হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল

হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল

হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল- আমাদের একটি বৈশিষ্ট্য হলো- আমরা সব কিছুতেই সুন্দরের সন্ধান করে থাকি। এমন কাউকে হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না, যে কিনা সুন্দরকে পছন্দ করে না। আমাদের কথা কি আর বলব মহান সৃষ্টিকর্তাই তো সুন্দরকে ভালবাসেন। তিনি নিজেও সুন্দর এবং পৃথিবীর সমস্ত কিছুকে সৃষ্টি করেছেন সৌন্দর্য্যমন্ডিত করে।

হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল | হাতের লেখা সুন্দর করার উপায়

সৌন্দর্য্যের এই ধারাবাহিকতায় আমাদের সকলেরই প্রত্যাশা থাকে, আমার হাতের লেখাও যেন সুন্দর হয়। কেননা, হাতের সুন্দর লেখা মেধাবী মনোভাবের ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তোলে।

হাতের লেখা সুন্দর হলে যেমন সুবিধা রয়েছে তেমনি অসুন্দর হাতের লেখার জন্য বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। শুনেছি হাতের লেখা সুন্দর হলে নাকি পরীক্ষায় বেশী নম্বর পাওয়া যায়। কথাটি আসলেই সত্য কিনা তা জানার চেষ্টা করবো।

হাতের সুন্দর লেখার কারণে পরীক্ষায় বেশী নম্বর কেন পাওয়া যায় সে বিষয়টিতে পড়ে আসছি।

অনেকগুলো কৌশল রয়েছে হাতের লেখা সুন্দর করার জন্য। প্রথমে সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করছি এবং পরবর্তীতে বিস্তারিতভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল গুলো কি কি-

ক) অধিক অনুশীলন
খ) স্পষ্টভাবে লেখা
গ) বেশী বড় অথবা একেবারে ছোট করে না লেখা।
ঘ) লেখার সময় কব্জি ও বাহুর অবস্থান ঠিক রাখা।
ঙ) লেখার সঠিক উপকরণ ব্যবহার করা। অর্থাৎ ভাল মানের কাগজ ও কলম ব্যবহার করা।
চ) লেখার সময় ধীর স্থিরভাবে লেখা। দ্রুত লেখার অভ্যাস ত্যাগ করা।
ছ) অক্ষরগুলোকে গোটা গোটা করে লেখা। লেখার সময় অক্ষরগুলো যেন কোনভাবেই জড়ানো বা পেচানো লেখা না হয়।
জ) কলম হালকা করে ধরা। কলম চাপ দিয়ে ধরে না লেখা।
ঝ) অক্ষরের সাইজ সমান করে লেখা।
ঞ) লাইন সোজা করে লেখা।
ট) স্পেস ঠিক করে লেখা। এক শব্দ থেকে অন্য শব্দ, এক লাইন থেকে অন্য লাইন ইত্যাদির গ্যাপ যেন এক রকম থাকে। এছাড়া বেশি ফাঁকা করে লেখা অথবা একেবারে গাদাগাদি বা হিজিবিজি করে না লেখা।
ঠ) বইয়ের লেখা অনুসরণ করে লেখার চেষ্টা করা।

হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল গুলো কি কি তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো। আশা করছি তোমরা উপকৃত হতে পারবে।

১. অক্ষর বা বর্ণগুলো অনুশীলন করা | বাংলা হাতের লেখা সুন্দর করার উপায়-

হাতের লেখা সুন্দর হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- অক্ষর বা বর্ণ লেখার গঠন বা আকৃতি সুন্দর কিনা। বর্ণ বা অক্ষরের সৌন্দর্য্য হাতের লেখা সুন্দর হওয়ার ক্ষেত্রে প্রায় ৫০ শতাংশ কভার করে।

এজন্য সর্বপ্রথম অক্ষরের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করার চেষ্টা করা উচিত।

বাংলা বর্ণমালাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। স্বরবর্ণ ও ব্যাঞ্জনবর্ণ। এগুলোর মধ্যে কিছু অক্ষর মাত্রাসহ, কিছু অর্ধ মাত্রা আবার কিছু রয়েছে মাত্রা ছাড়া। যে অক্ষরের আকৃতি যেভাবে রয়েছে ঠিক সেভাবেই লেখার চেষ্টা করতে হবে। তাহলে দেখবেন হাতের লেখার সৌন্দর্য্য অনেক পরিমানে বেড়ে গিয়েছে।

২. বেশী বেশী লেখার অভ্যাস করা | হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল-

কোন কিছুকে অর্জন করতে হলে কঠোর পরিশ্রম বা সাধনা করতে হয়। পরিশ্রম বা সাধনা ছাড়া সহজে কোন কিছু অর্জন সম্ভব হয় না। হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল এর একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হলো বেশী বেশী লেখার অভ্যাস করতে হবে।

ইংরেজীতে একটি প্রবাদ বাক্য আছে- “Practice makes a man perfect”

হাতের লেখা সুন্দর করার জন্য যতো বেশী Practice করবেন ততো বেশী সুন্দর হবে।

৩. লেখার সময় অধিক মনোযোগী হওয়া | হাতের লেখা সুন্দর করার উপায়-

যে কাজ অধিক মনোযোগ সহকারে করা হয় সে কাজে সফলতা পেতে সহজ হয়। হাতের লেখা সুন্দর করতে লেখায় মনোযোগী হওয়া আবশ্যক।

পরিপূর্ণ মনোযোগ সহকারে হাতের লেখা সুন্দর করার প্রচেষ্টা প্রতিনিয়ত করে যেতে হবে।

যে কোন কাজে মনোযোগ এবং অনুশীলন এই দুইটি বিষয়ের সমন্বয় যতো বেশী থাকবে ততো বেশী সফলতা আসবে।

৪. স্পষ্ট ও পরিস্কারভাবে লেখার চেষ্টা করা

লেখার সময় অক্ষরগুলোকে স্পষ্ট করে লিখতে হবে যেন পরিস্কারভাবে বুঝা যায়। অস্পষ্ট লেখা কখনো সুন্দর হয়না। অনেকেই আবার পেচিয়ে একটানে লিখে থাকেন যা দেখতে অসুন্দর দেখায়।

এজন্য বর্ণ বা অক্ষরগুলোকে সুন্দর করার জন্য স্পষ্টভাবে গোটা গোটা করে লিখতে হবে।

৫. অক্ষরের সাইজের দিকে খেয়াল করা | হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল

আমাদের লেখাকে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় অক্ষরের সাইজ সমান নয়, বিধায় তা অসুন্দর দেখায়। হাতের লেখাকে সুন্দর করতে হলে অক্ষরের সাইজের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, যেন একটি অক্ষর থেকে আরেকটি অক্ষর ছোট অথবা বড় না হয়। অর্থাৎ প্রতিটি অক্ষরের সাইজ বা আকার যেন সমান হয়।

অক্ষরের সাইজ সমান রাখার জন্য কিছুদিন বাংলা খাতায় লেখার অভ্যাস করুন।

অক্ষরের সাইজ সমান এবং লেখার লাইন সোজা হলে হাতের লেখা আপনা আপনি সুন্দর হয়ে যাবে।

৬. লাইন সোজা করে বা সারিবদ্ধভাবে লেখার প্রচেষ্টা করা | লেখা সুন্দর করার টিপস-

মহান আল্লহ্ তা’আলা নামাজের মাধ্যমে সারিবদ্ধভাবে লাইন সোজা করে দাঁড়ানোর শিক্ষা দিয়েছেন। আপনি যদি কখনো সেনাবাহিনীর প্যারেড দেখে থাকেন তবে খেয়াল করবেন তারা লাইন একদম সোজা করে দাঁড়িয়ে কুচকাওয়াজ করে থাকেন। যা দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগে। আবার যদি পার্কে অথবা অন্য কোথাও একেবারে লাইন সোজা করে সারিবদ্ধভাবে গাছ লাগায় খেয়াল করে দেখবেন কত সুন্দর লাগছে।

ঠিক তেমনই লেখার সময়ও বর্ণগুলোকে লাইন সোজা করে সারিবদ্ধভাবে লিখলে দেখবেন আপনার হাতের লেখা অনেক সুন্দর লাগছে।

অর্থাৎ আপনার লেখা অক্ষরগুলো সুন্দর না হলেও লাইন সোজা করে লিখলে লেখা সুন্দর দেখাবে। বিশ্বাস না হলে চেষ্টা করে দেখুন।

৭. লেখার এলাইন করা বা লাইন সোজা করার পদ্ধতি | হাতের লেখা সুন্দর করার উপায়-

আমরা অনেকেই লেখার সময় এলাইন ঠিক থাকে না বা লাইন বাঁকা হয়ে যায়। যে কারণে হাতের লেখা অসুন্দর দেখায়। আপনি একটু লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন, হয়তো আপনার হাতের লেখা সুন্দর কিন্তু লাইন বাঁকা হওয়ার কারণে তা অসুন্দর দেখায়। আবার অনেকের লেখা অক্ষরগুলো সুন্দর নয় কিন্তু লাইন সোজা এ ধরনের হাতের লেখাও সুন্দর দেখায়।

এজন্য হাতের লেখা সুন্দর করার গুরুত্বপূর্ণ একটি কৌশল হলো লেখার সময় লাইন সোজা করে লেখা।

লাইন সোজা করে লেখার জন্য কিছুদিন দাগ টানা খাতায় লেখার Practice করবেন। দেখবেন আস্তে আস্তে লেখার এলাইন ঠিক হয়ে যাবে।

৮. লেখার মাঝে সঠিকভাবে স্পেস ব্যবহার করা | হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল বাংলা-

হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল এর আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো লেখার সময় স্পেসের ব্যবহার সঠিকভাবে করতে হবে। যেমন-

ক) বর্ণ বা অক্ষরের মাঝে সমানভাবে জায়গা বা স্পেস রাখা। ধরুন আপনি পাঁচ অক্ষর বিশিষ্ট একটি শব্দ লিখছেন। পাঁচটি অক্ষরকেই সমান স্পেস দিয়ে লিখতে হবে। অর্থাৎ একটি অক্ষর থেকে আরেকটি অক্ষরের মাঝে যেন সমান ব্যবধান থাকে।

এমনভাবে লিখতে হবে যেন দুই অক্ষরের মাঝে বেশী ফাঁকা না থাকে এবং দুটি অক্ষর যেন একসাথে লেগে না যায়।

খ) এক শব্দ থেকে অন্য শব্দের মাঝেও যেন সমানভাবে স্পেস থাকে। কিছু শব্দ লিখলেন অল্প স্পেস দিয়ে আবার কিছু শব্দের মাঝে বেশী স্পেস দিলেন তাহলে দেখতে খারাপ লাগবে বা অসামঞ্জস্য হবে।

এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে দুই শব্দের মাঝে যেন স্পেস বেশী না হয় আবার একসাথে যেন লেগে না যায়।

গ) এক লাইন থেকে অন্য লাইনের গ্যাপ সমান রাখতে হবে। অর্থাৎ আপনি যদি ১০টি লাইন লেখেন তবে প্রতিটি লাইনের মাঝেই যেন সমান গ্যাপ থাকে।

হাতের লেখাকে সুন্দর করতে হিজিবিজি লেখা বর্জন করতে হবে।

৯. লেখার মাঝে মাঝে প্যারাগ্রাফ করে লেখা | হাতের লেখা সুন্দর করার উপায়-

অনেকেই প্যারাগ্রাফ ছাড়াই একটানা পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখে থাকে। এভাবে লিখলে লেখা সুন্দর দেখায় না এবং পড়তেও বিরক্ত লাগে। এজন্য লেখার মাঝে প্যারা করে করে লেখা উচিত।

ছোট ছোট প্যারা করে লিখলে লেখা পড়তেও যেমন সুবিধা হয় আবার দেখতেও অনেক সুন্দর লাগে।

এক পৃষ্ঠা লেখায় ২-৩ বার প্যারা ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে লেখার হাতের লেখার সৌন্দর্য্য অনেক বেড়ে যাবে।

১০. লেখার মাঝে কাটাকটি না করার চেষ্টা করা | হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল বাংলা-

আমরা কোন কিছু লিখতে গেলে লেখার মাঝে অনেক সময় ভুল করে থাকি। আর ভুল সংশোধন করতে গিয়ে অনেক কাটাকাটি করি। যা লেখার সৌন্দর্য্যকে নষ্ট করে ফেলে। যদি লেখার সময় কোন ভুল হয়েই যাই তাহলে ভূল শব্দ বা বাক্যটি বেশী কাটাকাটি বা ঘষামাজা না করে একটানে কেটে ফেলা উচিত।

তবে খুবই আন্তরিকতার সাথে চেষ্টা করা উচিত যেন লেখার মাঝে কোন ভুল না হয়।

এতে করে লেখার সৌন্দর্য্যও বৃদ্ধি পাবে এবং পরীক্ষার খাতায় নম্বরও ভালো পাওয়া যাবে।

১১. উপযুক্ত কলম এবং খাতা ব্যবহার করা

অনেকে লিখার জন্য নির্দিষ্ট কলম এবং খাতা ব্যবহার করে থাকে। যে যেটা দিয়ে লিখে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে তার সেটা দিয়েই লেখা উচিত। আপনিও আপনার পছন্দমত কাগজ কলম ব্যবহার করতে পারেন। তবে হাতের লেখা সুন্দর করার জন্য তুলনামূলক একটু মোটা কালির কলম ব্যবহার করতে পারেন। কেননা, মোটা কালির কলম দিয়ে লেখা স্পষ্ট এবং গোটা গোটা হয়।

চিকন কালির কলম দিয়ে লিখলে লেখা খুব একটা সুন্দর হয়না।

১২. কলম ধরার সঠিক নিয়ম | হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল-

আমরা অনেকেই লেখার সময় সঠিকভাবে কলম ধরতে পারি না। হাতের লেখা সুন্দর না হওয়ার জন্য এটা একটি কারণ হতে পারে। কলম ধরার উপর ভিত্তি করে অনেক সময় লেখার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পায়। তবে লেখার সময় কলমের কোন অংশ ধরে লিখলে লেখা ভালো হয় তার নির্ধারিত কোন নির্দেশনা খুঁজে পাওয়া যায় না। কারণ যাদের হাতের লেখা খুবই সুন্দর, এমন পাঁচজনকে একসাথে লিখতে দিলে দেখা যাবে, একেকজন একেক স্টাইলে কলম ধরে লিখছে। কলম ধরার মাঝে প্রত্যেকেরই ভিন্নতা রয়েছে।

যদি হাতের লেখা সুন্দর করার জন্য কলম ধরার নির্ধারিত কোন প্রক্রিয়া থাকতো তবে কলম ধরার ক্ষেত্রে ভিন্নতা থাকতো না।

আসলে মানুষ শিক্ষা জীবনের শুরু থেকে যেভাবে লিখে অভ্যস্থ সেভাবে লিখতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।

তবে যাদের হাতের লেখা ভালো নয়, তারা অন্যদের কলম ধরার স্টাইলকে অনুসরণ করতে পারেন, যাদের হাতের লেখা অনেক সুন্দর।

এছাড়া কলম ধরার নিয়ম সম্পর্কে বর্তমানে ইউটিউবে অনেক ভিডিও রয়েছে সেগুলো অনুসরণ করেও হাতের লেখা সুন্দর করার চেষ্টা করা যায়।

১৩. বইয়ের লেখা অনুসরণ করে লেখার প্রচেষ্টা করা

হাতের লেখা সুন্দর করার একটি উপায় হলো বইয়ের লেখা অনুসরণ করা। কোন অক্ষরে মাত্রা আছে, কোন অক্ষরে মাত্রা নেই আবার কিছু কিছু অক্ষরে অর্ধ মাত্রা আছে এগুলো বইয়ে যেভাবে লেখা থাকে হুবহু সেভাবেই লেখার চেষ্টা করা।

এছাড়া লাইন সোজা করা এবং অক্ষরের আকৃতি বইয়ের মতো করে লেখার চেষ্টা করা।

১৪. লেখার উপযোগী স্থানে বসে লেখা | হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল বাংলা-

লেখার সময় বসার স্থানটি এমন হওয়া উচিত যেখানে বসে লিখলে হাতের কব্জি, কনুই এবং বাহুর অবস্থান ঠিক থাকে। এছাড়া লেখার খাতাটিও যেন সমানভাবে রেখে লেখা যায়।

লেখার সময় চেয়ার টেবিল ব্যবহার করলে সবচেয়ে ভালো হয়।

হাতের লেখা সুন্দর করার উপায় গুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।

১৫. লেখার সময় শরীরের অবস্থান ঠিক রাখা

হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল গুলোর একটি হলো- লেখার সময় শরীরের অবস্থান ঠিক রাখা। শরীরের অবস্থান নিম্নরূপ-

ক) লেখার সময় দুই বাহুকে সোজা রাখা।
খ) মাথা হালকা নিচু করা।
গ) হাতের কব্জি এবং কনুই নমনীয় রাখা।
ঘ) অপর হাত দিয়ে খাতা ধরে লেখা।

১৬. দ্রুত লেখার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে | হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল-

দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করা কোন কাজই ভালো হয় না। আবার একেবারে ধীর গতিতে কাজ করলে নির্ধারিত সময়ে তা সম্পন্ন করা সম্ভব হয়না। এজন্য মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা উচিত। অনেকেই লেখার সময় তাড়াহুড়া করে লিখে।

যে কারণে হাতের লেখা খারাপ হয়ে যায়। লেখার এলাইন ঠিক থাকে না, লাইন বাঁকা হয়ে যায়।

এজন্য হাতের লেখা সুন্দর করতে চাইলে দ্রুত লেখার অভ্যাস বর্জন করতে হবে।

হাতের লেখা সুন্দর হলে কি কি সুবিধা রয়েছে-

ক) হাতের লেখা সুন্দর হলে পরীক্ষায় নম্বর বেশী পাওয়া যায়। কেননা যে পরীক্ষক আপনার পরীক্ষার খাতা দেখবেন তিনি যদি দেখেন আপনার হাতের লেখা সুন্দর এবং স্পষ্ট তাহলে তার খাতার দেখার প্রতি আগ্রহ তৈরী হবে।

তিনি মনোযোগ সহকারে আপনার প্রশ্নোত্তরগুলোকে পর্যবেক্ষণ করবেন। পরীক্ষক আপনার খাতা দেখতে বিরক্ত বোধ করবেন না।

আপনার লেখা স্পষ্টভাবে বুঝার কারণে প্রশান্তির জায়গা থেকে আপনাকে সর্বোচ্চ নম্বর দিতে পারেন। পরীক্ষায় ভালো করার উপায় জেনে নিন

খ) হাতের লেখা সুন্দর হলে নিজের কাছেও ভালো লাগে। অন্যরাও প্রশংসা করে থাকে। প্রশংসা শুনতে কার না ভালো লাগে।

গ) হাতের লেখা ভালো হলে মানুষ আপনার সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা করবে। অপরিচিত লোক আপনার লেখা দেখলে আপনি হয়তো ভালো ছাত্র ছিলেন অথবা আপনি উচ্চ শিক্ষিত। আপনি লেখাপড়া বেশী দূর না করলেও এরূপ ধারণা করতে পারে।

ঘ) সুন্দরের প্রতি সকলের আগ্রহ থাকে। আপনার হাতের লেখা যদি সুন্দর হয় আপনার গুরুত্ব বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে অন্যদের নিকট।

হাতের সুন্দর লেখা আপনার ব্যক্তিত্বকে এক ভিন্ন মাত্রা দান করবে।

এজন্য সকলেরই হাতের লেখা সুন্দর করার চেষ্টা করা উচিত।

হাতের লেখা খারাপ হলে কি কি অসুবিধা হয়-

হাতের লেখা ভালো হলে যেমন সুবিধা রয়েছে তেমনি খারাপ হলে অসুবিধাও রয়েছে। অসুবিধাগুলো হলো-

ক) লেখা সুন্দর হলে পরীক্ষক মনোযোগ সহকারে পরীক্ষার খাতা পর্যবেক্ষণ করে পর্যাপ্ত নম্বর দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু লেখা খারাপ হলে অনেক লেখা বুঝা যায় না। যা দেখে পরীক্ষকের মেজাজ খারাপ হয়ে যায় এবং তিনি বিরক্ত বোধ করে।

যার ফলে পরীক্ষক কোন রকমে চোখ বুলিয়ে অনুমান করে একটি নম্বর দিয়ে থাকেন।

আপনার খাতা ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করলে হয়তো এর চেয়ে বেশী নম্বর পেতেন।

কিন্তু আপনার লেখা না বুঝার কারণে তিনি খাতা দেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। হাতের লেখা খারাপ হলে আপনি যতো ভালই লেখেন না কোন আপনার পরীক্ষার খাতা শিক্ষকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে না।

খ) আমাদের দেশের বেশীরভাগ ডাক্তারই প্রেসক্রিপশন এমনভাবে লিখে থাকেন যা সাধারণ মানুষের বুঝার ক্ষমতা থাকে না। শুধুমাত্র ঔষধ বিক্রেতারাই বুঝতে পারেন। কারণ তারা সব ঔষধের নাম জানেন। বুঝতে না পারলেও প্রথম দুই একটি অক্ষর দেখে ধারণা করতে পারেন। আবার কিছু কিছু ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ঔষধ বিক্রেতারাও বুঝতে পারেন না।

লেখা না বুঝার কারণে ভুল ঔষধ দিলে তো রোগীর যে কোন ধরণের ক্ষতি হতে পারে এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

ডাক্তাররা উচ্চ শিক্ষিত, অথচ তাদের হাতের লেখার এমন বেহাল অবস্থা কেন? তবে সকলের লেখাই যে খারাপ, তা কিন্তু নয়।

গ) হাতের লেখা খারাপ হলে আপনার লেখা পড়ার প্রতি কারো আগ্রহ থাকবে না। কারণ আপনার লেখা বুঝতে সকলের অসুবিধা হবে।

শেষকথা- হাতের লেখা সুন্দর হোক এটা সকলেরই চাওয়া থাকে। কিন্তু সকলের লেখা তো আর সুন্দর হয়না। তবে হাতের লেখা সুন্দর করার কৌশল শিরোনামের এই আর্টিকেলটিতে যে কৌশলগুলো বর্ণনা করা হয়েছে, কেউ যদি এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণের মাধ্যমে হাতের লেখা সুন্দর করার প্রচেষ্টা করে অবশ্যই তার হাতের লেখা সুন্দর হবেই।

তো চলুন দেরী না করে আজকে থেকেই শুরু করা যাক হাতের লেখা সুন্দর করার প্রচেষ্টা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You cannot copy content of this page