এসএসসি পরীক্ষা জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা। এই সময় অনেক ছাত্রছাত্রীর মনে ভয়, টেনশন আর বিভ্রান্তি কাজ করে। “এখন কী পড়ব?”, “সব মনে থাকবে তো?”, “ভালো রেজাল্ট হবে তো?”—এই প্রশ্নগুলো খুব স্বাভাবিক।
কিন্তু ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ঠিক নিয়মে, ধাপে ধাপে প্রস্তুতি নিলে এসএসসি পরীক্ষা সহজ হয়ে যায়। এই লেখায় আমি খুব সহজ ভাষায় বলব—এসএসসি পরীক্ষার আগে কী কী করা দরকার। এমনভাবে বলা হবে যেন ৭ বছরের একটি বাচ্চাও বুঝতে পারে। এখানে বাস্তব অভিজ্ঞতা, পরীক্ষায় কার্যকর কৌশল আর বিশ্বাসযোগ্য পরামর্শ থাকবে, যা সত্যিই কাজে লাগবে।
১। সঠিক পড়ার পরিকল্পনা তৈরি করো
এসএসসি পরীক্ষার আগে সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো একটি সহজ ও বাস্তবসম্মত পড়ার পরিকল্পনা বানানো। অনেক শিক্ষার্থী পরিকল্পনা ছাড়া পড়তে বসে। ফলে তারা কখনো এক বিষয় বেশি পড়ে ফেলে, আবার কোনো বিষয় একেবারেই বাদ পড়ে যায়। এতে পরীক্ষার আগে ভয় আরও বেড়ে যায়। তাই আগে ঠিক করতে হবে—কোন দিনে কোন বিষয় পড়বে, কতক্ষণ পড়বে এবং কখন রিভিশন করবে।

প্রথমে একটি খাতায় তোমার সব বিষয়গুলোর নাম লেখো—বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, ধর্ম ইত্যাদি। এরপর প্রতিটি বিষয়ের অধ্যায়গুলো আলাদা করে লিখে ফেলো। এতে তুমি বুঝতে পারবে কোন অধ্যায় বেশি কঠিন আর কোনটা সহজ। কঠিন অধ্যায়গুলোর জন্য বেশি সময় রাখবে, আর সহজ অধ্যায়গুলোর জন্য কম সময় দিলেই হবে। মনে রাখবে, পরিকল্পনা এমন হতে হবে যেন সেটা পালন করা যায়। দিনে ২০ ঘণ্টা পড়ার প্ল্যান করলে সেটা কোনো কাজেই আসবে না।
একদিনে ৩–৪টি বিষয় পড়াই যথেষ্ট। যেমন—সকালে গণিত বা বিজ্ঞান, কারণ এই সময় মাথা বেশি ফ্রেশ থাকে। দুপুরে হালকা বিষয় যেমন বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বা ধর্ম। আর রাতে বাংলা বা ইংরেজি পড়তে পারো। প্রতিটি পড়ার সেশন ৩০–৪৫ মিনিট রাখো। তারপর ১০ মিনিট বিরতি নাও। এতে মাথা ক্লান্ত হবে না, আর পড়া মনে থাকবে।
পরিকল্পনায় রিভিশনের সময় অবশ্যই রাখবে। শুধু নতুন পড়া পড়লে হবে না। যা পড়েছো, সেটাই বারবার ঝালাই করতে হবে। সপ্তাহে অন্তত একদিন শুধু রিভিশনের জন্য রাখো। সেই দিন নতুন কিছু না পড়ে আগের পড়াগুলো আবার দেখবে। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—পরিকল্পনা দেয়ালে বা পড়ার টেবিলের সামনে লাগিয়ে রাখো। প্রতিদিন কোন কাজ শেষ করলে পাশে টিক চিহ্ন দাও। এতে নিজের উপর বিশ্বাস তৈরি হবে। মনে হবে, “হ্যাঁ, আমি পারছি।” এই ছোট ছোট অনুভূতিই পরীক্ষার আগে মানসিক শক্তি বাড়ায়।
সবশেষে মনে রেখো—পরিকল্পনা তোমার বন্ধু, বোঝা নয়। কোনো দিন যদি সব পড়া শেষ না হয়, মন খারাপ করবে না। পরের দিন একটু বেশি চেষ্টা করো। নিয়মিত চেষ্টা করলেই সফলতা আসবেই।
২। স্মার্টভাবে পড়া এবং মনে রাখার কৌশল
এসএসসি পরীক্ষার আগে শুধু বেশি সময় পড়লেই ভালো ফল আসে না। কীভাবে পড়ছো, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অনেক ছাত্রছাত্রী ঘণ্টার পর ঘণ্টা বইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে, কিন্তু শেষে কিছুই মনে থাকে না। এর কারণ হলো তারা স্মার্টভাবে পড়ে না। এখন আমি তোমাকে খুব সহজ কিছু কৌশল বলব, যেগুলো মানলে অল্প পড়াতেই বেশি মনে থাকবে।

প্রথম কৌশল হলো—বুঝে পড়া। কোনো অধ্যায় পড়ার সময় আগে শিরোনাম আর উপশিরোনামগুলো চোখ বুলিয়ে দেখো। তারপর নিজেকে প্রশ্ন করো, “এই অধ্যায়ে কী বলা হতে পারে?” এরপর পড়া শুরু করো। এতে তোমার মস্তিষ্ক আগে থেকেই প্রস্তুত থাকে। মুখস্থ না করে নিজের ভাষায় বোঝার চেষ্টা করো। যেমন—বিজ্ঞান বা ইতিহাস পড়ার সময় ঘটনা বা কারণগুলো নিজের মতো করে ভাবলে সহজে মনে থাকে।
দ্বিতীয় কৌশল হলো—লিখে লিখে পড়া। শুধু চোখ দিয়ে পড়লে অনেক কিছু ভুলে যায়। কিন্তু ছোট ছোট নোট বানালে পড়া অনেকদিন মনে থাকে। পুরো বই লিখতে হবে না। গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা, সাল, সূত্র বা পয়েন্টগুলো আলাদা খাতায় লেখো। এই খাতাটা হবে তোমার “স্মার্ট নোট”। পরীক্ষার আগে এই নোটই সবচেয়ে কাজে আসবে।
তৃতীয় কৌশল হলো—নিজেকে পরীক্ষা নেওয়া। পড়া শেষ করে বই বন্ধ করে নিজেকে প্রশ্ন করো—“আমি কী পড়লাম?”, “মূল পয়েন্ট কী ছিল?” যদি উত্তর দিতে পারো, বুঝবে পড়া ঠিক হয়েছে। না পারলে আবার বই খুলে দেখো। এতে ভুল ধরা পড়বে আর শেখাও ভালো হবে। চাইলে আগের বছরের প্রশ্ন বা মডেল টেস্ট ব্যবহার করতে পারো।
চতুর্থ কৌশল হলো—ছোট বিরতি নেওয়া। একটানা অনেকক্ষণ পড়লে মাথা ক্লান্ত হয়ে যায়। তাই ৩০–৪৫ মিনিট পড়ার পর ৫–১০ মিনিট বিরতি নাও। এই সময় চোখ বন্ধ করে বসে থাকো, পানি খাও বা একটু হাঁটো। মোবাইল বা গেম থেকে দূরে থাকাই ভালো।
সবশেষে মনে রাখবে—প্রতিদিন অল্প অল্প করে নিয়মিত পড়া সবচেয়ে শক্তিশালী কৌশল। একদিনে অনেক পড়ার চেয়ে, প্রতিদিন একটু একটু করে পড়লে স্মৃতি শক্ত হয়। এতে পরীক্ষার হলে গিয়ে ভয় কম লাগবে, আর আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
৩। নিয়মিত রিভিশন ও মডেল টেস্টে অভ্যস্ত হওয়া
এসএসসি পরীক্ষার আগে অনেক শিক্ষার্থী বলে, “আমি তো সব পড়েছি।” কিন্তু পরীক্ষার হলে গিয়ে দেখে অনেক কিছু মনে পড়ছে না। এর প্রধান কারণ হলো রিভিশনের অভাব। পড়া একবার পড়লেই মনে থাকে না। বারবার ঝালাই না করলে মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে ভুলে যায়। তাই নিয়মিত রিভিশন আর মডেল টেস্টে অভ্যস্ত হওয়া খুবই জরুরি।

প্রথমে রিভিশনের কথা বলি। প্রতিদিন যা পড়ছো, রাতে ঘুমানোর আগে ১০–১৫ মিনিট সময় নিয়ে সেই পড়াগুলো আবার চোখ বুলিয়ে দেখো। এতে ঘুমের সময় মস্তিষ্ক তথ্যগুলো মনে রাখতে সাহায্য করে। এটাকে বলে “স্লিপ রিভিশন”। এটি খুব সহজ কিন্তু খুব কার্যকর একটি কৌশল। সপ্তাহে একদিন শুধু রিভিশনের জন্য রাখলে আরও ভালো ফল পাওয়া যায়।
রিভিশনের সময় পুরো বই আবার পড়ার দরকার নেই। তোমার বানানো স্মার্ট নোট, দাগানো লাইন আর গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোই যথেষ্ট। নিজের ভাষায় পড়া বোঝার চেষ্টা করো। কোথাও আটকে গেলে সেই অংশ আবার ভালো করে পড়ো। এতে দুর্বল জায়গাগুলো ধরা পড়বে।
এবার আসি মডেল টেস্টের কথায়। মডেল টেস্ট মানে হলো—পরীক্ষার মতো করে নিজেকে পরীক্ষা নেওয়া। ঠিক সময় ধরে, প্রশ্নপত্র নিয়ে বসে উত্তর লেখা। এতে তুমি বুঝতে পারবে—কোথায় সময় বেশি লাগছে, কোথায় ভুল হচ্ছে। শুরুতে ফল খারাপ হতে পারে, এতে ভয় পেও না। ভুল থেকেই শেখা যায়।
মডেল টেস্ট দেওয়ার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো—ভুল বিশ্লেষণ করা। শুধু নম্বর দেখলে হবে না। কোথায় ভুল হলো, কেন ভুল হলো—সেটা খুঁজে বের করো। হয়তো প্রশ্ন বুঝতে পারোনি, অথবা উত্তর ঠিকভাবে লিখোনি। এই জায়গাগুলো ঠিক করলে পরের টেস্টে উন্নতি হবেই।
আরেকটি বিষয় মনে রাখবে—মডেল টেস্টের সময় মোবাইল বন্ধ রাখো। পরীক্ষার মতো পরিবেশ তৈরি করো। এতে পরীক্ষার ভয় অনেক কমে যায়। পরীক্ষার হলে বসে আর নতুন কিছু মনে হবে না, কারণ তুমি আগেই অনুশীলন করে এসেছো।
সবশেষে বলা যায়—রিভিশন আর মডেল টেস্ট হলো সাফল্যের চাবিকাঠি। যারা নিয়মিত এগুলো করে, তারাই পরীক্ষায় আত্মবিশ্বাসী থাকে।
৪। শরীর ও মনের যত্ন নাও, ভয়কে দূরে রাখো
এসএসসি পরীক্ষার আগে শুধু পড়ালেখাই সব নয়। শরীর আর মন ভালো না থাকলে পড়াও ঠিকমতো কাজ করে না। অনেক শিক্ষার্থী এই সময় ঘুম কমায়, ঠিকমতো খায় না, আর সারাক্ষণ দুশ্চিন্তা করে। এতে উল্টো ফল হয়—মাথা ব্যথা করে, পড়া মনে থাকে না, আর ভয় আরও বাড়ে। তাই পরীক্ষার আগে শরীর ও মনের যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথমে শরীরের কথা বলি। প্রতিদিন অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার। ঘুমের সময়ই মস্তিষ্ক পড়া মনে রাখে। রাত জেগে পড়লে মনে হতে পারে বেশি পড়া হচ্ছে, কিন্তু আসলে ক্ষতি হয় বেশি। নিয়ম করে একই সময় ঘুমানো আর একই সময় ওঠার অভ্যাস করো। এতে শরীর অভ্যস্ত হয়ে যাবে।
খাবারের দিকেও খেয়াল রাখবে। খুব তেলঝাল বা বাইরের খাবার কম খাও। ভাত, ডাল, শাকসবজি, ডিম, মাছ—এই সাধারণ খাবারই শরীর আর মস্তিষ্কের জন্য সবচেয়ে ভালো। পর্যাপ্ত পানি খাও। পানি কম খেলে মাথা ভারী লাগে, মনোযোগ কমে যায়।
এখন মনের যত্নের কথা। পরীক্ষার ভয় পাওয়া খুব স্বাভাবিক। কিন্তু ভয়কে বন্ধু বানাতে শেখো। নিজেকে বলো—“আমি চেষ্টা করেছি, আমি পারব।” এই ছোট কথাগুলো মনকে শক্ত করে। পড়ার মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস নাও। নাক দিয়ে শ্বাস নাও, মুখ দিয়ে ছাড়ো। এতে মন শান্ত হয়।
পরিবারের সঙ্গে কথা বলো। কোনো বিষয় বুঝতে না পারলে লুকিয়ে না রেখে শিক্ষক বা বড় ভাই-বোনকে বলো। সাহায্য চাওয়া কোনো লজ্জার বিষয় নয়। বরং এতে সমস্যার সমাধান হয়।
আরেকটি জরুরি বিষয় হলো—মোবাইল আর সোশ্যাল মিডিয়া। পরীক্ষার আগে এগুলো যত কম ব্যবহার করবে, তত ভালো। বারবার ফোন দেখলে মন অস্থির হয়, সময় নষ্ট হয়। প্রয়োজনে দিনে নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে নাও।
মনে রাখবে—একজন সুস্থ ও শান্ত মনই ভালো রেজাল্টের সবচেয়ে বড় শক্তি। শরীর আর মন ভালো থাকলে পড়া আপনাআপনি সহজ হয়ে যায়।
৫। পরীক্ষার আগের শেষ প্রস্তুতি ও পরীক্ষার দিনের করণীয়
এসএসসি পরীক্ষার ঠিক আগের কয়েক দিন এবং পরীক্ষার দিনটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় একটু ভুল সিদ্ধান্ত নিলে সব পরিশ্রমের ফল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি ও পরীক্ষার দিনের করণীয় ভালোভাবে জানা দরকার।

পরীক্ষার আগের ৫–৭ দিন নতুন কিছু পড়া একেবারে কমিয়ে দাও। এই সময় নতুন অধ্যায় শুরু করলে মাথা আরও গুলিয়ে যেতে পারে। বরং আগে পড়া বিষয়গুলো ভালোভাবে রিভিশন করো। স্মার্ট নোট, গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, সূত্র, তারিখ—এই জিনিসগুলোই দেখবে। নিজের দুর্বল জায়গাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো একটু বেশি সময় দাও।
পরীক্ষার আগের রাতে বেশি দেরি করে পড়বে না। বই বন্ধ করে হালকা রিভিশন করো, তারপর ঘুমাও। ব্যাগে প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে রাখো—প্রবেশপত্র, কলম, পেনসিল, স্কেল, রাবার। এতে সকালে তাড়াহুড়া হবে না। সময়মতো ঘুমালে সকালে মাথা ফ্রেশ থাকবে।
পরীক্ষার দিন সকালে হালকা খাবার খাও। খুব বেশি বা খুব কম খাওয়া ঠিক না। পরীক্ষার হলে ঢোকার আগে নিজের মনকে শান্ত রাখো। মনে মনে বলো—“আমি প্রস্তুত, আমি পারব।” প্রশ্নপত্র হাতে পেলে আগে পুরো প্রশ্নটা ভালো করে পড়ো। যেগুলো সহজ লাগে, সেগুলো আগে লিখো। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়বে।
উত্তর লেখার সময় পরিষ্কার হাতের লেখা রাখার চেষ্টা করো। প্রশ্নের নম্বর অনুযায়ী উত্তর সাজিয়ে লেখো। অপ্রয়োজনীয় কথা না লিখে মূল পয়েন্টগুলো সুন্দরভাবে লেখো। সময়ের দিকে খেয়াল রাখবে। শেষ ৫–১০ মিনিট উত্তরপত্র একবার চোখ বুলিয়ে দেখো—কোনো প্রশ্ন বাদ পড়েছে কি না।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা—একটি পরীক্ষা তোমার পুরো জীবন ঠিক করে দেয় না। তুমি যতটা চেষ্টা করেছো, সেটাই আসল। শান্ত মাথায় পরীক্ষা দিলে ফল ভালো হবেই।
উপসংহার
এসএসসি পরীক্ষা কোনো ভয়ংকর বিষয় নয়, বরং এটি তোমার শেখার পথের একটি ধাপ। সঠিক পরিকল্পনা, স্মার্টভাবে পড়া, নিয়মিত রিভিশন, মডেল টেস্ট, আর শরীর–মনের যত্ন নিলে ভালো ফল পাওয়া একেবারেই সম্ভব।
শেষ মুহূর্তে শান্ত থাকা আর আত্মবিশ্বাস রাখা সবচেয়ে জরুরি। মনে রাখবে—তুমি একা নও, তোমার পরিবার, শিক্ষক আর নিজের চেষ্টা তোমার সঙ্গে আছে। নিয়ম মেনে পড়লে এবং নিজেকে বিশ্বাস করলে এসএসসি পরীক্ষা সহজ হয়ে যাবে। আজ থেকেই শুরু করো, ধীরে ধীরে এগোও—সাফল্য তোমারই হবে।
এসএসসি পরীক্ষার পূর্বের প্রস্তুতি সম্পর্কে 1০ টি সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর।
প্রশ্ন–১: এসএসসি পরীক্ষার আগে প্রতিদিন কত ঘণ্টা পড়া উচিত?
এসএসসি পরীক্ষার আগে প্রতিদিন ৬–৮ ঘণ্টা পড়া যথেষ্ট, যদি সেই পড়া নিয়ম মেনে ও মন দিয়ে করা হয়। একটানা অনেক ঘণ্টা পড়ার চেয়ে ৩০–৪৫ মিনিট করে ভাগে ভাগে পড়া বেশি কার্যকর। এতে মাথা ক্লান্ত হয় না এবং পড়া সহজে মনে থাকে।
মনে রাখতে হবে, পড়ার সময়ের চেয়ে পড়ার মান বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বুঝে পড়া, লিখে অনুশীলন করা আর নিয়মিত রিভিশন করলে কম সময়েও ভালো প্রস্তুতি হয়। নিজের শরীর ও মনের শক্তি অনুযায়ী সময় ঠিক করাই সবচেয়ে ভালো।
প্রশ্ন–২: পরীক্ষার আগে কোন বিষয়গুলো আগে পড়া উচিত?
এসএসসি পরীক্ষার আগে যে বিষয়গুলো কঠিন মনে হয় সেগুলো আগে পড়া উচিত। কারণ কঠিন বিষয় বুঝতে ও মনে রাখতে বেশি সময় লাগে। যেমন—গণিত বা বিজ্ঞান অনেকের কাছে কঠিন হয়, তাই এগুলো সকালে বা মাথা ফ্রেশ থাকা অবস্থায় পড়া ভালো।
সহজ বিষয়গুলো যেমন বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বা ধর্ম—এগুলো পরে বা কম সময়েও পড়া যায়। আগে কঠিন বিষয় শেষ করলে ভয় কমে, আত্মবিশ্বাস বাড়ে। এতে পরীক্ষার আগের দিনগুলো অনেক বেশি শান্ত থাকে।
প্রশ্ন–৩: রিভিশন কিভাবে করতে হবে?
রিভিশন করা হলো পড়া বিষয়গুলো আবার চোখ বুলিয়ে মনে করা। প্রতিদিন অন্তত ১০–১৫ মিনিট আগে পড়া বিষয়গুলো চোখ বুলিয়ে দেখলে তা মস্তিষ্কে ভালোভাবে জমে। রাতের ঘুমের আগে ছোট রিভিশন করলে তথ্য মনে রাখার ক্ষমতা বাড়ে।
স্মার্ট নোট ব্যবহার করাও খুব কার্যকর। গুরুত্বপূর্ণ সূত্র, তারিখ, সংজ্ঞা আলাদা খাতায় লিখে রাখো। সপ্তাহে একবার পুরো বিষয়গুলোর রিভিশন করলে দুর্বল জায়গাগুলো চিহ্নিত করা সহজ হয় এবং পরীক্ষার দিন আত্মবিশ্বাস বাড়ে।
প্রশ্ন–৪: মডেল টেস্ট দেওয়ার গুরুত্ব কী?
মডেল টেস্ট হলো পরীক্ষার মতো করে নিজেকে পরীক্ষা নেওয়া। এতে তুমি বুঝতে পারবে কোন বিষয়গুলো ভালোভাবে পড়েছো আর কোনগুলোতে আরও মন দিতে হবে। শুরুতে ফল খারাপ হলেও ভয় পাবার কিছু নেই। ভুল থেকেই শেখা সম্ভব।
মডেল টেস্টের সময় ঠিক সময় ধরে পরীক্ষা করা উচিত। শেষে ভুলগুলো বিশ্লেষণ করে কোন অংশে ভুল হলো, তা চিহ্নিত করো। নিয়মিত মডেল টেস্ট দিলে পরীক্ষার দিনে আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং সময় ব্যবস্থাপনা সহজ হয়।
প্রশ্ন–৫: পরীক্ষার আগে ঘুম কতটা জরুরি?
পরীক্ষার আগে পর্যাপ্ত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুমানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের সময় মস্তিষ্ক নতুন তথ্যগুলোকে মনে রাখে। রাতে কম ঘুম হলে সকালে মনোযোগ কমে এবং পড়া মনে থাকে না।
একই সময়ে ঘুমানো এবং ওঠার অভ্যাস গড়ে তুললে শরীর অভ্যস্ত হয়। পরীক্ষার আগে রাতে দেরি না করে হালকা রিভিশন করার পর ঘুমানো উচিত। সুস্থ শরীর এবং ফ্রেশ মনই ভালো ফলের চাবিকাঠি।
প্রশ্ন–৬: পরীক্ষা ঘনিষ্ঠে কি নতুন কিছু পড়া উচিত?
পরীক্ষার আগে নতুন বিষয় পড়া কমিয়ে আনা উচিত। শেষ মুহূর্তে নতুন অধ্যায় শুরু করলে মন আরও বিভ্রান্ত হয় এবং আগের পড়া ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বরং আগে পড়া বিষয়গুলো ভালোভাবে রিভিশন করাই উচিত।
মডেল টেস্ট, স্মার্ট নোট, গুরুত্বপূর্ণ সূত্র ও তারিখগুলোকে শেষ মুহূর্তে চোখ বুলিয়ে দেখা বেশি কার্যকর। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং পরীক্ষার দিন চাপ কম হয়।
প্রশ্ন–৭: পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কিভাবে সময় ব্যবস্থাপনা করব?
পরীক্ষার সময় প্রত্যেক প্রশ্নের জন্য নির্দিষ্ট সময় ভাগ করা জরুরি। প্রথমে পুরো প্রশ্নপত্র দ্রুত পড়ো, কোন প্রশ্ন সহজ, কোন কঠিন তা বুঝে নাও। সহজ প্রশ্নগুলো আগে উত্তর দাও। এতে আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং সময় সঠিকভাবে ব্যবহার হয়।
কঠিন প্রশ্নে অনেক সময় ব্যয় করা ঠিক নয়। যদি কোন প্রশ্নে আটকে যাও, পরের প্রশ্নে চলে যাও। শেষ সময়ে বাকি সময় দিয়ে সেই কঠিন প্রশ্নগুলো আবার চেষ্টা করা যায়। সঠিক সময় ব্যবস্থাপনা করলে সব প্রশ্ন সমাধান সম্ভব হয়।
প্রশ্ন–৮: পরীক্ষা চলাকালীন আতঙ্ক বা চাপ কিভাবে কমাবো?
পরীক্ষার সময় ভয় বা চাপ আসা স্বাভাবিক। কিন্তু এটি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। তাই পরীক্ষার আগে এবং পরীক্ষার সময় নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করো। কিছু গভীর শ্বাস নাও, চোখ বন্ধ করে কয়েক সেকেন্ড ধ্যান করো।
নিজেকে বলো—“আমি প্রস্তুত, আমি পারব।” ইতিবাচক কথা মনে মনে বললে মন শান্ত হয়। প্রস্তুতি এবং আত্মবিশ্বাস থাকলে চাপ কমে যায় এবং পড়া মনে থাকে। পরিবারের সমর্থন ও সহপাঠীর উৎসাহও সাহায্য করে।
প্রশ্ন–৯: পরীক্ষার আগে কি ধরনের খাবার খাওয়া উচিত?
পরীক্ষার আগে হালকা ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। ভাত, ডাল, শাকসবজি, ডিম, মাছ—এসব সাধারণ খাবার মস্তিষ্ক ও শরীরকে শক্তি দেয়। খুব তেলঝাল বা ভারী খাবার খেলে ঘুম আসে এবং মনোযোগ কমে যায়।
পর্যাপ্ত পানি খাওয়াও জরুরি। পরীক্ষার হলে ডিহাইড্রেশন মাথা ভারী করে এবং মনোযোগ কমিয়ে দেয়। হালকা নাশতা বা ফল খেলে মন সতেজ থাকে এবং পড়া মনে রাখতে সহজ হয়।
প্রশ্ন–১০: পরীক্ষার দিন কি ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া উচিত?
পরীক্ষার দিন সকালে হালকা খাবার খাওয়া এবং প্রয়োজনীয় জিনিস আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা উচিত। ব্যাগে প্রবেশপত্র, কলম, পেনসিল, রাবার, স্কেল—all ঠিকঠাক রাখো। এতে সকালেই তাড়াহুড়া বা চাপ কমে।
পরীক্ষার হলে ঢোকার আগে শান্ত থাকো এবং মনে মনে বলো—“আমি প্রস্তুত, আমি পারব।” প্রশ্নপত্র হাতে পেলে প্রথমে পুরো প্রশ্ন পড়ে কোনটি সহজ, কোনটি কঠিন তা বুঝে নাও। সময় অনুযায়ী উত্তর দাও এবং শেষে একবার উত্তরপত্র দেখে নাও। আত্মবিশ্বাস এবং শান্ত মন পরীক্ষার সফলতার চাবিকাঠি।