কম খরচে রাশিয়ায় পড়াশোনা – জানুন ভিসা থেকে মাসিক খরচ পর্যন্ত সব তথ্য

Spread the love

বিদেশে পড়াশোনার স্বপ্ন অনেকেরই। কেউ ইউরোপ, কেউ আমেরিকা কিংবা কানাডা ভাবেন। কিন্তু যারা তুলনামূলক কম খরচে উন্নতমানের ডিগ্রি নিতে চান, তাদের জন্য রাশিয়া হতে পারে এক দুর্দান্ত গন্তব্য। তবে এমন পরিকল্পনার শুরুতেই একটাই প্রশ্ন মাথায় ঘোরে—“রাশিয়া স্টুডেন্ট ভিসা কত টাকা লাগে?”

এই প্রশ্নের উত্তর শুধু টাকার অংক জানলেই মেলে না, এর সঙ্গে জড়িত থাকে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—যেমন, কাগজপত্র, প্রক্রিয়া, রেজিস্ট্রেশন, এবং মাসিক খরচ ইত্যাদি। অনেক শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবক সঠিক তথ্য না জানার কারণে দ্বিধায় ভোগেন।

এই ব্লগে আমরা ধাপে ধাপে জানবো রাশিয়ায় পড়তে যাওয়ার সম্পূর্ণ ব্যয়, প্রয়োজনীয় যোগ্যতা, এবং খরচ বাঁচানোর কৌশল—সবকিছু এমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে যেন একজন ৭ বছরের শিক্ষার্থীও সহজে বুঝতে পারে।

১ । রাশিয়ায় পড়াশোনা – শুরুতেই কত খরচ হতে পারে?

অনেক ছাত্র-ছাত্রী আছেন যারা স্বপ্ন দেখেন বিদেশে পড়াশোনা করার। তাদের মধ্যে একদল শিক্ষার্থী রাশিয়াকে বেছে নেন কারণ এখানে পড়াশোনার মান ভালো, খরচ তুলনামূলক কম এবং আন্তর্জাতিকভাবে ডিগ্রির মূল্যও অনেক। কিন্তু অনেকের মনে প্রথমেই যে প্রশ্নটি আসে তা হলো – “রাশিয়া স্টুডেন্ট ভিসা কত টাকা লাগে?” তার আগে আমাদের বুঝে নিতে হবে, রাশিয়ায় পড়তে গেলে শুরুতেই মোটামুটি কত খরচের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

প্রথমেই বলে রাখি, রাশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে টিউশন ফি তুলনামূলকভাবে কম। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বার্ষিক টিউশন ফি গড়ে ১,২০০ থেকে ৪,০০০ মার্কিন ডলারের মধ্যে হয়ে থাকে। তবে সবকিছু নির্ভর করে আপনি কোন বিষয়ে পড়ছেন, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন এবং কোন শহরে থাকবেন তার উপর।

এবার আসা যাক প্রধান প্রশ্নে – ভিসা সংক্রান্ত খরচ কত?

রাশিয়ান স্টুডেন্ট ভিসা পেতে হলে আপনাকে কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হবে। আর প্রতিটি ধাপে কিছু নির্দিষ্ট খরচ জড়িত থাকে। যেমন:

  1. ভিসা ফি (Visa Fee):
    বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ান স্টুডেন্ট ভিসার জন্য সাধারণত ৪০ থেকে ৭০ মার্কিন ডলার লাগে, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৪,৫০০ থেকে ৮,০০০ টাকা
  2. ইনভিটেশন লেটার (Invitation Letter):
    রাশিয়ার যেকোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার পেলে, তারা আপনাকে ইনভিটেশন লেটার পাঠাবে। অনেক সময় এই ইনভিটেশন লেটার প্রসেসিংয়ের জন্য এজেন্সির মাধ্যমে করতে হলে ১০০ থেকে ২০০ ডলার পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
  3. মেডিকেল টেস্ট ও ইনস্যুরেন্স:
    ভিসার জন্য মেডিকেল চেকআপ ও হেলথ ইনস্যুরেন্স বাধ্যতামূলক। এই অংশে খরচ হতে পারে ৬,০০০ থেকে ১২,০০০ টাকা পর্যন্ত।
  4. ভিসা প্রসেসিং সার্ভিস চার্জ:
    অনেক সময় আপনি কোনো এজেন্সি বা ভিসা সেন্টারের মাধ্যমে আবেদন করলে সার্ভিস চার্জ যুক্ত হয়, যা ২,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা হতে পারে।

এই ধাপে আমরা মূলত রাশিয়ায় পড়াশোনা শুরু করার প্রাথমিক খরচের একটি ধারণা দিলাম। পরবর্তী ধাপে আমরা জানবো – স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার জন্য কী কী যোগ্যতা ও কাগজপত্র প্রয়োজন হয়।

২ । রাশিয়ান স্টুডেন্ট ভিসা পেতে হলে যেসব যোগ্যতা ও কাগজপত্র লাগে

আপনি যদি রাশিয়ায় পড়াশোনা করতে আগ্রহী হন, তাহলে শুধু ইচ্ছা থাকলেই হবে না। এর জন্য কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা এবং কাগজপত্র থাকা বাধ্যতামূলক। অনেক শিক্ষার্থী মনে করেন ভিসা পাওয়া অনেক জটিল, কিন্তু সঠিকভাবে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট প্রস্তুত করতে পারলে পুরো প্রক্রিয়াটি অনেক সহজ হয়ে যায়। চলুন দেখি কী কী লাগে:

১. শিক্ষাগত যোগ্যতা

আপনাকে অবশ্যই বাংলাদেশের স্বীকৃত কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ন্যূনতম এইচএসসি পাস বা সমমান হতে হবে। আপনি যদি স্নাতক (Bachelor), মাস্টার্স (Master), বা পিএইচডি (PhD) করতে চান, তবে পূর্বের ডিগ্রির রেজাল্ট ভালো হলে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

২. বিশ্ববিদ্যালয়ের অফার লেটার (Offer Letter)

রাশিয়ার যেকোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার বা অ্যাডমিশন লেটার পেতে হবে। এই লেটার প্রমাণ করে আপনি সেখানকার শিক্ষার্থী হতে যাচ্ছেন।

৩. ইনভিটেশন লেটার

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপনাকে একটি অফিসিয়াল ইনভিটেশন লেটার (Invitation Letter) পাঠাবে, যেটি ভিসা আবেদনের অন্যতম প্রধান প্রমাণ।

৪. আবেদন ফর্ম (Visa Application Form)

রাশিয়ান এম্বাসির নির্ধারিত ফরম্যাটে একটি ভিসা আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে। এটি আপনি অনলাইনে বা সরাসরি দূতাবাস থেকে নিতে পারেন।

৫. বৈধ পাসপোর্ট

আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ৬ মাস থাকতে হবে, এবং সেখানে খালি পাতাও থাকতে হবে ভিসা সিলের জন্য।

৬. মেডিকেল সার্টিফিকেট ও ইনস্যুরেন্স

আপনাকে একটি স্বাস্থ্য পরীক্ষার সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে এবং রাশিয়ায় অবস্থানকালীন সময়ের জন্য একটি মেডিকেল ইনস্যুরেন্স পলিসি নিতে হবে।

৭. ব্যাংক স্টেটমেন্ট

অনেক সময় রাশিয়ান দূতাবাস বা কনসুলেট চায় আপনি অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল কি না। তাই অন্তত ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা স্পন্সরের ফাইনান্সিয়াল ডকুমেন্ট লাগতে পারে।

৮. ছবি

ভিসার আবেদন ফর্মের সঙ্গে নির্দিষ্ট মাপের পাসপোর্ট সাইজ ছবি যুক্ত করতে হবে।

কথোপকথন:

তানভীর: ভাই, অফার লেটার পেলেই কি ভিসা পাওয়া যায়?
রুবেল: না ভাই, শুধু অফার লেটার থাকলেই হয় না। ইনভিটেশন লেটার আর স্বাস্থ্য সনদসহ সব কাগজ সঠিকভাবে দিতে হয়। তখন ভিসা পাওয়া সহজ হয়।

বিশেষ টিপস: কাগজপত্র ঠিকভাবে ও পরিষ্কারভাবে স্ক্যান করে জমা দিন। ভুল বা অস্পষ্ট তথ্য দিলে ভিসা বাতিল হয়ে যেতে পারে।

এই ধাপে আমরা বিস্তারিত জানলাম রাশিয়ান স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও ডকুমেন্ট সম্পর্কে।
পরবর্তী ধাপে আমরা জানবো – ভিসা আবেদন প্রক্রিয়ার ধাপগুলো কী এবং এটি কতদিনে সম্পন্ন হয়।

৩। রাশিয়ান স্টুডেন্ট ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া – ধাপে ধাপে সহজ ব্যাখ্যা

আপনি যদি রাশিয়ায় পড়াশোনার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যেতে চান, তাহলে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। অনেকে ভাবেন এই প্রক্রিয়া জটিল, কিন্তু ধাপে ধাপে করলে এটি অনেক সহজ ও বোধগম্য হয়ে ওঠে। চলুন এক নজরে দেখে নিই কীভাবে আপনি রাশিয়ান স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে পারেন:

ধাপ ১: বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন এবং অফার লেটার সংগ্রহ

প্রথমেই আপনাকে রাশিয়ার যেকোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হবে। তারা আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী আপনাকে অফার লেটার পাঠাবে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অনলাইন পোর্টাল থাকে যেখানে আপনি আবেদন করতে পারবেন।

ধাপ ২: ইনভিটেশন লেটার সংগ্রহ

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার পাওয়ার পর তারা আপনার তথ্য অনুযায়ী রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ মাইগ্রেশন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ইনভিটেশন লেটার (Visa Invitation) ইস্যু করে। এই প্রক্রিয়ায় সাধারণত ১৫-৩০ দিন সময় লাগে।

ধাপ ৩: ভিসা আবেদন ফর্ম পূরণ

এখন আপনাকে রাশিয়ান দূতাবাস বা কনসুলেটের ওয়েবসাইট থেকে একটি নির্দিষ্ট ফর্ম ডাউনলোড করে সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হবে। পাশাপাশি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্ক্যান করে প্রস্তুত রাখতে হবে।

ধাপ ৪: ফি জমা ও অ্যাপয়েন্টমেন্ট

ফর্ম পূরণের পরে আপনাকে নির্ধারিত ভিসা ফি (প্রায় ৪,৫০০ – ৮,০০০ টাকা) জমা দিতে হবে এবং দূতাবাসে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। অনেকে এজেন্সির মাধ্যমেও এই ধাপটি সম্পন্ন করেন।

ধাপ ৫: কাগজপত্র জমা

নির্ধারিত দিনে দূতাবাসে গিয়ে সব ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে। এই সময় আপনার পাসপোর্ট, ইনভিটেশন লেটার, ছবি, মেডিকেল রিপোর্ট, ইনস্যুরেন্স, ফি জমার রসিদ ইত্যাদি অবশ্যই সঙ্গে নিতে হবে।

ধাপ ৬: অপেক্ষা ও ভিসা সংগ্রহ

সকল কিছু ঠিকঠাক থাকলে সাধারণত ১০ থেকে ২০ কার্যদিবসের মধ্যে আপনার ভিসা রেডি হয়ে যায়। তখন আপনি পাসপোর্টে সিলসহ ভিসা পেয়ে যাবেন।

কথোপকথন:

রিমন: ভাই, আমি যদি এজেন্সির মাধ্যমে করি তাহলে কি দ্রুত পাবো?
সাজিদ: হ্যাঁ, অনেক সময় এজেন্সির মাধ্যমে করলে প্রক্রিয়া সহজ হয়, কিন্তু খরচ কিছুটা বেশি হতে পারে। তবে কাগজপত্র ঠিক থাকলে নিজেরা করলেও সমস্যা নেই।

টিপস:

  • ডকুমেন্টে কোনো ভুল থাকলে আবেদন বাতিল হতে পারে।
  • মেডিকেল টেস্ট সরকারি হাসপাতাল থেকে করালে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে।
  • ইনস্যুরেন্স সঠিক কোম্পানির নেওয়া ভালো, যেটা রাশিয়ায় অনুমোদিত।

এই ধাপে আমরা রাশিয়ান স্টুডেন্ট ভিসা আবেদন করার সম্পূর্ণ ধাপগুলো সহজ ভাষায় জেনে নিলাম।
পরবর্তী ধাপে আমরা জানবো – রাশিয়া পৌঁছানোর পর প্রথম ৭ দিনে কী কী করতে হয় ও খরচের হিসাব।

৪ । রাশিয়া পৌঁছানোর পর প্রথম ৭ দিনে করণীয় ও সম্ভাব্য খরচ

আপনার ভিসা হাতে পেয়ে আপনি যখন রাশিয়ার মাটিতে পা রাখবেন, তখন শুরু হবে এক নতুন যাত্রা। কিন্তু এই যাত্রার শুরুতেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকে যেগুলো না করলে আপনার ছাত্রজীবন জটিল হতে পারে। অনেক শিক্ষার্থী এই সময়টায় বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে। তাই এই ধাপে আমরা বিস্তারিতভাবে জানবো রাশিয়ায় পৌঁছানোর পর প্রথম ৭ দিনে কী কী করতে হবে, এবং এতে কত খরচ হতে পারে

১. থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা

প্রথমেই আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে আপনি কোথায় থাকবেন।

  • যদি আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে উঠেন, তাহলে প্রতি মাসে ৫০ – ১৫০ ডলার (প্রায় ৬,০০০ – ১৮,০০০ টাকা) খরচ হতে পারে।
  • ব্যক্তিগত বাসা ভাড়া করলে খরচ বেশি হতে পারে।

২. মাইগ্রেশন রেজিস্ট্রেশন

রাশিয়ায় পৌঁছানোর ৭ কর্মদিবসের মধ্যে আপনাকে স্থানীয় অভিবাসন দপ্তরে মাইগ্রেশন রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে। এটি বাধ্যতামূলক এবং আইনি দৃষ্টিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ।

👉 বিশ্ববিদ্যালয় যদি হোস্টেল প্রদান করে, তাহলে অনেক সময় তারাই এই রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা করে দেয়।
👉 যদি আপনি হোটেল বা ব্যক্তিগত বাসায় থাকেন, তাহলে আপনাকেই এটি করতে হবে।
এই প্রক্রিয়ায় খরচ হতে পারে প্রায় ৫০০ থেকে ১,৫০০ রুবল (প্রায় ৭০০ – ২,২০০ টাকা)।

৩. মেডিকেল চেকআপ ও স্বাস্থ্যবীমা নিশ্চিত করা

রাশিয়ায় অনেক বিশ্ববিদ্যালয় পৌঁছানোর পর নতুন শিক্ষার্থীদের মেডিকেল টেস্ট করিয়ে থাকে। এর জন্য অতিরিক্ত খরচ লাগতে পারে ১,০০০ – ২,০০০ রুবল (প্রায় ১,৫০০ – ৩,০০০ টাকা)।

এছাড়া আপনি যেই মেডিকেল ইনস্যুরেন্স বাংলাদেশ থেকে নিয়ে গেছেন তা রাশিয়ার জন্য উপযোগী কিনা, তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে স্থানীয়ভাবে নতুন বীমা নিতে হতে পারে।

৪. সিম কার্ড ও ইন্টারনেট সংযোগ

দেশে ফিরে প্রিয়জনদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হলে আপনাকে একটি রাশিয়ান মোবাইল সিম কিনতে হবে।

  • একটি সিমকার্ড ও ইন্টারনেট প্যাকেজ নিতে খরচ হতে পারে ৫০০ – ৭০০ রুবল (প্রায় ৭৫০ – ১,০০০ টাকা)।
  • MTS, Beeline, Tele2 ইত্যাদি অপারেটর রাশিয়ায় জনপ্রিয়।

৫. ব্যাংক একাউন্ট খোলা (ঐচ্ছিক)

যদি আপনি রাশিয়ায় দীর্ঘমেয়াদে পড়াশোনা করতে চান, তাহলে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা উপকারী হবে। এতে স্কলারশিপ, স্পন্সরের টাকা কিংবা পার্ট-টাইম চাকরির আয় সংরক্ষণ করতে পারবেন।
বেশিরভাগ ব্যাংক স্টুডেন্টদের জন্য ফ্রি অ্যাকাউন্ট ওপেন করার সুবিধা দেয়।

কথোপকথন:

মেহেদী: ভাই, আমি তো হোস্টেলে থাকব। তাহলে রেজিস্ট্রেশন লাগবে না?
জুবায়ের: লাগবে ভাই, তবে হোস্টেল কর্তৃপক্ষ সাধারণত এটা করে দেয়। তবে নিজে থেকে নিশ্চিত হয়ে নাও যেন ঝামেলা না হয়।

বিকল্প খরচের তালিকা (প্রথম ৭ দিন):

খরচের ধরনআনুমানিক পরিমাণ
থাকার ব্যবস্থা৬,০০০ – ১৮,০০০ টাকা
রেজিস্ট্রেশন ফি৭০০ – ২,২০০ টাকা
মেডিকেল টেস্ট১,৫০০ – ৩,০০০ টাকা
সিম ও ইন্টারনেট৭৫০ – ১,০০০ টাকা
মোট আনুমানিক খরচ≈ ৯,০০০ – ২৪,০০০ টাকা

এই ধাপে আমরা জানলাম রাশিয়া পৌঁছানোর পর প্রথম সপ্তাহে কী কী গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হয় এবং আনুমানিক কত টাকা খরচ হতে পারে।

পরবর্তী ধাপে আমরা জানবো – রাশিয়ায় পুরো কোর্স চলাকালীন মাসিক খরচ কত এবং খরচ কমানোর কিছু কার্যকর কৌশল

৫। রাশিয়ায় পড়াশোনা চলাকালে মাসিক খরচ ও বাজেট বাঁচানোর টিপস

রাশিয়ায় ভিসা পেলেন, পৌঁছেও গেলেন। এবার প্রশ্ন—সেখানে থাকা ও পড়াশোনার সময় মাসে মাসে খরচ কত হবে? এটি অনেকের কাছেই ভয়ের বিষয় মনে হয়, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য। কিন্তু বাস্তবতা হলো, রাশিয়া তুলনামূলকভাবে অনেক সাশ্রয়ী একটি দেশ এবং চাইলে মাসিক খরচ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।

খরচ বাঁচানোর সহজ টিপস:

  1. হোস্টেলে থাকা সাশ্রয়ী:
    ব্যক্তিগত ফ্ল্যাট ভাড়া অনেক বেশি। যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল পাওয়া যায়, সেটিই বেছে নেওয়া ভালো।
    👉 হোস্টেলের খাবার এবং ইউটিলিটি চার্জ অনেক সময় ফ্রিতেও থাকে।
  2. রান্না নিজে করলে বাঁচবে খরচ:
    বাইরে খাওয়ার তুলনায় বাসায় নিজে রান্না করলে খরচ অর্ধেকেরও কমে যায়।
    👉 রাশিয়ান মার্কেটে সবজি ও মাছ-মাংস সস্তা দামে পাওয়া যায়।
  3. স্টুডেন্ট কার্ড ব্যবহার করুন:
    মেট্রো, বাস ও ট্রামে স্টুডেন্ট কার্ড ব্যবহার করলে পরিবহনে ৫০% পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায়।
    👉 মাসিক ট্রান্সপোর্ট কার্ড ব্যবহার করলে খরচ কমে।
  4. অনলাইনে বই বা নোটস সংগ্রহ করুন:
    নতুন বই না কিনে ই-বুক বা সিনিয়রদের পুরোনো নোটস সংগ্রহ করলে খরচ বাঁচে।
  5. পার্ট টাইম কাজ:
    অনেক শিক্ষার্থী ক্লাস শেষে পার্ট টাইম চাকরি করেন—যেমন রেস্টুরেন্ট, টিউটরিং বা অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং।
    👉 রাশিয়ায় স্টুডেন্ট ভিসায় নির্দিষ্ট নিয়মে কাজ করার অনুমতি থাকে।

কথোপকথন:

শাকিল: ভাই, রাশিয়ায় তো অনেক সস্তায় থাকা যায় শুনি।
সামি: হ্যাঁ ভাই, একটু হিসেব করে চললে মাসে ২০,০০০ টাকার মধ্যে ভালোভাবেই চলা যায়।

বোনাস পরামর্শ:

  • রাশিয়ার শহরভেদে খরচ কমবেশি হয়। মস্কো ও সেন্ট পিটার্সবার্গে খরচ কিছুটা বেশি হলেও ছোট শহরগুলোতে জীবনযাত্রার খরচ অনেক কম।
  • প্রাথমিক ৩-৬ মাস যদি কিছুটা বেশি খরচও হয়, ধীরে ধীরে আপনি ব্যালান্স করতে পারবেন।

উপসংহার:

রাশিয়ায় পড়াশোনা করতে যাওয়ার পুরো প্রক্রিয়া যতটা জটিল মনে হয়, বাস্তবে ততটা নয়—যদি আপনি সঠিক পথে ও প্রস্তুতিতে এগিয়ে যান। ভিসা প্রক্রিয়া, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ভিসা ফি, মেডিকেল পরীক্ষা, ইনস্যুরেন্স এবং মাসিক খরচ—সব মিলিয়ে গড়পড়তা একজন শিক্ষার্থী রাশিয়ায় সম্মানজনকভাবে পড়াশোনা করতে পারেন।

যারা পরিশ্রমী, বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনায় বিশ্বাসী এবং নিজের ভবিষ্যৎ গড়তে চান, তাদের জন্য রাশিয়া একটি বড় সুযোগ হয়ে উঠতে পারে। তাই ভয় নয়, বরং তথ্য ও সচেতনতার মাধ্যমে আপনি নিজেই নিজের স্বপ্নপথ সুগম করতে পারেন।

আপনি যদি সত্যি বিদেশে পড়তে চান, তবে আজই নিজের প্রস্তুতি শুরু করুন—সঠিক তথ্য আপনাকে এগিয়ে রাখবে এক ধাপ!

Leave a Comment

You cannot copy content of this page