ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় কি?

Spread the love

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়- বর্তমান সময়ের একটি মারাত্মক ব্যাধি হলো ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা। এ রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে আধুনিক বিশ্বের দ্রুতবেগে ছুটে চলা জীবন ব্যবস্থার সাথে অনেক মানুষ নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছে না। প্রতিযোগিতার এই সমাজে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছে না নিজেকে। প্রতিনিয়ত কাঙ্খিত লক্ষ্য থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে। জীবন যুদ্ধের এই পর্যায়ে মানুষ যতই চাওয়া-পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ততই ডিপ্রেশনের অতল গভীরে নিজেকে হারিয়ে ফেলছে। সুন্দর এই পৃথিবী তার কাছে অন্ধকার মনে হয়। এই পৃথিবীতে সে নিজেকে ধরে রাখার ক্ষমতা বা আগ্রহ একেবারে হারিয়ে ফেলে।

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় | দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়

ডিপ্রেশনে আক্রান্ত রোগীর সঠিক চিকিৎসা না করালে একটা সময় সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এজন্য আমাদের সকলের ডিপ্রেশনের লক্ষসমূহ, আক্রান্ত হওয়ার কারণ এবং ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে জেনে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত।

What is Depression (ডিপ্রেশন কি)?

ডিপ্রেশন শব্দটি ইংরেজি শব্দ। এর সহজ অর্থ হলো- মানসিক অবসাদ, হতাশা, বিষন্নতা, উদ্বেগ ইত্যাদি। ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা এক ধরণের রোগ যা মানসিক ভারসাম্যকে বাঁধাগ্রস্থ বা নষ্ট করে ফেলে। এ রোগটি যে কোন বয়সের মানুষেরই হতে পারে। বিভিন্ন কারণে এ রোগের সৃষ্টি হতে পারে। এ রোগটি সাধারণত মানুষের মন-মেজাজ এবং চিন্তা-ভাবনার সাথে জড়িত। এ রোগে আক্রান্ত রোগীরা অস্বাভাবিক অনেক ধরণের আচরণ করে থাকে। তারা স্বাভাবিক কোন কিছু চিন্তা করতে পারে না।

স্বাভাবিক জীবন-যাপনে তারা ব্যাপকভাবে বাঁধাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। ডিপ্রেশন মূলত মানসিক অবসাদের তীব্রতাকে বুঝায়।

ডিপ্রেশনের লক্ষণসমূহ-

ডিপ্রেশন বা বিষন্নতার একটি লক্ষণ হলো সারাক্ষণ মন খারাপ থাকা। তবে সর্বদা মন খারাপ থাকলেই তাকে ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা বলা যাবে না।

এজন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডিপ্রেশনের লক্ষণগুলো জানা উচিত। ডিপ্রেশনের যে লক্ষণগুলো দেখে আমরা বুঝতে পারবো তা নিম্নরূপ-

ক) সারাক্ষণ মন মরা হয়ে থাকা।
খ) কাজের প্রতি অনীহা প্রকাশ।
গ) অনিদ্রা, অনিয়মিত ঘুম, পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, অথবা বেশী ঘুমানো।
ঘ) অল্পতেই অস্থির বা উত্তেজিত হয়ে যাওয়া।
ঙ) অধৈর্য্য হওয়া। ধৈর্য্য ও সহনশীলতার মাত্রা কমে যাওয়া।
চ) অল্প পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া।
ছ) সকল বিষয়ে ন্যাগেটিভ বা নেতিবাচক চিন্তা করা।
জ) শারিরীক অবস্থার অবনতি। শারিরীক দূর্বলতা। মাথা ব্যাথা, মাথা ঘুরানো ইত্যাদি।
ঝ) সারাক্ষণ মেজাজ খিটখিটে থাকা।
ঞ) নিজেকে ছোট মনে করা।
ট) খাবারের প্রতি অনীহা প্রকাশ।
ঠ) সারাক্ষণ হতাশাপূর্ণ মনোভাব।
ড) সকল কাজে অমনোযোগী।
ঢ) যৌন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া।
ণ) নিশ্চুপ থাকা।
ত) বেপরোয়া আচরণ করা।
থ) অপরাধবোধ কাজ করা।
দ) নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলা।
ধ) নিজেকে গুটিয়ে রাখা।
ন) সামাজিক বিভিন্ন কার্যকলাপ, বিনোদন ইত্যাদির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলা।
প) কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পারা।
ফ) কোন কাজে মনোনিবেশ করতে না পারা।
ব) সবশেষে নিজেকে শেষ করার মনোবাসনা জাগা অর্থাৎ আত্মহত্যার প্রবণতা।

আরও দেখুন

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির ঔষধ বিস্তারিত জানতে- ভিজিট করুন

ডিপ্রেশন হলে কি কি সমস্যা হয় বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির আমল বিস্তারিত জানতে – ভিজিট করুন

কি কি কারণে মানুষ ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হয়?

মানুষ বিভিন্ন কারণে ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হতে পারে। এর সুনির্দিষ্ট কোন কারণ নেই। ডিপ্রেশনে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে রয়েছে ভিন্নতা। একেক জনের হতাশার ধরণ একেক রকমের।

ডিপ্রেশন বা বিষন্নতায় আচ্ছন্ন হওয়ার কারণসমূহ নিম্নরূপ-

ক) একাকিত্ব-

মানুষ সামাজিক জীব। তারা কখনো একাকী চলতে পারে না। বিভিন্ন কারণে মানুষ অনেক সময় একা হয়ে যায়। কথা বলা, গল্প করা, দুঃখ-কষ্ট শেয়ার করা, হাসি-আনন্দ করা, খেলাধুলা করার মতো মানুষ খুঁজে পায় না। এগুলো তো জীবনেরই অংশ। কাজের পাশাপাশি এগুলো জীবনকে পরিপূর্ণতা দান করে। যখনই এগুলোর ব্যতিক্রম ঘটে, একাকী হয়ে যায় তখনই মানুষের ডিপ্রেশন বা হতাশা বাসা বাঁধতে থাকে। আস্তে আস্তে তা মারাত্মক আকার ধারণ করে।

খ) বেকারত্ব-

বেকারত্ব মানেই অবজ্ঞা, অবহেলা। বেকার মানেই সমাজের বোঝা। বেকার জীবন মানেই অভিশপ্ত জীবন। বেকার মানুষকে সমাজে মূল্যায়ন করা হয় না। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী তাকে বিভিন্নভাবে অনাদর, অবহেলা, তাচ্ছিল্য, কটুক্তি করে থাকে। এছাড়া একজন বেকার পরিবারের কোন দায়িত্ব নিতে পারে না বা পরিবারের কোন উপকারে আসে না। দীর্ঘদিন সকলের অবহেলা, অনাদর, অবমূল্যায়নের কারণে অথবা নিজেকে পরিবারের বোঝা মনে করে একটা সময় সে ভীষণভাবে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। আর এই হতাশা অনেক সময় আত্মহত্যার রূপ নেয়।

গ) অভাব-অনটন-

সংসারে দীর্ঘদিন অভাব-অনটন থাকার কারণেও বিষন্নতা এসে মনে বাসা বাঁধে। সংসারের প্রয়োজনীয় চাহিদা, স্ত্রী-সন্তানের চাহিদা পূরণে অক্ষমতার কারণে স্ত্রী-সন্তান বিভিন্ন ধরণের কথা শোনাতে থাকে। এছাড়া আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের অবমূল্যায়ন তো রয়েছেই। পারিপার্শ্বিক এ সকল পরিস্থিতি মানুষকে আস্তে আস্তে ডিপ্রেশনের দিকে নিয়ে যায়।

ঘ) ঋণগ্রস্থ-

ঋণগ্রস্থ হলে মানুষ ডিপ্রেশনে ভূগতে থাকে। পাওনাদারের চাপ, কিভাবে ঋণ পরিশোধ করবে, সময়মত ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে কি পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে ইত্যাদি চিন্তা মানুষকে গভীর ডিপ্রেশন বিষন্নতায় আচ্ছন্ন করে ফেলে। সে চাইলেও হাসতে পারে না স্বাভাবিক থাকতে পারে না।

ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে এবং পাওনাদারের বিভিন্ন হুমকির জেরে একটা সময় সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।

আমরা যদি একটু পেছনে ফিরে যাই- তাহলে দেখা যায় আমাদের দেশে শেয়ার মার্কেটে ধ্বস নামার পর বহু মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল। কেননা তারা অনেক টাকা ঋণ নিয়ে শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করেছিল।

ঙ) পারিবারিক কলহ-

পারিবারিক কলহের কারণেও অনেক সময় ডিপ্রেশনে ভূগতে পারে। পারিবারিক কলহ এমনই একটি বিষয় যা মানুষের মনের আনন্দ, সুখ-শান্তিকে একেবারে নষ্ট করে ফেলে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ খুবই মারাত্মক আকার ধারণ করে। মনে শান্তি থাকে না, কাজে মন বসে না, সন্তানরা ভালো থাকে না, খাবার খাওয়া ঠিকমত হয় না, সমাজের লোকজন ভালো চোখে দেখে না ইত্যাদি। পারিবারিক কলহের জটিলতায় মানুষ আস্তে আস্তে ডিপ্রেশনের গভীরে চলে যায়। ডিপ্রেশনের তীব্রতা আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পেতে থাকে।

ফলে অনেকেই পারিবারিক কলহের জেরে আত্মহত্যা করে থাকে।

চ) লেখাপড়ার চাপ

লেখাপড়ার চাপ সইতে না পেরে অনেকেই ডিপ্রেশনে ভূগে থাকে। মাঝে মাঝে শোনা যায় অমুকে পড়াশোনা করতে করতে পাগল হয়ে গেছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় পরীক্ষার রেজাল্ট ভাল না হওয়ায় আত্মহত্যা করেছে। পড়াশোনা করার নিয়ম

লেখাপড়ার চাপ বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন-

১) বয়সের তুলনায় পাঠ্যপুস্তকের পড়া অনেক বেশি।
২) পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি অন্যান্য বিষয় শেখার চাপ।
৩) সারা বছর আড্ডাবাজি করে না পড়ার কারণে পরীক্ষার সামনে অল্প সময়ে অধিক পড়ার চাপ।
৪) ভাল রেজাল্টের আশায় অধিক পড়ার চাপ।
৫) গার্ডিয়ান কর্তৃক পড়ার চাপ।
৬) যে বিষয় মাথায় ঢুকে না সে বিষয় জোর করে চাপিয়ে দেওয়া। যেমন- একজন শিক্ষার্থী সাইন্সের বিষয়গুলো ভাল বুঝে না সে বিষয় তার উপর চাপিয়ে দেওয়া।

ছ) অসুস্থতা-

দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার কারণেও মানুষ ডিপ্রেশনে ভূগে। অনেকেই কঠিন এবং যন্ত্রণাদায়ক রোগে আক্রান্ত হয়। অনেক চিকিৎসার পরও রোগ ভালো হয়না। আবার অনেকেই আর্থিক অভাবের কারণে চিকিৎসা করতে পারে না। ফলে যন্ত্রণাদায়ক রোগে প্রতিনিয়ত ভূগতে থাকে। দীর্ঘদিন রোগে আক্রান্ত থাকার কারণে পারিবারিকভাবে সেবাও ঠিকমত পায় না।

একটা সময় যন্ত্রণাদায়ক রোগের সাথে ডিপ্রেশন বা হতাশা রোগও যুক্ত হয়। অনেক সময় তা আত্মহত্যার রূপ নেয়।

জ) বিবাহ-সাদী না হওয়া-

আমাদের সমাজে বিবাহ-সাদী না হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। চেহারা ভালো না, আর্থিক অস্বচ্ছলতা, বয়স বেশী ইত্যাদি কারণে অনেকের বিবাহ-সাদী হয়না। আশেপাশের বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন কথা শুনতে হয়। অবিবাহিত মেয়েরা পরিবারের বোঝা হয়ে যায়। বারবার বিয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে, জৈবিক চাহিদা পূরণ হচ্ছে না, আমি পরিবারের বোঝা এসব চিন্তা করে মনটা বিষন্নতায় ছেয়ে যায়। হতাশা কাজ করতে থাকে।

ঝ) বংশগত প্রভাব-

বংশগত প্রভাবেও এ রোগের সৃষ্টি হতে পারে। বংশের কারো যদি পূর্বে এ রোগ হয়ে থাকে অনেক সময় তার প্রভাবটা আপনার উপর এসে পড়তে পারে। এ ধরণের রোগীদের মধ্যে যে কোন কিছুতেই উত্তেজিত হওয়ার প্রবণতা দেখা দেয়। সহজ কোন বিষয়ও তারা জটিল করে ফেলে। এর ফলে তাদের নার্ভে প্রতিনিয়ত চাপ সৃষ্টি হয়। এভাবে চলতে চলতে একটা সময় তারা ডিপ্রেশনের শিকার হয়।

ঞ) অপ্রাপ্তি বা অপূর্ণতা-

মানুষের চাওয়া-পাওয়ার পরিধি ব্যাপক। চাইলেই তো সবকিছু পাওয়া সম্ভব নয়। কোনকিছুতে যদি অপ্রাপ্তি বা অপূর্ণতা দেখা দেয় এবং প্রতিনিয়ত যদি এরকম হতে থাকে একটা সময় তা ডিপ্রেশন বা বিষন্নতায় রূপ নেয়।

ট) সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব-

বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া তথা ফেসবুক, ইউটিউবের প্রভাবে মানুষ নিজেকে ঘরবন্দী করে রাখে। সুযোগ পেলেই ঘরে বসে ফেসবুক, ইউটিউব নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এর পাশাপাশি পর্নোগ্রাফিতেও আসক্ত হয়ে পড়ে। খেলাধুলা করতে মাঠে যায় না, ঘুরতে বেরোয় না, আড্ডা দেয়না, আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা করে না ইত্যাদি। দীর্ঘদিন এ ধরণের বদাভ্যাসের কারণে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। মস্তিস্ক, চোখ, শরীর ও মন এগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হতে থাকে।

আস্তে আস্তে তাদের আচরণের মধ্যে ভিন্নতা দেখা যায়। একটা সময় বিষন্নতায় মনটা ছেয়ে যায়।

ঠ) প্রেমরোগ-

বর্তমানে ছেলে-মেয়েদের অবাধে মেলামেশার কারণে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরী হয়। একটা সময় প্রেমকে পবিত্র বলা হতো। কিন্তু এখনকার প্রেমের যে অবস্থা! প্রেম মানেই যেন দৈহিক মিলন। বিয়ের আগেই দৈহিক মিলনের স্বাদ ভোগ করার ফলে নতুন করে অন্যর সাথে মিলনের ইচ্ছা জাগে।

আর এই বিষয়টি এখন এতো সহজ হয়ে গেছে যেন চাইলেই পাওয়া যায়। এ কারণে পুরাতন প্রেমিক অথবা প্রেমিকাকে আর ভালো লাগে না।

তাদের মধ্যে ব্রেক-আপ হয়ে যায়। প্রেমে ছ্যাঁকা খাওয়ার কারণে দেবদাস হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। ডিপ্রেশনে ভূগতে থাকে।

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় | দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়

ডিপ্রেশনের চূড়ান্ত পর্যায় হলো নিজেকে শেষ করে দেয়া বা আত্মহত্যা করা। এটি এমনই একটি কঠিন রোগ যা নিজের জীবনকেও বলিদান দিতে পিছপা হয়না। এজন্য এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ সঠিকভাবে জেনে সে অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করা একান্ত জরুরী।

ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো।

১) চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করা | ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়-

ডিপ্রেশনের যে লক্ষণগুলো উল্লেখ করা হয়েছে, এগুলোর বেশিরভাগই যদি কারো মধ্যে লক্ষ্য করা যায়, তবে দেরী না করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোন চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের নিকট নিয়ে যাওয়া উচিত। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে হবে যে, সে আসলেই ডিপ্রেশনে আক্রান্ত কিনা।

যদি সে ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হয়ে থাকে তবে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সু-চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।

২) থেরাপি গ্রহণ করা | দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়-

সাইকো থেরাপি, ইলেক্ট্রো কনভালসিভ থেরাপি, লাইট থেরাপি ইত্যাদির মাধ্যমে খুব সহজে অল্প সময়ে ডিপ্রেশন বা হতাশা দূর হয়ে যায়। ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে থেরাপিগুলো গ্রহণ করতে পারেন।

৩) প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করা। ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়-

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য মহান সৃষ্টিকর্তার এক অফুরন্ত নিআ’মাত। প্রকৃতির প্রতি বস্তুকে মহান আল্লহ্ তা’আলা মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন। কারো মন খারাপ হলে প্রকৃতির সংস্পর্শে আসলে মন ভালো হয়ে যায়। প্রাকৃতিক আলো, বাতাস ইত্যাদি মানুষের শরীর ও মন উভয়ের জন্য খুবই ভালো। পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, খাল-বিল, বৃক্ষরাজি ইত্যাদির সৌন্দর্য্য মানুষের মনে প্রচন্ডভাবে নাড়া দিয়ে যায়। প্রকৃতির সৌন্দর্য্যের প্রভাবে অনেক সময় ডিপ্রেশন বা দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যায়।

এজন্য মন খারাপ হলে প্রকৃতির সংস্পর্শে আসা উচিত। দেখবেন মন ভালো হয়ে গেছে।

৪) মেডিটেশন ও ইয়োগা | দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়-

শারিরীক এবং মানসিক সমস্যা সমাধানে মেডিটেশন ও ইয়োগা অনেক পুরোনো এবং কার্যকরী উপায়। মেডিটেশনের মাধ্যমে মনের ভেতরের প্রশান্তি খোঁজার চেষ্টা করা। আর ইয়োগা হলোএকইসাথে আধ্যাত্মিক এবং দৃশ্যমান উন্নতির প্রক্রিয়া। ইয়োগা হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আবার নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করতে সাহায্য করবে।

৫) ব্যায়াম করা | চিন্তা দূর করার উপায়-

ব্যায়াম শরীর ও মন উভয়কেই সতেজ রাখে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শারিরীক সুস্থ্যতা এবং মানসিক প্রশান্তি লাভ হয়।

এটিও ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় হতে পারে। এজন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত।

৬) ধুমপান বা মাদকদ্রব্য বর্জন করা | ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়-

ধুমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সতর্কীকরণ এ বিজ্ঞপ্তি দেখেও মানুষ অহরোহ ধুমপান করছে। জরিপ করলে দেখা যায় ডিপ্রেশনে আক্রান্ত রোগীদের বেশিরভাগই ধুমপান বা মাদকদ্রব্য আসক্ত। তারা মনে করে ধুমপান বা মাদক সেবন করলে মনের কষ্ট ভুলে থাকা যায়। ডিপ্রেশন বা দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকা যায়। এটা যে তাদেরকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে সেটা তারা ভুলে যায়। ক্ষতি থেকে কখনো ভালো কিছু আসা করা যায় না।

মনের কষ্ট দূর করার জন্য তারা মাদক সেবনকে বেছে নেয় যা তাকে মৃত্যুপুরীতে পাঠিয়ে দেয়।

অথচ ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির আরও ভালো ভালো কত উপায় রয়েছে সেগুলো তারা গ্রহণ করে না।

৭) পছন্দের কাজ বেশী বেশী করা | দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়-

যখনই আপনার মন খারাপ থাকবে তখনই পছন্দের কাজগুলো বেশী বেশী করার চেষ্টা করুন। তবে পছন্দ বলতে অনৈতিক বা অপরাধমূলক কোন কাজ নয়। পছন্দের যে কাজগুলো আপনি করতে পারেন-

ক) খেলাধুলা করা
খ) গল্প করা।
গ) ভালো আড্ডা দেওয়া।
ঘ) ঘুরতে যাওয়া
ঙ) প্রার্থনা করা।

পছন্দের ভালো কাজের সাথে জড়িত থাকলে আস্তে আস্তে দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যাবে।

৮) বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়-স্বজনের সাথে সময় কাটানো | ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়-

বিষন্নতায় আক্রান্ত রোগীরা নিজেকে গুটিয়ে রাখতে পছন্দ করে। অন্যদের থেকে নিজেকে আড়াল করতে চায়। এটা আসলে বিষন্নতা বা ডিপ্রেশনকে আরো বৃদ্ধি করে। এজন্য বন্ধু-বান্ধব বা নিকট আত্মীয়-স্বজনদের সাথে বেশী বেশী সময় কাটানোর চেষ্টা করতে হবে।

তাদের সাথে গল্প করতে হবে, ঘুরতে যেতে হবে, মাঝে মাঝে ভালো আড্ডা দিতে হবে।

এভাবে করলে মনের যে কষ্টগুলো তা আস্তে আস্তে ভুলে যাবে এবং বিষন্নতা থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব হবে।

৯) ন্যাগেটিভ বা নেতিবাচক চিন্তা বর্জন করা | চিন্তা দূর করার উপায়-

মানুষ যখন ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হয় তখন সে কোনকিছুকে স্বাভাবিকভাবে ভাবতে পারে না। সবকিছুর মধ্যে সে ন্যাগেটিভ বা নেতিবাচক বিষয় খুঁজে পায়। পজিটিভ বা ইতিবাচক কোন কিছু চিন্তা করতে পারে না।

পজিটিভ বিষয়গুলোকেও সে ন্যাগেটিভ ভাবতে থাকে।

এজন্য এ ধরণের রোগীকে ন্যাগেটিভ চিন্তা-ভাবনা থেকে বের করে নিয়ে আসার চেষ্টা করা।

১০) ইতিবাচক চিন্তা করা | দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়-

ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হলে পজিটিভ বা ইতিবাচক বিষয় মন থেকে হারিয়ে যায়। সবকিছুকেই ন্যাগেটিভ মনে হয়। যতো বেশী ন্যাগেটিভ চিন্তার করবেন ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা ততোই ঘিরে ধরবে। এজন্য ইতিবাচক চিন্তা বেশী বেশী করা উচিত।

এমনকি যে বিষয়টি আমরা ন্যাগেটিভ হিসেবে জানি সেখান থেকেও পজিটিভ বা ইতিবাচক কিছু বের করার চেষ্টা করতে হবে।

এ প্রক্রিয়ায় আস্তে আস্তে বিষন্নতা দূর হয়ে যাবে।

১১) নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী হওয়া | ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়-

বিষন্নতায় আক্রান্ত রোগীরা নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। প্রতিটি ক্ষেত্রে সে নিজেকে ছোট, অযোগ্য, অবহেলিত, অপারগ ইত্যাদি মনে করতে থাকে। সে নিজেকে এভাবে মনে করে- আমার দ্বারা এ কাজটি করা সম্ভব নয়, আমি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবো না, আমি নিঃশ্বেস হয়ে গেছি, আমাকে কেউ মূল্যায়ন করবে না ইত্যাদি। এক্ষেত্রে তার সাথে তার নিকট আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধবদের এমন আচরণ করতে হবে বা তাকে এমনভাবে বুঝাতে হবে যেন সে আবার নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পারে।

সে যেন আবার নতুন করে জীবন শুরু করতে পারে বা নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়।

নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস ফিরে আসা ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় গুলোর মধ্যে অন্যতম।

১২) সুষম বা পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা | মানসিক চিন্তা দূর করার উপায়-

শারিরীকভাবে দূর্বল বা অসুস্থ্যতার কারণেও অনেক সময় ডিপ্রেশনে ভুগে থাকে। এজন্য শারিরীক দূর্বলতা কাটানোর জন্য সুষম বা পুষ্টিকর খাবার বেশী বেশী গ্রহণ করা উচিত।

শারিরীক দূর্বলতার জন্য যে ডিপ্রেশন সৃষ্টি হয় তা আস্তে আস্তে দূর হয়ে যাবে।

শুধুমাত্র ডিপ্রেশনই নয় শারিরীক বিভিন্ন প্রকার অসুস্থ্যতা দূরীকরণে সুষম বা পুষ্টিকর খাবার বেশী বেশী গ্রহণ করা উচিত।

১৩) পারিবারিক সাপোর্ট | দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়-

হতাশা বা ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় গুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো পারিবারিক সাপোর্ট। পারিবারিক সাপোর্টের কারণে একজন ডিপ্রেশনে আক্রান্ত রোগী নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখে, ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখে।

একজন হতাশাগ্রস্থ রোগীকে সুস্থ্য করে তুলতে পারিবারিক সাপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

ডিপ্রেশনে আক্রান্ত হওয়ার কারণ বহুবিধ হওয়ায় পারিবারিক সাপোর্টের ক্ষেত্রেও ভিন্নতা রয়েছে।

স্বাভাবিকভাবে পারিবারিক কি কি সাপোর্ট এর প্রয়োজন হতে পারে তা নিম্নরূপ-

ক) প্রথমে একজন চিকিৎসকের নিকট নিয়ে যাওয়া। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী তার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা।
খ) তাকে বেশী বেশী সময় দেয়া।
গ) তার একাকীত্ব দূর করার চেষ্টা করা।
ঘ) তাকে সর্বদা হাসি-খুশী রাখার চেষ্টা করা।
ঙ) তাকে প্রকৃতির সংস্পর্শে নিয়ে যাওয়া।
চ) তাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া।
ছ) তার সাথে গল্প করা।
জ) তাকে যথাযথ মূল্যায়ন করা।
ঝ) তাকে আদর, স্নেহ, ভালবাসা দেওয়া।
ঞ) নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা থেকে বের করে পজিটিভ চিন্তা-ভাবনায় নিয়ে আসার চেষ্টা করা।
ট) ধুমপান বা মাদকদ্রব্য সেবন থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা।
ঠ) তাকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলার চেষ্টা করা।
ড) তার সাথে খারাপ আচরণ, ঝগড়া-বিবাদ ইত্যাদি না করা।
ঢ) কোন বিষয়ে তাকে চাপ সৃষ্টি না করা।
ণ) তাকে ধর্মীয় অনুশাসনে নিয়ে আসার চেষ্টা করা।
ত) পারিবারিক কলহ বন্ধ করা।
থ) বেকারত্ব নিয়ে তাচ্ছিল্য না করা।
দ) তার ঋণ পরিশোধের চেষ্টা করা।
ধ) অভাব-অনটনের কারণে তাকে কষ্ট দিয়ে কথা না বলা।
ন) শিক্ষার্থীদেরকে তাদের ধারণ ক্ষমতার বাইরে পড়াশুনার চাপ না দেওয়া।
প) অবজ্ঞা, অবহেলা না করা।
ফ) অবিবাহিত মেয়েদেরকে পরিবারের বোঝা মনে না করে তাদের পাশে থাকা।

১৪) হাসি-খুশি থাকার চেষ্টা করা | ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়

ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা মানেই হাসি-খুশী পালিয়ে যাওয়া। সারাক্ষণ মন মড়া হয়ে থাকা। এখানে একটু জোকস্ করে বলতে চাই- মন খারাপ বিষয়টি অনেকটা বানরের মতো। যেমন- আপনি যদি বানরকে প্রশ্রয় দেন তাহলে সে প্রথমে আপনার শরীরে উঠবে, তারপর ঘাড়ে, এরপর ঘাড় থেকে এক লাফে মাথায় উঠে নাচানাচি করবে। এজন্য বানরকে কখনোই প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়।
ঠিক মন খারাপ বিষয়টিও তেমনই। আপনি মন খারাপকে যতো বেশী প্রশ্রয় দিবেন ততোই আপনাকে পেয়ে বসবে।

এজন্য তাকে প্রশ্রয় না দিয়ে জোর করে হলেও সারাক্ষণ হাসি-খুশী থাকার চেষ্টা করুন।

তাহলে দেখবেন ডিপ্রেশন আস্তে আস্তে আপনার থেকে পালিয়ে যাবে।

১৫) ধর্মীয় বা সামাজিক গঠনমূলক কাজে অংশগ্রহণ করা | দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়-

মন খারাপ হলে ধর্মীয় বা সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করুন। আপনি যদি মন থেকে কারো উপকার করে থাকেন, দেখবেন মনের মধ্যে খুবই প্রশান্তি অনুভব হয়। মনের মধ্যে অনেক আনন্দ লাগে। আর মনে যখন আনন্দ থাকে তখন বিষন্নতা জায়গা পায় না। কেননা দুটি জিনিষ কখনো একসাথে থাকতে পারে না।

এজন্য মন খারাপ হলেই সমাজের উন্নয়নমূলক কিছু করার চেষ্টা করুন। দেখবেন বিষন্নতা দূর হয়ে গেছে।

১৬) ধর্মীয় জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করা | ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়-

ধর্মীয় জ্ঞান সৃষ্টিকর্তা থেকে পাওয়া। সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক প্রাপ্ত প্রতিটি বিষয়ই মানবের জন্য কল্যাণকর। ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে যখন আপনি জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করবেন তখন দুশ্চিন্তা, ডিপ্রেশন, বিষন্নতা আস্তে আস্তে আপনার থেকে দূরে সরে যাবে। কারণ ধর্মীয় জ্ঞান আপনাকে ধীরে ধীরে সৃষ্টিকর্তার কাছাকাছি নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। আর সৃষ্টিকর্তার কাছাকাছি অর্থাৎ আপনি যদি একবার সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি লাভের জ্ঞান অর্জন করতে পারেন তাহলে আপনার মধ্যে ডিপ্রেশন বা দুশ্চিন্তা বলতে কিছু থাকবে না।

এছাড়া ধর্মীয় জ্ঞান অন্বেষন করতে গিয়ে আপনি অনেক মনীষীর জীবনী থেকে জানতে পারবেন, তারা জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন দুশ্চিন্তা, ডিপ্রেশন, বিষন্নতায় ধৈর্য্য ধারণের মাধ্যমে কিভাবে নিজেকে কন্ট্রোল করেছেন।

১৭) প্রার্থনা করা | দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়-

পৃথিবীর সর্বোত্তম কাজ হলো প্রার্থনা করা। মহান আল্লহ্ তা’আলা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন শুধুমাত্র তাঁর ইবাদাত করার জন্য। এ বিষয়ে মহান আল্লহ্ পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন-

”আমি মানুষ এবং জ্বীন জাতিকে সৃষ্টি করেছি শুধুমাত্র আমার ইবাদাতের জন্য”। এজন্য পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ হলো ইবাদাত বা প্রার্থনা করা।

প্রার্থনা মানব জাতির জন্য কল্যাণকর এমনই একটি বিষয়, যার মাধ্যমে সকল সমস্যার সমাধান করা যায়। ডিপ্রেশন বা বিষন্নতায় আচ্ছন্ন হলে বেশী বেশী ইবাদাত করুন এবং সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করুন।

ইবাদাতের মাধ্যমে তাঁর নিকটবর্তী হওয়ার চেষ্টা করুন, তাঁর নিকট সাহায্য চান। দেখবেন মানসিক অবসাদ বা বিষন্নতা চলে গেছে।

১৮) ধৈর্য্য ধারণ করা | চিন্তা দূর করার উপায়-

মানুষের ডিপ্রেশনে আচ্ছন্ন হওয়ার বেশিরভাগ কারণই হলো বিপদ-আপদ, দুঃখ কষ্টে নিপতিত হওয়া। বিপদ-আপদ, দুঃখ কষ্ট মানুষের নিত্য সঙ্গী। তাই বিপদে আপদে, বালা-মসিবতে ধৈর্য্য ধারণ করা উচিত। বিপদ যতো বড়ই হোক না কেন ধৈর্য্য ধারণের মাধ্যমে আস্তে আস্তে তা দূর হয়ে যায়। বিপদ কখনো চিরস্থায়ী হয়না।

মহান আল্লহ্ তা’আলা ধৈর্য্যশীলদের সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন-

নিশ্চয়ই আল্লহ ধৈর্য্যশীলদের সাথে রয়েছেন। (সুরা-বাকারা, আয়াত-১৫৩)

১৯) তাক্বদীরের উপর বিশ্বাস রাখা | দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির উপায়-

ভাল-মন্দ যা কিছু হয় সবই আল্লহর পক্ষ থেকে। তাক্বদীরের উপর বিশ্বাস রাখা একজন মু’মিনের ঈমানী দায়িত্ব। তাক্বদীরে বিশ্বাস স্থাপন করলে কখনো হতাশা বা দুশ্চিন্তা আসবে না। হতাশাগ্রস্থ হলেও তাক্বদীরের কথা স্মরণ করলে হতাশা দূর হয়ে যায়।

এজন্য তাক্বদীরের উপর বিশ্বাস রাখুন এবং ধৈর্য্য ধারণ করুন।

২০) মৃত্যু বা পরকালের কথা স্মরণ করুন | চিন্তা দূর করার উপায়-

বিষন্নতা বা হতাশাগ্রস্থ হলে মৃত্যু বা পরকালের কথা বেশী বেশী স্মরণ করুন। কেননা দুনিয়ার পেরেশানীর তুলনায় পরকালের পেরেশানীর তীব্রতা অনেক বেশী। সুতরাং পরকালের কথা এভাবে স্মরণ করতে পারেন-

ক) পরকালীন জীবনের জন্য আমি কি সঞ্চয় করেছি?
খ) মৃত্যুর পর আমার কি অবস্থা হবে?
গ) আমি আল্লহর সামনে দাঁড়িয়ে কি জবাব দিব?
ঘ) আমি আল্লহর সন্তুষ্টি কতটুকু অর্জন করেছি?
ঙ) জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাত লাভের জন্য আমি কি করতে পেরেছি?

এছাড়া ডিপ্রেশন বা হতাশার কারণে আত্মতহ্যা করার পূর্বে একবার স্মরণ করুন আত্মহত্যা করা মহাপাপ। আত্মহত্যা করলে হয়তো দুনিয়ার কষ্ট থেকে মুক্তি পাবো। কিন্তু আত্মহত্যা করার সাথে সাথেই তো শুরু হয়ে যাবে পরকালীন আযাব। দুনিয়ার দুঃখ কষ্ট তো সহ্য করার মতো কিন্তু পরকালীন যন্ত্রণা তো সীমাহীন যন্ত্রণা।

মৃত্যু এবং পরকালীন জবাবদিহিতার চিন্তার মাধ্যমে দুনিয়ার সকল দুশ্চিন্তা, হতাশা, বিষন্নতা, ডিপ্রেশন ইত্যাদি সহজেই দূর হয়ে যায়।

দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া | চিন্তা দূর করার দোয়া-

অনেকেই দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া ইন্টারনেটে খুঁজে থাকেন অথবা বিভিন্ন আলেমের নিকট জিজ্ঞাসা করেন। বিভিন্ন সূত্রে বিভিন্নভাবে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া উল্লেখিত আছে।

তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি দু’আ আপনাদের সামনে উপস্থাপন করা হলো-

একদিন হযরত আবু উমামাহ (রাঃ), রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেন- হে আল্লহর রাসুল (সঃ) আমি সীমাহীন দুশ্চিন্তা এবং ঋণের বোঝায় জর্জরিত। রাসুল (সঃ) বলেন, আমি কি তোমাকে এমন কিছু শিক্ষা দিব, যা বললে মহান আল্লাহ তোমার দুশ্চিন্তা দূর করবেন এবং তোমার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থাও করে দেবেন?

আমি উত্তরে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল। রাসুল (সঃ) বলেন, তুমি সকাল-সন্ধ্যায় উক্ত দু’আটি পড়বে।

দু’আটির আরবী উচ্চারণ- اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الهَمِّ وَالحَزَنِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ العَجزِ وَالكَسَلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الجُبنِ وَالبُخلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ غَلَبَةِ الدَّينِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ

বাংলা উচ্চারণ- আল্লহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাজানি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল আঝঝি ওয়াল কাসালি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া আউজুবিকা মিন গলাবাতিদ দাইনি ওয়া ক্বহরির রিজাল।

অর্থ- হে আল্লহ্! আমি আপনার নিকট দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি ভীরুতা ও কৃপণতা থেকে, আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি ঋণের বোঝা ও মানুষের দমন-পীড়ন থেকে।

আবু উমামাহ (রাঃ) বলেন, আমি দু’আটি সকাল-সন্ধ্যা পড়তে থাকলাম। মহান আল্লহ্ তা’আলা আমার সকল চিন্তা দূর করে দিলেন এবং আমার সমস্ত ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থাও করে দিলেন। (আবু দাউদ, হাদিস- ১৫৫৫)

বিঃদঃ দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া টি কয়েকটি সূত্র থেকে সংগ্রহ করা। এর গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে আমি কোন নিশ্চিয়তা দিতে পারবো না। কেননা আমি হাদিস যাচাই-বাছাই করার ক্ষমতা রাখি না। এজন্য আমি আপনাদেরকে অনুরোধ করবো হাদিসটি যথাযথভাবে যাচাই করে তারপর আমল করবেন।

হাদিসটি ভুল না সঠিক তা আমার জানা নেই। তাই এর কোন দায়-দায়িত্ব আমি নিতে পারব না।

শেষকথা-

বর্তমানে সমাজে আত্মহত্যার প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এর মূল কারণ হলো ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা। মানুষ ডিপ্রেশনে আক্রান্ত কেন হয়? ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় কি? ডিপ্রেশনের লক্ষণসমূহ কি কি? এ বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আর্টিকেলটি সকলের ভালভাবে পড়া উচিত।

কেননা, ডিপ্রেশন বা দুশ্চিন্তাগ্রস্থ রোগীদের সুস্থ্য করতে সময়মত সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে।

আশা করছি আপনারা ডিপ্রেশন সম্পর্কে খুঁটিনাটি অনেক কিছু জানতে পেরেছেন এবং উপকৃত হয়েছেন।

3 thoughts on “ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় কি?”

Leave a Comment