও সৌন্দর্য যেমন মানুষের মনকে আকর্ষণ করে তেমনি খাদ্য ও ঔষধিগুনে সমৃদ্ধ এ ফুল অনেক জনপ্রিয়। পদ্ম ফুল অনেকের কাছে আবার বিশুদ্ধতা ও পবিত্রতার প্রতিক হিসেবে গণ্য।

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের মাঠবাড়িয়া বুড়োর বিল। গত তিন দশক ধরে বর্ষাকালে এ বিলে ফোটে গোলাপী রঙের অসংখ্য পদ্ম ফুল। তবে গত দুই বছর ধরে প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে এটি মাঠবাড়িয়ার পদ্মবিল নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। অপরূপ এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভিড় জমাচ্ছেন দর্শনার্থীরা।

আরও পড়ুন

সর্বজনীন পেনশনের জন্য যেভাবে আবেদন করবেন

প্লাস্টিক দূষণ: আমাদের করণীয়

বর্ষাকালে কাপড় শুকানো ও ঘর–বিছানার স্যাঁতসেঁতে ভাব কমানোর উপায়

৪.  নিকলি হাওর

হাওরগুলো বরাবরই পর্যটকদের কাছে ভ্রমণের জন্য অন্যতম প্রিয় স্থান। সেই তালিকায় সম্প্রতি জায়গা করে নিয়েছে কিশোরগঞ্জের নিকলি হাওর। এর একটি বড় কারণ, হাওরের মাঝ দিয়ে চমৎকার একটি রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। সেই রাস্তার দুই পাশে হাওর। কিছুদূর পর পর বসার ব্যবস্থা রয়েছে। ঢাকার একটি পত্রিকার সাংবাদিক জিয়াউর রহমান প্রায়ই পরিবার-পরিজন নিয়ে নিকলি হাওরে বেড়াতে যান।

তিনি বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, নিকলি হাওর সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এখানে ঢাকা থেকে একদিনে গিয়ে একদিনেই ফিরে আসা যায়। টাঙ্গুয়ার হাওরও আমি পছন্দ করি, কিন্তু সেটা তো একদিনে ভ্রমণ সম্ভব না।

‘আরেকটা ব্যাপার হলো, নিকলি হাওরে সাবমার্জিবল রোড আছে। অর্থাৎ বর্ষার সময় রাস্তাটা অনেক সময় পানির নীচে থাকে। তখন রাস্তাটা ধরে অনেকদূর চলে যাওয়া যায়। কাছেই রাতারগুলের মতো একটা জলাবন আছে। ফলে সেখানে গেলে সব ধরনের আমেজ পাওয়া যায়,’ তিনি বলছিলেন।

নিকলি হাওরে নৌকা নিতে ঘোরার সুযোগ আছে।

৫. মৈনট ঘাট

ঢাকার কাছেই দোহার উপজেলায় পদ্মা নদীর তীরের এ জায়গাটি পরিচিত পেয়েছে ‘মিনি কক্সবাজার’ হিসাবে। কারণ নদী তীরে বালুকাবেলা আর পদ্মা নদীর ঢেউ মিলে অনেকটা সমুদ্র তীরের আদল আসে।

পর্যটকদের আনাগোনার কারণে এখানে নদী তীরে সমুদ্র সৈকতের মতোই ছাতাসহ বসার ব্যবস্থাও তৈরি হয়েছে। আশেপাশে রয়েছে অনেক খাবারের দোকান।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী শাহনাজ চৌধুরী কিছুদিন আগে মৈনট ঘাট ঘুরে এসেছেন। তিনি বলছিলেন, ‘ঢাকার কাছে মাত্র দুই ঘণ্টায় যাওয়া যায়। নদীর তীরে বিকেলে বসে থাকলে খুব ভালো লাগে। বাচ্চারা যেন কক্সবাজারের একটা স্বাদ পেয়েছে।’ ঢাকা থেকে বাস বা সিএনজি যোগে মৈনট ঘাট যাওয়া যায়।

৬. চাঁদপুর ও চাঁদপুরের চর

ঢাকা থেকে আরামদায়ক লঞ্চে দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সুযোগ থাকায় অনেকের কাছে ভ্রমণের আরেকটি পছন্দের জায়গা হিসাবে গড়ে উঠেছে চাঁদপুর। ইলিশ মাছের মোকাম হিসাবে বিখ্যাত চাঁদপুরে যাওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য থাকে তাজা মেঘনা নদীর ইলিশ খাওয়া ও কিনে আনা।

সেই সাথে মেঘনা নদীর মাঝে গড়ে ওঠা একটি চর পিকনিক পার্টির কাছে আরেকটি মিনি কক্সবাজার হিসাবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে অনেকে লঞ্চ নিয়ে এই চরে পিকনিক করতে যান।

৭. রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট

রাতারগুল বাংলাদেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট (Ratargul Swamp Forest)। এটি সিলেট জেলা শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। রাতারগুল বনটি প্রায় ৩০,৩২৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। এই বিস্তৃর্ণ এলাকার ৫০৪ একর জায়গায় রয়েছে বন আর বাকি জায়গা ছোট বড় জলাশয়ে পূর্ণ। তবে বর্ষায় পুরো এলাকাটিকেই দেখতে একই রকম মনে হয়।

রাতারগুল ‘সিলেটের সুন্দরবন’ নামে খ্যাত। রাতারগুল জলাবন বছরে চার থেকে পাঁচ মাস পানির নিচে তলিয়ে থাকে। তখন জলে ডুবে থাকা বনের গাছগুলো দেখতে সমগ্র বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পর্যটকরা এসে ভিড় জমায়। অনেক পর্যটক রাতারগুলকে ‘বাংলাদেশের আমাজন’ হিসাবে অভিহিত করেন। বর্ষায় গাছের ডালে দেখা মিলে নানান প্রজাতির পাখি, আবার তখন কিছু বন্যপ্রাণীও আশ্রয় নেয় গাছের ডালে। এছাড়া শীতকালে রাতারগুলের জলাশয়ে বসে হাজারো অতিথি পাখির মেলা। সাধারণত জুলাই থেকে অক্টোবর (বর্ষার শেষের দিকে) পর্যন্ত রাতারগুল ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

রাতারগুল একটি প্রাকৃতিক বন, স্থানীয় বন বিভাগ এখানে হিজল, বরুণ, করচ সহ বেশ কিছু গাছ রোপণ করেন। এছাড়াও এখানে চোখে পড়ে কদম, জালিবেত, অর্জুনসহ প্রায় ২৫ প্রজাতির জলসহিষ্ণু গাছপালা। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ বন বিভাগ রাতারগুল বনের ৫০৪ একর জায়গাকে বন্যপ্রাণীর অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করে।

1 thought on “এই বর্ষায় পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় স্পট”

Leave a Comment