প্রতিযোগিতামূলক চাকরির জন্য নিজেকে কিভাবে প্রস্তুত করবেন ?

Spread the love

ভালো একটি চাকরি কীভাবে পাওয়া যেতে পারে সেই প্রশ্ন আজ-কাল প্রায় সবার। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় আর্থিক কেলেঙ্কারির মাধ্যমে অনেকে চাকরি পেয়ে থাকেন কিন্তু তা সকল ক্ষেত্রে নয়। যাদের যোগ্যতা আছে তাদের সব ক্ষেত্রে চাহিদা আছে। আজ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যোগ্য মানুষের বড় ধরনের অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো ভালো চাকরির জন্য নিজেকে যোগ্য এবং দক্ষ করে গড়ে তোলা। যে নিজেকে যত যোগ্য করে গড়ে তুলবে তার চাকরির বাজার তত উন্মুক্ত।আপনার কাঙ্ক্ষিত চাকরিকে হস্তগত করতে নিম্নলিখিত কৌশলগুলি প্রয়োগ করুন।

ভালো চাকরির তিন স্তরে যোগ্যতার প্রয়োজন। তা হলো , শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক  যোগ্যতা । আপনি যদি শারীরিকভাবে সুস্থ, উপযুক্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং মানসিক ভারসাম্য রাখেন তবেই আপনি ভালো চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবেন। 

১. শারীরিক যোগ্যতা:

মানসিক যোগ্যতার জন্য শারীরিক যোগ্যতার অবশ্যই প্রয়োজন। কারণ একটি সুস্থ দেহেই থাকতে পারে একটি সুস্থ মন। এজন্য প্রয়োজনীয় সব স্বাস্থ্যবিধি একজন চাকরি প্রার্থীকে মেনে চলা উচিত।

২. শিক্ষাগত যোগ্যতা:

একেক চাকরির জন্য একেক শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয়। তবে টেকনিক্যাল পদের জন্য অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রার্থীদেরকে অগ্রধিকার দেওয়া হয়। চাকরি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তুলনামূলক ভালো ফলাফলধারিরাই এগিয়ে থাকেন। তাই শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে বুঝে পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ভালো ফলাফল অর্জনের  জন্য অবশ্যই মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে হবে। আপনার শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার আগেই সরকারি চাকরির জন্য প্রস্তুতি শুরু করুন।

৩. মানসিক যোগ্যতা: 

নিয়োগ বোর্ডের সাথে কথা বলার সময় নিজের মানসিকতার পরিচয় ফুটে ওঠে। এই জন্য কথাবার্তায় সৌজন্যতার চর্চা রাখতে হবে। নিয়োগ কর্তারা অন্যান্য যোগ্যতার সাথে সাথে চাকরি প্রার্থীর নৈতিক ও মানসিক যোগ্যতাও যাচাই করে থাকেন।

# চাকরির প্রস্তুতি শুরুর সময়:  

অনেকে পড়াশোনা শেষ করে চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে যা তাদের হতাশায় ডুবিয়ে দেয়। তাই ভালো চাকরি পেতে হলে অনার্সে পড়ার সময়ই চাকরির প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। ছাত্রজীবনেই কারেন্ট নিউজ, কারেন্ট এফেয়ার্স ইত্যাদি অধ্যয়নের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। পড়াশোনা করুন, সময়মতো চাকরির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন। 

মাঝে মধ্যে বিভিন্ন চাকরির সাক্ষাতকারে অংশ গ্রহণ করুন। যাতে শিক্ষাজীবন শেষ হতে না হতে একটি ভালো চাকরি পাওয়া সম্ভব হয়। কাঙ্ক্ষিত চাকরির আগে অন্য চাকরি হলেও শুরু করে ফেলুন। কারণ একটি চাকরি থাকা অবস্থায় অন্য চকরি পাওয়া চাকরিহীন অবস্থার চেয়ে দশগুণ বেশি সহজ। তাছাড়া শিক্ষাজীবন শেষে চাকরি পেতে যত দেরী হবে মেধাশক্তি ও মানসিক শক্তি তত দুর্বল হতে থাকবে।

প্রতিযোগিতামুলক চাকরির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার কিছু উপায়

১. লক্ষ্য স্থির করুন:  

চাকরির ক্ষেত্রের জন্য লক্ষ্য স্থির করতে হবে। আপনি কোন সেক্টরে চাকরি করতে আগ্রহ বোধ করেন তা আগে স্থির করা গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষেত্র অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। এটি আপনার চাকরির প্রস্তুতির ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে, আপনার প্রস্তুতিতে গতি সঞ্চার করবে এবং ঐ চাকরির জন্য আপনাকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।

২. আপনার দক্ষতা উন্নত করুন:

প্রযুক্তিগত দক্ষতা: 

প্রস্তুতি পর্বে প্রযুক্তিগত বিভিন্ন বেসিক কোর্স করে ফেলুন। প্রোগ্রামিং ভাষা, সফ্টওয়্যার অ্যাপ্লিকেশন এর মতো ক্ষেত্রগুলিতে ক্রমাগত উন্নতি সাধন আপনাকে একটি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ভালো সাপোর্ট দেবে।

সফট স্কিল উন্নত করুন: 

নিয়োগকর্তারা যোগাযোগ, টিমওয়ার্ক এবং নেতৃত্বের দক্ষতাকে গুরুত্ব দেন। সহযোগিতা করার, কার্যকরভাবে যোগাযোগ করার এবং বিভিন্ন কাজের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনার সক্ষমতাকে উন্নত করুন।

ভাষার দক্ষতা: 

আজকের বৈশ্বিক চাকরির বাজারে ইংরেজি ভাষার দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনুশীলন এবং চর্চার মাধ্যমে আপনার ভাষার দক্ষতা উন্নত করতে সময় বিনিয়োগ করুন। সম্ভব হলে আপনি IELTS করে রাখতে পারেন। 

নেটওয়ার্কিং দক্ষতা: 

অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যেমন- LinkedIn এ পেশাদারদের সাথে সংযোগ স্থাপন করুন, প্রাসঙ্গিক গ্রুপে যোগদান করুন এবং আপনার দক্ষতা ও কৃতিত্বগুলি প্রদর্শন করুন৷

ক্রমাগত শিক্ষা অর্জন: 

যুগের সাথে নিজেকে আপডেট রাখার জন্য প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন কোর্সে অংশ গ্রহণ করুন। অনেক নিয়োগকর্তা প্রার্থীদের প্রশংসা করেন যারা চলমান শিক্ষার সাথে নিজেকে আপডেট রাখেন।

উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করুন: 

আপনার টার্গেটকৃত ক্যারিয়ারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ উন্নত ডিগ্রি বা বিশেষ কোর্স গ্রহণ করুন। উচ্চ শিক্ষা আপনার জ্ঞানের ভিত্তি ও বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে পারে যার ফলে আপনি অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকবেন।

কাজের অভিজ্ঞতা:

ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করুন। ইন্টার্নশিপগুলি শুধুমাত্র হাতে-কলমে অভিজ্ঞতাই দেয় না বরং আপনাকে একটি পেশাদার নেটওয়ার্ক তৈরি করতে এবং কর্মজীবনের বিভিন্ন প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।

৩. জীবনবৃত্তান্ত এবং পোর্টফোলিও বিল্ডিং:

প্রতিটি চাকরির আবেদনের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যযুক্ত জীবনবৃত্তান্ত তৈরি করুন। আপনার উপস্থাপিত জীবনবৃত্তান্তই প্রমাণ করবে যে, আপনি পেশাগত ক্ষেত্রে কতটুকু দক্ষতার পরিচয় দিতে পারবেন । আপনার কাজ, প্রকল্প এবং কৃতিত্ব প্রদর্শন করে একটি পোর্টফোলিও তৈরি করুন। এটি আপনার দক্ষতা এবং সক্ষমতার চাক্ষুষ উপস্থাপনা হিসাবে কাজ করতে পারে।

৪. বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি: 

বাংলা: 

বাংলা বিষয়ে ভালো করার জন্যে নিচের কবি ও সাহিত্যিকদের জীবন ও সাহিত্য অধ্যয়ন করতে হবে:

১. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

২. মাইকেল মধুসূদন দত্ত

৩.  ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

৪. মীর মোশাররফ হোসেন

৫. বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় 

৬. কাজী নজরুল ইসলাম

৭. দীনবন্ধু মিত্র

৮. বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন

৯. ফররুখ আহমদ

১০. কায়কোবাদ

১১. জসীম উদ্দীন

পাশাপাশি বাংলা ব্যাকরণের উপর ভালো দখল রাখতে হবে। আধুনিক বাংলা বানান রীতির পূর্ণ জ্ঞান রাখতে হবে। 

ইংরেজি :

ইংরেজি গ্রামারের Sentence, Parts of Speech, Tense, Voice, Narration, Gender, synonym, antonym ইত্যাদি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। ইংলিশ গ্রামারে ভালো করার জন্য  Advanced English Grammar, Basic English Grammar, Essential English Grammar ইত্যাদি বই পড়া যেতে পারে। 

গনিত: 

৯ম শ্রেণির গনিত বই বিভিন্ন ইন্টারভিউয়ের জন্য খুবই জরুরি। এটি ভালোভাবে অধ্যয়ন করলে গণিতের দুর্বলতা কেটে যাবে এবং আপনি অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকবেন।গণিত বিষয়ক মানসিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য জব সলুশন বইয়ের সাহায্য নিন।

সাধারণ জ্ঞান:

সাধারণ জ্ঞানের জন্য ভালো বই যেমন- নতুন বিশ্ব, জ্ঞান সিন্ধু ইত্যাদি ভালোভাবে অধ্যয়ন করতে পারেন।  এগুলোর পাশাপাশি দেশ-বিদেশের সাম্প্রতিক তথ্যগুলো অধ্যয়ন করতে হবে।

সাক্ষাৎকার প্রস্তুতি:

সাক্ষাৎকার অনুশীলন : আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে এবং আপনার প্রতিক্রিয়াগুলিকে পরিমার্জিত করতে বন্ধু বা পরামর্শদাতাদের সাথে ইন্টারভিউয়ের অভিনয় করুন। ইন্টারভিউ কৌশল সম্পর্কে পেশাদারদের পরামর্শ চাইতে পারেন।

কোম্পানি/প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানুন: 

সাক্ষাতকারের আগে, নিয়োগকারি কোম্পানি/প্রতিষ্ঠান, তাদের মান, লক্ষ্য এবং তাদের অবস্থান সম্পর্কে জানার জন্য চেষ্টা করুন। এই জ্ঞান কোম্পানি/প্রতিষ্ঠানের প্রতি আপনার প্রকৃত আগ্রহ প্রমাণ করবে।

উপসংহার: 

প্রতিনিয়ত নতুন কিছু শেখার চেষ্টায় লেগে থাকতে হবে। সার্বিক দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে নিজেকে সেরা প্রার্থী হিসাবে উপস্থাপন করুন। তাহলেই নিজেকে একটি কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে অধিষ্টিত করতে পারবেন ইনশা আল্লাহ।  


পড়ুন: অবরোধ-হরতালের সময় টাকে যেভাবে কাজে লাগিয়ে বাসা থেকে আয় করবেন

1 thought on “প্রতিযোগিতামূলক চাকরির জন্য নিজেকে কিভাবে প্রস্তুত করবেন ?”

Leave a Comment