ডিপ্লোমা শেষ? এবার বিদেশে পড়াশোনার সহজ পথ!

Spread the love

ডিপ্লোমা শেষে বিদেশে পড়াশোনা করা আজকের দিনে অনেক শিক্ষার্থীর স্বপ্ন। এই স্বপ্ন শুধুমাত্র একটি নতুন দেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা নয়, বরং নিজের ক্যারিয়ার গড়ার জন্য একটি সঠিক ও শক্তিশালী পথ অনুসন্ধান করা। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে আন্তর্জাতিক শিক্ষার গুরুত্ব দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে ডিপ্লোমা শেষ করে অনেকেই জানেন না কিভাবে বিদেশে সুযোগের দরজা খুলবে, কী কী প্রস্তুতি নিতে হবে বা কোন দেশে ভালো পড়াশোনা করা যায়। এই লেখায় আমরা সহজ ও তথ্যবহুল ভাষায় সেইসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করব এবং আপনাকে বিদেশে পড়াশোনার পথে এগিয়ে যেতে সাহায্য করব।

১। ডিপ্লোমা শেষের পর বিদেশে পড়াশোনা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

আমরা যখন একটি ডিপ্লোমা কোর্স শেষ করি, তখন আমাদের জীবনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে নতুন একটি প্রশ্ন — “এরপর কী?” কেউ চাকরির চিন্তা করে, কেউ আবার উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু অনেক শিক্ষার্থীর মনেই একসময় একটা ইচ্ছে জাগে—“বিদেশে পড়তে গেলে কেমন হয়?” এই প্রশ্নটা খুবই স্বাভাবিক, কারণ বর্তমান বিশ্বে পড়াশোনা শুধু নিজের দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। বরং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জ্ঞান অর্জন, প্রযুক্তিগত দক্ষতা, এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা নেওয়ার দারুণ সুযোগ তৈরি হয়েছে।

বিদেশে পড়াশোনার একটি বড় সুবিধা হলো—আপনি এক নতুন সংস্কৃতি, ভাষা এবং পরিবেশের সাথে পরিচিত হন। আপনি শুধু বইয়ের জ্ঞান অর্জন করেন না, বরং নিজের জীবনযাপন, চিন্তাভাবনা ও যোগাযোগ দক্ষতাকেও উন্নত করতে পারেন। ডিপ্লোমা শেষ করে যদি আপনি বিদেশে যান, তাহলে আপনি এমন একটা জায়গায় পৌঁছান যেখানে রয়েছে উন্নত শিক্ষা পদ্ধতি, আধুনিক ল্যাব সুবিধা এবং চাকরি পাওয়ার ভালো সুযোগ।

আরেকটি বড় সুবিধা হলো—বিদেশে পড়াশোনার মাধ্যমে আপনি গ্লোবাল কমিউনিটির অংশ হয়ে যান। ধরুন, আপনি জার্মানি, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া বা জাপানে পড়তে গেলেন, সেখানকার ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও গবেষকদের সঙ্গে মেলামেশা করার সুযোগ পাবেন। এতে আপনার চিন্তাধারা আন্তর্জাতিক হয়ে উঠবে। আপনি শুধু নিজের দেশের চাকরির বাজারেই সীমাবদ্ধ থাকবেন না, বরং বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর দোরগোড়ায় পৌঁছাতে পারবেন।

তবে এটাও ঠিক যে বিদেশে পড়তে যাওয়ার সিদ্ধান্তটি হঠাৎ করে নেওয়ার মতো নয়। এখানে প্রয়োজন হয় পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও সঠিক তথ্য জানার। ঠিক কোন দেশে গেলে আপনার ডিপ্লোমা অনুযায়ী ভালো কোর্স পাওয়া যাবে? কীভাবে ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়? কত খরচ পড়বে?—এসব প্রশ্নের উত্তর জানা খুব দরকার।

এই লেখায় আমরা পর্যায়ক্রমে সবগুলো বিষয় খুব সহজভাবে ব্যাখ্যা করব যাতে একজন ৭ বছরের বাচ্চাও সহজে বুঝতে পারে—ডিপ্লোমা শেষ করে বিদেশে পড়াশোনার রাস্তা কতটা সুন্দর এবং সম্ভাবনাময় হতে পারে।

২। কোন কোন দেশে ডিপ্লোমা শেষে পড়াশোনার জন্য যাওয়া যায় এবং কেন?

ডিপ্লোমা শেষ করে যখন আমরা বিদেশে পড়াশোনার কথা ভাবি, তখন প্রথম প্রশ্ন আসে—“কোন দেশে যাব?” সব দেশ তো সমান নয়, তাই না? প্রতিটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, কোর্সের মান, খরচ, স্কলারশিপ, চাকরির সুযোগ, এমনকি আবহাওয়া—সবকিছুই আলাদা। তাই সঠিক দেশ বেছে নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিচে আমরা কিছু জনপ্রিয় দেশের কথা সহজভাবে ব্যাখ্যা করছি, যারা ডিপ্লোমা-পরবর্তী শিক্ষার্থীদের জন্য দারুণ সুযোগ দেয়।

২.১ কানাডা:
এই দেশটি অনেক শিক্ষার্থীর প্রথম পছন্দ। কেন? কারণ কানাডার শিক্ষা ব্যবস্থা খুব উন্নত এবং প্র্যাকটিক্যাল। ডিপ্লোমা শেষে আপনি “Bachelor” বা “Advanced Diploma” পড়তে পারবেন। কানাডায় পড়ালেখা করলে পার্ট-টাইম কাজ করার সুযোগ থাকে এবং পরে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া যায়, যা চাকরির জন্য দারুণ একটা সুযোগ।

২.২ অস্ট্রেলিয়া:
অস্ট্রেলিয়া ডিপ্লোমা শেষে পড়ালেখার জন্য খুবই পরিচিত। এখানে অনেক টেকনিক্যাল ও প্রফেশনাল কোর্স রয়েছে যা বাংলাদেশি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের সাথে ভালোভাবে মানিয়ে যায়। এখানেও পার্ট-টাইম চাকরি করার সুবিধা আছে, এবং স্থায়ীভাবে থাকার (PR) সুযোগও থাকে।

২.৩ জার্মানি:
যারা কম খরচে উচ্চশিক্ষা করতে চান, তাদের জন্য জার্মানি এক আদর্শ দেশ। অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি একেবারে নেই বা খুবই কম। ডিপ্লোমা শেষে আপনি “Bachelor” কোর্সে ভর্তি হতে পারেন। তবে এখানে জার্মান ভাষা জানাটা অনেক সময় কাজে দেয়।

২.৪ ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস ও সুইডেন:
এই দেশগুলোও শিক্ষার্থীদের জন্য দরজা খুলে রেখেছে। আধুনিক ল্যাব, আন্তর্জাতিক কোর্স, আর স্টুডেন্ট ফ্রেন্ডলি পরিবেশ এই দেশগুলোর বিশেষ দিক। ইংরেজিতেই বেশিরভাগ কোর্স পড়ানো হয়।

২.৫ মালয়েশিয়া ও চীন:
কম খরচে ভালো মানের শিক্ষা পেতে চাইলে এই দেশগুলোর কথাও চিন্তা করতে পারেন। এখানকার কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এবং ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ স্কলারশিপও দিয়ে থাকে।

তবে শুধু দেশ বেছে নেওয়াই যথেষ্ট নয়, আপনাকে দেখতে হবে—আপনার ডিপ্লোমা কোন বিষয়ে, আপনি কোন বিষয়ে আগ্রহী, এবং ভবিষ্যতে কী ধরনের চাকরি চান। এসব মিলিয়ে দেশ ও কোর্স বেছে নিলে সফলতার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে।

এই ধাপে আমরা বুঝলাম কোন কোন দেশ ডিপ্লোমা শেষ করার পর পড়ালেখার জন্য উপযুক্ত এবং কোন দিকগুলো বিবেচনা করতে হবে।

৩। ডিপ্লোমা শেষে বিদেশে পড়াশোনার যোগ্যতা, ভিসা ও আবেদন প্রক্রিয়া

বিদেশে পড়তে যাওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধাপ আপনাকে অবশ্যই বুঝে নিতে হবে। শুধু ডিপ্লোমা শেষ করলেই বিদেশে পড়তে যাওয়া যায় না। এজন্য কিছু যোগ্যতা, কাগজপত্র, এবং নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে আবেদন করতে হয়। আসুন, একে একে সহজ ভাষায় বুঝে নিই।

৩.১ শিক্ষাগত যোগ্যতা:

আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা করেন (যেমন: Diploma in Engineering), তাহলে অনেক দেশে “Bachelor Program”-এ সরাসরি আবেদন করা যায়। কিছু দেশে ডিপ্লোমা থাকলে ১ম বা ২য় বর্ষ থেকে শুরু করার সুবিধাও মেলে। তবে সেক্ষেত্রে ডিপ্লোমার রেজাল্ট ভালো হওয়া দরকার (কমপক্ষে GPA 3.0 বা সমমান)।

৩.২ ভাষা দক্ষতা:

বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেলে ইংরেজিতে দক্ষতা থাকা বাধ্যতামূলক। এজন্য সাধারণত IELTS বা TOEFL পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়।

  • IELTS: কমপক্ষে ৬.০–৬.৫ স্কোর লাগতে পারে (দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে ভিন্ন)।
  • TOEFL: সাধারণত ৭৮–৮৫ স্কোর লাগতে পারে।

জার্মানির মতো কিছু দেশে জার্মান ভাষার দক্ষতা (A1-B1 লেভেল) থাকাও ভালো, বিশেষত যদি কোর্সটি ইংরেজিতে না হয়।

৩.৩ ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া:

ভিসা পাওয়া এই পুরো প্রক্রিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এটি দেশভেদে ভিন্ন হলেও সাধারণত যা যা লাগে:

  • বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার (Conditional বা Unconditional)
  • প্রমাণ যে আপনি পড়ালেখার খরচ চালাতে পারবেন (ব্যাংক স্টেটমেন্ট/সঞ্চয় প্রমাণ)
  • ভাষা দক্ষতার সনদ (IELTS/TOEFL)
  • মেডিকেল রিপোর্ট ও ভ্যাকসিনেশন কাগজপত্র
  • ভিসা আবেদন ফি
  • পাসপোর্ট, ছবি, এবং একাডেমিক সার্টিফিকেটসমূহ

অনেক দেশেই অনলাইনে ভিসার আবেদন করা যায়। তবে আবেদন প্রক্রিয়া ভালোভাবে বুঝে এবং সময় নিয়ে করতে হয়।

৩.৪ আবেদনের সময়সূচি:

প্রতিটি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আবেদন সময়সূচি আছে। সাধারণত বছরে ২ বার (Spring ও Fall Intake) সুযোগ থাকে। তাই আগে থেকেই ভালোভাবে পরিকল্পনা করা জরুরি।
উদাহরণ:

  • কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায়: জানুয়ারি ও সেপ্টেম্বর
  • জার্মানি: মার্চ ও অক্টোবর

৩.৫ স্কলারশিপ ও ফিন্যান্সিং:

অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ই বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। সেজন্য ভালো একাডেমিক রেজাল্ট, সোশ্যাল অ্যাক্টিভিটি বা গবেষণার আগ্রহ থাকলে সুযোগ বাড়ে। পাশাপাশি পার্ট-টাইম কাজ করে নিজের খরচের একটা অংশ সামলানো যায়।

এই ধাপে আমরা বুঝলাম কী কী যোগ্যতা লাগবে, কীভাবে আবেদন করতে হবে, এবং কেমন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সঠিকভাবে এগোলে বিদেশে পড়ার স্বপ্ন সফল করা মোটেই কঠিন নয়।

৪: ডিপ্লোমা শেষে কোন কোন বিষয়ে বিদেশে পড়াশোনা করা যায়? (কোর্স ও সাবজেক্ট নির্বাচন)

ডিপ্লোমা শেষ করে অনেক শিক্ষার্থীই দ্বিধায় পড়ে যান—“আমি এখন কোন বিষয়ে পড়ব?” এই প্রশ্নটা একদমই স্বাভাবিক। কারণ আপনি যদি এমন কোনো বিষয় পড়েন যা আপনার আগ্রহের সঙ্গে মেলে না বা ভবিষ্যতে চাকরির সুযোগ কম, তাহলে পরিশ্রম নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই সঠিক কোর্স বা বিষয় নির্বাচন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চলুন জেনে নিই—ডিপ্লোমা শেষে কোন কোন বিষয় বিদেশে পড়ার জন্য জনপ্রিয় এবং ভবিষ্যৎ সুযোগ বেশি।

৪.১ ইঞ্জিনিয়ারিং ও টেকনোলজি:

যারা “Diploma in Engineering” করেছেন, তাদের জন্য Mechanical, Civil, Electrical, Computer Science, Electronics & Telecommunication—এসব বিষয়ে পড়াশোনার দারুণ সুযোগ রয়েছে। এসব বিষয়ে জার্মানি, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ড এবং আমেরিকায় ভালো ইউনিভার্সিটি আছে।

৪.২ আইটি ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট:

বর্তমানে IT সেক্টরে বিশ্বব্যাপী চাহিদা অনেক বেশি। ডিপ্লোমা শেষ করে আপনি Computer Programming, Software Engineering, Data Science, Cyber Security, AI/ML – এই সব বিষয় নিয়ে পড়তে পারেন। কানাডা ও ইউরোপীয় দেশগুলো এই বিষয়ে অনেক স্কলারশিপও দিয়ে থাকে।

৪.৩ ব্যবসা ও ম্যানেজমেন্ট:

আপনি যদি Diploma in Business Studies বা Accounting বা Marketing পেয়ে থাকেন, তাহলে BBA, International Business, Finance, বা Logistics & Supply Chain Management নিয়ে পড়াশোনা করতে পারেন। এসব বিষয়ে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং নেদারল্যান্ডস খুব জনপ্রিয়।

৪.৪ হাসপাতালিটি ও ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট:

বিশ্বের অনেক দেশে ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রি বড় এবং চাকরির সুযোগ ভালো। যারা ডিপ্লোমা পর্যায়ে এই বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেছেন, তারা Hospitality Management, Hotel & Restaurant Management, Culinary Arts নিয়ে পড়াশোনা করতে পারেন।

৪.৫ সাস্থ‍্য ও নার্সিং:

ডিপ্লোমা শেষে বিদেশে নার্সিং, মেডিকেল টেকনোলজি, প্যারামেডিক, ফিজিওথেরাপি – এই ধরণের হেলথ-কেয়ার ভিত্তিক কোর্সগুলোতে ভর্তির সুযোগ রয়েছে। এই খাতে ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়ায় অনেক সুযোগ রয়েছে এবং পরে চাকরির ব্যবস্থা সহজ হয়।

৪.৬ গ্রাফিক ডিজাইন, মিডিয়া ও ফিল্ম স্টাডিজ:

যারা ক্রিয়েটিভ ফিল্ডে কাজ করতে চান, তাদের জন্য Graphic Design, Animation, Multimedia Arts, Film Studies—এই বিষয়গুলো অনেক দেশেই জনপ্রিয়। ইউকে ও কানাডা এই বিষয়ে ভালো মানের কোর্স অফার করে।

৪.৭ টেকনিক্যাল বা ভোকেশনাল ট্রেনিং:

যদি আপনি দ্রুত কাজের বাজারে প্রবেশ করতে চান, তাহলে কারিগরি বা ভোকেশনাল ট্রেনিং ভিত্তিক কোর্স নিতে পারেন। যেমন: Automotive Technology, HVAC, Welding, Carpentry ইত্যাদি।

সঠিক সাবজেক্ট নির্বাচন করার সময় তিনটি জিনিস বিবেচনায় রাখতে হবে:

  • আপনার আগ্রহ ও দক্ষতা কোথায়?
  • ভবিষ্যতে চাকরির চাহিদা কোন বিষয়ে বেশি?
  • কোন বিষয়টি আপনি বিদেশে ভালোভাবে শিখতে পারবেন?

একটি ভালো সাবজেক্ট বেছে নেওয়া মানে শুধু বিদেশে পড়াশোনা নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য শক্ত ভিত্তি গড়ে তোলা।

৫। ডিপ্লোমা শেষে বিদেশে পড়াশোনার জন্য প্রস্তুতি ও সফলতার কৌশল। 

বিদেশে পড়াশোনার স্বপ্ন অনেকেরই থাকে, কিন্তু সবাই সফল হতে পারে না। কারণ শুধু ইচ্ছা থাকলেই হয় না, তার জন্য প্রয়োজন পরিকল্পনা, সময়ানুবর্তিতা, সঠিক প্রস্তুতি এবং মানসিক দৃঢ়তা। এই ধাপে আমরা জানব—আপনি কীভাবে ধাপে ধাপে প্রস্তুতি নেবেন এবং সফলতার পথে এগিয়ে যাবেন।

৫.১ নিজেকে আগে থেকেই প্রস্তুত করুন:

ডিপ্লোমার শেষ বর্ষে পড়ার সময় থেকেই আপনি যদি পরিকল্পনা শুরু করেন, তাহলে ভবিষ্যতে চাপ অনেক কমে যাবে। কোথায় পড়বেন, কী পড়বেন, কখন আবেদন করবেন—এসব চিন্তা আগেভাগেই শুরু করা উচিত।

৫.২. রিসার্চ ও তথ্য সংগ্রহ:

যেকোনো দেশে পড়াশোনার আগে সেই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, কোর্স, খরচ, আবাসন, আবহাওয়া ইত্যাদি সম্পর্কে জানুন। ইন্টারনেট, ইউটিউব, শিক্ষামেলা (Education Fair), এবং অভিজ্ঞদের মতামত শুনে সিদ্ধান্ত নিন। ভুল তথ্যের ভিত্তিতে আবেদন করলে সময় ও টাকা দুটোই নষ্ট হতে পারে।

৫.৩ ডকুমেন্টস প্রস্তুত রাখুন:

আপনার একাডেমিক সার্টিফিকেট, মার্কশিট, পাসপোর্ট, IELTS স্কোর, SOP (Statement of Purpose), LOR (Letter of Recommendation) ইত্যাদি আগেভাগেই তৈরি করে রাখুন। এগুলো ভালোভাবে স্ক্যান করে ডিজিটাল কপি সংগ্রহে রাখলে সহজে বারবার ব্যবহার করতে পারবেন।

৫.৪ পাঠ্য অভ্যাস গড়ে তুলুন:

বিদেশে পড়াশোনা শুধু অ্যাডমিশন পেলেই শেষ নয়। আপনাকে ভালোভাবে পড়াশোনা করতে হবে, অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে, ক্লাসে অংশ নিতে হবে। এজন্য নিজের পড়াশোনার অভ্যাসকে আরও শক্তিশালী করুন।

৫.৫ আত্মবিশ্বাস ও মানসিক প্রস্তুতি:

নতুন দেশ, নতুন মানুষ, নতুন পরিবেশ—সবকিছু নতুন হবে। তাই নিজের মানসিক প্রস্তুতিটাও জরুরি। ভাষাগত সমস্যার ভয় পাবেন না, ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের উপর আস্থা রাখা।

৫.৬ পার্ট-টাইম কাজ সম্পর্কে জানুন:

বিদেশে পড়ার সময় অনেক দেশেই শিক্ষার্থীদের পার্ট-টাইম কাজ করার অনুমতি থাকে। আপনি চাইলে এই কাজ করে নিজের কিছু খরচ সামলাতে পারেন এবং বাস্তব অভিজ্ঞতাও অর্জন করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে, পড়াশোনার ক্ষতি যেন না হয়।

৫.৭ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলুন:

আপনি যেই দেশে যাচ্ছেন, সেখানে আগে থেকেই কিছু ছাত্রসংগঠন বা বাংলাদেশি কমিউনিটি থাকে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে রাখলে আপনি সাহায্য ও দিকনির্দেশনা পেতে পারেন। এতে একাকীত্ব কমে এবং মানিয়ে নিতে সুবিধা হয়।

৫.৮ নিজের স্বপ্নের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন:

অন্য কেউ যদি সফল হতে পারে, আপনিও পারবেন—এই বিশ্বাস রাখুন। ছোট ছোট প্রস্তুতি একদিন আপনাকে বড় সফলতার দিকে নিয়ে যাবে।

সুতরাং, ডিপ্লোমা শেষ করে বিদেশে পড়াশোনা শুধুমাত্র একটি সুযোগ নয়—এটি একটি সাহসী পদক্ষেপ, একটি জীবন পরিবর্তনের রাস্তা। যদি আপনি সঠিকভাবে পরিকল্পনা করেন, প্রস্তুতি নেন এবং মনোযোগ ধরে রাখেন, তবে এই স্বপ্ন বাস্তব করাটা একদমই সম্ভব।

উপসংহার

ডিপ্লোমা শেষে বিদেশে পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সাহসী পদক্ষেপ। এটি শুধুমাত্র শিক্ষার সুযোগ নয়, বরং নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য একটি দরজা খুলে দেয়। সঠিক দেশ নির্বাচন, যোগ্যতা অর্জন, আবেদন প্রক্রিয়া বুঝে নেওয়া এবং যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহন করলে এই স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব। পাশাপাশি নিজের আগ্রহ, দক্ষতা এবং পরিশ্রমকে সঙ্গে নিয়ে চললে বিদেশে পড়াশোনার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ পাওয়া যায়। তাই দ্বিধা না করে পরিকল্পনা শুরু করুন, ধাপে ধাপে এগিয়ে যান এবং নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করুন।

Leave a Comment

You cannot copy content of this page