সুস্থ দেহ প্রশান্ত মন: করনীয়

Spread the love

ভালো স্বাস্থ্য মানে শারীরিক ও মানসিক দুই দিক থেকেই সুস্থ বা ঠিক থাকা।  আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন ঠিকভাবে চালিয়ে নিতে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্ব দেওয়া অনেক জরুরী। আজকে আমরা শারীরিক ও মানসিকভাবে কিভাবে সুস্থ থাকা যায় তার কিছু উপায় সম্পর্কে জানবো।

শারীরিক সুস্থতার জন্যে যা করণীয়:

শারীরিক ফিটনেস মানে সুস্থ থাকা, নিরোগ থাকা এবং অবশ্যই কর্মক্ষম থাকা। এটা অর্জনের জন্যে ছোট ছোট কিছু বিষয়ে সচেতন হওয়াই যথেষ্ট। শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে চাইলে এই টিপসগুলো মেনে চলুন।

১। নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহন করুন

খাবার গ্রহণের বিষয়টি সঠিক হয়ে গেলে অনেক ধরণের অসুস্থতা থেকে মানুষ এমনিই বেঁচে যায়। প্রতিদিনের খাবারে ভিটামিন, শর্করা, আমিষ, চর্বি, খনিজ লবণ, পানি—এই ছয়টি খাদ্যপ্রাণ বা উপাদান পরিমাণমতো ও সঠিক অনুপাতে থাকাই সুষম খাদ্য। সব বয়সীদের জন্য পুষ্টিকর ও সুষম খাবার খুব জরুরি। শিশু ও বয়স্কদের জন্য আরো জরুরি। সুষম খাবার দেহের ক্ষয়পূরণ, বৃদ্ধিসাধন, রোগ প্রতিরোধ করতে ভূমিকা রাখে।

২। প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি পান করা

এক গবেষণায় দেখা গেছে যে আমাদের শরীরের বিভিন্ন রোগের অন্যতম কারণ হলো পানি কম পান করা। প্রতিদিন আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পানি পান করা অনেক জরুরী। একজনc প্রতিদিন কমপক্ষে ৬ লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। প্রয়োজনীয় পানি আমাদের শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে।

৩। নিয়মিত ব্যায়াম করুন

নিয়মিত ব্যায়াম মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা হতে পুনরুদ্ধার হতে সাহায্য করে। হৃদ্ররোগ, সংবহন তন্ত্রের জটিলতা, টাইপ ২ ডায়াবেটিস এবং স্থূলতা রোধে শারীরিক ব্যায়াম কার্যকর ভূমিকা রাখে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, কায়িক শ্রম না করায় বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রতি চারজনের একজন রয়েছেন ঝুঁকিতে। দি আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন বলছে, দৈনিক বা সপ্তাহে পাঁচ দিন অন্তত ৩০ মিনিট পরিশ্রম বা ব্যায়াম করা উচিত। লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি দিয়ে যাওয়া, গাড়ির পরিবর্তে বাইক ব্যবহার করা, বাস থেকে এক স্টপে আগে নামা সহজ অভ্যাস যা আপনাকে আরও ব্যায়াম করতে সাহায্য করে।

৪। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান

সুস্থ এবং ফিট থাকার জন্য সময় মতো ঘুমানো এবং সময় মতো ওঠা খুব জরুরী। আমাদের, প্রত্যেকদিন প্রায় ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন। সঠিক পরিমানের ঘুম শরীরের জন্য অনেক জরুরি। ভালো করে এবং সঠিক পরিমানের ঘুম না হলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যাঘাত ঘটে। কারণ চোখে ঘুম ঘুম ভাব থেকে যায় এবং যে কোন কাজ করার জন্য স্ফূর্তির অভাব দেখা যায়।

৫। ওজন নিয়ন্ত্রণ

“ওজন নিয়ে আর মাথা ঘামাব না, খাবার নিয়েও আর বাছ-বিচার করব না।”এরকম ভাবতে ভালোই লাগে। কিন্তু সেটা কী শরীরের জন্য ভালো? প্রত্যেকের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাটা জরুরি, যা সুস্থতার বড় নিয়ামক। অধিক ওজন মানেই জটিল জীবন। তাই সুস্থতার জন্য প্রত্যেককেই উচিৎ বয়স ও উচ্চতা অনুসারে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা।

সুস্থ থাকার জন্য খাবারের তালিকা

সুস্থ থাকতে সুষম খাদ্য তালিকা করে খেতে হবে। খাবারে শর্করা, আমিষ, চর্বি, ভিটামিন ও খনিজ লবণ পরিমাণমতো থাকলে সেই খাবারকে সুষম খাবার বলা হয়। 

  • একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দৈনিক ২৭০ থেকে ৪৫০ গ্রাম চাল, আটা গ্রহণ করা উচিত। 
  • ৩০০ থেকে ৬০০ গ্রাম শাকসবজি এবং ১৫০ থেকে ৩৫০ গ্রাম মাছ, মাংস, ডিম খেতে হবে।
  • এ ছাড়া সুস্থ থাকার জন্য একজন মানুষকে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪৫ মিলি তেল ও চর্বি এবং ৩০ থেকে ৬০ গ্রাম ডাল জাতীয় খাদ্য খেতে হবে।
  •  দুধ ও দুধ জাতীয় খাবার দৈনিক ১৫০ থেকে ৪৫০ মিলি।
  • ফলমূল ১০০ থেকে ২০০ গ্রাম এবং চিনি ১৫ থেকে ২৫ গ্রাম থাকতে হবে।

খাবার শুধু সুষম হলেই চলবে না, খেতে হবে সময়মতো। দিনে তিনবার—সকাল, দুপুর ও রাতে পরিমাণমতো খাবার খেতে হবে।

মানসিক সুস্থতার জন্যে যা করণীয়:

মানসিক স্বাস্থ্য হলো আমাদের মন, আচরণগত ও আবেগপূর্ণ স্বাস্থ্যের দিকটি। আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন ঠিকমতো চালিয়ে নিতে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্ব দেওয়া কিন্তু অনেক গুরুত্বপূর্ণ। জীবনযাপনে সামান্য কিছু পরিবর্তন এনে সব মানসিক সমস্যা দূরে ঠেলে মনকে ফুরফুরে করে তুলতে পারেন। এ রকম সহজ কয়েকটি নিয়ম মেনে চলতে পারেন।

১। মন খুলে হাসুন

ডাক্তাররা বলেন, হাসি এক ধরনের ঔষধ আর নিয়মিত হাসা এক প্রকার ঔষধের মত কাজ করে।নির্মল হাসি কিন্তু আপনাকেই সুখী রাখবে না, আপনার আশেপাশেও ছড়িয়ে দেবে আনন্দ। তাই হাসার চেষ্টা করুন।

২। সম্পর্ককে গুরুত্ব দিন

আমাদের জীবনে নানা ধরনের সম্পর্ক থাকে। বাবা, মা, ভাই, বোন, বন্ধু বা জীবনসঙ্গীর মতো সম্পর্কগুলো কিন্তু আপনাকে স্ট্রেস ও হতাশা কাটাতে সাহায্য করতে পারে। 

৩। দয়ালু হোন

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণা বলছে, অন্যের প্রতি দয়ালু হলে ইনার পিচ বা অন্তর্নিহিত সুখের খোঁজ পাওয়া সম্ভব। যেমন গরীবকে সাহায্য করা, প্রতিবেশীকে কোনও কাজে সাহায্য করা বা অন্যের কল্যাণে কাজ করা।

৪। সৎ সঙ্গে থাকুন

আপনার আশেপাশে কারা সবসময় থাকছে, সেটাও ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। নেতিবাচক মানুষের সঙ্গ পরিহার করে সুখী ও ইতিবাচক মানসিকতার মানুষের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করুন।

৫। ধন্যবাদ দিন

অন্যের প্রতি কৃতজ্ঞ হোন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকা উপভোগ করুন। এটি সুখে থাকার অন্যতম মূলমন্ত্র।  

প্রিয় পাঠক আশা করি, আপনি আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ে সুস্থ থাকার গুরুত্ব যে কতখানি, তা বুঝতে পেরেছেন। শরীর সুস্থ না থাকলে মনও ভালো থাকবে না। তবে এর জন্য চিন্তিত না হয়ে উপরোক্ত কৌশলগুলো অবলম্বন করলেই আপনি সুস্থ, হাসি খুশি ও প্রাণবন্ত থাকতে পারবেন।

Leave a Comment

You cannot copy content of this page