ডিহাইড্রেশন বা শরীরে পানির অভাব আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় সমস্যা। এটি শুধুমাত্র প्यास লাগার মাধ্যমে প্রকাশ পায় না, বরং শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে নানা ধরনের লক্ষণ দিয়ে সতর্ক করে। ডিহাইড্রেশন দীর্ঘ সময় ধরে চললে মাথাব্যথা, ক্লান্তি, চর্মরোগ এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কর্মক্ষমতা কমে যেতে পারে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি গ্রহণ এবং সঠিক খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই ডিহাইড্রেশনের সূচকগুলো চিনতে পারা এবং সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এই আর্টিকেলটি আপনাকে ডিহাইড্রেশনের ১০টি সচেতন লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন করবে, যাতে আপনি আপনার স্বাস্থ্য রক্ষা করতে পারেন।
১। অতিরিক্ত তৃষ্ণা লাগা
ডিহাইড্রেশনের সবচেয়ে প্রাথমিক এবং সহজে চিনতে পারার লক্ষণ হলো অতিরিক্ত তৃষ্ণা অনুভূত হওয়া। শরীরে পানি কমে গেলে মস্তিষ্ক সিগন্যাল পাঠায় যে আপনার আরও পানি প্রয়োজন। এই সময় সাধারণের চেয়ে বেশি পানি খাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। যদি আপনি হঠাৎ করে নিয়মিত চেয়ে বেশি পানি খেতে শুরু করেন, তবে এটি শরীরের সতর্কবার্তা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
তৃষ্ণার সঙ্গে সাধারণত শুকনো মুখ, ঠোঁট ফাটা এবং গলা খসখসে অনুভূত হয়। এভাবে শরীর আপনাকে সতর্ক করছে যে যথাযথ হাইড্রেশন দরকার। ছোট ছোট পানি পান করে নিয়মিত শরীরকে হাইড্রেট রাখা গুরুত্বপূর্ণ। শুধু পানি নয়, ফলের রস বা হালকা স্যুপও হাইড্রেশন বজায় রাখতে সাহায্য করে। দীর্ঘ সময় তৃষ্ণা উপেক্ষা করলে ডিহাইড্রেশন আরও গুরুতর আকার নিতে পারে।
২। কম প্রস্রাব বা গাঢ় রঙের প্রস্রাব
ডিহাইড্রেশনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া বা রঙ গাঢ় হয়ে যাওয়া। সাধারণ অবস্থায় নিয়মিত প্রস্রাবের মাধ্যমে শরীর থেকে অতিরিক্ত তরল পদার্থ বের হয়। কিন্তু যখন শরীরে পানি কমে যায়, তখন কিডনি পানি সংরক্ষণ করার চেষ্টা করে এবং প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়।
এছাড়াও, প্রস্রাবের রঙ সাধারণের তুলনায় গাঢ় হলুদ বা খয়েরি হতে পারে। এটি শরীরের সতর্কবার্তা যে পর্যাপ্ত হাইড্রেশন নেই। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দিনে কমপক্ষে ৬–৮ গ্লাস পানি পান করা জরুরি। যদি আপনি গাঢ় রঙের প্রস্রাব লক্ষ্য করেন, তবে তা অবহেলা না করে পর্যাপ্ত পানি ও তরল খাবার গ্রহণ করা
৩। মাথাব্যথা ও ঘন ঘন ক্লান্তি
ডিহাইড্রেশন শরীরে পানি ও খনিজের ভারসাম্যহীনতার কারণে মাথাব্যথা এবং ক্লান্তির মতো লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে। যখন শরীরে পর্যাপ্ত পানি থাকে না, তখন মস্তিষ্কের রক্তবাহী নালীগুলো সঙ্কুচিত হয়ে যায়, যা মাথা ধরা বা চাপের অনুভূতি দিতে পারে।
সাধারণত, ডিহাইড্রেশনের কারণে ঘন ঘন ক্লান্তি, মনোযোগে অভাব এবং কাজের প্রতি উৎসাহ কমে যাওয়া লক্ষ্য করা যায়। যদি আপনি হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে ক্লান্ত বোধ করেন, তবে এটি শরীরের তরল শূন্যতার সংকেত হতে পারে। পর্যাপ্ত পানি পান এবং Electrolyte সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে এই সমস্যাগুলি অনেকাংশে কমানো যায়।
৪। মুখ ও ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া
ডিহাইড্রেশনের আরেকটি স্পষ্ট লক্ষণ হলো মুখ ও ত্বকের শুষ্কতা। যখন শরীরে পানি কমে যায়, তখন ত্বক লুব্রিকেশন হারায় এবং খসখসে বা টানটান অনুভূত হয়। ঠোঁট ফাটতে পারে এবং মুখের অভ্যন্তরীণ অংশও শুকিয়ে যেতে পারে।
শুষ্ক ত্বক সাধারণভাবে সতর্ক করে যে শরীর যথেষ্ট হাইড্রেটেড নয়। শিশু বা বয়স্কদের ক্ষেত্রে এই লক্ষণ আরও স্পষ্ট হয়ে থাকে। নিয়মিত পানি পান করা, ফল ও সবজি গ্রহণ করা এবং প্রয়োজনে হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে এই সমস্যাটি কমানো সম্ভব। ত্বকের শুষ্কতা অবহেলা করলে দীর্ঘমেয়াদে ডিহাইড্রেশন আরও জটিল স্বাস্থ্য সমস্যায় রূপ নিতে পারে।
৫। মাথা ঘোরা বা চक्कर খাওয়া
ডিহাইড্রেশনের একটি সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো মাথা ঘোরা বা হালকা চक्कर খাওয়া। শরীরে পানি কমে গেলে রক্তের চাপ কমে যায়, যা মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত রক্ত পৌঁছাতে বাধা দেয়। এর ফলে হঠাৎ মাথা ঘোরা বা দৃষ্টিভ্রমের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
প্রাথমিক পর্যায়ে, হালকা পানি বা শরীরের তরল পুনরায় পূর্ণ করলে চক্র ও মাথা ঘোরা কমে যায়। তবে দীর্ঘ সময় পানি না নেওয়া হলে চক্র বা মাথা ঘোরা গুরুতর অবস্থার ইঙ্গিত হতে পারে। যারা নিয়মিত ব্যায়াম বা গরমে কাজ করেন, তাদের এই লক্ষণ আরও সহজে দেখা দিতে পারে। তাই পানি ও ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা খুবই জরুরি।
৬। ত্বক ও চোখের ল্যাচার হ্রাস
ডিহাইড্রেশনের আরেকটি লক্ষণ হলো ত্বক ও চোখের ল্যাচার বা ঝলক হ্রাস পাওয়া। সাধারণ অবস্থায় চোখ ও ত্বক উজ্জ্বল থাকে, কিন্তু শরীরে পানি কমে গেলে চোখের আর্দ্রতা কমে যায় এবং ত্বক ফিকে বা ঝলকহীন দেখায়।
এছাড়া চোখ শুকনো বা ঝাপসা অনুভূত হতে পারে। দীর্ঘ সময় হাইড্রেশন না বজায় রাখলে চোখে অস্বস্তি বা চোখের সমস্যা দেখা দিতে পারে। নিয়মিত পানি পান, ফল ও সবজি গ্রহণ, এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম চোখ ও ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। চোখ ও ত্বকের এই পরিবর্তনগুলো ডিহাইড্রেশনের প্রাথমিক সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করে।
৭। দ্রুত হার্টবিট বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন
ডিহাইড্রেশনের কারণে শরীরের রক্তের পরিমাণ কমে যায়, যা হৃদপিণ্ডকে দ্রুত কাজ করতে বাধ্য করে। ফলস্বরূপ, হার্টবিট দ্রুত বা অনিয়মিত হতে পারে। এটি প্রাথমিকভাবে হালকা অনুভূত হলেও দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
এই অবস্থায় শরীর প্রয়োজনীয় পানি ও ইলেক্ট্রোলাইট পুনরায় পায়নি বলেই হার্টবিট অনিয়মিত হয়। গরমে কাজ করা বা প্রচুর ব্যায়ামের সময় এটি আরও চোখে পড়ে। নিয়মিত পানি পান এবং ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে হার্টবিট স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। দ্রুত হার্টবিটকে অবহেলা না করে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
৮। স্নায়ুতন্ত্রে সমস্যা বা মনোযোগের ঘাটতি
ডিহাইড্রেশন মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করতে পারে। শরীরে পানি কমে গেলে মনোযোগ কমে যায়, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয় এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হ্রাস পায়। এটি সাধারণত ছোট ছোট ভুল বা কাজের মনোযোগ হারানোর মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
কোনো ব্যক্তি হঠাৎ করে ক্লান্ত, হতাশ, বা মনোযোগ হারানো অনুভব করলে তা ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ হতে পারে। পর্যাপ্ত পানি ও ইলেক্ট্রোলাইট গ্রহণ করলে এই সমস্যাগুলি সহজেই কমানো সম্ভব। তাই কাজ বা পড়াশোনার সময় পর্যাপ্ত হাইড্রেশন বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৯। পেশীতে খিঁচুনি বা দুর্বলতা
ডিহাইড্রেশন পেশীর কার্যকারিতার উপর প্রভাব ফেলে। শরীরে পানি ও খনিজ লবণের অভাব হলে পেশীতে খিঁচুনি, ব্যথা বা দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে ব্যায়াম বা দৈনন্দিন কাজ করার সময় এই লক্ষণ আরও সহজে লক্ষ্য করা যায়।
পেশীর খিঁচুনি শরীরের সতর্কবার্তা যে যথেষ্ট হাইড্রেশন নেই। নিয়মিত পানি, ইলেক্ট্রোলাইট এবং লবণযুক্ত খাবার গ্রহণ করলে পেশীর শক্তি বজায় থাকে। ডিহাইড্রেশন দীর্ঘ সময় অবহেলা করলে পেশীতে গুরুতর সমস্যা বা জ্বালা দেখা দিতে পারে। তাই শরীরকে পর্যাপ্ত পানি দিয়ে হাইড্রেটেড রাখা জরুরি।
১০। অপ্রত্যাশিত ওজন হ্রাস বা অস্বাভাবিক ক্ষুধা
ডিহাইড্রেশন শরীরের বিপাকীয় প্রক্রিয়াকেও প্রভাবিত করে। পানি কমে গেলে হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায় এবং অপ্রত্যাশিত ওজন হ্রাস বা ক্ষুধার অনুভূতি পরিবর্তিত হতে পারে। অনেক সময় মানুষ ক্ষুধার অনুভূতি পানি কম হওয়ার কারণে ভুলভাবে অনুভব করতে পারে।
শরীর পর্যাপ্ত পানি না পেলে, খাবারের সঠিক হজম সম্ভব হয় না এবং পুষ্টি শোষণ হ্রাস পায়। নিয়মিত পানি ও হাইড্রেটিং খাবার গ্রহণ করলে এই সমস্যাগুলি এড়ানো যায়। ডিহাইড্রেশন দীর্ঘমেয়াদে অবহেলা করলে শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও প্রভাব পড়তে পারে। তাই পানি ও তরল গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
ডিহাইড্রেশন সম্পর্কে 10টি সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর।
প্রশ্ন ১: ডিহাইড্রেশন কি?
উত্তর: ডিহাইড্রেশন হলো শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি বা তরল না থাকার অবস্থা। এটি সাধারণত ঘাম, প্রস্রাব, বমি বা ডায়রিয়ার মাধ্যমে শরীর থেকে অতিরিক্ত জল হারানোর কারণে ঘটে। ডিহাইড্রেশন শরীরের প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্যকে ব্যাহত করতে পারে, যার ফলে স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ডিহাইড্রেশন প্রাথমিকভাবে হালকা থেকে শুরু হয় যেমন তৃষ্ণা, শুকনো মুখ বা কম পেশী শক্তি, কিন্তু যদি দ্রুত নিরাময় না করা হয়, তবে এটি গুরুতর অবস্থায় রূপ নিতে পারে। শিশু, বয়স্ক এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকা ব্যক্তিরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে।
প্রশ্ন ২: ডিহাইড্রেশনের সাধারণ লক্ষণগুলো কী কী?
উত্তর: ডিহাইড্রেশনের সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত তৃষ্ণা, শুকনো মুখ ও ঠোঁট, কম প্রস্রাব বা গাঢ় হলুদ প্রস্রাব। এছাড়াও মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, ত্বকের স্থিতিস্থাপকতার কমে যাওয়া এবং মাথাব্যথাও হতে পারে। এই লক্ষণগুলো প্রাথমিকভাবে হালকা হলেও যত দ্রুত পানি পুনঃস্থাপন করা হয়, তত দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে।
গুরুতর ডিহাইড্রেশনে শারীরিক ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং জ্ঞানকোণীয় সমস্যা দেখা দিতে পারে। বাচ্চা বা বয়স্কদের ক্ষেত্রে ডিহাইড্রেশন দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে, তাই এদের জন্য সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি। শরীরের সঙ্কেতগুলো লক্ষ্য করে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
প্রশ্ন ৩: ডিহাইড্রেশন হওয়ার প্রধান কারণগুলো কী কী?
উত্তর: ডিহাইড্রেশন হওয়ার প্রধান কারণ হলো শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি হারানো বা পর্যাপ্ত পানি না নেওয়া। সাধারণত বেশি ঘাম, বমি, ডায়রিয়া বা জ্বর থাকলে শরীর দ্রুত জল হারায়। অতিরিক্ত শর্করা বা লবণযুক্ত খাবারও শরীরের পানি ধরে রাখার ক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে।
শিশু, বয়স্ক মানুষ এবং দীর্ঘ সময় বাইরে বা গরমে কাজ করা ব্যক্তিরা ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকিতে বেশি থাকে। এছাড়া, পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া বা নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ যেমন ডায়ুরেটিকও ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই নিয়মিত পানি এবং ইলেক্ট্রোলাইট গ্রহণ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন ৪: ডিহাইড্রেশন কত ধরনের হয়?
উত্তর: ডিহাইড্রেশন প্রধানত তিন ধরনের হয়: হালকা, মাঝারি এবং গুরুতর। হালকা ডিহাইড্রেশনে সাধারণত তৃষ্ণা, শুকনো মুখ এবং অল্প মাথাব্যথা দেখা দেয়। মাঝারি ডিহাইড্রেশনে প্রস্রাব কমে যায়, মাথা ঘোরা এবং ক্লান্তি বেড়ে যায়।
গুরুতর ডিহাইড্রেশন জীবনহুমকিসহ শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন রক্তচাপ কমে যাওয়া, দ্রুত হার্টবিট, অচেতনতা বা কিডনির সমস্যা। শিশুরা এবং বৃদ্ধরা গুরুতর ডিহাইড্রেশনের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ, তাই তাদের ক্ষেত্রে সতর্কতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন ৫: ডিহাইড্রেশন কিভাবে শনাক্ত করা যায়?
উত্তর: ডিহাইড্রেশন শনাক্ত করার জন্য শরীরের বিভিন্ন লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। সাধারণ লক্ষণ হলো অতিরিক্ত তৃষ্ণা, শুকনো মুখ ও ঠোঁট, চোখের নিচে আঁচড় বা ড্রাই লুক, কম প্রস্রাব এবং ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস। এছাড়া মাথা ঘোরা, ক্লান্তি এবং দ্রুত হৃদস্পন্দনও ডিহাইড্রেশনের ইঙ্গিত হতে পারে।
শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে চোখ শুকনো থাকা, লালা কমে যাওয়া বা অসাধারণ চুলকানি দেখা দিলে এবং বয়স্কদের ক্ষেত্রে হঠাৎ মনোযোগের ঘাটতি বা দুর্বলতা দেখা দিলে তা ডিহাইড্রেশনের প্রাথমিক সংকেত হতে পারে।
প্রশ্ন ৬: ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা পাওয়ার সহজ উপায়গুলো কী কী?
উত্তর: ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা পাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা। দিনে কমপক্ষে ৮–১০ গ্লাস পানি খাওয়া উচিত। গরমে বা শারীরিক পরিশ্রমের সময় পানি, নারকেল জল বা ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় বেশি গ্রহণ করা জরুরি।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো খাবারে পর্যাপ্ত ফলমূল ও সবজি রাখা। যেমন, তরমুজ, কমলা বা শসা প্রভৃতি খাবার শরীরে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত খাবার ও পানীয়ের মাধ্যমে শরীরের জল এবং ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখা যায়।
প্রশ্ন ৭: ডিহাইড্রেশন হলে কি শারীরিক কার্যক্ষমতা কমে যায়?
উত্তর: হ্যাঁ, ডিহাইড্রেশন হলে শরীরের কার্যক্ষমতা কমে যায়। পানি এবং ইলেক্ট্রোলাইটের অভাবে পেশী শক্তি কমে যায়, ক্লান্তি ও দুর্বলতা দেখা দেয়। ফলে দৈনন্দিন কাজ বা ব্যায়াম করার সময় শরীর সহজে ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
ডিহাইড্রেশন মনোযোগ এবং স্মৃতিশক্তিতেও প্রভাব ফেলে। মস্তিষ্কের পানি কমে গেলে মনোযোগ কমে যায়, মাথা ঘোরা বা মাথাব্যথা হতে পারে। তাই শারীরিক ও মানসিক কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে নিয়মিত পানি পান করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন ৮: শিশুদের মধ্যে ডিহাইড্রেশন কেন বেশি বিপজ্জনক?
উত্তর: শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় দ্রুত পানি হারায়, কারণ তাদের শরীরের পানি অনুপাত বেশি এবং শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ কম শক্তিশালী। অতিরিক্ত বমি, ডায়রিয়া বা জ্বর হলে শিশুদের ডিহাইড্রেশন দ্রুত গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।
শিশুরা তাদের তৃষ্ণা বা শারীরিক সমস্যা স্পষ্টভাবে জানাতে পারে না, তাই পিতামাতা বা যত্নশীলদের সতর্ক থাকা জরুরি। শিশুদের জন্য নিয়মিত তরল গ্রহণ, ফলমূল ও ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় ব্যবহার করা ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে সাহায্য করে।
প্রশ্ন ৯: বয়স্কদের ডিহাইড্রেশন হওয়ার কারণ কী?
উত্তর: বয়স্কদের ডিহাইড্রেশন হওয়ার প্রধান কারণ হলো শরীরের পানির ধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়া। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তৃষ্ণার অনুভূতি কমে যায়, ফলে তারা পর্যাপ্ত পানি পান করে না। এছাড়া বিভিন্ন ওষুধ, যেমন ডায়ুরেটিক, এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগও ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়।
বয়স্করা প্রায়ই অসুস্থতা বা ক্লান্তির কারণে পানি গ্রহণ কমিয়ে দেয়, যা শরীরকে দ্রুত ডিহাইড্রেশনের দিকে নিয়ে যায়। তাই নিয়মিত পানি ও ইলেক্ট্রোলাইট গ্রহণ এবং শারীরিক লক্ষণ পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরি।
প্রশ্ন ১০: গুরুতর ডিহাইড্রেশনের ক্ষেত্রে কি করা উচিত?
উত্তর: গুরুতর ডিহাইড্রেশনের ক্ষেত্রে অবিলম্বে চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন। এই অবস্থায় শরীরে পানি ও ইলেক্ট্রোলাইটের বড় ঘাটতি থাকে, যা জীবনহুমকিসহ হতে পারে। ডাক্তার সাধারণত ভেনায় ইনফিউশন বা ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ তরল দেওয়ার মাধ্যমে দ্রুত শরীরকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরান।
যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে ঠান্ডা পরিবেশে রাখা, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম বন্ধ করা এবং ছোট ছোট পরিমাণে তরল খাওয়ানো সহায়ক। গুরুতর ডিহাইড্রেশনকে হালকা মনে করে বাড়িতে নিরাময় চেষ্টা করা বিপজ্জনক, তাই পেশাদার চিকিৎসা জরুরি।