মিতব্যয়ীতা ঈমানদারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কোরআনের সুরা ফুরকানের ৬৩ নম্বর আয়াত থেকে মহান আল্লাহ তাঁর দয়াপ্রাপ্ত মুমিনদের কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। এগুলোর অন্যতম হলো মিতব্যয়িতা। ইরশাদ হয়েছে, ‘(রহমানের বান্দা তো তারাই) যারা অপব্যয়ও করে না, আবার কৃপণতাও করে না। তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী।’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ৬৭)
প্রতিমাসে ভাবেন কিছুটা কৃপন হওয়ার প্রয়োজন কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর খরচ কমাতে পারেন না। আসলে আপনার কৃপন নয় রবং মিতব্যয়ী হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে যারা অর্থ উপার্জন করেন না চলতে হয় বাবার দেওয়া পকেট মানিতে তাদের জন্য এই সমস্যাটা আরো বেশি প্রকট।
মিতব্যয়ী হওয়ার মূল্যবান পাঁচটি টিপস্
দৈনন্দিন জীবনে ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বনই মিতব্যয়ীতা। অর্থাৎ কৃপণতা না করে প্রয়োজনমতো অথবা হিসাব করে ব্যয় করা। মিতব্যয়ী মানুষের সম্পদ বৃদ্ধি করে এবং অন্যকে সাহায্য করার পথ উন্মুক্ত করে। মিতব্যয়ীরা কখনোই নিঃস্ব হয় না।
কিন্তু নিজে আয় করলেও যে শেষ রক্ষা হয় ব্যাপারটা তা নয়। মাস শেষে ব্যাংক ব্যালেন্স নেমে আসে জিরোর কোঠায় তাই তো অনেক দূরের কথা। অনেকে আবার চক্ষু লজ্জার ভয়ে মিতব্যয়ীতাকে অবহেলা করেন। কিন্তু আসলেই মিতব্যয়ী এবং কৃপণতা এক নয়।
কৃপনতা যেখানে কোনো কিছুতেই খরচ না করার মনোভাব অর্থাৎ বিষয়টি আপনার প্রয়োজনীয় হোক বা অপ্রয়োজনীয় আপনি কৃপন হলে সেক্ষেত্রে খরচ করতে চাইবেন না।
মিতব্যয়ী হওয়ার মূল্যবান পাঁচটি টিপস্
অপরদিকে মিতব্যয়ীতা হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় কারণে খরচের পরিমান কমিয়ে আনা। তাই মিতব্যয়ী ব্যক্তি মাত্রই সাফল্যের দোর গোড়ায় পৌঁছাতে পারে।
আমরা অনেকেই রয়েছি যারা মিতব্যায়ী হতে চাই। ফলে বছরের শুরুতে প্রকাশিত পঞ্জিকাতে নিজের রাশিফলে আয় -ব্যয়ের হিসাব মিলিয়ে দেখে নেই।
কিন্তু যদি রাশিফল বলে যে আপনার আয়ের তুলনায় ব্যয় অতিরিক্ত তবে অনায়াসেই মন খারাব হয়ে যায়। কিন্তু এখন আর এমন কোন মন খারাব হবে না কারণ এই পাঁচটি কৌশল অনুসরণ করলে আপনি হয়ে যাবেন মিতব্যয়ী।
ক্যারিয়ার গঠনে কি কি গুণ ও দক্ষতা প্রয়োজন জানতে- ভিজিট করুন
১ .কোন জিনিস কেনার সময় এক সপ্তাহ অপেক্ষা করুন। এই কৌশলটি মেনে চললে আপনি মাসে অনেক অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা থেকে বিরত থাকবেন। ফলে আপনার অনর্থক খরচের অনেক টাকার সঞ্চয় হবে।
২।. বাহিরে খাওয়া কমিয়ে দিন: স্বাস্থগতভাবে ও বাহিরে খাবার অনেক ঝুঁকিপূর্ণ বটে। ফলে দীর্ঘদিন বাহিরে খাওয়ার অভ্যাস থাকলে আপনার স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও তৈরী হবে যার জন্য চিকিৎসক এবং ঔষধের খরচ হিসেবে রয়েছে মোটা অংকের অর্থ।
তাই ঘরের খাবারকে গুরুত্ব দিন। কিন্তু অবশ্যই মাসে অন্তত একবার বন্ধু-বান্ধব বা পরিবারের সাথে বাহিরে খেয়ে আসবেন। এবং এই দিনটি অবশ্যই মাসের শুরুতে না হয়ে মাসের শেষে হলেই ভালো। কারণ তখন আপনার কাছে জমা থাকা অর্থের পরিমান অনুযায়ী আপনি খরচ করবেন।
মিতব্যয়ী হওয়ার মূল্যবান পাঁচটি টিপস্
৩ .অটো সাবস্ক্রিপশন বন্ধ করুন: যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু ইন্টারনেট ক্রয় করে ব্যবহার করুন। এটি আপাত দৃষ্টিতে আপনার কাছে সামান্য মনে হলেও মাসের শেষে আপনার ব্যাংক ব্যালেন্স একটি বড় অবদান রাখবে।
৪. ব্রান্ডেড পন্য কিনুল: যেহেতু পণ্যটি দামি সেহেতু আপনি সঠিক যত্ন সহকারে রাখবেন। ফলে একই জিনিস কেনার জন্য আপনাকে বারবার অর্থ গুনতে হবে না।
৫. পার্লারের খরচ বাঁচান: এটি যেন আপনার অভ্যাসে পরিনত না হয়। সে দিকে লক্ষ রাখুন। ঘন ঘন পার্লারে যাওয়া যেমন ত্বকের জন্য অনেক ক্ষতির কারন হয় তেমনি এর খরচ ও বেশি ব্যয়বহুল। তাই মাসের নির্ধারিত কোন একটি সময়ে পার্লারে বা সেলুনে জান।
বিশ্ববাসীকে মিতব্যয়িতায় উৎসাহিত করতে বিশ্বজুড়ে ৩১ অক্টোবর পালন করা হয় বিশ্ব মিতব্যয়িতা দিবস। ইসলাম অপব্যয়, অপচয় ও কৃপণতার ব্যাপারে সতর্ক করে মিতব্যয়িতার নির্দেশ দিয়েছে বারবার। তবে তা শুধু এক দিনের জন্য নয়, সারা জীবনই মিতব্যয়িতার পথ অবলম্বন করা ইসলামের বিধান।
মিতব্যয়ী হওয়ার মূল্যবান পাঁচটি টিপস্
উপসংহার : Too much every thing is bad”- অতিরিক্ত কিছুই খারাপ। এই আপ্তবাক্য মনে রাখতে হবে। মানুষের চলার পথে মানুষকে অনেক কিছু সমঝোতে করে চলতে হয়। মিতব্যয়ী মানুষ সেই সমঝোতায় বিশ্বাসী। তাই তাকে কখনো ঋণ-গ্রস্থ হতে হয় না। শুধু অর্থের ব্যাপারে মিতব্যায়তার প্রশ্ন আসে না; জীবনের অনেক ক্ষেত্রে এই অভ্যাসের প্রয়োজন।
প্রাচুর্যের সময় খরচের উৎসবে মেতে না উঠে হারাম খরচ সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে মিতব্যয়িতার পথ অবলম্বন করে উদ্বৃত্ত অর্থ ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করতে হবে, যেন পরবর্তী সময়ে নিজের প্রয়োজনে অন্যের কাছে হাত পাতার মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি না হতে হয়।
পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি (কৃপণতাবশে) নিজের হাত ঘাড়ের সঙ্গে বেঁধে রেখে একেবারে ব্যয়কুণ্ঠ হয়ো না, আবার (অপব্যয়ী হয়ে) একেবারে মুক্তহস্তও হয়ো না, তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে।’ (বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৯)
ফ্রিল্যান্সিং কি হালাল নাকি হারাম বিস্তারিত জানতে- ভিজিট করুন
One thought on “মিতব্যয়ী হওয়ার মূল্যবান পাঁচটি টিপস্”