ফ্রিল্যান্সিং কি হালাল নাকি হারাম জেনে নিন

Spread the love

ফ্রিল্যান্সিং কি হালাল নাকি হারাম- ইনকাম হালাল নাকি হারাম এ বিষয়টি আসলে ইসলামের সাথে সম্পর্কিত। কেননা, হারাম হালাল নির্ধারণ করেছে ইসলাম। এজন্য যারা ইসলাম গ্রহণকারী প্রকৃত মু’মিন তারা সর্বদা হালাল পন্থায় ইনকাম করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। মু’মিনের ইনকামের মধ্যে হারামের গন্ধ থাকাটাও তারা পছন্দ করেন না। তারা দিনের পর দিন না খেয়ে থাকবে, কষ্টে জীবন যাপন করবে তবুও হারাম ইনকামের পথে পা বাড়াবে না।

কেননা, মু’মিন বান্দারা শুনেছে এবং বিশ্বাস করেছে ইবাদাত কবুল হওয়ার পূর্ব শর্ত হলো হালাল খাওয়া, হালাল ইনকাম করা।

ফ্রিল্যান্সিং কি হালাল নাকি হারাম

অনেকেই এই প্রশ্নটি করে থাকেন যে, ফ্রিল্যান্সিং কি হালাল নাকি হারাম? আপনি গবেষণা করলে দেখতে পাবেন এ প্রশ্নটি শুধুমাত্র মু’মিন মুসলমানরাই করে থাকে। কারণ প্রকৃত মুসলমান হারাম ইনকামকে প্রচন্ড রকমের ঘৃণা করে এবং ভয় পায়।

কেননা, ক্বিয়ামাতের দিন তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে, কোন্ পথে আয় করেছো এবং কোন পথে ব্যয় করেছো।

এ প্রশ্নের উত্তর সেদিন সঠিকভাবে সেই ব্যক্তিই দিতে পারবেন, যিনি দুনিয়াতে সৎভাবে জীবন যাপন করেছেন এবং হালাল ইনকাম ও হালাল পথে ব্যয় করেছেন।

যাই হোক, ফ্রিল্যান্সিং কি হালাল নাকি হারাম, এ প্রশ্নের উত্তর কি হতে পারে? হালাল নাকি হারাম? ফ্রিল্যান্সিং কি হালাল নাকি হারাম, এটি জানতে হলে প্রথমে আপনাকে জানতে হবে ফ্রিল্যান্সিং কি এবং কি কি উপায়ে ফ্রিল্যান্সিং করা হয়।

তাহলে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে যে, ফ্রিল্যান্সিং কি হালাল নাকি হারাম? চলুন প্রথমেই জানার চেষ্টা করবো ফ্রিল্যান্সিং কি?

ফ্রিল্যান্সিং কি? | What is Freelancing?

ফ্রিল্যান্সিং এর সহজ অর্থ হলো- স্বাধীনভাবে কাজ করে ইনকাম করা। আরও একটু বিস্তারিতভাবে ফ্রিল্যান্সিং কে এভাবে সংঙ্গায়িত করা যেতে পারে- নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অধীনে কাজ না করে, নিজের পছন্দমত, স্বাধীন মনে, স্বাধীনভাবে কাজ করার মাধ্যমে ইনকাম করাই হলো ফ্রিল্যান্সিং। ফ্রিল্যান্সিং করে ইনকাম করার মধ্যে পরিপূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে।

আর যারা স্বাধীনভাবে কাজ করে ইনকাম করে থাকে তাদেরকে বলা হয় ফ্রিল্যান্সার।

আমরা বেশীরভাগই মনে করি, ফ্রিল্যান্সিং মানে হলো অনলাইন থেকে ইনকাম করা। এ কথাটি সত্য নয়। কেননা, লোকাল বা অফলাইনেও প্রচুর কাজ রয়েছে। যেগুলো স্বাধীনভাবে করার মাধ্যমে ইনকাম করা যায়। লোকাল ইনকামই হোক আর অনলাইন ইনকামই হোক স্বাধীনভাবে করার নামই হলো ফ্রিল্যান্সিং।

তবে অনলাইনের বেশিরভাগ কাজই স্বাধীনভাবে করা যায় বিধায়, ফ্রিল্যান্সিং শব্দটি শুনলেই আমরা অনলাইন ইনকামকে বুঝে থাকি।

কি কি উপায়ে ফ্রিল্যান্সিং করা হয়?

ক) ফ্রিল্যান্সিং করে ইনকাম করার একটি উপায় হলো- সেলার এবং বায়ার পরস্পরের মধ্যে আলোচনা সাপেক্ষে কাজ আদান-প্রদান করা হয়।

এখন প্রশ্ন হলো সেলার কে আর বায়ার কে? বায়ার হলেন যিনি কাজ দেন বা কাজ করিয়ে নেন এবং সেলার হলেন যিনি কাজ করেন বা সার্ভিস দিয়ে থাকেন।

যেহেতু উভয় পক্ষ সমঝোতার ভিত্তিতে কাজের রেট, কাজ জমা দেয়ার সময়সীমা ইত্যাদি নির্ধারণ করে কাজ সম্পন্ন করে থাকেন তাই এ পদ্ধতিতে ইনকাম করা হালাল হিসেবে গণ্য হবে। কেননা, এখানে অন্যায়ভাবে কেউ কারো ক্ষতি করছে না।

তবে সেলার যদি চুক্তি অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন না করে টাকা উপার্জন করেন অথবা বায়ার যদি কাজ করানোর পর ঠিকমত কাজের টাকা পরিশোধ না করেন তাহলে সেক্ষেত্রে এই ইনকাম হারাম হতে পারে।

এখানে উল্লেখ্য যে, উভয় পক্ষের সমঝোতার ভিত্তিতে সম্পন্ন করা সকল ব্যবসাই কিন্তু হালাল নয়। ইনকাম হালাল হতে হলে তার বস্তু, কন্টেন্ট এবং প্রক্রিয়াও হালাল হতে হবে। মদের ব্যবসাও তো ক্রেতা বিক্রেতার সম্মতিতেই হয় তাই বলে কি মদের ব্যবসা হালাল হবে? কখনই না।

খ) ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে অনেকে বিভিন্ন পণ্য বা সার্ভিস বিক্রি করে ইনকাম করে থাকে। এটাও ফ্রিল্যান্সিং এর অন্তর্ভূক্ত। পণ্য বা সার্ভিস সম্পর্কে মার্কেটিং করার সময় যে বিবৃতি দেওয়া হয় সে অনুযায়ী যদি ক্লায়েন্টকে সার্ভিস বা পণ্য দেওয়া হয় তাহলে এটা হালাল হবে। অন্যথায় হারাম হিসেবে গণ্য হবে।

অনেকেই বিজ্ঞাপনের সময় একটি প্রোডাক্ট দেখিয়ে আরেকটি প্রোডাক্ট ধরিয়ে দেয়। ক্লায়েন্টের সাথে প্রতারণা করে থাকে। এটাকে ইসলাম একদমই সমর্থন করে না।

গ) ফ্রিল্যান্সিং এর আরেকটি উপায় হলো- ব্লগিং করে ইনকাম করা। ব্লগিং এর ইনকাম আসে গুগল এডসেন্স থেকে। ওয়েবসাইট তৈরী করে সেখানে বিভিন্ন বিষয়ে কন্টেন্ট লিখে পাবলিশ করা হয়। ২০-২৫টি ভালো মানের কন্টেন্ট পাবলিশ করার পর এডসেন্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এডসেন্সের অনুমোদন পাওয়ার পরই আপনার ব্লগসাইটের ইনকাম শুরু হয়ে যাবে।

গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে ইনকাম করাকে অনেকেই হারাম বলেছেন। তবে সম্পূর্ণই যে হারাম তা কিন্তু নয়।

ফ্রিল্যান্সিং কি হালাল নাকি হারাম

আপনার সাইটে যদি হারাম কোন পণ্যর বিজ্ঞাপন থাকে অথবা নারী প্রদর্শিত কোন বিজ্ঞাপন থাকে তাহলে সেই বিজ্ঞাপন থেকে আয়কৃত অর্থ হারাম হবে।

গুগল এডসেন্সের বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যদি আপনি এ সমস্ত হারাম পন্যের বিজ্ঞাপন অথবা নারী প্রদর্শিত বিজ্ঞাপনকে নিয়ন্ত্রণ করে এডসেন্সের মাধ্যমে ইনকাম করতে পারেন তাহলে আপনার ইনকাম হালাল হবে।

ঘ) ইউটিউব থেকে আয় করা ফ্রিল্যান্সিং আরেকটি উপায়। গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে ইউটিউব থেকে যে ইনকামগুলো করা হয় সেগুলোকে ইসলামিক স্কলাররা এক বাক্যে হারাম বলেছেন।

কেননা, ইউটিউব ভিডিওগুলোতে যে বিজ্ঞাপনগুলো ইউটিউব কর্তৃক প্রচার করা হয় সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করার কোন উপায় নেই। ইউটিউব নিজের ইচ্ছামত আমাদের চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপন প্রচার করে থাকে। হারাম পণ্য বা নারী প্রদর্শিত বিজ্ঞাপন বন্ধ করার কোন উপায় ইউটিউব রাখেনি।

এজন্য এডসেন্সের মাধ্যমে ইউটিউব থেকে আয় সম্পূর্ণভাবে হারাম।

তবে ইউটিউব থেকে অন্যান্য উপায়ে ইনকামের কিছু সুযোগ রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে কিছু কিছু উপায়কে ইসলামিক স্কলাররা হালাল হিসেবে সাব্যস্ত করেছে।

ঙ) ট্রেনিং দেওয়া। ফ্রিল্যান্সিং হিসেবে অনেকেই ট্রেনিং পেশাকে বেছে নেন। অফলাইন ও অনলাইন দুইভাবেই ট্রেনিং দেওয়া যায়। ট্রেনিং দিয়ে ইনকাম করা অবশ্যই হালাল হওয়া উচিত। হালাল অবশ্যই হতে পারে যদি এর মধ্যে কোন ফাঁকিবাজি না থাকে অর্থাৎ যে বিষয়গুলো বা যতটুকু শেখানোর জন্য আপনি টাকা নিয়েছেন সেগুলো যদি শতভাগ শেখান।

অন্যথায় আপনার ইনকামগুলো হারাম হবে।

অনেকেই ট্রেনিং সেন্টার খুলে ঠিকমত সার্ভিস না দিয়ে প্রতারণা করে ব্যবসা করছে। তবে সব ট্রেনিং সেন্টারই যে প্রতারণা করে ব্যবসা করছে তা কিন্তু নয়।

কোন্ উপায়ে ইনকাম করলে হালাল হবে এবং ইনকাম হারাম হওয়ার শর্ত কি সে বিষয়ে ইসলামের দিক নির্দেশনা বা নীতিমালা ভালোভাবে জানা উচিত। কেননা, ইসলামের দিক নির্দেশনা অনুসারেই তো হারাম হালাল নির্ধারণ করা হয়েছে।

মহান আল্লহ্ তা’আলা পবিত্র কুরআনের সুরা নিসা’র ২৯ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন-

হে মুমিনগণ, তোমরা পরস্পরের মধ্যে তোমাদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না, তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসার মাধ্যমে হলে ভিন্ন কথা।

ফ্রিল্যান্সিং কি হালাল নাকি হারাম

পবিত্র কুরআনের এই আয়াতকে সামনে রেখে দেখতে হবে ফ্রিল্যান্সিং করে ইনকাম করার মধ্যে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করার কোন সুযোগ আছে কিনা? যদি এমন কিছু থেকে থাকে তাহলে নিঃসন্দেহে সে ইনকাম হারাম হবে।

এখানে একটি বিষয় মনে রাখা জরুরী- প্রায় প্রতিটি ব্যবসা বা সকল কাজই হারাম এবং হালাল দুটি পন্থায়ই করা যায়। তাই বলে কি সকল ব্যবসাই হারাম? না, অবশ্যই না।

আপনি কোন পন্থায় ইনকাম করছেন তার উপর ভিত্তি করে হারাম অথবা হালাল হিসেবে গণ্য হবে। তবে কিছু কিছু ব্যবসা বা এমন কিছু কাজ আছে যেগুলোকে সম্পূর্ণভাবেই হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। সেগুলো কোন অবস্থাতেই হালাল করার উপায় নেই। যেমন-

ক) মাদক দ্রব্য বা নেশা জাতীয় সকল পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করা অথবা এ সকল পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করে ইনকাম করা।
খ) নারীদের দিয়ে বিজ্ঞাপন বানানো অথবা এ সকল প্রচার করা করে ইনকাম করা।
গ) ইসলামে নিষিদ্ধ বা আইন বিরোধী কোন ভিডিও তৈরী করা এবং সেগুলো প্রচার করে ইনকাম করা।

শেষকথা- উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টভাবে বুঝা যায় ফ্রিল্যান্সিং করে ইনকাম করাকে শতভাগ হালাল বা শতভাগ হারাম বলার কোন সুযোগ নেই। তবে এখানে হালালের পরিমান অনেক বেশী। কিছু কিছু কাজ বা প্রক্রিয়া রয়েছে যেগুলোকে হারাম হিসেবে সাব্যস্ত করা যায়।

ইনকাম হালাল হওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি মনে রাখতে হবে, তাহলো- ইনকামের বস্তু, কন্টেন্ট এবং প্রক্রিয়া অবশ্যই হালাল হতে হবে। আশা করছি আপনারা ফ্রিল্যান্সিং কি হালাল নাকি হারাম এ প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন। এ ধরণের বিভিন্ন বিষয়ে জানতে আমাদের ওয়েবসাইটে নিয়মিত চোখ রাখুন।

আরও একটি কথা- ফ্রিল্যান্সিং কি হালাল নাকি হারাম, এ সম্পর্কে আমাদের আর্টিকেলে যা লেখা হয়েছে, এগুলো যদি আপনার কাছে গ্রহণযোগ্য না মনে হয়, তাহলে আপনি একজন বিজ্ঞ আলেমের নিকট থেকে জেনে নিন। তবে অবশ্যই সেই আলেমের কাছে যেতে হবে, যিনি এই বিষয়ে জ্ঞান রাখেন বা এ বিষয় সম্পর্কে অবগত আছেন।

Leave a Comment