চাকরির ইন্টারভিউ এর প্রশ্ন ও উত্তর

Spread the love

চাকরির ইন্টারভিউ এর প্রশ্ন ও উত্তর- নতুন কোন চাকরিতে যোগদান করতে হলে অবশ্যই তার পূর্বে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানে ইন্টারভিউ দিতে হয়। প্রতিষ্ঠানের ধরণ ও পদবী অনুযায়ী ইন্টারভিউতে প্রশ্ন করা হয়। সকল প্রতিষ্ঠানের চাকরির সাক্ষাৎকারে প্রশ্নের ধরণ একই রকম হয় না। আমরা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে অনেক সময় নার্ভাস হয়ে যাই। বিশেষ করে যারা একেবারে নতুন অর্থাৎ যারা সবেমাত্র লেখাপড়া শেষ করে চাকরির চেষ্টা করছেন তাদের অনেক সমস্যা হয়ে যায়। নতুনদের ধ্যান-ধারণা থাকে ইন্টারভিউ বোর্ডে হয়তো পড়াশুনা সম্পর্কিত প্রশ্ন বা যে পদে চাকরির আবেদন করেছেন সে সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।

আসলে ইন্টারভিউ বোর্ডে কি ধরণের প্রশ্ন করা হবে তা একান্তই নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের উপর নির্ভর করে। তবে প্রায় সকল চাকুরির ইন্টারভিউ বোর্ডেই সাধারণত কমন কিছু প্রশ্ন করা হয় বা কমন কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। যে পদ্ধতিগুলো বা কমন প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা থাকলে ইন্টারভিউ দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ হয় এবং ইন্টারভিউ বোর্ডে প্রশ্নের উত্তর দিতেও সহজ হয়ে যায়।তো চলুন চাকরির ইন্টারভিউ এর প্রশ্ন ও উত্তর সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করি।

চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়ার কৌশল | চাকরির ইন্টারভিউ এর প্রশ্ন ও উত্তর

চাকরির ইন্টারভিউ বোর্ডে প্রবেশের পূর্বে যে কাজগুলো করতে হবে-

ক) পদবী ভিত্তিক প্রফেশনাল সিভি তৈরী করতে হবে।
খ) চাকরির বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (সিভি, শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদ, অভিজ্ঞতা সনদ, প্রশিক্ষণ সনদ (যদি থাকে), জাতীয় পরিচয়পত্র ইত্যাদি) সাথে নিয়ে যেতে হবে।
গ) ফরমাল/মার্জিত পোশাক পড়তে হবে।
ঘ) দাঁত পরিস্কার করতে হবে। মুখে দুর্গন্ধ থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ঙ) হাতে পায়ের নখ কাটতে হবে।
চ) চুল কেটে ছোট করতে হবে।
ছ) শরীরে ঘামের দুর্গন্ধ থাকলে পারফিউম ব্যবহার করতে হবে।
জ) এক কথায় পরিপাটি হয়ে যেতে হবে।
ঝ) নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উপস্থিত হতে হবে। ট্রাফিক জ্যাম বা অন্য কারণ দেখিয়ে দেরী করা যাবে না।
ঞ) ইন্টারভিউ বোর্ডে প্রবেশের সময় ইন্টারভিউ গ্রহণকারীদের সঙ্গে সালাম বিনিময় করে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে হবে।

চাকরির ইন্টারভিউ এর প্রশ্ন ও উত্তর-

প্রার্থীকে চাকরির ইন্টারভিউতে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। প্রশ্ন যাই হোক, কোন অবস্থাতেই হতাশ বা ভীত হওয়া যাবে না। ইন্টারভিউতে কি ধরণের প্রশ্ন করা হবে তা জানা থাকলে, পূর্বেই তার উত্তর ঠিক করে ইন্টারভিউ গ্রহণকারীদের সামনে স্মার্টলী উপস্থাপন করা যায়। আজ আমরা এই আর্টিকেল থেকে কিছু কমন বা প্রচলিত চাকরির ইন্টারভিউ এর প্রশ্ন ও উত্তর সম্পর্কে জানার চেষ্টা করব।

চাকরির ইন্টারভিউ এর প্রশ্ন ও উত্তর নিম্নরূপ-

আপনি নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন (Say something about yourself)

এই প্রশ্নটি কমন একটি প্রশ্ন। চাকরির প্রায় প্রতিটি সাক্ষাৎকারেই এই প্রশ্নটি করা হয়। এই প্রশ্নের মাধ্যমে প্রশ্নকারী দেখতে চান যে প্রার্থী নিজেকে কিভাবে উপস্থাপন করেন। এই প্রশ্নের উত্তরের মাধ্যমে তারা প্রার্থীর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করেন। সেজন্য প্রশ্নটির উত্তর দেবার জন্য আগে থেকেই কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ঠিক করে রাখুন। উত্তর দেবার জন্য আপনি বেশী সময় পাবেন না। তাই সংক্ষিপ্ত আকারে কিছু পয়েন্ট এভাবে বলতে পারেন-

ক) প্রথমে নিজের নাম ও ঠিকানা বলুন।
খ) আপনি সর্বশেষ কোন্ ডিগ্রী অর্জন করেছেন এবং কোন্ বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ থেকে অর্জন করেছেন সে সম্পর্কে বলুন।
গ) বর্তমানে আপনি কি করছেন? নিজের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে বলুন।
ঘ) এই চাকরি সম্পর্কিত কোন অভিজ্ঞতা বা দক্ষতা থাকলে সে সম্পর্কে কিছু বলতে পারেন।
ঙ) আপনার অর্জন সম্পর্কে কিছু বলতে পারেন।

আপনি এ চাকরি কেন করতে চান (Why do you want to do this job)?

এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে অনেকেই বলে থাকেন- স্যার এই চাকরিটা আমার খুবই প্রয়োজন। ফ্যামিলী নিয়ে খুবই সমস্যার মধ্যে আছি ইত্যাদি ইত্যাদি। এই ধরণের কথা ইন্টারভিউ বোর্ডে কখনোই বলা যাবে না। এই উত্তরের মাধ্যমে আপনার অযোগ্যতা প্রকাশ পেতে পারে। নিজের চাহিদা বা দূর্বলতার কথা না বলে বরং এমন কিছু বলুন, যাতে করে তারা মনে করেন যে, আপনি এই চাকরির জন্য যোগ্য প্রার্থী। যেমন বলতে পারেন-

ক) চাকরির পদটি আমার কর্ম জীবনের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার সাথে সম্পর্কিত।

খ) উক্ত চাকরিতে যোগদান করলে আমি নিজের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সততাকে কাজে লাগিয়ে কোম্পানীর উন্নতিকল্পে কাজ করার সুযোগ পাব।

গ) এখানে নতুন নতুন অনেক কিছু শিখতে পারবো।

ঘ) আশা করছি এখান থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা আমাকে সফলতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়ক হবে।

আমাদের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন (What do you know about our organization?)

প্রতিটি কোম্পানিতে চাকরির সাক্ষাৎকারে সাধারণত এই প্রশ্নটি করা হয়। এর মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ জানতে চেষ্টা করেন আপনি এই চাকরির ব্যপারে কতটা আগ্রহী। কোম্পানী সম্পর্কে আপনি কতটুকু অবগত আছেন সেটা তারা জানার চেষ্টা করেন। এই প্রশ্নের উত্তর সহজভাবে দেওয়ার জন্য ইন্টারভিউতে আসার পূর্বে কোম্পানীর বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে স্টাডি করে আসবেন। যেমন-

ক) কোম্পানী প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কবে?
খ) কোম্পানীর প্রতিষ্ঠাতা কে?
গ) কোম্পানীর বর্তমান মালিক/সিইও/চেয়ারম্যানের নাম কি?
ঘ) কি ধরণের প্রতিষ্ঠান বা প্রতিষ্ঠানের মূল কার্যক্রম কি?
ঙ) কোম্পানীর সুনাম অর্জনে কোন পুরস্কার পেয়েছে কি না?
চ) কোম্পানীর কতগুলো শাখা আছে এবং কোথায় কোথায় শাখা আছে?

এই চাকরির জন্য আপনি নিজেকে কেন যোগ্য মনে করেন (Why do you think you deserve this job)?

এই প্রশ্নের উত্তর খুবই ভেবে-চিন্তে সুন্দরভাবে গুছিয়ে বলতে হবে। কারণ এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন। নিজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে তাদের কাছে উপস্থাপন করার মুখ্যম সুযোগ। এটি চাকরি হওয়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিজের দক্ষতাকে তাদের সামনে এমনভাবে উপস্থাপন করুন, যেন তারা বুঝতে পারেন আপনি আপনার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা দিয়ে কোম্পানীর উন্নতিকল্পে ভূমিকা রাখতে পারবেন। নিজেকে উপস্থাপন করতে পারেন এভাবে-

ক) আপনার এই পদে চাকরির পূর্ব অভিজ্ঞতা তুলে ধরুন। উক্ত পদে বর্তমান বা পূর্বের কোম্পানীতে কি কি দায়িত্ব পালন করেছেন এবং কত বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে তা সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরুন।
খ) কাজ সম্পর্কিত কিছু দক্ষতা তুলে ধরুন।
গ) পূর্বের কোম্পানীতে আপনি এই পদে কি কি দায়িত্ব পালন করেছেন তা বর্ণনা করুন।
ঘ) কঠোর পরিশ্রম এবং দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি।
ঙ) কাজের অধিক চাপ থাকলেও তা সহজভাবে হ্যান্ডেল করতে পারি।
চ) নতুনভাবে নতুন পরিবেশে কাজ করতে বা শিখতে স্বাচ্ছ্যন্দ বোধ করি।
ছ) বলুন নতুন কোম্পানী মানেই নতুন কিছু শিখার সুযোগ। এখান থেকে আমি অনেক কিছু শিখতে বা অর্জন করতে চাই। নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে চাই। আর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে তো অবশ্যই কোম্পানীর উন্নয়নের মাধ্যমেই করতে হবে। কোম্পানীর উন্নতিকল্পে অগ্রসর হতে না পারলে তো নিজেও অগ্রসর হতে পারব না ইত্যাদি।

এই চাকরি সম্পর্কে আপনি কিভাবে জেনেছেন (How do you know about this job)?

এই প্রশ্নটি করা হয় সাধারণত আপনার এই চাকরির ব্যাপারে কতটুকু আগ্রহ রয়েছে তা জানার জন্য। আপনি কোন উৎস থেকে এই চাকরির বিষয়ে জানতে পেরেছেন তা বলুন। তবে এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য আপনাকে যে কাজটি করতে হবে তা হলো-

ক) আপনি যে উৎস থেকে জানতে পেরেছেন প্রথমে সেটা বলুন।
খ) আপনি যে মাধ্যম থেকে জেনেছেন ধরুন আপনি আপনার কোন বন্ধুর মাধ্যমে জেনেছেন, জানার পরে আপনি অনলাইনে খুঁজে দেখবেন কোন্ কোন্ জব পোর্টালে বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ করা হয়েছে এবং কোন কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সমস্ত তথ্য তাদের সামনে উপস্থাপন করুন। যেন তারা বুঝতে পারেন আপনি এই চাকরি বিষয়ে আগ্রহ সহকারে অনেক খোঁজ খবর নিয়েছেন।
গ) আপনি কোম্পানীর বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে পারেন।

বর্তমান চাকরি ছেড়ে এই কোম্পানীতে কেন আসতে চাচ্ছেন (Why do you want to leave your current job and come to this company)?

এটি খুবই জটিল এবং কঠিন প্রশ্ন। এই প্রশ্নের উত্তরে অনেক দূর্বল বিষয় থাকে। যে বিষয়গুলো বর্ণনা করলে আপনার সম্পর্কে প্রশ্নকারী নেতিবাচক ধারণা করতে পারেন। যেমন-

ক) আপনার কোন অপরাধের কারণে আপনাকে চাকরি থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।
খ) অনেক দিন এই কোম্পানীতে চাকরি করছেন কিন্তু কোম্পানী ঠিকমত বেতন বাড়ায় না বা এখানে ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টের সম্ভাবনা খুবই কম। এই উত্তরে প্রশ্নকারী মনে করবেন নিশ্চয় আপনার তেমন কোন যোগ্যতা নেই যার উপর ভিত্তি করে আপনার প্রমোশন বা বেতন বৃদ্ধি করা হবে।
গ) আপনি আপনার কাজে হয়তো দায়িত্বশীল না এটাও তারা মনে করতে পারেন।

এ প্রশ্নের উত্তর এভাবে বলা যেতে পারে-

ক) কোম্পানী আপনাকে ছেড়ে দেওয়ার পেছনে যদি আপনার কোন অপরাধ না থাকে তবে কি কারণে আপনাকে বাদ দেওয়া হয়েছে তা বর্ণনা করুন।
খ) বলুন আমি আপনাদের কোম্পানী সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে জানতে পেরেছি আপনাদের সমস্ত নিয়ম-কানুন খুবই ভালো। আমি মনে করি এখানে কাজ করে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করব।
গ) আমি নতুন পরিবেশে কাজ করতে ভালবাসি।
ঘ) আমি এখান থেকে আমার ক্যারিয়ারকে ডেভেলপ করতে চাই।
ঙ) আমার কাছে মনে হয়েছে পূর্বের কোম্পানী থেকে এই কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা খুবই ভালো। আপনার কাছে এই কোম্পানীকে কেন ভাল মনে হয়েছে সে সম্পর্কে আগে থেকেই কিছু পয়েন্ট ঠিক করে রাখুন এবং তাদের সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করুন।

আপনার দূর্বল বিষয়গুলো কি কি (What are your weaknesses)?

ইন্টারভিউ বোর্ডে সকল প্রার্থীই তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা, মেধা ইত্যাদি তুলে ধরার মাধ্যমে নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনের প্রচেষ্টা করে থাকেন। কিন্তু সেখানে যদি নিজের দূর্বলতা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়, তার উত্তর দিতে কেমন অনুভূতি হয় তা একটু চিন্তা করলে সহজেই বুঝা যায়। এ প্রশ্নটি করার মাধ্যমে তারা আপনার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে জানতে চান। যেমন-

ক) নিজের সম্পর্কে আপনি কতটুকু জানেন বা কিরূপ ধারণ পোষণ করেন?

যে ব্যক্তি নিজের দক্ষতা ও দূর্বলতা সম্পর্কে ভালোভাবে জানে সে নিজেকে যে কোন জায়গায় সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারে। প্রতিকূল পরিবেশেও নিজেকে মানিয়ে চলতে পারে। কোন কোন বিষয়ে আপনার দক্ষতা আছে এবং কোথায় কোথায় আপনার দূর্বলতা রয়েছে সেটা আপনিই ভালো জানেন।

খ) আপনি সৎ ও সত্যবাদী কিনা?

নিয়োগকারীগণ সর্বদা সৎ ব্যক্তিকে তালাশ করে থাকেন। এ প্রশ্নের জবাবে আপনাকে অবশ্যই সততার পরিচয় দিতে হবে। আপনি যদি বলেন আমার কোন বিষয়ে দূর্বলতা নেই, তবে প্রশ্নকারী আপনার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণ করতে পারেন। কারণ প্রত্যেকেরই কোথাও না কোথাও দূর্বলতা থাকে। তাই সৎ থাকার চেষ্টা করুন এবং প্রশ্নের উত্তরে সত্যতা নিশ্চিত করুন। কারণ সৎ ব্যক্তিত্ব কোম্পানীর অমূল্য সম্পদ। কোম্পানী নির্দ্বিধায় তার উপর ভরসা করতে পারে। কোম্পানীর উন্নয়নে এবং কোম্পানীকে টিকিয়ে রাখতে সৎ এবং পরিশ্রমীর গুরুত্ব অপরিসীম।

এই প্রশ্নের মাধ্যমে প্রশ্নকারী দেখতে চান আপনি সৎ কিনা। আপনার দোষ-ত্রুটি আপনি বুঝেন কিনা এবং তা স্বীকার করার সৎ সাহস আছে কিনা।

আপনার কি কি দূর্বলতা রয়েছে তা যদি এই চাকরির সাথে সম্পৃক্ততা না থাকে তাহলে তাদের সামনে অকপটে দূর্বলতার কিছু পয়েন্ট তুলে ধরুন। আর চাকরির সাথে সম্পর্কিত হলে তা স্মার্টলী এমনভাবে উত্তর দিন যেন মেজর কোন দূর্বলতা প্রকাশ না পায়। দূর্বলতার পয়েন্টগুলো বর্ণনা করার পর বলবেন- আমি এ দূর্বলতাগুলো দূর করার প্রাণ-পণ চেষ্টা করছি এবং ইতিমধ্যে কিছু কিছু সমস্যা দূর হয়েছে। আমি আশা করছি বাকি দূর্বলতাগুলো খুব শিঘ্রই কাটিয়ে উঠতে পারব।

প্রশ্নকারীরা এ ধরণের উত্তরে খুবই খুশী হন।

এই চাকরিতে আপনি কত বেতন প্রত্যাশা করেন (How much salary do you expect in this job)?

এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে সতর্কতার সাথে। উত্তর দেওয়ার পূর্বে কয়েকটি বিষয়ের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে। যেমন-

ক) প্রতিটি কোম্পানীতে বেতনের একটি স্ট্যান্ডার্ড মান থাকে। আপনি যে পদে ইন্টারভিউ দিচ্ছেন সেই পদ অনুযায়ী কোম্পানীর স্ট্যান্ডার্ড বেতন কত? ধরুন ৪০-৫০ হাজার টাকা। কিন্তু আপনি বেতন চাইলেন ২৫-৩০ হাজার টাকা অথবা ৬০-৭০ হাজার টাকা। আপনার চাওয়া যদি অনেক কম হয়ে যায় তবে তারা আপনাকে অযোগ্য মনে করতে পারেন এবং বেশী চাইলে তারা বুঝবেন আপনার চাহিদা অনেক বেশি।

খ) ইন্টারভিউ এর পূর্বে পদ অনুযায়ী কোম্পানীর স্ট্যান্ডার্ড বেতন সম্পর্কে স্টাডি করে যেতে হবে। যদি তা জানা সম্ভব না হয় তবে উক্ত পদে অন্যান্য কোম্পানীর স্ট্যান্ডার্ড বেতন কেমন তা জানার চেষ্টা করুন।

গ) বেতনের সংখ্যা বলার পূর্বে তাদের নিকট থেকে জেনে নিন বেতনের বাইরে কোম্পানীতে অন্যান্য কি কি সুযোগ সুবিধা রয়েছে।

ঘ) বেতনের পরিমান যদি নির্ধারণ করতেই হয় তবে নির্দিষ্ট কোন পরিমান বলা যাবে না। এক্ষেত্রে একটি বেতন রেঞ্জ উল্লেখ করতে পারেন। ধরুন আপনি মনে মনে ঠিক করে রেখেছেন ৫০,০০০/- টাকা বেতন দিলে চাকরীতে যোগদান করবেন। এর নিচে হলে চাকরি করবেন না। তবে বেতনের রেঞ্জ উল্লেখ করতে হবে ৫০-৭০ হাজার টাকা। প্রশ্নকারী বুঝতে পারবেন আপনার সর্বনিম্ন চাহিদা ৫০,০০০/- টাকা।

ঙ) বেতনের পরিমান উল্লেখ করার পূর্বে খেয়াল রাখতে হবে তা যেন অতিরিক্ত বা অযৌক্তিক মনে না হয়।

চ) আপনি তাদেরকে প্রস্তাব দিতে পারেন বেতন আলোচনা সাপেক্ষে নির্ধারণ করা যেতে পারে।

এই পদে আপনাকেই কেন নেবো (Why should we take you in this position)?

এই প্রশ্নের উত্তর খুবই বিচক্ষণতার সাথে দিতে হবে। এই উত্তরটি যদি প্রশ্নকারীর পছন্দ হয় তবে আশা করা যায় চাকরিটা আপনি পেয়ে গেছেন। এই প্রশ্নের উত্তর প্রায় প্রত্যেকেই গতানুগতিক দিয়ে থাকেন। সকলেই শুধুমাত্র নিজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। নিজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে অবশ্যই তুলে ধরতে হবে তবে একটু ভিন্নভাবে। প্রশ্নকারী এই প্রশ্নের মাধ্যমে যে বিষয়গুলো জানতে চান-

ক) আপনি নিজের প্রতি কতটা আত্মবিশ্বাসী।

খ) আপনি নিজেকে এই চাকরির জন্য উপযুক্ত মনে করেন কিনা।

গ) আপনি দক্ষ ও যোগ্য কিনা।

ঘ) আপনি নিজেকে কিভাবে উপস্থাপন করেন।

ঙ) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি তারা দেখতে চান তাহলো কোম্পানীর উন্নয়নে আপনি কি কি ভূমিকা পালন করবেন।

কিভাবে কাজের চাপ সামলাবেন (How to handle work stress)?


৫ বছর পর আপনি নিজেকে কোথায় দেখতে চান (Where do you want to see yourself after 5 years)?

এই প্রশ্নটির মাধ্যমে তারা কয়েকটি বিষয়ে জানতে চান তাহলো-

ক) নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আপনার কতটুকু দূরদর্শিতা রয়েছে।

খ) নিজের ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য আপনার কোন কর্ম পরিকল্পনা আছে কিনা।

গ) ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টের জন্য আপনার আকাঙ্খা বা ইচ্ছা কতটুকু।

ঘ) আপনার লক্ষ্য কতটুকু বাস্তবসম্মত। এই চাকরির সাথে তা সম্পর্কিত কিনা।

ঙ) আপনি নিজের প্রতি কতটুকু আত্মবিশ্বাসী।

চ) আপনার লক্ষ্যমাত্রা কতটুকু? লক্ষ্য পূরণের জন্য আপনি পরিশ্রমী কিনা ইত্যাদি।

অনেকেই এ প্রশ্নের আশানুরূপ উত্তর দিতে পারেন না। একটু অপ্রস্তুত হয়ে যান। আমতা আমতা করে থাকেন। কেননা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তো আমরা কেউই অবগত নই। এটা প্রশ্নকারীরাও জানেন। তবুও তারা এ প্রশ্নটি করে জানতে চান আপনি কোম্পানী এবং নিজের উন্নয়নে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারেন। কেননা আপনি যদি আপনার মেধা, দক্ষতা, সততা ও শ্রম দিয়ে নিজের অবস্থান উপরের দিকে নিশ্চিত করতে পারেন তবে এর মাধ্যমে কোম্পানীও ব্যাপক লাভবান হবে। প্রতিটি কোম্পানীই এমন ব্যক্তিকে খুঁজে থাকেন, যিনি নিজের উন্নয়নের মাধ্যমে কোম্পানীর উন্নয়নকল্পেও প্রচেষ্টা করে থাকেন।

এ প্রশ্নের জবাবে যা বলতে পারেন-

ইন্টারভিউ বোর্ডে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় যে বিষয়গুলো মনে রাখা উচিত (Things to keep in mind when answering questions on the interview board)-

চিন্তা-ভাবনা করে প্রশ্নের উত্তর দিন-
কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হলে সাথে সাথেই উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন। প্রশ্নটি মনোযোগ সহকারে শুনে একটু সময় নিয়ে ভেবে-চিন্তে উত্তর দিন। তবে মনে রাখবেন প্রশ্নের উত্তর দিতে খুব বেশী সময় নেওয়া উচিত নয়।

কথা বলার সময় প্রাঞ্জল ভাষা ব্যবহার করুন-
প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বা কথা বলার সময় প্রশ্নকারীর সাথে শুদ্ধ ও প্রাঞ্জল ভাষা ব্যবহার করুন। আঞ্চলিকতা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন।

সংশ্লিষ্ট বিষয় ও প্রশ্নের উত্তর ব্যতিত কথা না বলা-
সাক্ষাতকারের সময় যতটুকু প্রশ্ন করা হয়েছে ততটুকুই উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করুন। সংশ্লিষ্ট বিষয় ছাড়া অপ্রাসঙ্গিক কোন কথা বলা একেবারেই উচিত নয়। কোন বিষয়ে আপনাকে প্রশ্ন করার পর আপনি যে উত্তর দিচ্ছেন, সেটা প্রাসঙ্গিক কিনা সে বিষয়ে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা উচিত।

প্রাসঙ্গিক কিছু প্রশ্ন করুন-
কোম্পানী বা চাকরি সম্পর্কে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীকে স্মার্টলী কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারেন। ফলে তারা বুঝবে প্রতিষ্ঠানটির প্রতি আপনার আগ্রহ রয়েছে।

নির্ধারিত দিনে সাক্ষাৎকার দিন-
সাক্ষাৎকারের নির্ধারিত দিন পরিবর্তন করার চেষ্টা করবেন না। এ কারণে নিয়োগদাতা আপনার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণ করতে পারেন। তারা মনে করতে পারেন আপনি এ চাকরির বিষয়ে আন্তরিক নন। যদি নির্ধারিত দিনে ইন্টারভিউ না দেওয়ার সত্যিই কোন কারণ থাকে তবে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে দিন নির্ধারণ করুন।

সততা অবলম্বন করুন-
সিভিতে উল্লেখিত কোন বিষয়ে বা প্রশ্নকারীর কোন প্রশ্নের উত্তরে মিথ্যা বলবেন না। সত্য কথা বলুন। জিজ্ঞাসিত কোন বিষয় আপনার জানা না থাকলে বলুন এ বিষয়ে আমার কোন অভিজ্ঞতা বা জ্ঞান নেই। তবে এটি শিখতে আমি আগ্রহী। আপনার সততা দেখে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী সন্তুষ্ট হয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। একটি বিষয় মনে রাখবেন সত্যর ফল সবসময়ই ভালো হয়।

শেষ কথা (The last word)

ইন্টারভিউতে এমন কিছু প্রশ্ন করা হয় যেগুলোর মাধ্যমে আপনার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। আপনি উত্তেজিত হয়ে যেতে পারেন। এই প্রশ্নগুলির মাধ্যমে তারা দেখতে চান আপনার মধ্যে কি ধরণের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। আপনি নিজেকে কিভাবে কন্ট্রোল করেন এ বিষয়গুলো তারা খেয়াল করেন। ইন্টারভিউ বোর্ডে কোন অবস্থাতেই উত্তেজিত হওয়া যাবে না। নিজেকে কন্ট্রোল করে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা-ভাবনা করে বুদ্ধিমত্তার সাথে উত্তর দিতে হবে। অর্থাৎ চাকরির ইন্টারভিউ এর প্রশ্ন ও উত্তর এমনভাবে দেওয়া উচিত যেন কোন অবস্থাতেই আপনার শারিরীক অঙ্গভঙ্গি এবং কথাবার্তার মধ্যে উগ্রতা বা বিরক্ত প্রকাশ না পায়। সরকারী-বেসরকারী চাকরির বিজ্ঞপ্তি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে ভিজিট করুন

Leave a Comment