ঘরোয়া পদ্ধতিতে আমরা কিভাবে ধূমপান ছাড়তে পারি ?

Spread the love

ধূমপান ছাড়ার ঘরোয়া উপায়      

ধূমপান ছাড়ার জন্য আপনি কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। সুস্থ জীবন যাত্রার জন্য নিজের ইচ্ছা শক্তি প্রয়োগ করতে হবে। আপনি যদি পরিবারের সহায়তা নিয়ে ঘরোয়া উপায় গুলো মেনে চলতে পারেন। তাহলে আপনি একটি সুস্থ ও শান্তিপুর্ণ ধূমপান মুক্ত জীবন গঠন করতে পারবেন। 

এই কঠিন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য নিচের টিপস্ গুলো অনুস্বরন করতে পারেন:

যেমন-আদা চা, মধু ও দারচিনি, আদা ও আমলকীর গুড়া, লেবু, ব্লাক সল্ট ,মধু, মৌরি ও জোয়ান বীজ, ওটস, মূলা ও মধু, পানি, আঙুরের রস,গ্রিন টি, খাবারের ধরন পরিবর্তন, ধূমপান ছাড়ার উপকারিতা এবং ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হলো:-

ধূমপান ছাড়ার ঘরোয়া উপায় গুলো অনুসরণ করুন 

আদা চা পান করুন:

মনে রাখতে হবে যে ধূমপান ছাড়ার সময় অনেকের সাময়িক কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন মাথা ঘোরা ও বমি বমি ভাব শুরু হয়। এ সব লক্ষণ সহ্য করতে না পেরে আবার ধূমপানে ফিরে যান। দৈনিক আদা চা পান করে আমরা এ সব উপসর্গ থেকে বাঁচতে পারি। আবার শুধু এক টুকরো কাঁচা আদা খেলে ও ধীরে ধীরে ধূমপানের ইচ্ছা কমে যাবে।

মধু ও দারচিনি:

ধূমপান থেকে মুক্তি পেতে প্রথমে আপনাকে দারচিনি ভালো ভাবে শুকিয়ে নিতে হবে। তারপর পিশে গুড়ো করতে হবে। এর পর ধুমপানের ইচ্ছে যখন হবে তখন মধুর সাথে দারচিনির গুড়ো দিয়ে মিশ্রিত করে শরবত করে খাবেন। এটি আপনাকে ধূমপান থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করবে। আবার মধু পান করেও ধূমপান নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

আদা ও আমলকীর গুড়া, লেবু, ব্লাক সল্ট ,মধু:

আদার গুড়া, আমলকীর গুড়া, ব্ল্যাক সল্ট একসাথে মিশিয়ে রেখে দিন। তার পর ১ চা-চামুচ মধু ও ১চা-চামুচ লেবুর রস ১কাপ পানির সাথে জাল দিয়ে ১চা-চামুচ মিক্স করা গুড়া দিয়ে প্রতিদিন ৩ থেকে চার বার খাবেন। আবার আদা,আমলকী,লেবু, ব্ল্যাক সল্ট ও মধু মিশিয়ে জ্বাল দিয়ে ঘন করে রোদে শুকিয়ে টেবলেট করে একটি পাত্রে রেখে দিন। ধূমপানের ইচ্ছা যতবার হবে তত বার পান করবেন, তাহলে ধূম পানের তাড়না থেকে মুক্তি পেতে পারেন।

মৌরি ও জোয়ান বীজ:

মৌরি ও জোয়ান বীজ রোধে শুকিয়ে ভালো করে মচমচে করে নিন। তারপর মৌরি ও জোয়ান বীজ পিশে গুঁড়া করুন। এরপর একটা পাত্রে রেখে দিন। প্রতিদিন রাত্রে মৌরি ও জোয়ান বীজের গুড়া, সামান্য ব্ল্যাক সল্ট ও লেবুর রস মিশিয়ে ভিজিয়ে রেখে দিন। সারা দিন আপনার যখন ধূমপানের ইচ্ছে হবে, তখনি পান করবেন। আবার রোধে শুকিয়ে চুলায় হালকা টেলে মচমচে করে রেখে দিতে পারেন। যখনই ধূমপানের ইচ্ছা হবে তখন হাতের তালুর মাজে খানে যে টুকু সামান্য নেওয়া যায় ঐ পরিমান খাবেন।

ওটস খেতে পারেন:

ওটসের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমান ভিটামিন। ম্যাগনেসিয়াম, প্রোটিন ডায়েটারি ফাইবার,ভিটামিন বি, ক্যালসিয়াম ও জিংক আরো অনেক রকমের ভিটামিন রয়েছে। ওটস শরীরের কর্মক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে। সকল প্রকার পানিয় খাবারের সাথে আপনি ওটস খেতে পারেন। দুধের সাথে বিজিয়ে রেখে জ্বাল করেও ওটস খেতে পারেন। এক গ্লাস পানির সাথে ১চামচ ওটস মিশিয়ে রাত্রে রেখে দিবেন, সাকালে ১০মিনিট পুটিয়ে, দিনে প্রতিটি খাবারের পর, অল্প অল্প করে খেতে থাকুন। এতে শরীর থেকে নিকোটিন বেরিয়ে যাবে,ফলে ধূমপানের ইচ্ছা কমে যাবে।

খাবারের ধরন পরিবর্তন:

ধূমপান ছাড়তে ছাইলে কিছু খাবার এড়িয়ে যেতে হবে। মাংস জাতীয় খাবার ছেড়ে দিতে হবে। খাবারের তালিকায় ফলমুল শাকসবজি রাখতে পারেন। প্রচুর পরিমানে পানি ও ফলের রস পান করুন। মুখে চকলেটওচুইংগাম রাখুন। যে সমস্ত খাবার খেলে ধূমপান করার ইচ্ছা হবে ঐ সমস্ত খাবার পরিত্যগ করুন।

 মূলা ও মধু:

মূলার রস আর মধু একসাথে মিশিয়ে খেলে ধূমপান করার ইচ্ছা অনেকটাই কমে যাবে। প্রতিদিন সকাল ও সন্ধা দু‍‍বেলা মধুর সাথে মূলার রস মিশিয়ে খান। মূলাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি,সালফার ও ফাইবার আছে। আর মধুর কোন তুলনাই হয় না।

পানি:

শরীর সুস্থ রাখার জন্য পানির গুরুত্ব সবচেয়ে বেশী। ধূমপান ছাড়তে পানি প্রচুর পরিমানে পান করা। শরীরে জমে থাকা নিকোটিনকে ধুয়ে বের করে দিতে পানির কোন বিকল্প নেই।

আঙুরের রস খেতে পারেন:

আঙুরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন রয়েছে,আঙুর রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।আঙুরে পর্যাপ্ত পরিমানে পানি এবং ফাইবার থাকে। এটি শরীরের ভেতর জমতে থাকা টক্সিন দূর করে। ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছা কমাতে ও সাহায্য করে।

গ্রিন টি পান করুন :

বর্তমানে গ্রিন টি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। গ্রিন টির সাথে আমরা সবাই মোটামুটি পরিচিত এটাকে পাণীয়ের সাথে তুলনা করলে ভুল হবে। এটা একটি ভেসজ পাণীয়। গবেষনায় দেখা গেছে গ্রিন টিতে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট আর অ্যামিনো অ্যাসিড ধূমপানের প্রবনতা কমাতে সাহায্য করে। কোন অভ্যাসই একদিনে কমানো সম্ভব নয়। অভ্যাস তৈরি হতে যেমন সময় লাগে, তেমনি ত্যাগ করতে ও ধৈর্য প্রয়োজন।

ধূমপান ছাড়ার উপকারিতা:

ধূমপান ছাড়ার কিছুক্ষন পর শরীরে পরিবর্তন দেখা দেয়। ধীরে ধীরে, শরীরে রক্ত চাপ স্বাভাবিক হতে থাকে। নিকোটিনের মাত্রা কমতে শুরু করে। যকৃত মিউকাস ও ধোয়া অংশ পরিস্কার করে। কিছুদিন পর স্বাদ ও গন্ধের পরিবর্তন আসে। তখন পেটে খিদা লাগে, তারপর শ্বাসগ্রহনের সমস্যা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। কর্ম শক্তি বৃদ্ধি পায়। এরপর আস্তে আস্তে রক্ত সন্ঞ্চালনের উন্নতি হতে থাকে। স্ট্রোক,ক্যান্সার ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমবে। ধূমপান ছাড়লে এভাবে মানুষ পরিপূর্ণ ভাবে স্বাভাবিক আবস্থায় পিরে আসতে ১০বছর লাগে।                                                          

প্রতিনিয়তই ধূমপানের কারনে বিশ্বে লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যাচ্ছে। ধূমপানের সঙ্গে সরাসরি হৃদরোগের সম্পর্ক রয়েছে। মানুষ ফুসফুসে ক্যান্সার, মুখগহ্বরের কন্সারসহ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকেই ধূমপানের ক্ষতিকর সম্পর্কে জেনে ও ধূমপান করে। তাই আমাদের সচেতন হওয়া ‌উচিত।

উপরোক্ত আলোচনা থেকে উপলব্ধি করা যায় যে, আমরা ঘরোয়া পদ্ধতিতে যদি সঠিক নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করতে পারি। তবে মনে রাখতে হবে যে ধূমপান ছাড়ার পক্রিয়াটি কঠিন,তবে এটি সম্ভব। ধূমপান বিষপান, ধূমপান ছাড়ুন, নিজের জীবনকে সুস্থ ও সুন্দর রাখুন।

Leave a Comment