স্বাস্থ্য ভালো রাখার খাবার কোনগুলো?

Spread the love

আমাদের শরীর সুস্থ ও শক্তিশালী রাখতে সঠিক খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভালো খাওয়া মানে শুধু ক্ষুধা মেটানো নয়, বরং শরীরকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ ও প্রোটিন দেওয়া। আজকের ব্যস্ত জীবনযাত্রায় অনেকে ভুল খাবার খায়, যার ফলে শরীর দুর্বল ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

তাই জানতে হবে কোন খাবারগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে উপকারী। এই নিবন্ধে আমরা এমন খাবারগুলোর তালিকা দেব যা নিয়মিত খেলে শরীর সুস্থ, মস্তিষ্ক সতেজ এবং রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। চলুন একসাথে জেনে নিই সেগুলো কী কী।

১। শাক-সবজি – শরীরের প্রাকৃতিক ভিটামিন ও খনিজের উৎস

শাক-সবজি আমাদের স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবারের একটি। এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং হজম প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে। উদাহরণস্বরূপ, পালং শাক, ব্রকলি, গাজর, ফুলকপি এবং বেদানা শাক শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

ভিটামিন ও খনিজের গুরুত্ব: শাক-সবজি ভিটামিন এ, সি, কে এবং ফোলেটের ভালো উৎস। ভিটামিন এ চোখের স্বাস্থ্য বজায় রাখে, ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ভিটামিন কে হাড়কে শক্ত রাখে। পাশাপাশি, লবণ ও ক্যালসিয়ামের মতো খনিজও শাক-সবজিতে পাওয়া যায়, যা হাড় ও দাঁত সুস্থ রাখে।

ফাইবারের ভূমিকা: শাক-সবজি হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত ফাইবার খেলে পেটের স্বাস্থ্য ভালো থাকে, কোষ্ঠকাঠিন্য কমে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কার্যকারিতা: শাক-সবজিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো শরীরের কোষকে ক্ষয় হতে রোধ করে এবং বার্ধক্য ধীর করে। যেমন, বেগুনি বা সবুজ শাকের রঙিন উপাদানগুলো শরীরের জন্য বিশেষভাবে উপকারী।

কিভাবে খাওয়া উচিত: শাক-সবজি কাঁচা, সেদ্ধ বা হালকা ভাপে রান্না করে খাওয়া সবচেয়ে ভালো। তেলে ভাজার পরিবর্তে এভাবে খেলে তাদের পুষ্টি বজায় থাকে। এছাড়াও, দিনে কমপক্ষে ২-৩ ধরনের শাক-সবজি নিয়মিত খাওয়া উচিত।

শাক-সবজি শুধু স্বাস্থ্য ভালো রাখে না, বরং শরীরকে সতেজ ও প্রাণবন্ত রাখে। ছোটদেরও এই অভ্যাস শিখতে হবে যাতে তারা ভবিষ্যতে সুস্থ থাকে।

২। ফলমূল – প্রাকৃতিক শক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উৎস

ফলমূল হলো এমন একটি খাবার যা শরীরকে প্রাকৃতিকভাবে শক্তি দেয় এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আপেল, কলা, কমলা, পেঁচা, স্ট্রবেরি, পেয়ারা – এগুলো আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকার অংশ হওয়া উচিত। প্রতিটি ফলের ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে সুস্থ রাখে, ত্বককে উজ্জ্বল করে এবং মস্তিষ্ককে সতেজ রাখে।

প্রধান ভিটামিন ও খনিজ: ফলমূল ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়ামের ভালো উৎস। ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। পটাশিয়াম হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

ফাইবারের গুরুত্ব: ফলমূলের ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে। নিয়মিত ফলমূল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য কমে এবং পেটের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। এছাড়া, ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সহায়ক।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কার্যকারিতা: ফলের রঙিন অংশ যেমন স্ট্রবেরির লাল অংশ, ব্লুবেরির নীল অংশ ইত্যাদি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। এগুলো শরীরের কোষকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করে এবং বার্ধক্য ধীর করে।

কিভাবে খাওয়া উচিত: দিনে ২-৩ ধরনের মৌসুমি ফল খাওয়া উচিত। চেষ্টা করুন ফলকে তাজা অবস্থায় খেতে, কমপক্ষে একটি কাঁচা ফল গ্রহণ করুন। ফলের রস খাওয়ার সময় অতিরিক্ত চিনি এড়িয়ে চলা ভালো।

ফলমূল নিয়মিত খেলে শরীর সুস্থ থাকে, মন ভালো থাকে এবং শিশুদের জন্যও এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

৩। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার – শক্তি ও মাংসপেশীর রক্ষক

প্রোটিন হলো শরীরের জন্য এক ধরনের নির্মাণ উপাদান। এটি আমাদের মাংসপেশী, ত্বক, নখ এবং চুলকে শক্তিশালী রাখে। এছাড়া, প্রোটিন হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে এবং শরীরের কোষের নতুন করে গঠন করতে সাহায্য করে। প্রোটিনের ভালো উৎস হলো দুধ, দই, পনির, ডিম, মাছ, মুরগি এবং বাদাম।

প্রোটিনের গুরুত্ব: প্রোটিন শরীরের জন্য শক্তির প্রধান উৎস। প্রতিদিন পর্যাপ্ত প্রোটিন খেলে শরীরের শক্তি বজায় থাকে এবং দৈনন্দিন কাজ সহজে করা যায়। শিশুদের বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য প্রোটিন অপরিহার্য। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও এটি পেশী শক্তি ও সুস্থতা নিশ্চিত করে।

প্রাণীজ প্রোটিন বনাম উদ্ভিদজ প্রোটিন: প্রাণীজ প্রোটিন যেমন ডিম, মাছ এবং দুধে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সব অ্যামিনো অ্যাসিড পাওয়া যায়। উদ্ভিদজ প্রোটিন যেমন ছোলা, মুগ ডাল, বাদাম শরীরকে প্রয়োজনীয় শক্তি দেয় এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

কিভাবে খাওয়া উচিত: প্রতিদিন প্রোটিনযুক্ত খাবার অন্তত একবার খাওয়া উচিত। দুধ বা দই সকালে খেলে হাড় শক্ত থাকে, দুপুরে ডিম বা মাছ খেলে পেশী শক্ত হয়। বাদাম ও শস্য সন্ধ্যায় খেলে শরীর সারাদিনের কাজের জন্য প্রস্তুত থাকে।

প্রোটিন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: প্রোটিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি শরীরের কোষকে মেরামত করতে সাহায্য করে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। নিয়মিত প্রোটিন খেলে শিশুদের বৃদ্ধি সঠিকভাবে হয় এবং বয়স্কদের শক্তি বজায় থাকে।

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খেলে শরীর সুস্থ, শক্তিশালী এবং সক্রিয় থাকে। এটি শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৪। স্বাস্থ্যকর চর্বি – শক্তি এবং হৃৎপিণ্ডের রক্ষক

চর্বি বা ফ্যাটকে অনেকেই খারাপ ভাবেন, কিন্তু সব ধরনের চর্বি শরীরের জন্য ক্ষতিকর নয়। স্বাস্থ্যকর চর্বি আমাদের শক্তি দেয়, হৃৎপিণ্ডের স্বাস্থ্য রক্ষা করে এবং ভিটামিনের শোষণ সহজ করে। অ্যাভোকাডো, অলিভ অয়েল, বাদাম, চিয়া সিড, ফ্ল্যাক্সসিড এবং মাছের চর্বি (যেমন স্যামন, ম্যাকারেল) হলো স্বাস্থ্যকর চর্বির প্রধান উৎস।

চর্বির গুরুত্ব: স্বাস্থ্যকর চর্বি শরীরের কোষের গঠন ঠিক রাখতে সাহায্য করে। এটি ত্বককে নরম ও মসৃণ রাখে, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায় এবং দীর্ঘমেয়াদি শক্তি সরবরাহ করে। বিশেষ করে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃদরোগ ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।

ভালো চর্বি বনাম খারাপ চর্বি: ভালো চর্বি যেমন উল্লিখিত উত্সগুলোতে থাকে, যা হৃদরোগ প্রতিরোধে সহায়ক। কিন্তু ট্রান্স ফ্যাট বা অতিরিক্ত স্যাচুরেটেড ফ্যাট (ফাস্ট ফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার) স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই এগুলি এড়ানো উচিত।

কিভাবে খাওয়া উচিত: স্বাস্থ্যকর চর্বি সীমিত পরিমাণে দিনে খাওয়া উচিত। উদাহরণস্বরূপ, খাবারে এক চামচ অলিভ অয়েল ব্যবহার করা, বাদাম নাস্তা হিসেবে খাওয়া বা মাছ সপ্তাহে ২-৩ বার খাওয়া ভালো। চর্বি শুধুমাত্র শক্তি যোগ দেয় না, বরং শরীরের গুরুত্বপূর্ণ ফাংশনও ঠিক রাখে।

স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: ওমেগা-৩ ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর চর্বি সংক্রমণ কমাতে এবং প্রদাহ হ্রাস করতে সাহায্য করে। এটি মস্তিষ্ক, চোখ এবং হৃদরোগ প্রতিরোধে বিশেষভাবে কার্যকর। শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক উভয়ের জন্য স্বাস্থ্যকর চর্বি খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

স্বাস্থ্যকর চর্বি নিয়মিত খেলে শরীর সুস্থ থাকে, শক্তি বজায় থাকে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। 

৫। হাইড্রেশন ও পানি – সুস্থ জীবনের মূল চাবিকাঠি

শরীরের জন্য পানি অপরিহার্য। পানি আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছায়, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং বর্জ্য পদার্থ বের করে। সুস্থ থাকতে নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পান করা প্রয়োজন। ছোটদের জন্যও এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ শিশুরা খেলাধুলা বা স্কুল জীবনে সহজেই পানি কম পেতে পারে।

পানির গুরুত্ব: আমাদের শরীরের প্রায় ৬০% অংশ পানি। এটি হজম, রক্ত প্রবাহ, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং কোষের কার্যকারিতা ঠিক রাখতে সাহায্য করে। দিনে কমপক্ষে ৮–১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। শুধু পানি নয়, ফলমূলের রস বা তরল দুধও হাইড্রেশনের জন্য সাহায্য করে।

হাইড্রেশন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: পর্যাপ্ত পানি পান করলে শরীরের টক্সিন বের হয়, ত্বক উজ্জ্বল হয় এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। ডিহাইড্রেশন বা পানি কমে গেলে মাথা ঘোরা, ক্লান্তি এবং হজম সমস্যা দেখা দিতে পারে।

কিভাবে খাওয়া উচিত: পানি খাওয়া দিনে ছড়িয়ে খাওয়া উচিত। সকালে উঠে এক গ্লাস পানি খাওয়া ভালো, খাওয়ার আগে বা পরে পানি নেওয়া উচিত। প্রচুর গরমে বা খেলাধুলার সময় বেশি পানি খাওয়া উচিত। চিনি যুক্ত শর্করা যুক্ত পানীয়ের পরিবর্তে সাধারণ পানি বা লেবুর পানি বেশি স্বাস্থ্যকর।

ফলমূল এবং সবজি দিয়ে হাইড্রেশন: তরমুজ, কমলা, শসা এবং স্ট্রবেরি প্রাকৃতিকভাবে পানি সমৃদ্ধ, তাই এগুলো খেলে শরীরের হাইড্রেশন বাড়ে। শিশুদের এই ফলমূল খাওয়ানো সহজ এবং আনন্দদায়ক।

নিয়মিত পানি খেলে শরীর সুস্থ থাকে, মন সতেজ থাকে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয়।

উপসংহার – সুস্থ থাকার সহজ পথ

সুস্থ ও শক্তিশালী শরীরের জন্য সঠিক খাবার খাওয়া অপরিহার্য। শাক-সবজি, ফলমূল, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার, স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং পর্যাপ্ত পানি—এগুলো নিয়মিত খেলে শরীর সুস্থ থাকে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং মন সতেজ থাকে। ছোট-বড় সকলের জন্য এই অভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ। শুধু খাওয়া নয়, খাবারের পুষ্টিগুণ বুঝে সঠিক পরিমাণে খাওয়াই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মূল চাবিকাঠি। তাই আজ থেকেই নিজের খাদ্যাভ্যাসের দিকে মনোযোগ দিন, সঠিক খাবার বেছে নিন এবং স্বাস্থ্য ভালো রাখুন।

স্বাস্থ্যকর খাবার সম্পর্কে প্রায়শই জিজ্ঞাসিত ১০টি প্রশ্ন?

১। স্বাস্থ্যকর খাবার কী?

স্বাস্থ্যকর খাবার হলো প্রাকৃতিক এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার যা শরীরকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ ও শক্তি দেয়। এগুলো বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যের রক্ষণাবেক্ষণ এবং রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। উদাহরণ: ফল, শাক-সবজি, পুরো শস্য, লিন প্রোটিন, বাদাম, বীজ এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি। এই ধরনের খাবার খেলে শরীর সুস্থ থাকে, মন সতেজ থাকে এবং দীর্ঘমেয়াদী ভালো স্বাস্থ্য নিশ্চিত হয়। প্রক্রিয়াজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনি এবং ক্ষতিকর চর্বি এড়ানো উচিত।

২। ফল কেন স্বাস্থ্যকর?

ফল ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবারে সমৃদ্ধ। এগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। প্রাকৃতিক চিনির মাধ্যমে শক্তি দেয় এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করে। দৈনন্দিন বিভিন্ন ধরনের ফল খেলে ত্বক উজ্জ্বল থাকে, চোখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং শরীর সতেজ থাকে। তাজা মৌসুমি ফল সবচেয়ে পুষ্টিকর।

৩। শাক-সবজি কীভাবে শরীরের উপকারে আসে?

শাক-সবজি ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। এগুলো হজম সহজ করে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সুস্থ ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে। পালং শাক, গাজর, ব্রকলি ও ফুলকপি হাড়, চোখ এবং শরীরের শক্তি বাড়ায়। রঙিন শাক-সবজি বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি প্রদান করে। শাক-সবজি কম ক্যালোরি কিন্তু বেশি পুষ্টি সম্পন্ন, যা শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক সকলের জন্য উপকারী।

৪। প্রোটিন আমাদের খাদ্যে কেন গুরুত্বপূর্ণ?

প্রোটিন শরীরের কোষ, মাংসপেশী, ত্বক এবং চুলের বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। এটি ক্ষত বা কোষ মেরামত করে, শক্তি দেয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ডিম, দুধ, মাছ, মুরগি, ডাল, বাদাম এবং বীজ প্রোটিনের ভালো উৎস। শিশুদের বৃদ্ধির জন্য এটি অপরিহার্য, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য পেশী শক্তি ও সুস্থতা নিশ্চিত করে। প্রোটিন না পাওয়া মানে ক্লান্তি, দুর্বলতা এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া।

৫। স্বাস্থ্যকর চর্বি কী?

স্বাস্থ্যকর চর্বি, যেমন মনোআনস্যাচুরেটেড ও পলিআনস্যাচুরেটেড চর্বি, হৃদয়, মস্তিষ্ক এবং হরমোনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। উৎস: অলিভ অয়েল, অ্যাভোকাডো, বাদাম, চিয়া বীজ, ফ্ল্যাক্সসিড এবং স্যামন মাছ। এগুলো ভিটামিন শোষণ সহজ করে, প্রদাহ কমায় এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। সীমিত পরিমাণে স্বাস্থ্যকর চর্বি খেলে শক্তি, ত্বক ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত হয়।

৬। দিনে কতটা পানি পান করা উচিত?

প্রায় ৮–১০ গ্লাস (২–২.৫ লিটার) পানি দৈনন্দিন প্রয়োজন। পানি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, হজম সহজ করে এবং কোষকে স্বাস্থ্যবান রাখে। পর্যাপ্ত পানি পান করলে শক্তি বৃদ্ধি পায়, মন সতেজ থাকে এবং মাথাব্যথা ও ক্লান্তি কমে। ফলমূল ও সবজি থেকেও হাইড্রেশন পাওয়া যায়। চিনি বা ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় কম খাওয়া উচিত।

৭। সম্পূর্ণ শস্য বনাম পরিশোধিত শস্য – কোনটা ভালো?

সম্পূর্ণ শস্য যেমন ব্রাউন রাইস, ওটস, কোয়িনোয়া ভিটামিন, খনিজ ও ফাইবারে সমৃদ্ধ। এগুলো হজম উন্নত করে, রক্তচিনি নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। পরিশোধিত শস্য যেমন সাদা চাল বা সাদা রুটি প্রায় সব পুষ্টি হারায় এবং রক্তচিনি দ্রুত বৃদ্ধি করে। ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ শস্য গ্রহণ করলে শক্তি দীর্ঘ সময় ধরে থাকে।

৮। স্বাস্থ্যকর খাবার ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে কি?

হ্যাঁ। ফল, শাক-সবজি, পুরো শস্য, লিন প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি পূর্ণতা দেয়, রক্তচিনি স্থিতিশীল রাখে এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রলোভন কমায়। নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার ও নিয়মিত ব্যায়াম ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ ও ছোট, ব্যালান্সড খাবার খাওয়া সহজভাবে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে সহায়ক।

৯। খাবারের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কীভাবে স্বাস্থ্য রক্ষা করে?

খাবারের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো এমন যৌগ যা Free Radicle নামক ক্ষতিকর উপাদানকে নিরপেক্ষ করে। Free Radicle কোষকে ক্ষয় করে, বার্ধক্য ত্বরান্বিত করে এবং হৃদরোগ, ক্যান্সার ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। ফল, শাক-সবজি, বাদাম, গ্রিন টি, স্ট্রবেরি এবং ডার্ক চকলেট প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের প্রধান উৎস। নিয়মিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গ্রহণ করলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, ত্বক উজ্জ্বল থাকে এবং দেহের কোষ সুরক্ষিত থাকে। এটি মানসিক সতেজতা ও শরীরের শক্তি বজায় রাখতেও সাহায্য করে, ফলে দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ জীবন নিশ্চিত হয়।

১০। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস কিভাবে তৈরি করা যায়?

ধীরে ধীরে বেশি ফল, শাক-সবজি, পুরো শস্য, লিন প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর চর্বি গ্রহণ করুন। প্রক্রিয়াজাত খাবার ও অতিরিক্ত চিনি কমান। বাড়িতে রান্না করুন, স্বাস্থ্যকর নাস্তা রাখুন, পর্যাপ্ত পানি পান করুন। ছোট পরিবর্তন দিয়ে অভ্যাস গড়ে তুলুন। নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাদ্য খাওয়া শরীর ও মন সতেজ রাখে এবং দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ জীবন নিশ্চিত করে।

Leave a Comment

You cannot copy content of this page