ইতিহাস
মোবাইল ফোনে ব্যবহারের আওতায় এসেছে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ। কিন্তু আপনি জানেন কি ডঃ মারটিন কুপার এবং ডঃ জন ফ্রান্সিস মিচেলকে প্রথম দূরে মানুষের সাথে যোগাযোগের জন্য ১৯৭৩ সালে এক অভিনব মেশিন আবিষ্কার করেন। এই মেশিনটির নাম টেলিফোন। মেশিনটির ওজন প্রায় ১ কেজি। সেই সময় মার্কিন আবিষ্কারক ডঃ মারটিন কুপার মোটোরোলা কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৩ সালে এই টেলিফোন নামক মেশিন টি জনপ্রিয়তা পায়।
মোবাইল কি
মোবাইল শব্দের অর্থ হলো ভ্রাম্যমান বা স্থানান্তরযোগ্য। সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমরা প্রথমে দেখি কয়টা বাজে। একটা সময় দেয়াল ঘড়ি বা হাত ঘড়িতে সময় দেখা লাগতো। তবে, আধুনিক মোবাইলের কল্যাণে এখন কমদামি মোবাইলেও সময় দেখা যায়।
এর মাধ্যমে যে কোন ভৌগলিক অবস্থানে থাকা দুই ব্যক্তি একে অপরের সাথে টেলিকমিউনিকেশন ডিভাইসের মাধ্যমে ভয়েস এবং টেক্সট মেসেজ আদান-প্রদান করতে পারে। মোবাইল ফোন হাতের মধ্যে বা সহজে বহন করা যায়। তাই মোবাইল ফোনকে সেল ফোন, সেলুলার ফোন, হ্যান্ডফোন, মুঠোফোন নামেও ডাকা হয়।
মোবাইল ব্যবহারের সুফলগুলো কি

মোবাইল ব্যবহারের খারাপ দিক গুলোর চেয়ে, ভালো দিকগুলোই সবার আগে নজর কাড়া উচিৎ। তাই অপকারিতার চেয়ে আগে উপকারিতাগুলোই দেখে নেওয়া যাকঃ
১ . দৈনন্দিন জীবনে মোবাইল ফোন এর উপকারিতা
প্রতিদিন আমরা বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকি যার অধিকাংশ কাজের সাথে মোবাইলের ব্যাবহার হয়ে থাকে। এমন কতগুলো বিষয় নিচে আলোচনা করা হলঃ-
ক) ছবি তুলতে চান?
বিচিত্র এই পৃথিবীর বিচিত্র সব মানুষ। কারো গান শুনতে ভালো লাগে, আবার কারো ছবি তুলতে ভালো লাগে।
মোবাইল একা হাতে এই অজস্র মানুষের অজস্র এই স্বাদ মিটিয়েছে। ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা এর দরকার নেই, দরকার একটা মোবাইল ফোনের; যা একই সাথে অনেক রকমের স্বাদ মেটাতে পারে।
খ) রাস্তা ভুলে গেছেন?
মোবাইল ই আপনাকে রাস্তা দেখাবে। মোবাইল ফোন থেকে জানুন রোডম্যাপ কোথাও না কোথাও দূর সফরে যাচ্ছেন? রাস্তাগুলো অচেনা লাগছে? মানুষের বয়সের সাথে সাথে রাস্তারও বয়স বাড়ছে, রাস্তারও শাখা প্রশাখা বাড়ছে। কিন্তু বৃদ্ধ বাবা কে তো শুধুমাত্র রাস্তা দেখানোর জন্য টেনে নিয়ে যাওয়া টা কি ঠিক হবে?
এইসব চিন্তা কবে বিদায় নিয়েছে, যখন মোবাইলে জিপিএস এসেছিল। এখন মোবাইলই তো যে কোন অপরিচিত রাস্তার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
গ) বাড়ীতে ক্যালেন্ডার নেই?
মাসে বা বছরের কতদিন অফিস ছুটি থাকতে পারে – এইসব যদি আগে থেকে জানতে পারা যায়, ঘোরার প্ল্যান টাও ঠিক করে করা যায়। আর এই সবের জন্য একসময় ক্যালেন্ডার টা কে সাথে নিয়েই থাকতে হত। এইসব কিছু এখন একটা মোবাইল ফোনেই হয়ে যায় শুধু মাত্র একটা এপ্স ইন্সটল করে।
ঘ) ঘড়িটা খারাপ হয়ে আছে?
বাড়ীতে ঘড়ি টা খারাপ হয়ে আছে? এই অবস্থায় থাকা যায় নাকি? শীঘ্রই বাজার থেকে ব্যাটারি এনে লাগানো হত ঘড়িতে। এইসব সমস্যার অবসান ঘটেছে। অবসান ঘটিয়েছে মোবাইল ফোন।
২. শিক্ষা জীবনে মোবাইল ফোন এর উপকারিতা
শিশুদের হাতে কলমে শিক্ষা থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস আদালত ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন মানুষের শিক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। মোবাইল ফোন এখন মানুষের হাতে হাতে।
মোবাইল ফোন আবিষ্কারের সময় থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে উন্নতি হয়ে মোবাইল এখন কম্পিউটার হিসাবে ও ব্যাবহার হচ্ছে। আর এই জন্য মোবাইলকে বলা হয় মিনি কম্পিউটার। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো মোবাইল ফোন শিক্ষা ক্ষেত্রে বর্তমান অবস্থা থেকে আরো ছাড়িয়ে যাবে।
মোবাইল ফোন এমন একটি প্রযুক্তি, যা আবিষ্কারের ফলে মানুষের সবচেয়ে বেশি উপকার হয়েছে শিক্ষা ক্ষেত্রে। শিক্ষা ক্ষেত্রে মোবাইল ফোনের উপকারীতা অপরিসীম।
৩. কর্মজীবনে মোবাইল ফোন
চাকরি এপ্লায় করতে চান? কি করে ফর্ম ফিল আপ করে কোম্পানিতে জমা দেবেন তাই ভাবছেন? হাতে মাত্র এক দিন সময়? কিন্তু সেখানে পৌঁছাতেই আপনার ১ দিনের বেশী সময় লাগবে?
না, এইসব সমস্যা অনেক কাল আগের। এখনকার জেনারেশেন এই সমস্যাগুলোর ব্যাপারে অবগত ই নয়। তার কারন ও হল- আপনার হাতের মোবাইল ফোনটি। মোবাইল থেকেই একটা ই-মেল করে দিলেই তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
৪. সামাজিকতা রক্ষায় মোবাইল ফোন
বাড়ীর ছেলেমেয়েরা সব বাড়ীর বাইরে থেকে কলেজে পড়াশুনো করছে। আর আপনার চিন্তায় দিন কাটছে। এমনটাই তো হত বেশ কয়েক বছর আগে। এখন মোবাইল এসে অনেকের অনেক চিন্তা কমিয়ে দিয়েছে।
বাড়ীতে বসেই আত্মীয় স্বজনদের খবর পাওয়া যায়; ছেলে মেয়ের সাথে কথা বলে মন ভালো করা যায়; বন্ধুদের সাথে মোবাইলে আড্ডাও দেওয়া যায়, খেলতে যাওয়ার প্ল্যান ও করা যায়।
৫. ব্যাবসায় বানিজ্যের প্রসারে
ব্যাবসায় কত আয় -ব্যায় হচ্ছে কোন ক্রেতার কত টাকার বাকি আছে, খরচের তালিকা করা ইত্যাদি সবকিছুর হিসাব এর জন্য দোকানদার রা এখন মোবাইল ফোনের ব্যাবহার করছেন। বাংলাদেশী অ্যাপ হালখাতা সহ বেশ কয়েকটি অ্যাপের মাধ্যমেই এখন আরো গোছানো উপায়ে ব্যবস্যা করা সম্ভব হচ্ছে। এভাবে মোবাইল ব্যবহার করার ফলে ব্যবসায় হিসার রাখা সহজ হচ্ছে বাড়তি খরচ কম হচ্ছে এবং ব্যবসায়িদের ঝামেলা কমছে।
৬. বিনোদনে মোবাইল
জীবনের একঘেয়েমি সকল মানুষকেই কখনো না কখনো স্পর্শ করেছে। আর তখন যারা প্রকৃতির রুপের মধ্যে সৌন্দর্য উপভোগ করার মতো কিছু খুঁজে পেয়েছিল, কিংবা ডায়েরি এর পর ডায়েরি লিখাতে মেতে থাকতে পেরেছিল; তারাই একমাত্র এই একঘেয়েমি থেকে বেরোতে পেরেছিল।
আরও কিছু মানুষ সেই একঘেয়েমি কে দূরে ঠেলতে পেরেছিল, যারা কঠোর পরিশ্রমে ডুবে থাকতো, আর যারা রেডিও তে গান শোনাতে মেতে থাকতো। এখন রেডিও না, মোবাইল ফোন। গান শুনতে চাইলে ক্যেসেট এর দরকার নেই। অজস্র, অগুনতি গান। শুধু শোনার সময় থাকলেই হল।
পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়ার উপায় কি? বিস্তরিত জানতে ভিজিট করুন
মোবাইলফোন ব্যবহারের কুফল

স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া
সুস্থ থাকতে হলে মস্তিষ্কের বিশ্রামও আবশ্যক। কিন্তু আমরা অনেক সময় বিশ্রাম নিতে গিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় নষ্ট করে থাকি। যেটা আমাদের মস্তিষ্কের বিশ্রাম ব্যাঘাত ঘটিয়ে থাকে। যার ফলে আমাদের স্মৃতি শক্তি কমে যায়।
জীবাণুভরা মোবাইল ফোন !
কিছু কিছু মনোবিজ্ঞানী বা চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে টয়লেটের চেয়েও সবচেয়ে বেশি জীবাণু থাকে মোবাইল ফোনে। মোবাইল ফোন নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না বলে জীবাণুর কারখানায় পরিণত হয়। এ ধরনের জীবাণু গুলো খুব বেশি মারাত্মক না হলেও মানুষের শরীরের মধ্যে সংক্রামক ব্যাধিগুলো ছড়িয়ে দিতে পারে।
অতিরিক্ত সময় নষ্ট হওয়া
মোবাইল ফোন ব্যবহার করার ফলে নিজের অজান্তেই মূল্যবান সময়গুলো নষ্ট হয়ে যায়। যেটা অধিকাংশ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা ভাল করে খেয়াল করেন না।
কানে কম শোনা
মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অতিরিক্ত হেডফোন দিয়ে গান শুনলে কানের সমস্যা হতে পারে। খুব বেশি হেডফোন দিয়ে গান শুনলে উচ্চস্বরে একটা সময় কান একদম বধির হয়ে যাবে।
শরীরের অস্থিগুলোর ক্ষতি
খুব বেশি মোবাইল টিপাটিপি করলে একটা সময় শরীরের বিভিন্ন অস্থি বা জয়ন্টে ব্যথা অনুভব হতে পারে। শুয়ে বা বসে অত্যাধিক শরীরের বিভিন্ন স্থানে নানারকম সমস্যার তৈরি হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে অতিরিক্ত সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করা যাবে না। এতে করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে নানারকম অসুবিধার দেখা পাওয়া যেতে পারে।
শুক্রাণু কমে যেতে পারে
হ্যাঁ আপনি সত্যই শুনছেন! অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করার ফলে হাই ফ্রিকোয়েন্সির ইলেকট্রো-ম্যাগনেটিক রেডিয়েশন নির্গত হয় মোবাইল ফোন থেকে। যেটা একসময় ক্যান্সার রোগে রূপান্তর হতে পারে। শরীরের তরঙ্গ কোষের ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়া প্রজননতন্ত্রের ঝুঁকি অনেকাংশে বৃদ্ধি পায়।
মুঠোফোন থেকে এরকম নির্গত রশ্মিগুলো আমাদের শুক্রাণুর সংখ্যা কমিয়ে দিতে পারে। যৌনচিকিৎসকদের মতে আমাদের মোবাইল ফোন ব্যবহারে খুব সতর্ক হতে হবে।
সময় অসময় রিংটোন বাজা!
সময়ে অসময়ে রিংটোন বাজার ফলে মানুষের মধ্যে উদ্বেগতা বা বিষণ্নতা সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে! আচমকা রিংটোন বাধার ফলে মানুষের মধ্যে এ ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়।
চোখের সমস্যা
মনোবিজ্ঞানীরা সতর্ক করে জানিয়েছেন, অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহার করার ফলে ক্ষীণদৃষ্টি এই সমস্যা হতে পারে। কারণ মোবাইল ফোনগুলো মূলত অল্প দূরত্বে ব্যবহার করা হয় যেটা একসময় ক্ষীণদৃষ্টি সমস্যায় পরিণত হতে পারে।
মোবাইল ফোন ব্যবহার করার চেয়ে বই বা পত্রিকা পড়ার সময় দূরত্ব বেশি থাকে। মনোবিজ্ঞানীরা বলেছেন মোবাইল ফোন বেশি সময় ব্যবহার না করতে।
শেষ কথা
মোবাইল ব্যবহারের সুফল ও কুফল গুলো মাথায় রেখে এগিয়ে যান। দেখবেন ধীরে ধীরে অভ্যেস হয়ে যাবে। মানুষ হল অভ্যেসের দাস। তবে এক- দুবার প্র্যাকটিস করলে কোন কিছুই হবে না। বার বার এই অভ্যেসগুলো ফলো করুন আর মোবাইল এর খারাপ দিক গুলো স্মরনে রাখুন।
আশা করি মোবাইল ব্যবহারের সুফল ও কুফল গুলো জানার পরে প্রতিটি নাগরিক কুফল গুলো থেকে দূরে থাকারেই চেষ্টা করবেন।
পড়াশোনা করার নিয়ম বিস্তরিত জানতে ভিজিট করুন
One thought on “দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত মোবাইলফোন ব্যবহারের সুফল ও কুফল”