আমেরিকায় স্টুডেন্ট ভিসায় যেতে কোন কোন ডকুমেন্টস লাগে? সহজ ও সম্পূর্ণ গাইড ২০২৫

Spread the love

আমেরিকায় পড়াশোনা করার স্বপ্ন অনেক শিক্ষার্থীর মনেই থাকে। বিশ্বমানের শিক্ষা, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, আর উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের দরজা খুলে দেয় আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। তবে এই স্বপ্ন পূরণ করতে হলে দরকার সঠিক পরিকল্পনা আর পর্যাপ্ত প্রস্তুতি। বিশেষ করে, স্টুডেন্ট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা খুব জরুরি।

অনেক শিক্ষার্থী শুধু শুনে শুনে ভিসার জন্য ডকুমেন্টস সংগ্রহ করতে গিয়ে ভুল করে বসে। কেউ ডকুমেন্টস অসম্পূর্ণ জমা দেয়, কেউ আবার ভুল তথ্য দেয়। এতে ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে যায়। অথচ, যদি আমরা শুরু থেকে ধাপে ধাপে শিখি কোন কোন ডকুমেন্টস দরকার, তাহলে পুরো প্রক্রিয়া খুব সহজ হয়ে যায়।

এই লেখাটিতে আমরা একদম সহজ ভাষায়, ধাপে ধাপে, প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টের নাম, কাজ, এবং প্রস্তুতির পদ্ধতি জানবো। যেন ৭ বছরের শিশুও পড়ে বুঝতে পারে। তোমার যদি আমেরিকায় পড়তে যাওয়ার ইচ্ছা থাকে, তাহলে এই গাইডটি তোমার জন্য খুবই সহায়ক হবে।

চল, তাহলে শুরু করি—আমেরিকায় স্টুডেন্ট ভিসার জন্য কী কী ডকুমেন্টস দরকার এবং কীভাবে এগুলো ঠিকঠাক প্রস্তুত করতে হয়।

১। স্টুডেন্ট ভিসা এবং কেন ডকুমেন্টস দরকার?

আমরা অনেকেই আমেরিকায় পড়াশোনা করতে যেতে চাই। কিন্তু শুধু ইচ্ছা করলেই হবে না, এর জন্য অনেক নিয়ম-কানুন মানতে হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—ঠিকমতো ডকুমেন্টস প্রস্তুত করা। কেন জানো? কারণ, ডকুমেন্টস ছাড়া কাউকে ভিসা দেয় না। ডকুমেন্ট মানে হচ্ছে প্রমাণ। তুমি কে? কোথায় পড়বে? কত খরচ হবে? এসব তথ্য জানিয়ে দিতে ডকুমেন্ট দরকার হয়।

তুমি যদি ডকুমেন্টস ঠিকভাবে না দাও, তাহলে ভিসা অফিসার বুঝবে না তুমি সত্যি পড়তে যাচ্ছ কিনা। তারা তোমার সব কিছু যাচাই করবে ডকুমেন্ট দেখে। এজন্য আমাদের দরকার সঠিক, পরিষ্কার, এবং সম্পূর্ণ ডকুমেন্টস।

একটা কথা মনে রাখবে, ডকুমেন্টস হলো তোমার সত্যি কথা বলার প্রমাণ। তুমি যেমন স্কুলে পরীক্ষায় খাতা জমা দাও, ঠিক তেমনি ভিসা পাওয়ার জন্য এই ডকুমেন্ট জমা দিতে হয়।

তাহলে আজ আমরা এক এক করে জানবো, আমেরিকায় স্টুডেন্ট ভিসায় যেতে কী কী ডকুমেন্টস লাগে, কীভাবে এগুলো তৈরি করতে হয়, আর কোন ভুলগুলো এড়িয়ে চলতে হয়।

তোমার যদি ইচ্ছা থাকে আমেরিকায় পড়তে যাওয়ার, তাহলে এই লেখাটি তোমার জন্য খুবই কাজে লাগবে। চল, তাহলে ধাপে ধাপে শিখে নেই!

২ । আমেরিকায় স্টুডেন্ট ভিসার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট – পাসপোর্ট

পাসপোর্ট কেন দরকার?

ভিসা অফিসার তোমার পাসপোর্টে স্টুডেন্ট ভিসা লাগিয়ে দেবে। এছাড়া, তুমি যখন বিমানে উঠবে, তখন পাসপোর্ট দেখাতে হবে। আমেরিকায় পৌঁছেও ইমিগ্রেশন অফিসার তোমার পাসপোর্ট দেখে অনুমতি দেবে। পাসপোর্ট ছাড়া তুমি বিদেশের কোনো দেশে ঢুকতেই পারবে না।

পাসপোর্ট থাকতে কী শর্ত আছে?

তোমার পাসপোর্ট অবশ্যই ছয় মাসের বেশি মেয়াদ থাকতে হবে, মানে তোমার ভিসা ইন্টারভিউয়ের সময় যদি পাসপোর্টের মেয়াদ শেষের দিকে থাকে, তাহলে নতুন পাসপোর্ট করতে হবে। মেয়াদ শেষ হলে পাসপোর্ট আর ব্যবহার করা যাবে না।

কী কী ঠিক থাকতে হবে পাসপোর্টে?

নামের বানান যেন তোমার স্কুল সার্টিফিকেটের সাথে মিলে।

  • নামের বানান যেন তোমার স্কুল সার্টিফিকেটের সাথে মিলে।
  • জন্ম তারিখ যেন ভুল না হয়।
  • পাসপোর্টের ছবি যেন পরিষ্কার হয়।
  • পাসপোর্ট যেন ফাটা বা নষ্ট না হয়।

পাসপোর্ট না থাকলে কী করব?

যদি তোমার পাসপোর্ট না থাকে, তাহলে নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিস থেকে নতুন পাসপোর্ট করতে হবে। এখন বাংলাদেশে অনলাইনে আবেদন করে পাসপোর্ট বানানো খুবই সহজ। সময় লাগবে সাধারণত ১৫ থেকে ৩০ দিন।

ছোট্ট পরামর্শ:

পাসপোর্ট করতে হলে সব কাগজপত্র ঠিকঠাক দাও। ভুল হলে পরে অনেক ঝামেলা হবে। প্রয়োজনে পরিবারের বড়দের সাহায্য নাও।

তাহলে বুঝতেই পারলে, পাসপোর্ট কতটা জরুরি। এটা তোমার স্টুডেন্ট ভিসার প্রথম দরজা খুলে দেয়।

৩ । স্টুডেন্ট ভিসার জন্য SEVIS ফি ও I-20 ফর্মের গুরুত্ব

আমেরিকায় পড়তে যাওয়ার জন্য আরেকটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট হলো I-20 ফর্ম। এই ফর্মটি ছাড়া আমেরিকান স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া সম্ভব নয়। চল একে একে বিস্তারিতভাবে জানি।

I-20 ফর্ম কী?

I-20 ফর্ম হলো এমন একটি কাগজ যেখানে লেখা থাকে—

·  তুমি কোন ইউনিভার্সিটিতে পড়বে

·  তোমার কোর্সের নাম কী

·  কোর্সের মেয়াদ কতদিন

·  মোট কত টাকা খরচ হবে

·  তোমার ব্যক্তিগত তথ্য (নাম, জন্ম তারিখ, পাসপোর্ট নম্বর)

এই ফর্ম তোমাকে পাঠাবে যেই বিশ্ববিদ্যালয় তোমাকে ভর্তি নিয়েছে। এই ফর্ম তোমার আসল প্রমাণ যে, তুমি সত্যি আমেরিকায় পড়তে যাচ্ছ।

SEVIS ফি কী?

SEVIS মানে হলো Student and Exchange Visitor Information System। এটা হলো আমেরিকার এক বিশেষ সিস্টেম যেখানে তোমার ভিসা ও পড়াশোনার সমস্ত তথ্য রেকর্ড থাকে।


তুমি যখন I-20 ফর্ম পাবে, তখন তোমাকে SEVIS ফি দিতে হবে। এই ফি না দিলে ভিসা আবেদন করতে পারবে না।
এই ফি অনলাইনে পেমেন্ট করতে হয়। পেমেন্ট করার পর একটা রিসিপ্ট বা প্রমাণপত্র আসে। এই রিসিপ্ট তোমাকে ইন্টারভিউয়ে সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে।

SEVIS ফি কত?

·  সাধারণত SEVIS ফি 350 মার্কিন ডলার।

·  বাংলাদেশি টাকায় এটা প্রায় ৪০,০০০ টাকা (ডলার রেট অনুযায়ী পরিবর্তন হতে পারে।)

কেন SEVIS ফি জরুরি?

SEVIS ফি না দিলে তোমার ভিসা আবেদন incomplete হয়ে যাবে। আমেরিকার সরকার তোমার তথ্য SEVIS সিস্টেমে রাখতে পারে না। ফলে তোমাকে অবশ্যই সময়মতো এই ফি দিতে হবে।

I-20 ফর্ম আর SEVIS ফি কোথায় দেখাতে হবে?

·  ভিসা ইন্টারভিউয়ের দিন

·  আমেরিকায় ইমিগ্রেশনে প্রবেশ করার সময়

·  ইউনিভার্সিটি ভর্তি করার সময়

ছোট্ট পরামর্শ:

I-20 ফর্ম পাওয়ার পর নাম, পাসপোর্ট নম্বর, এবং কোর্সের তথ্য ভালো করে দেখে নেবে। ভুল থাকলে ইউনিভার্সিটির সাথে দ্রুত যোগাযোগ করবে।

তাহলে বুঝতেই পারলে, I-20 ফর্ম আর SEVIS ফি স্টুডেন্ট ভিসার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো ঠিকঠাক না থাকলে ভিসা পাওয়া অনেক কঠিন হয়ে যাবে।

৪ । DS-160 ফর্ম ও ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ার বিস্তারিত

স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো DS-160 ফর্ম পূরণ করা। এই ফর্মটি ছাড়া আমেরিকান ভিসা আবেদন সম্ভব নয়। আসো, সহজভাবে বুঝে নিই।

DS-160 ফর্ম কী?

DS-160 হলো অনলাইন ভিত্তিক একটি ভিসা আবেদন ফর্ম। এই ফর্মে তোমার সব ব্যক্তিগত তথ্য, পাসপোর্টের তথ্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা, আমেরিকায় কোথায় পড়বে, আর ভ্রমণের পরিকল্পনা লিখতে হয়।

DS-160 ফর্ম হলো তোমার ভিসা ইন্টারভিউর প্রথম দরজা।
তুমি যদি এখানে ভুল কিছু লেখো, তাহলে ভিসা পেতে বড় সমস্যা হবে।

DS-160 ফর্ম কোথায় পূরণ করব?

এই ফর্ম পূরণ করতে হয় https://ceac.state.gov/CEAC/ এই ওয়েবসাইটে।
তুমি বা তোমার পরিবারের কেউ কম্পিউটারে বসে সহজেই এটি পূরণ করতে পারবে।

DS-160 ফর্ম পূরণ করতে কী কী দরকার?

·  পাসপোর্টের তথ্য

·  I-20 ফর্মের তথ্য

·  তোমার ছবি (সম্প্রতি তোলা, নির্দিষ্ট মাপের)

·  ব্যক্তিগত ঠিকানা ও ফোন নম্বর

·  পরিবারের তথ্য

·  পূর্বের ভ্রমণ ইতিহাস (যদি থাকে)

DS-160 ফর্মের শেষে কী হবে?

ফর্ম পূরণের পর তুমি একটা DS-160 কনফার্মেশন পৃষ্ঠা পাবে।
এই কনফার্মেশন পৃষ্ঠায় বার কোড থাকবে। ইন্টারভিউয়ের দিন এটা প্রিন্ট করে সঙ্গে নিতে হবে।

ভিসা ফি কত?

ভিসা আবেদন করার জন্য ভিসা ফি ১৮৫ মার্কিন ডলার (প্রায় ২২,০০০ টাকা) দিতে হয়।
এই ফি Stanard Chartered Bank Bangladesh অথবা অনলাইনে পেমেন্ট করতে হয়।

ফি দেওয়ার পর কী করতে হবে?

ফি দেওয়ার পর তুমি US Travel Docs ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খুলে ইন্টারভিউর তারিখ নিতে পারবে।
যে তারিখ পাবে, সেদিন তোমাকে ঢাকা আমেরিকান এম্বাসিতে যেতে হবে।

ছোট্ট পরামর্শ:

DS-160 ফর্ম নিজে বুঝে বা অভিজ্ঞ কাউকে দিয়ে পূরণ কর। ভুল তথ্য দিলে তোমার আবেদন বাতিল হয়ে যেতে পারে।

এই ধাপটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ভুল হলে পুরো ভিসা প্রক্রিয়া আটকে যেতে পারে। তাই ধৈর্য ধরে, মনোযোগ দিয়ে, এবং সঠিক তথ্য দিয়ে এই ধাপ সম্পন্ন করতে হবে।

৫ । ভিসা ইন্টারভিউর জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসের তালিকা এবং প্রস্তুতি

ভিসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো ইন্টারভিউ। এই সময় তোমাকে ভিসা অফিসারের সামনে নিজের কথা পরিষ্কারভাবে বলতে হবে এবং দরকারি সব ডকুমেন্টস দেখাতে হবে। আসো, এখন দেখি ভিসা ইন্টারভিউর জন্য কী কী কাগজপত্র সঙ্গে নিতে হবে এবং কিভাবে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে।

ইন্টারভিউর জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসের তালিকা:

ইন্টারভিউর জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসের তালিকা:

  1. পাসপোর্ট: মেয়াদ থাকা পাসপোর্ট, পুরনো পাসপোর্ট থাকলে সেটাও নিতে হবে।
  2. I-20 ফর্ম: বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া মূল I-20 কপি।
  3. SEVIS ফি রিসিপ্ট: SEVIS ফি দেওয়ার প্রমাণপত্র।
  4. DS-160 কনফার্মেশন পৃষ্ঠা: বারকোডসহ প্রিন্ট কপি।
  5. ভিসা ফি জমা দেওয়ার রিসিপ্ট।
  6. ভিসা ইন্টারভিউ অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার।
  7. ফিনান্সিয়াল ডকুমেন্টস:
    o ব্যাংক স্টেটমেন্ট (শেষ ৬ মাসের)
    o স্পন্সরশিপ লেটার (যদি বাবা-মা বা অন্য কেউ খরচ দেয়)
    o ট্যাক্স রিটার্ন পেপার (যদি থাকে)
  8. শিক্ষাগত সনদপত্র:
    o এসএসসি, এইচএসসি, অনার্স বা যেটা প্রযোজ্য
    o টোফেল/আইইএলটিএস/জিআরই/জিম্যাটের স্কোর রিপোর্ট (যদি থাকে)
  9. পাসপোর্ট সাইজ ছবি: নির্ধারিত মাপের, সম্প্রতি তোলা।
  10. যদি থাকে পুরনো ভিসা বা ভ্রমণের প্রমাণ।

ইন্টারভিউর প্রস্তুতি:

  • ভিসা অফিসার সাধারণত জিজ্ঞেস করে:
    • কেন আমেরিকায় পড়তে যাচ্ছ?
    • কেন এই বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নিয়েছ?
    • পড়াশোনার খরচ কে দেবে?
    • পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরবে কি না?
  • উত্তর দেবে সত্য আত্মবিশ্বাসের সাথে। জবাব সংক্ষিপ্ত ও স্পষ্ট রাখতে চেষ্টা করো।
  • ইংরেজিতে উত্তর দিতে হবে। তবে সহজ ইংরেজি বললেও সমস্যা নেই, শুধু পরিষ্কার করে বললেই হবে।

ছোট্ট পরামর্শ:

ভিসা ইন্টারভিউতে কখনো মিথ্যা বলো না। ডকুমেন্টস ফাঁকি দিও না। তারা সব যাচাই করে। সত্য বললেই ভিসা পাওয়ার সুযোগ বাড়ে।

উপসংহার:

আমরা আজ আমেরিকায় স্টুডেন্ট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস ও ধাপে ধাপে প্রস্তুতির পুরো প্রক্রিয়া শিখেছি। পাসপোর্ট, I-20 ফর্ম, SEVIS ফি, DS-160 ফর্ম, ফিনান্সিয়াল ডকুমেন্টস—সবকিছু ঠিকঠাক করলে এবং ইন্টারভিউতে সঠিকভাবে উত্তর দিলে ভিসা পাওয়া অনেক সহজ।

সব সময় মনে রাখবে, ধৈর্য, সততা, আর সঠিক প্রস্তুতি তোমার সফলতার মূল চাবিকাঠি।

Leave a Comment

You cannot copy content of this page