শীতের বনভোজন

Spread the love

মানুষের জীবনে পিকনিকের গুরুত্ব অপরিসীম। জীবন নদীর মত বয়ে যায়। নদীতে যেমন জোয়ার-ভাটা, স্রোত থাকে আর বর্ষায় সব ভেসে যায়। জীবনে সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্নাও আছে। তাই তাদের সঙ্গে নিয়ে চলতে হয়।

আমাদের দৈনন্দিন ব্যস্ত রুটিন মাঝে মাঝে দম বন্ধ হয়ে যায়। কিছু বিনামূল্যে সময় খুঁজে বের করতে হয়ে। সবার সাথে সময় কাটাতে চাই। আমি আমার চিন্তা প্রকাশ করতে চাই। আমি বন্ধ রুটিন থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। আর সেই কারণেই আমরা এই শীতে পুরো পরিবারের সাথে “বনভোজন” করতে চাই। 

বন্ধুদের সাথে। বনভোজন মানে অনেক লোকের সমাগম, একে অপরের সাথে কথা বলা, পরিচয়, আনন্দ এবং উল্লাস মনটা ভালো থাকে। শীতকাল বনভোজন করতে যাওয়ার একটি দুর্দান্ত সময়। শীত মানেই পাতায় শিশির, কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল, ঘর থেকে ভেসে আসা গুড়ের গন্ধ, গরম পশমী কাপড়। শুধু তাই নয়, গরম গুড়ের রসগোল্লা ও মোয়া… ইত্যাদি লভোনিয়ান খাবারের সময়ও।

শীত মানেই বনভোজন

আর এই শীতে বনভোজনের মজাই আলাদা। সকালে রেডি হয়ে ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে এক কাপ গরম চা নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। খোলা নীল আকাশের নিচে সবুজ মাঠে বসে সারাদিন ভোজ শুরু হয়। মাঠ জুড়ে শীতের সোনালি রোদ ঝলমল করছে। আপনি কত ধরনের মানুষের সাথে দেখা করেবেন? আর ভালো রান্নার গন্ধে অর্ধেক পেট ভরে যায়।

যাইহোক, পরিবারের সাথে পিকনিক করার চেয়ে বন্ধুদের সাথে বাড়িতে পিকনিক করা আরও মজাদার। চারদিন আগে থেকেই প্রস্তুতি চলছিল। তারপর কারও বাড়ি থেকে হাঁড়ি এবং কারও বাড়ি থেকে কড়াই ও খুন্তি। বন্ধুর বাড়ি থেকে তেল, পেঁয়াজ, আলু, ভাত, ডাল তারপর সবাই মিলে রান্না করি। এক থালায় একসাথে খাওয়া সত্যিই অন্যরকম অনুভূতি।

মানুষ বড় হওয়ার সাথে সাথে কিছু জিনিস ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এক বন্ধুর সাথে অন্য বন্ধুর প্রতি হিংসা, ঘৃণা, প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এছাড়াও, স্কুল ভেঙে গেলে পুরনো বন্ধুত্ব ভেঙে যায়। পড়ালেখার জন্য অনেকে বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। এসব আর হয় না। সবার সাথে একটা দূরত্ব তৈরি হয়। শৈশবের মতো আনন্দ আর থাকে না।

এ কারণে এখন আর আগের মতো বনভোজনের আয়োজন নেই। এখন মানুষের অনেক কাজের চাপ, পড়াশোনার প্রতিযোগিতা, একে অপরের সাথে প্রতিসহিংসতা। যারা চাইলেও অবসর সময় খুঁজে পায় না বা কাটাতে পারে না।  আসলে, মানুষ নিজের যত্ন নিতে জানে না। সবাই ঐক্যবদ্ধ হলেই মানুষ আলোকিত হতে পারে। কিন্তু এখন মানুষ সামাজিকের চেয়ে বেশি গর্বিত ও অহংকারী। বেশির ভাগ মানুষই জানে না কিভাবে কম নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়।

বনভোজন – এর গুরুত্ব

তবে তাদের ভিড়ে এখনও কিছু মানুষ আছে, যারা ভেঙে পড়ার পর উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। তারা হিংসা ভুলে নিজেদের খুশি রাখার চেষ্টা করে। এমনকি যখন আমি আমার পরিবারের সাথে বনভোজনে যাই তখন অনেক পরিচিত-অপরিচিত লোককে দেখি। চলুন জেনে নেওয়া যাক তাদের। তাদের দেখে কত কিছু শিখেছি।

 এমন অনেক মানুষ আছে যাদের গল্প আমি বুঝতে পারি। একজন মানুষ যতই কষ্ট সহ্য করুক না কেন, একদিন সে ছুটি নিয়ে উপভোগ করতে আসে। নাকি প্রচন্ড ঝড় পেরিয়ে সুখের মুখ দেখেছে তারা। তাই ছুটি উপভোগ করতে এসেছেন। এরকম অনেক মানুষ আছে।

নদীর ধারে পিকনিক করার সময় স্বামী-স্ত্রী কথা বলছিলেন। এক বছর আগে মেয়েটি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিল। বেঁচে থাকার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই মুহূর্তে তাকে ছাড়েননি তার প্রেমিকা। আজ তিনি ক্যান্সারকে হারিয়ে জীবন যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন। শুধু তাই নয়, সদ্য বিয়ে করেছেন তারা।

উনিশ বছর বয়সী মেয়েটি তার বাবা-মায়ের সাথে বসে গল্প করছিল এবং হাসছিল। বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের কথা শুনে এক সময় সে অনেক ক্ষত-বিক্ষত হয়েছিল। কিন্তু সব বাধা ও ভুল বোঝাবুঝি পেরিয়ে এখন তার মা-বাবা আবার মিলিত হয়েছেন। তাই তারা সবাই একত্রিত হয়ে সুন্দর ভোজ উপভোগ করলো।

বনভোজন-এ নাতিকে ব্যাট বল খেলতে দেখে দাদা দৌড়ে ছুটে আসেন। কয়েক মাস আগে শুনেছিলাম তার বুকে পেসমেকার আছে। তবুও দুর্বলতা তার মনের শক্তি এবং ইচ্ছা শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল।

এরকম হাজারো মানুষের হাজারো সমস্যা। কিন্তু তারপরও তারা সেই সমস্যাটি কাটিয়ে ওঠে এবং নিজেদেরকে কিছুটা আনন্দিত করতে ভোজসভায় যোগ দেয়। সবাই যদি তাদের মত হতে পারতো। আসলে প্রতিটি মানুষেরই কিছু না কিছু সমস্যা থাকে। তা সত্ত্বেও, এক বা দুই দিনের জন্য সময় বের করা এবং সবার সাথে মিশতে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যায়। এভাবে নিজেকে ভালো রাখতে পারা যায়।

উপসংহার

মানুষ নিজের সমস্যার জন্য নিজেই দায়ী। সবার সাথে আলাদাভাবে একটি দিন কাটাতে সময় নিলে অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে। বনভোজন মানে শুধু খাওয়া-দাওয়া ছাড়া আরও কিছু। মানুষের শরীর ও মন ভালো রাখতেও এই ভোজের গুরুত্ব অনেক। সত্যি কথা বলতে কি, বনভোজন পরিমাণ অনেক কমেছে, কিন্তু কিছু আনন্দপ্রিয় মানুষের জন্য এখনো আছে।

শীতের বনভোজন এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য, শীতের ঠান্ডা হাওয়া, এবং বন্ধুবান্ধবদের সাথে সুন্দর সময় কাটানো এক অম্লান স্মৃতি হয়ে থাকে। শীতের বনভোজন করার জন্য উপযুক্ত সময় হলো সকালের দিকে। সকালের দিকে আবহাওয়া হালকা ঠান্ডা থাকে, যা বনভোজনের জন্য বেশ আরামদায়ক। সকালের রোদ গায়ে পড়ে মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে ওঠে।