নিজের দ্বিধা  কাটিয়ে স্বপ্নের পথে এগিয়ে যাওয়া

Spread the love

জীবনকে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য প্রত্যেক মানুষের নিজের কিছু স্বপ্ন থাকে।এই স্বপ্নের কোন সীমানা নেই, স্বপ্নের ব্যাপারে প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব স্বাধীনতা রয়েছে।তবে, এই স্বপ্নের পথে চলার সময়ে আমাদের মনে বিভিন্ন দ্বিধা ও অনিশ্চয়তা দেখা দেয় এবং তা আমাদের স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।কিছু পদক্ষেপের সাথে আমাদের এই দ্বিধাগুলোকে পরিহার করতে হবে।তবে আমরা আমাদের পরিকাঙ্কিত লক্ষে পৌঁছাতে পারবো।

দ্বিধার প্রকৃতি বোঝা এবং উদ্যোগ গ্রহণ –

দ্বিধা মানুষের মানসিকতার একটি সহজাত অংশ। যখনই আমরা নতুন কোনো নতুন লক্ষ্যের মুখোমুখি হই,সন্দেহ আমাদের মনে হতাশা এবং ভয়ের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং আমাদের অনুপ্রেরণাকে কমিয়ে দেয়। এতে আমরা আমাদের স্বপ্নের যাত্রার শুরুতেই হার মেনে নিই। এই সমস্যা দূরীকরণ এর জন্য আমাদের প্রথমে নিজেদের সন্দেহের কারণগুলো জানতে হবে,  স্বপ্নের সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে এবং এই কার্যক্রমের সাথে জড়িত মানুষের সাথে আলোচনা করে এটি সম্পর্কিত আমাদের ধারণাগুলো পরিষ্কার করে নিতে হবে।দ্বিধা থেকে মুক্তি পেতে হলে অনেক সময় প্রতিটি ধাপে সাহায্য চাইতে হবে। পরিবার, বন্ধুবান্ধব, বা মেন্টরের সাথে আলাপ করা, তাদের পরামর্শ গ্রহণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আরও একটি উপায় হল আত্মসাক্ষাত্কার ও ধ্যান। নিজের মধ্যে চুক্তি দেওয়া, নিজের পরিচয় জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।সমস্যাগুলির সমাধান করার জন্য ধৈর্য ও সমর্থন অত্যন্ত প্রয়োজন। অনেকেই একটি স্বপ্নের পথে এগিয়ে যাওয়ার সময়ে অনেক সময় হারিয়ে যায়। কিন্তু ধৈর্য এবং নিরন্তর প্রচেষ্টা করলে শেষে অবশ্যই সফলতা মিলে।

নিজের দ্বিধা  কাটিয়ে স্বপ্নের পথে এগিয়ে যাওয়া
নিজের দ্বিধা  কাটিয়ে স্বপ্নের পথে এগিয়ে যাওয়া

ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ  –

ব্যর্থতার ভয় প্রায়শই হয় আমাদের স্বপ্নের দরজায় প্রহরী হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকে।আমরা সব সময় বিকল্প চিন্তা-ভাবনা করি যেখানে আমাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। তবে ব্যর্থতা সাফল্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ।ডুবে যাওয়ার ভয়ে পানিতে যেয়ে না নাম, সে কোনদিনই সাঁতার শিখতে পারে না।বিভিন্ন গণমান্য এবং সফল  ব্যক্তির জীবনী থেকে আমরা জানতে পারি, বারবার ব্যর্থ হওয়ার পরে ও অধ্যাবসায়ের সাথে স্বপ্নের সাথে জড়িত থাকার মাধ্যমে তারা সফলতার ধার প্রান্তে পৌঁছেছে। তাই প্রতিটি ব্যর্থতাকে নতুন শিক্ষা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে,কারণ এটি সফলতা স্বপ্ন অর্জনের একটি ধাপ।ব্যর্থতার সম্ভাবনাকে আলিঙ্গন আমাদের সন্দেহের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি করে, আমাদের স্থিতিস্থাপকতা এবং সংকল্পের সাথে এগিয়ে যেতে হবে।একজন লেখক ও সফল উদ্যোক্তা সেথ গডিন বলেছেন-“স্বপ্ন দেখার পর ব্যর্থ হওয়াটা অবশ্যই ভালো কিছু নয়, কিন্তু স্বপ্ন না দেখাটা তারচেয়েও খারাপ”

সামাজিক চাপের ঝুঁকি প্রতিহার –

সামাজিক প্রত্যাশা এবং অন্যদের উপলব্ধি দ্বারা ও দ্বিধা বা সন্দেহ উদ্ভূত হতে পারে।সমালোচনার ভয় আমাদের আবেগকে স্বপ্নের অনুসরণ করা থেকে বিরত রাখে।সমাজের মানুষের বিভিন্ন নেতিবাচক মতবাদ মানুষকে নতুন উদ্যোগ নিতে অনুৎসারিত করে।এই দ্বিধাগুলো প্রতিকার করার জন্য আমাদের নিজের লক্ষ্যের প্রতি অটুট থাকতে হবে, বাহ্যিক চাপ সহ্য করেন নিজের উপর রাস্তা রেখে এগিয়ে যেতে হবে। কে কি বলছে তা না দেখে, আমাদের দেখতে হবে আমি কি করছি এবং আমি সঠিক আছি কিনা। কারণ তুমি যদি উপরে উঠতে চাও,সমাজে তোমাকে পিছু টেনে ধরার মানুষ থাকবে। ১০০ মিটারের বিশ্বরেকর্ডধারী সাবেক জ্যামাইকান দৌড়বিদ ড্যানোভান বেইলি বলেছেন -“স্বপ্নকে ধাওয়া করো। পরিশ্রম আর ত্যাগ স্বীকার করতে তৈরী থাকো। আর সবচেয়ে জরুরী বিষয়, কারও কথায় নিজের স্বপ্নকে ছোট করো না”

আত্মবিশ্বাস গ্রহণ-

আত্মবিশ্বাস সন্দেহ কাটিয়ে ওটার ভিত্তি তৈরি করে। একটি ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে তোলা, আত্মবিশ্বাস লালন করা এবং আমাদের  ক্ষমতার প্রতি বিশ্বাস গড়ে তোলা  আমাদের সংকল্পকে শক্তিশালী করে। আত্মবিশ্বাস সন্দেহের বিরুদ্ধে ঢাল হিসেবে কাজ করে,আমাদের দৃঢ়সংকল্প এবং দৃঢ়তার সাথে চ্যালেন্স মোকাবেলা করতে সক্ষম করে। ড: এপিজে আবুল কালাম স্যারের পাঁচটি কথা মনে রাখতে হবে –

১.তরুণ প্রজন্মের কাছে আমার বার্তা হলো-তাদের ভিন্নভাবে চিন্তা করবার সাহস থাকতে হবে।মনের ভেতর আবিষ্কারের তাড়না থাকতে হবে। নিজের সমস্যা নিজে মিটাবার মানসিকতা থাকতে হবে।

২.স্বপ্ন, স্বপ্ন, স্বপ্ন। স্বপ্ন দেখে যেতে হবে। স্বপ্ন না দেখলে কাজ করা যায় না।

৩.যারা মন থেকে কাজ করে না,তারা আসলে কিছুই পাইনা। আর পেলেও সেটা হয় অর্ধেক হৃদয়ের সফলতা। তাতে সবসময়ই একরকম তিক্ততা থেকে যায়।

৪.তুমি যদি তোমার কাজকে স্যালুট করো, দেখবে তোমাকে আর কাউকে স্যালুট করতে হবে ন। কিন্তু তুমি যদি তোমার কাজকে অসম্মান করো, অমর্যাদা করো,ফাঁকি দাও, তাহলে তোমার সবাইকে স্যালুট করতে হবে।

৫.কোন একটা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাচ্ছ না! চিন্তিত করো না – ‘ঘঙ’(অর্থা,  পরবর্তী সুযোগ ) নাও।

দ্বিধা কাটানোর পরিষ্কার ধারণা গ্রহণ-

তদুপরি, পরামর্শদাতা, সহকর্মী বা রোল মডেলদের কাছ থেকে সমর্থন চাওয়া সন্দেহ দূর করতে সহায়ক হতে পারে।  যারা অনুরূপ পথে হাঁটছেন বা অমূল্য অভিজ্ঞতার অধিকারী তাদের কাছ থেকে নির্দেশনা স্পষ্টতা এবং আশ্বাস প্রদান করতে পারে।  তাদের উৎসাহ ও পরামর্শ পথপ্রদর্শক বাতি হিসেবে কাজ করে, অনিশ্চয়তার কুয়াশার মধ্য দিয়ে পথকে আলোকিত করে।টম ব্রাডলি (লস এ্যাঞ্জেলস এর সাবেক মেয়র)  বলেছেন- “তুমি নিজে না চাইলে তোমাকে কেউ তোমার স্বপ্নের পথ থেকে সরাতে পারবেনা।”

দ্বিধা প্রতিরোধে পদক্ষেপ গ্রহণ –

দ্বিধা থাকা সত্ত্বেও পদক্ষেপ নেওয়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।কর্ম গতির জন্ম দেয় এবং সন্দেহ দূর করে।আমাদের স্বপ্নের প্রতি গৃহীত প্রতিটি ছোট পদক্ষেপ আমাদের প্রতিশ্রুতিকে পুনরায় নিশ্চিত করে এবং সন্দেহের শক্তিকে হ্রাস করে।  অগ্রগতি, যতই ক্রমবর্ধমান হোক না কেন, আমাদের আত্মবিশ্বাসকে শক্তিশালী করে এবং আমাদের অধ্যবসায়ের অনুপ্রেরণা জোগায়।এটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে আমাদের স্বপ্নের পথ সবসময় রৈখিক নাও হতে পারে। এটি চক্কর, চ্যালেঞ্জ এবং অনিশ্চয়তার মুহূর্তগুলির সাথে মিশে গেছে। 

সন্দেহকে জয় করা –

অধিকন্তু,সন্দেহের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পুনঃসংশোধন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  তাদের প্রতিপক্ষ হিসাবে দেখার পরিবর্তে, আমরা তাদের বৃদ্ধির অনুঘটক হিসাবে উপলব্ধি করতে পারি।  সন্দেহ আমাদের লক্ষ্য, কৌশল এবং দৃষ্টিভঙ্গি পরিমার্জিত করার অনুমতি দেয়, আত্মদর্শন করে।  তারা আমাদের আকাঙ্ক্ষার তাৎপর্য এবং সেগুলি অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টার অনুস্মারক হিসাবে কাজ করে।আমাদের স্বপ্নের দিকে যাত্রা আমাদের সন্দেহের মোকাবিলা এবং পরাস্ত করার ক্ষমতার একটি প্রমাণ।  সন্দেহ কাটিয়ে ওঠার অর্থ তাদের সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলার বিষয়ে নয় বরং তাদের উপস্থিতি সত্ত্বেও এগিয়ে যাওয়ার জন্য স্থিতিস্থাপকতা এবং আত্মবিশ্বাস তৈরি করা।  এতে আত্ম-প্রতিফলন, স্থিতিস্থাপকতা, কর্ম এবং আমাদের ক্ষমতার প্রতি অবিচল বিশ্বাসের মিশ্রণ জড়িত।  প্রতিপক্ষের পরিবর্তে সঙ্গী হিসাবে সন্দেহকে আলিঙ্গন করে, আমরা আমাদের স্বপ্নগুলিকে এক এক ধাপে উপলব্ধি করার পথ প্রশস্ত করতে পারবো।

Leave a Comment