কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ভবিষ্যৎ চাকরির বাজার

Spread the love

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শব্দটি শোনামাত্রই এত সহজে তার অর্থ বোধগম্য হওয়ার কথা নয়, কারন এটি একটি বিশুদ্ধ বাংলা শব্দ এর দ্বারা আধুনিক প্রযুক্তির পরিভাষা ও ব্যবহার উদ্দেশ্য। তাই আসুন আধুনিক প্রযুক্তির ভাষায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এর ইংরেজি অর্থ হল  , আরবি হল الذكاء الاصطناعي 

আধুনিক প্রযুক্তি ও অস্ত্র (যন্ত্র) এর এমন এক অপরূপ ব্যবহার যা সে মানুষের বুদ্ধি ও কাজের পদ্ধতি হুবহু অনুকূল নকল বা কপি করতে পারেন। এটি এখন বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনে বিষয়ভিত্তিক ও নিয়মতান্ত্রিক পাঠ্যপুস্তকরূপ গণ্য হয়। যেমন বাংলাদেশে ১৯/০৭/২০২৩ তারিখে চ্যানেল24 কর্তৃপক্ষ তারা তাদের সংবাদ সরাসরি পাঠ করাইয়াছে একটি রোবটের দ্বারা যার নাম অপরাজিতা। এবং বিভিন্ন সফটওয়ার ও টুলস এর এমন ব্যবহার যা মানুষের দেওয়া দিকনির্দেশনা অনুযায়ী সঠিক ও নিখুঁত ভাবে কাজ করবে, অনুরূপভাবে কম্পিউটার ও যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যবহৃত এমনকি যুদ্ধবিমান সহ আধুনিক বিভিন্ন প্রযুক্তি এর এমন ব্যবহার যা মানুষের বিবেকবুদ্ধি, চিন্তা,গবেষণা, এবং মানুষের কর্মপদ্ধতির অনুকূল অনুসরণ করতে পারা প্রযুক্তি যাকে বাংলায় কৃত্রিম বুদ্বিমত্ততা আর ইংরেজিতে  Artificial Intelligence যাকে সংক্ষেপে AI প্রযুক্তি বলে।

ভবিষ্যৎ চাকরির বাজার

 আমরা বাংলায় খুব সহজেই ভবিষ্যৎ চাকরির বাজার বলে থাকি যাকে ইংরেজিতে The Future Job Market এটার মানে হল কোন একটি জিনিষের তার আগামী দিনকাল কেমন হবে? কেমন চলবে? কেমন গ্রহণযোগ্যতা পাবে? কেমন হবে তার প্রসার ও বিস্তৃতি? কেমন হবে তার মূল্যায়ন ইত্যাদি নিয়মতান্ত্রিক ও যৌক্তিকতার সহিত আগামী দিনের পরিকল্পনা কর্মপদ্ধতি নিয়ে ভাবা ও গবেষনা করাকেই সহজে বুঝায়, 

তাই এখন আসুন সহজে বুঝি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ভবিষ্যৎ চাকরির বাজার বলতে কি বুঝায় সহজে বুঝি?

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ভবিষ্যৎ চাকরির বাজার:- AI প্রযুক্তির এমন আশ্চর্যজনক ব্যবহার ও চাহিদাসম্মত অবস্থান যেখানে তার চাহিদা কোন পর্যায়ে যাবে? কেমন হবে? আর ব্যবহারিক কর্মক্ষেত্র কেমন হবে? সেটা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে তার অবস্থান, চাহিদা ও কর্মক্ষেত্রই মূখ্য উদ্দেশ্য।

কৃত্রিম বুদ্বিমত্তা(AI) এর কারনে বিশ্বের উন্নতশীল রাষ্ট্রসহ সব জায়গায় ই তার প্রভাব পড়বে যার কারনে বিভিন্ন কর্মক্ষেতে মানব কর্মীর প্রয়োজনীয়তা হ্রাস পাবে। এবং বিভিন্ন কর্মস্থলে মানব কর্মী, শ্রমিক চাটাই করার প্রয়োজনীয়তা দিনদিন বাড়তেই থাকবে। কারন হচ্ছে মানব শ্রমিকের কাজ তখন কৃত্রিমবুদ্বিমত্তা বা এআই করে থাকবে। আমরা এখানে সহজ ভাষায় বুঝার জন্য সহজ একটি উদাহরণ দিতেই পারি যেমন:- এক সময়ে আমরা দেখতাম মাটি কাটার জন্য একটি ট্রাক / লরি যান্ত্রিক মটর যান/ ট্রাক্টরে অনেকজন মানুষ মিলে মাটি কেটে গাড়ি ভর্তি করতেন এবং গাড়ি থেকে মাটি ও এভাবে নামিয়ে ফেলতেন। কিন্তু এখন আমরা কি দেখতে পাচ্ছি একটি গাড়ি মাটি দিয়ে ভর্তি বা মাটি ফেলার জন্য এত মানুষ লাগ? না লাগে না। কারন  এখন এত মানুষের কাজ একাই করে ফেলে এস্কেভেটর ও হাইড্রোলিক ট্রাক,  তাহলে আগে যারা মাটি কাটতেন উনাদের মাটি কাটার চাকরি কোথায় গেল? এখন কি উনারা চাইলেই মাটি কাটতে পারবেন? না পারবেন না। কারন উনাদের কাজ এখন প্রযুক্ত করতেছে। ঠিক এই উদাহরণটি বুঝতে পারলে এআই এর পরিচিতি ও ভবিষ্যৎ প্রয়োজনীয়তা, চাহিদা বুঝা অনেকটা সহজ হয়ে যাবে, আমরা আবার ফিরে যাই চ্যানেল24 এর সেই সাংবাদ উপস্থাপিকার কথা যিনি একজন রোকট! একজন মানব সাংবাদিক একাধারে দীর্ঘসময় সংবাদ উপস্থাপনা করতে পারবে না। মোটেও পারবে না দীর্ঘক্ষণ।

কারন কোন মানুষের পক্ষেই সম্ভব না কোন ধরনের বিরতিহীনভাবে দীর্ঘক্ষণ কথা বলা, এবং একবার শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আবার কথা বলা শুরু করা তাও ঠিক হুবহু আগের মতই। এবং মানুষ হিসাবে একজন সাংবাদিকের বিভিন্ন মানব প্রকৃতি ও প্রয়োজনীয়তা অবশ্যই লাগবে সেটা তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক সহ বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় দেখা দিবেই এবং সেগুলোর জন্য সময় বের করতেই হবে। তাই একজন সাংবাদিক বা সংবাদ উপস্থাপক অনুপস্থিত থাকলে তার অনুপস্থিতে আরেকজন লাগবেই। কিন্তু এখানে যদি সেই কাজটি এআই/রোবট দ্বারা করা হয়, তাহলে কি কোন ধরনের বিরতির প্রয়োজনীয়তা আছে? কোন ধরনের অনুপস্থিতির সম্ভাবনা আছে? না এরকম হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই। তাহলে ভেবে দেখুন একটি রোকট কতজন মানুষের কাজ একাই করতে পারেন! কতজন মানুষের কর্ম ও দায়িত্ব সে নিজেই একা নিখুঁতভাবে করতে পারে! তাহলে ঐ জায়গায় এত সাংবাদিকা ও সংবাদ উপস্থাপকের কোন প্রয়োজন আছে? না নাই। তাহলে কর্মক্ষেতে মানুষর কাজ রোবটে করার কারনে মানব কর্মী  চাটাই অনিবার্য হয়ে পড়বে। 

১/০৮/২০২৩ তারিখে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় চমৎকার একটি প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছে যার সারাংশ হচ্ছে, ২০৩০ সালে যুক্তরাষ্ট্র বা আমেরিকার মোট শ্রম সময়ের ৩০ শতাংশ আদায়  বা পূরণ করবে একাই এআই বা কৃত্রিম বুদ্বিমত্তা!  

ঠিক আমেরিকায় সেবছরেই কেরানি কাজের চাহিদা কমবে ১৬ লক্ষ, ৮ লক্ষ ৩০ হাজার স্বাভাবিক খুচরা বিক্রয়কর্মী, ৭ লক্ষ ১০ হাজার প্রশাসনিক সহকারী এবং ৬ লক্ষ ৩০ হাজার হিসাব রক্ষক চাকরি হারাবেন! ঠিক এভাবে সব জায়গায় লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি কর্মক্ষেত কর্মছাড়া ও চাকুরীজীবী চাকুরী হারা হবেন।

ঠিক আমরা এখানে আরেকটি কথা বলতে চাই একটি ভিডিও ফুটেজ বা পোস্ট প্রোডাক্টশন/ ইমেজ/ ভয়েস এডিটিং এডিটিং করতে একজন এডিটরের কত দীর্ঘসময় চলে যায় এবং খুব নিখুঁত ও সূক্ষ্ম ভাবে দীর্ঘ সময় নিয়ে কাজ করতে হবে এমনকি দক্ষ টীম নিয়ে ও কাজ করতে হয়। ঠিক সেখানে এআই বা কৃত্রিম বুদ্বিমত্তা এত কঠিন ও দীর্ঘ সময়ের কাজ খুব সহজে ও অল্প সময়ে সেই এডিটিং করে দিবে শুধুমাত্র তাকে কাজের দিকনির্দেশনাটি বলে দিতে হবে। এখন দেখেন কতজন এডিটরের কাজ  সে একাই করে ফেললো!  অথচ একজন এডিটর এডোবি ফটোশপ, এডোবি ইলাস্ট্রেটর, এডোবি প্রিমিয়ার প্রো, এডোবি আফটার ইফেক্টস, এডোবি অডিশন ও এডোবি মিডিয়া ইনকোডার ইত্যাদি দিয়ে দীর্ঘ সময় কাজ করছে,

 অথচ এআই মুহুর্তের ভিতরেই সে কাজ খুব সহজে করে দিচ্ছে। 

এবার আসুন একটি সংক্ষপে হলেও তার ভবিষ্যৎ বাজার জানার চেষ্ঠা করি।

আমরা এখানে একটি পত্রিকার প্রতিবেদন দেখলাম তার থেকে বুঝতে পারলাম যে আগামীর দিনে ঠিক থাকতে হলে কতটুকু এআই নির্ভর ও দক্ষ হতে হবে আমরা এখন কয়েকটি এআই এর কর্মক্ষেত দেখব:

(১) সংবাদ উপস্থাপনা।

(২) হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ। 

(৩) প্রকাশনা ও লেখালেখি।

(৪) শিল্পকারখানা।

(৫) বিমানপথ ও পর্যবেক্ষণ।

(৬) শিক্ষাঙ্গন।

(৭) তথ্য প্রযুক্তি।

(৮) যোগাযোগ মাধ্যম ও ব্যবস্থাপনা।

(৯) যুদ্বক্ষেত্র ও ভয়ানক যুদ্ব পরিচলনা ও নিয়ন্ত্রণ।

(১০) অর্থনীতি।

(১১) ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

(১২) কম্পিউটার ও সফটওয়ার ব্যবহার।

(১৩) চিকিৎসা ব্যবস্থা ইত্যাদি

তবে এআই কারনে আমাদের মধ্যে বেকারত্ব খুবই বৃদ্ধি পাবে এমনটা ঢালাওভাবে বলা যাবে না। কারন এআই এর প্রয়োজনে মানুষ তার ব্যবহার জানতেও আগ্রহী হবে এবং এআই কেন্দ্রীক জীবন-জীবিকা গড়তে তুলতে আগ্রহী হবে আর তাছাড়া সব প্রযুক্তিই কিন্তু মানুষ ছাড়া অচল সেটাও মনে রাখতে হবে। তাই আমাদের উচিৎ খুবই দ্রুত এসব সম্পর্কে জানা পাশাপাশি তার ব্যবহার ও তার থেকে কিভাবে উপকৃত হওয়া যায় সেদিকে দ্রুত অগ্রগামী হওয়া। যার যতটুকু মেধা আছে সেই মেধা অনুযায়ী এআই’র প্রতি ধাবিত হওয়া। এআই নির্ভর হওয়া ছাড়া আগামীর দিনে চলা খুুব মুশকিল। আমরা আমাদের পৃথিবী উপভোগ করতে হলে এআই নিয়ে চলতেই হবে। তাই দ্রুত এআই সম্পর্কে জ্ঞান  অর্জন করা এবং দক্ষতা অর্জন করতেই হবে।

আরও পড়ুনঃ ক্যারিয়ার গড়ার জন্য চাকরির বাজারের গতিবিধি বোঝার টিপস

Leave a Comment