পড়ার রুটিন বানানোর নিয়ম জেনে নিন

পড়ার রুটিন বানানোর নিয়ম জেনে নিন

পড়ার রুটিন বানানোর নিয়ম- ভাল শিক্ষার্থী হতে বা পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে হলে পড়াশোনার বিকল্প কিছু নেই। গবেষণা করলে দেখা যায়- যারা প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থী বা পরীক্ষায় যারা ভালো রেজাল্ট করেন তারা নিয়মিত লেখাপড়া করেন। এছাড়া তাদের অধিকাংশই রুটিন মাফিক লেখাপড়া করে থাকেন। ভালো ছাত্র/ছাত্রী হতে হলে রুটিন এর গুরুত্ব অপরিসীম। চলুন আজ আমরা পড়ার রুটিন বানানোর নিয়ম সম্পর্কে জেনে নেওয়ার চেষ্টা করি।

পড়ার রুটিন বলতে কি বুঝায়?

একজন শিক্ষার্থী প্রতিদিন কতটুকু সময় লেখাপড়া করবে, কোন বিষয় কতক্ষণ এবং কখন পড়বে, পড়ালেখার বাইরে আরও কি কি কাজ করতে হবে সেগুলো পূর্বে নির্ধারণ করে সম্পন্ন করাকেই রুটিন বলা হয়।

রুটিন তৈরি করে কেন পড়বো বা এর উপকারিতা কি?

পড়াশোনার পূর্বে রুটিন তৈরী করার বেশ কিছু উপকারিতা খুঁজে পাওয়া যায়। একজন শিক্ষার্থীর লেখাপড়ায় রুটিনের ভূমিকা কতটুকু বা এর কি কি উপকারিতা রয়েছে তা নিম্নরূপ-
১) শিক্ষার্থীকে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে সাহায্য করে।
২) সময়ের কাজ সময়ে সম্পন্ন করতে শিখায়।
৩) নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলা শিখায়।
৪) সময় জ্ঞান ও সময়ের গুরুত্ব শিক্ষা দেয়।
৫) পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করতে সাহায্য করে।
৬) রুটিনে সকল বিষয় এবং সেগুলো পড়ার সময় উল্লেখ থাকার কারণে প্রতিটি বিষয়ই সমানভাবে পড়া হয়। যার ফলে কোন বিষয়ে দূর্বলতা থাকলেও তা দূর হয়ে যায়। এই বিষয়টি খেয়াল করলে বুঝা যায় রুটিন তৈরী করে পড়ার প্রয়োজনীয়তা আবশ্যক।

পড়ার রুটিন বানানোর নিয়ম-

ভালো ছাত্র/ছাত্রী হতে হলে রুটিন তৈরী করে পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু পড়ার রুটিন বানানোর নিয়ম আমরা অনেকেই জানি না। এখানে একটি কথা বলে রাখতে চাই- সকল ছাত্র/ছাত্রীর পড়ার রুটিন একই হতে হবে কথাটি ঠিক নয়। কেননা প্রত্যেকেরেই আলাদা আলাদা পছন্দ রয়েছে। কেউ খুব ভোরে উঠে পড়তে পছন্দ করেন আবার কেউ দেরিতে উঠতে পছন্দ করেন। কেউ রাত জেগে পড়তে পছন্দ করেন কেউবা তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েন। তবে পছন্দ যার যেমনই হোক না কেন সবকিছুরই একটি সঠিক নিয়ম থাকে। সকলকে সেই নিয়ম মেনেই চলা উচিৎ।

আরো একটি বিষয় হলো- একজন শিক্ষার্থী তার প্রতিদিনের রুটিনকে তৈরী করবে তার ক্লাস টাইমকে কেন্দ্র করে। কেননা আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কয়েকটি শিফট্ এ ক্লাস নির্ধারণ করে থাকে। কারো মর্নিং শিফট্ বা কারো ডে শিফট্ অথবা কারো নাইট শিফট্। এক্ষেত্রে একজনের সাথে অন্যজনের রুটিনে মিল থাকা সম্ভব নয়। আমরা আজ যে রুটিন তৈরী করবো তা নিম্নরূপ-

সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ক্লাস করা একজন শিক্ষার্থীর রুটিনে কি কি বিষয় থাকবে?

ক) রুটিনের সর্বপ্রথম কাজ হলো ইবাদাত। একজন মুসলিম শিক্ষার্থী তার রবের সন্তুষ্টির জন্য প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সলাত যথাসময়ে আদায় করবে।
খ) প্রতিদিন পবিত্র কুরআন ও হাদিস অধ্যয়ন করা এবং এগুলো অধ্যয়েনের মাধ্যমে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা।
গ) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যপুস্তক অধ্যয়ন করা।
ঘ) অন্যান্য বিষয় অধ্যয়ন যেমন- সাধারণ জ্ঞান চর্চা, দেশ-বিদেশের খবর সম্পর্কে জানা, পত্রিকা পড়া ইত্যাদি।
ঙ) নিয়মিত খেলাধুলা করা।
চ) ব্যায়াম বা শরীর চর্চা করা।
ছ) সময়মত খাবার গ্রহণ করা।
জ) পারিবারিক কাজে সহযোগিতা করা।
ঝ) প্রয়োজনে সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণ করা।
ঞ) অনাকাঙ্খিত কাজের জন্য সময় ব্যয় করা।
ট) মানসিক প্রশান্তির জন্য কিছু সময় ঘুরতে বের হওয়া বা আড্ডা দেওয়া।
ঠ) শারিরীক ও মানসিক সুস্থ্যতার জন্য পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুমানো।

রুটিন অনুযায়ী লেখাপড়া ও অন্যান্য কাজের সময়সূচী | পড়ার রুটিন বানানোর নিয়ম

ক) ভোর ৪টায় ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ফজর সলাতের পূর্ব পর্যন্ত এক থেকে দেড় ঘন্টা পড়ুন। এরপর সলাতের সময় হলে মসজিদে গিয়ে জামা’আতে সলাত আদায় করুন।
খ) সলাত আদায় হলে রুমে এসে পবিত্র কুরআন থেকে কমপক্ষে এক পৃষ্ঠা অনুবাদ সহ তিলাওয়াত এবং একটি হাদিস পাঠ করুন। মুসলিম হিসেবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পড়ার টেবিলে একটি করে কুরআন ও কিছু হাদিসের বই রাখা উচিৎ। তবে পবিত্র এই কিতাবগুলোকে অন্যান্য বই থেকে একটু আলাদা করে সম্মানের সাথে রাখুন।
গ) কুরআন ও হাদিস অধ্যয়নের পর প্রকৃতির মনোরম কোন পরিবেশে গিয়ে কিছু সময় হাটাহাটি ও ব্যয়াম করুন।
ঘ) ব্যায়াম শেষ হলে রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে হালকা কিছু নাস্তা করুন।
ঙ) নাস্তা শেষ হলে একটানা সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
চ) সাড়ে আটটা থেকে নয়টা অথবা সোয়া নয়টার মধ্যে গোসল, পোশাক পরিধান এবং সকালের নাস্তা শেষ করুন।
ছ) নয়টা থেকে সোয়া নয়টার মধ্যে স্কুলের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যান।
জ) মনোযোগ সহকারে প্রতিটি ক্লাস করুন। ক্লাসের পড়া ক্লাসেই সম্পন্ন করার চেষ্টা করুন।
ঝ) টিফিন পিরিয়ডে যোহরের সলাত আদায় করে টিফিন শেষ করুন। টিফিন শেষে সময় পেলে পরবর্তী ক্লাসের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।
ঞ) ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে সময় পেলে ক্লাসের লেকচার বা নোট্স নিয়ে বন্ধুদের সাথে আলোচনা করুন। আজে বাজে গল্প করে সময় নষ্ট করবেন না।
ট) ক্লাস শেষ হলে কোথাও কোন আড্ডা না দিয়ে সরাসরি বাসায় চলে আসুন।
ঠ) বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার গ্রহণ করুন। খাবার শেষ হলে একটু ঘুমিয়ে নিন। ঘুম না আসলেও অন্তত আসরের সলাত পর্যন্ত বিশ্রাম করুন।
ড) বিশ্রাম নেওয়ার পর আসরের সলাত আদায় করুন।
ঢ) আসরের সলাত আদায়ের পর মাগরিবের সলাত পর্যন্ত সময়টুকু নিজের মতো করে কাটাতে পারেন। যেমন- খেলাধুলা করা, ঘুরে বেড়ানো, ভাল বন্ধু বা পরিবারের কারো সঙ্গে গল্প করা অথবা আড্ডা দেওয়া ইত্যাদি।

পড়ার রুটিন বানানোর নিয়ম | কিভাবে পড়াশোনা করলে ভালো রেজাল্ট করা যায়

ণ) মাগরিবের আযান হলে সলাত আদায় করে সরাসরি রুমে চলে আসুন। রুমে এসে হালকা কিছু নাস্তা করুন। নাস্তা শেষ করে একটানা ইশার সলাতের পূর্ব পর্যন্ত পড়ুন।
ত) ইশার আযান হলে সলাত আদায় করুন।
থ) সলাত শেষ হলে রুমে এসে রাতের খাবার খেয়ে নিন।
দ) খাবার শেষ করে রাত ৯:৪৫ মিনিট পর্যন্ত পড়ুন।
ধ) পড়া শেষ করে আধা ঘন্টা অর্থাৎ রাত ৯:৪৫ থেকে ১০:১৫ মিনিট পর্যন্ত পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে মত বিনিময় করুন। পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করুন।
ন) রাত সোয়া দশটায় ঘুমের প্রস্তুতি গ্রহণ করুন এবং রাত সাড়ে দশটার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ুন। আসলে রাত জেগে লেখাপড়ায় লাভবান হওয়া যায় না। বরং রাত জেগে না পড়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ুন এবং ভোরে ঘুম থেকে উঠে লেখাপড়া করুন। ইসলাম ও চিকিৎসা শাস্ত্র অনুযায়ী রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হবে এবং সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে হবে। এতে বহুবিধ উপকারিতা রয়েছে। আমেরিকান লেখক জেমস থার্বার তার এক কবিতায় বলেছিলেন-

”Early to bed and early to rise
Makes a man, healthy, wealthy and wise”

প) ছুটির দিনগুলোতে রুটিন একটু পরিবর্তন করতে হবে। সপ্তাহের অন্যান্য দিনের মতো ছুটির দিনেও ভোর থেকে সকাল ৮:৩০ মিনিট এবং সন্ধ্যা থেকে রাত ৯:৪৫ মিনিট পর্যন্ত লেখাপড়া অব্যহত রাখতে হবে। কেননা পরদিন ক্লাসের পড়া সম্পন্ন করতে হবে।
ফ) যেহেতু ছুটির দিনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে তাই এই দিনগুলোতে ব্যক্তিগত কিছু কাজ করতে পারেন। যেমন-

১) চুল, হাত-পায়ের নখ কাটা
২) কোন কিছু কেনাকাটা করার থাকলে সেগুলো সম্পন্ন করা
৩) পারিবারিক বা অন্য কোন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা
৪) মাইন্ড ফ্রেশনেসের জন্য দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়া
৫) সামাজিক উন্নয়নে কোন কাজে অংশগ্রহণ করা ইত্যাদি।

পড়াশোনা করার রুটিন এক নজরে

ভোর ৪টা থেকে ফজর পর্যন্ত
(এক থেকে দেড় ঘন্টা)
ক্লাসের পড়া অধ্যয়ন করুন
ফজরের আযান হলেমসজিদে গিয়ে সলাত আদায় করুন (ছাত্র)
ফজরের সলাত আদায় শেষ হলেরুমে এসে পবিত্র কুরআন থেকে কমপক্ষে ১ পৃষ্ঠা অনুবাদ সহ পড়ুন
কুরআন পড়া হলেপ্রকৃতির মনোরম কোন পরিবেশে গিয়ে কিছু সময় হাটাহাটি ও ব্যয়াম করুন। ব্যায়াম শেষ হলে রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে হালকা কিছু নাস্তা করুন।
নাস্তা শেষ হলে একটানা সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
৮:০০ – ৯:১৫গোসল, পোশাক পরিধান এবং সকালের নাস্তা শেষ করুন।
৯:১৫ – ৯:২০ ক্লাসের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে যান
১০:০০ – ৪:০০মনোযোগ সহকারে প্রতিটি ক্লাস করুন। ক্লাসের পড়া ক্লাসেই সম্পন্ন করার চেষ্টা করুন।
টিফিন পিরিয়ডে যোহরের সলাত আদায় করে টিফিন শেষ করুন। টিফিন শেষে সময় পেলে পরবর্তী ক্লাসের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।
ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে সময় পেলে ক্লাসের লেকচার বা নোট্স নিয়ে বন্ধুদের সাথে আলোচনা করুন।
ক্লাস শেষ হলে সরাসরি বাসায় চলে আসুন।

পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করতে একজন শিক্ষার্থীকে যে বিষয়গুলো অবশ্যই বর্জন করতে হবে-

ক) ধুমপান বা নেশা জাতীয় দ্রব্য।
খ) প্রেম-ভালবাসা।
গ) মোবাইল, ফেসবুক, চ্যাট করা, ইউটিউব, ভিডিও গেম্স সহ অন্যান্য গেম্স ইত্যাদি।
ঘ) বাজে আড্ডা দেওয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page