আমাদের মস্তিষ্ক হলো শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটা আমাদের চিন্তা করে, শিখে, সমস্যা সমাধান করে এবং নতুন নতুন কিছু আবিষ্কার করতে সাহায্য করে। তাই মস্তিষ্কের ভালো যত্ন নেওয়া খুব জরুরি। কিন্তু কীভাবে আমরা আমাদের মস্তিষ্ককে সুস্থ এবং সক্রিয় রাখতে পারি? আসলে, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বা মস্তিষ্কের শক্তি বাড়ানোর জন্য কিছু সহজ কিন্তু কার্যকর উপায় আছে, যা আমরা দৈনন্দিন জীবনে অনুসরণ করতে পারি।
তুমি কি জানো? ভালো মস্তিষ্ক মানে ভালো স্মৃতি, দ্রুত শেখার ক্ষমতা, এবং ভালো মনোযোগ। যারা মস্তিষ্কের যত্ন নেয়, তারা স্কুলে, কাজের জায়গায় এবং জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও ভালো করে। তাই আজ আমরা জানব ১২টি কার্যকর টিপস যা তোমার মস্তিষ্ককে আরও শক্তিশালী করবে।
এই ১২টি ধাপ খুব সহজ, তোমার বয়স যাই হোক না কেন, তুমি এগুলো করতে পারো। প্রতিটি ধাপে আমি চেষ্টা করব সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দিতে, যেন ৭ বছরের বাচ্চার মতো তুমি পড়ে বুঝতে পারো।
তাহলে চলুন, শুরু করি মস্তিষ্কের শক্তি বাড়ানোর ১১টি দারুণ উপায় শিখতে!
১। নিয়মিত ভালো ঘুম নাও — মস্তিষ্কের বিশ্রাম ও শক্তি বাড়ানোর মন্ত্র
তুমি জানো, যখন আমরা ঘুমাই, তখন আমাদের মস্তিষ্ক বিশ্রাম নেয় আর নতুন শক্তি সঞ্চয় করে। ঘুম না হলে মস্তিষ্ক ঠিক মতো কাজ করতে পারে না, আমরা ক্লান্ত ও অসুস্থ বোধ করি, আর স্মরণ শক্তিও কমে যায়। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত ও ভালো ঘুম খুব জরুরি।
একজন ৭ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুর জন্য রাতের ঘুম হওয়া উচিত কমপক্ষে ৯ থেকে ১১ ঘণ্টা। ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্ক দিনের মধ্যে যা শিখেছে তা সাজিয়ে রাখে, অপ্রয়োজনীয় তথ্য মুছে দেয় এবং মস্তিষ্ককে পরিষ্কার করে। এটি ঠিক যেমন তোমার ফোনের মেমোরি ক্লিন করলে ফোন দ্রুত কাজ করে!
তুমি যদি রাতে ভাল ঘুমাও, তাহলে সকালে মন ফ্রেশ থাকবে, স্কুলে মনোযোগ দিতে সহজ হবে, আর সমস্যার সমাধান করতে পারবে দ্রুত। আবার যদি রাতে দেরি করে ঘুমাও বা কম ঘুমাও, তাহলে মস্তিষ্ক ধীরগতি হয়ে যাবে, মনে রাখতে কষ্ট হবে, আর তুমি গরম গরম রাগ করতেও পারো।
তাই ঘুমানোর আগে এই কয়েকটা কাজ করো:
- তোমার ঘরকে অন্ধকার ও শান্ত রাখো।
- ফোন, টিভি বা কম্পিউটার ঘুমানোর আগের ১ ঘণ্টা বন্ধ রাখো।
- সময় মতো বেডে যাওয়ার চেষ্টা করো।
তোমার মা-বাবার কথাও শুনো, তারা তোমার ভালোর জন্যই বলছে। মনে রাখো, ভালো ঘুম মস্তিষ্কের জন্য এক ধরনের সুপার পাওয়ার!
২। স্বাস্থ্যকর খাবার খাও — মস্তিষ্ককে শক্তিশালী করার খাবারের রাজা
তুমি জানো আমাদের শরীর ঠিকঠাক কাজ করার জন্য খাবার দরকার, আর মস্তিষ্কও একইভাবে ভাল কাজ করতে ভালো খাবার পেতে চায়। সুতরাং, স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মস্তিষ্কের জন্য সবচেয়ে উপকারী খাবারগুলো হলো যেমন: বাদাম, মাছ, ডিম, সবুজ শাকসবজি, ফলমূল আর দুধ। এগুলো তোমার মস্তিষ্ককে শক্তিশালী করে, স্মৃতি ভালো রাখে, আর তোমার শেখার ক্ষমতা বাড়ায়।
মাছের মধ্যে বিশেষ করে স্যালমন মাছে Omega-3 নামের একটি উপাদান থাকে, যা মস্তিষ্কের জন্য খুব উপকারী। বাদাম যেমন কাঠবাদাম বা আখরোট শরীর ও মস্তিষ্ককে শক্তি দেয়। সবুজ শাক-সবজির মধ্যে পছন্দ মতো পালং শাক, ব্রকলি বা লাল শাক খাওয়া ভালো। এগুলো মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল ভালো রাখে আর চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ায়।
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা, বেশি মিষ্টি ও ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ এ ধরনের খাবার মস্তিষ্ককে ধীর করে দিতে পারে। তার চেয়ে বেশি করে পানি খাও, কারণ পানি মস্তিষ্ককে সতেজ রাখে।
চল, এখন ভাবো, তুমি যদি সকালে ব্রেকফাস্টে ডিম আর বাদাম খাও, দুপুরে মাছ আর শাক-সবজি খাও, তাহলে তোমার মস্তিষ্ক কত শক্তিশালী হবে!
তাই মজার করে বলি, তোমার প্লেট যেন তোমার মস্তিষ্কের খাবারের দোকান হয়, যেখানে সব রকম স্বাস্থ্যকর খাবার থাকে।
৩। নিয়মিত ব্যায়াম করো — মস্তিষ্কের জন্য সুপার এক্সারসাইজ
তুমি কি জানো, শরীরের মতো মস্তিষ্ককেও ব্যায়াম করতে হয়? হ্যাঁ, ঠিক তোমার পায়ের পেশি যেমন শক্তিশালী হয় হাঁটা-দৌড়ানো করলে, তেমনি মস্তিষ্কও আরও ভালো কাজ করে যখন আমরা নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করি।
ব্যায়াম করলে আমাদের শরীর থেকে এমন একটি রাসায়নিক নিঃসৃত হয়, যাকে বলে ‘এন্ডরফিন’। এই এন্ডরফিন মস্তিষ্ককে খুশি করে, মন ভালো রাখে আর আমরা মনোযোগ দিতে পারি বেশি সময় ধরে। আবার ব্যায়াম আমাদের রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, ফলে মস্তিষ্কে বেশি অক্সিজেন যায়, যা মস্তিষ্কের শক্তি বাড়ায়।
তুমি খুব সহজেই খেলাধুলা বা হাঁটাহাঁটি করে ব্যায়াম করতে পারো। ফুটবল খেলা, সাইকেল চালানো, দৌড়ানো বা এমনকি ডান্স করাও মস্তিষ্কের জন্য দারুণ ব্যায়াম। শুধু তাই নয়, ব্যায়াম করলে তোমার শরীরও ফিট থাকবে, মন ভালো থাকবে আর তুমি আরও স্মার্ট হয়ে উঠবে।
তুমি যখন বাইরে গিয়ে খেলাধুলা করবে, তখন শুধু তোমার শরীর ভালো থাকবে না, তোমার মস্তিষ্কও অনেক বেশি শক্তিশালী হবে। আবার নিয়মিত ব্যায়াম করলে তুমি ক্লান্তিও কম অনুভব করবে, স্কুলে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে সহজ হবে।
তাই প্রতি দিন অন্তত আধা ঘণ্টা তোমার পছন্দের খেলাধুলা বা ব্যায়াম করো। মজা করো, খেলো, আর নিজের মস্তিষ্ককে সুপার পাওয়ার দাও!
৪। মস্তিষ্ককে চ্যালেঞ্জ দাও — নতুন কিছু শিখতে চেষ্টা করো
তুমি জানো, তোমার মস্তিষ্কেরও শারীরিক পেশির মতো চর্চা দরকার। নতুন নতুন কাজ শেখা মানে মস্তিষ্ককে চ্যালেঞ্জ দেয়া। এটা মস্তিষ্ককে শক্তিশালী করে এবং স্মরণ শক্তি বাড়ায়।
তুমি যদি প্রতিদিন নতুন কিছু শিখো, যেমন নতুন একটি শব্দ, নতুন একটি গান, বা নতুন একটা পাজল (puzzle) বা ধাঁধা, তাহলে তোমার মস্তিষ্ক আরও ভালো কাজ করবে। এটি তোমাকে চিন্তাভাবনা করতে শেখায়, আর তুমি আরও স্মার্ট হয়ে উঠবে।
চল ভাবো, তুমি যদি একদিন নতুন একটি গানের কথা শিখো আর গাও, অন্য দিন নতুন একটি ছবি আঁকো, আর পরের দিন নতুন একটি গল্প পড়ো, তাহলে তোমার মস্তিষ্ক সবসময় ব্যস্ত থাকবে। এটা ঠিক এমন, যেমন তোমার পছন্দের গেমের মতো প্রতিদিন নতুন স্তরে ওঠার চেষ্টা করা।
তাই স্কুলের বই পড়ার পাশাপাশি, মজার বই পড়ো, ধাঁধা (puzzles) সলভ করার চেষ্টা করো, নতুন গান শিখো বা নতুন খেলায় অংশগ্রহণ করো। এই ছোট ছোট কাজগুলো তোমার মস্তিষ্ককে শক্তিশালী করবে আর তোমাকে স্মার্ট করে তুলবে।
তোমার বন্ধুদের সঙ্গে নতুন নতুন বিষয় নিয়ে কথা বলাও তোমার মস্তিষ্কের জন্য ভালো। কারণ ভাবনা ভাগাভাগি করলে মস্তিষ্ক আরও সক্রিয় হয়।
৫। মস্তিষ্ককে পর্যাপ্ত পানি দাও — হাইড্রেটেড থাকাও খুব জরুরি
তুমি জানো, আমাদের শরীরের অনেক বড় অংশই পানি দিয়ে তৈরি। আর আমাদের মস্তিষ্কেরও প্রায় ৭৫% অংশ পানি দিয়ে গঠিত। তাই শরীর ও মস্তিষ্ক ঠিকমত কাজ করতে হলে পানি খাওয়া খুবই জরুরি।
যখন তুমি ঠিক মতো পানি খাও না, তখন তোমার মস্তিষ্ক ক্লান্ত বোধ করে, মনোযোগ কমে যায় এবং মনে রাখতে কষ্ট হয়। একবার তুমি হয়তো দেখেছো যখন গরমে অনেক সময় পানি না খেলে মাথা ভারী লাগে বা মন ঠান্ডা থাকে না। এটাই হলো পানি কম খাওয়ার প্রভাব।
প্রতিদিন অন্তত ৬ থেকে ৮ গ্লাস পানি খাওয়ার চেষ্টা করো। শুধু পানি নয়, ফলের রস বা দুধও কিছুটা সাহায্য করতে পারে, তবে মিষ্টি পানীয় বা সোডা কম খাওয়াই ভালো।
যখন তুমি স্কুলে যাও, খেলাধুলা করো বা ঘরের কাজ করো, তখন শরীর অনেক পানি খরচ করে। তাই তোমাকে বারবার পানি খেতে হবে যেন মস্তিষ্ক সতেজ থাকে।
পানি তোমার মস্তিষ্ককে ঠান্ডা রাখে, শক্তি দেয় আর ভালোভাবে চিন্তা করতে সাহায্য করে। ঠিক যেমন গাড়ির ইঞ্জিন ভালো কাজ করার জন্য তেলের দরকার হয়, তেমনি তোমার মস্তিষ্কের জন্য পানি দরকার।
তাই মনে রাখো, পানি খাওয়া মানে তোমার মস্তিষ্ককে ভালোবাসা!
৬। নিয়মিত মস্তিষ্কের ব্যায়াম করো — চিন্তা ও স্মৃতির খেলা খেলো
তুমি জানো, শরীরের মতো মস্তিষ্ককেও ব্যায়াম দরকার। কিন্তু এই ব্যায়াম কি দৌড়ানো বা লাফানো? না, মস্তিষ্কের ব্যায়াম মানে হলো নতুন কিছু শিখে, ধাঁধা সমাধান করে বা স্মৃতি ভালো রাখার জন্য মজা মজা কাজ করা।
যেমন পাজল খেলা, শত্রুঘ্ন পছন্দ করে থাকে স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য। আর ক্রসওয়ার্ড, সুডোকু খেলাও মস্তিষ্কের ব্যায়াম। এসব খেলায় মনোযোগ দিতে হয়, স্মৃতি কাজে লাগে, আর চিন্তার শক্তি বাড়ে।
তুমি প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট করে এই ধরণের ধাঁধা বা গেম খেললে তোমার মস্তিষ্ক অনেক বেশি শক্তিশালী হবে। এমনকি তোমার বন্ধু বা পরিবারের সঙ্গেও মিলেমিশে এই খেলা করলে আরো মজা পাবে।
আরো একটা উপায় হলো নতুন ভাষা শেখা। যেমন, তুমি যদি ইংরেজি বা অন্য কোনো ভাষার নতুন শব্দ শিখো, সেটা তোমার মস্তিষ্ককে চ্যালেঞ্জ দেয়।
মনে করো, মস্তিষ্ক তোমার বাড়ির মতো, যদি তুমি সেই বাড়ির ঘরগুলো নিয়মিত সাজাও আর পরিচ্ছন্ন রাখো, তবে বাড়িটা সুন্দর থাকবে। তাই মস্তিষ্কের ব্যায়াম তোমার স্মৃতি ও শেখার ক্ষমতা বাড়ায়।
৭। ভালো বন্ধু বানাও ও সামাজিক হও — মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ
তুমি জানো, বন্ধুদের সাথে সময় কাটানো কেবল মজার নয়, এটা তোমার মস্তিষ্কের জন্যও খুবই ভালো। যখন তুমি বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলো, খেলো বা নতুন কিছু শিখো, তখন তোমার মস্তিষ্ক অনেক কাজ করে।
সারাদিন একা থাকলে মন খারাপ হতে পারে, আর এটা মস্তিষ্কের জন্য ঠিক নয়। বন্ধুদের সঙ্গে হাসাহাসি, গল্প, ও খেলাধুলা তোমার মস্তিষ্ককে সতেজ করে, চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ায় এবং স্মরণশক্তিও ভালো রাখে।
যখন তুমি কারো সাথে নতুন কিছু আলোচনা করো বা সাহায্য করো, তখন তোমার মস্তিষ্কের অনেক অংশ সক্রিয় হয়। এটা তোমাকে বুদ্ধিমান করে তোলে।
তাই পরিবারের সদস্য এবং স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলো। আর যদি কারো সঙ্গে মনমেল না হয়, তবুও ভদ্রভাবে কথা বলো, কারণ এটা তোমার মন ভালো রাখতে সাহায্য করে।
সোশ্যাল হওয়া মানে মস্তিষ্কের এক ধরনের ব্যায়াম। তোমার মন ভালো থাকবে, তুমি সুখী থাকবে, আর মস্তিষ্ক আরও শক্তিশালী হবে।
তুমি কেমন বন্ধু পছন্দ করো? যে তোমার কথা শুনবে, তোমাকে সাহায্য করবে আর নতুন নতুন খেলা শেখাবে? সেরাই তো তোমার ভালো বন্ধু!
৮। মনোযোগ দিতে শিখো — মস্তিষ্কের ফোকাস বাড়ানোর সহজ উপায়
তুমি কি কখনো লক্ষ্য করেছো, যখন তোমার মনোযোগ ভাঙে তখন পড়াশোনা করা বা খেলা করা কঠিন হয়ে যায়? এটা অনেক সাধারণ, কিন্তু মনোযোগ ভালো রাখাটা খুবই জরুরি। মনোযোগ ভালো হলে মস্তিষ্ক সহজে নতুন কিছু শিখতে পারে এবং স্মৃতিও ভালো থাকে।
মনোযোগ বাড়ানোর জন্য কিছু সহজ উপায় আছে। যেমন:
- যখন পড়াশোনা করবে, চেষ্টা করো সবুজ বা শান্ত জায়গায় বসতে, যেখানে অনেক বেশি শব্দ বা গন্ডগোল না থাকে।
- পড়াশোনার সময় ফোন বা টিভি বন্ধ রাখো।
- ছোট ছোট বিরতি নিয়ে পড়াশোনা করো, যেমন ২৫ মিনিট পড়ো, তারপর ৫ মিনিট বিশ্রাম নাও।
এছাড়া ধ্যান (meditation) করাও খুব উপকারী। ধ্যান মানে হলো চোখ বন্ধ করে ধীরে ধীরে শ্বাস নেওয়া এবং মনের মধ্যে শান্তি রাখা। এটা মস্তিষ্ককে শান্ত করে এবং মনোযোগ বাড়ায়।
যখন তুমি মনোযোগ দিতে শিখবে, তখন তুমি সহজে জটিল বিষয়গুলো বুঝতে পারবে, স্কুলের পরীক্ষায় ভালো করতে পারবে, আর খেলাধুলায়ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
তাই আজ থেকে ছোট ছোট সময় ধরে মনোযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করো। তোমার মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে ফোকাস করতে শিখবে আর তুমি হবে অনেক বেশি স্মার্ট।
৯। স্ট্রেস কমাও — মস্তিষ্ককে শান্ত ও শক্তিশালী রাখো
তুমি কি জানো, যখন আমরা চিন্তা বেশি করি বা দুশ্চিন্তায় থাকি, তখন মস্তিষ্ক ঠিক মতো কাজ করে না? এটা একদম সত্যি। স্ট্রেস বা চাপ বেশি হলে আমরা ঠিকঠাক পড়াশোনা করতে পারি না, মনোযোগ হারিয়ে ফেলি, আর স্মৃতি দুর্বল হয়ে যায়।
তাই আমাদের উচিত স্ট্রেস কমানো। এটা করার জন্য কিছু সহজ উপায় আছে:
- প্রতিদিন একটু সময় কাটাও প্রকৃতির কাছে, যেমন বাগানে বা গাছের নিচে বসো।
- খেলাধুলা করো বা তোমার প্রিয় গান শুনো।
- বাবা-মা বা বন্ধুদের সাথে ভালো কথা বলো, তোমার মন খারাপ থাকলে কারো সাথে শেয়ার করো।
আর একদম গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ হলো, গভীর শ্বাস নেওয়া। যখন তুমি উদ্বিগ্ন বোধ করবে, তখন কয়েক বার গভীর শ্বাস নাও—এটা তোমার মস্তিষ্ককে শান্ত করে।
স্ট্রেস কমালে তোমার মস্তিষ্ক আরামে থাকে, তুমি ভালো চিন্তা করতে পারো, আর নতুন জিনিস শেখাও সহজ হয়।
তাই মনে রেখো, মস্তিষ্ককে শান্ত রাখা হলো তার শক্তি বাড়ানোর সবচেয়ে বড় উপায়।
১০। নিয়মিত বই পড়ো — মস্তিষ্কের জ্ঞান বাড়ানোর সেরা উপায়
তুমি কি ভালো গল্প পড়তে পছন্দ করো? বই পড়া শুধু মজা করার জন্য নয়, এটি তোমার মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারী। বই পড়ার মাধ্যমে তুমি নতুন নতুন জ্ঞান পাবে, তোমার শব্দভাণ্ডার বাড়বে, আর চিন্তার ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে।
বই পড়ার সময় তোমার মস্তিষ্ক গল্পের চরিত্র, পরিবেশ ও ঘটনা কল্পনা করে, যা স্মরণশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। আর নতুন শব্দ শিখলে তুমি সহজে অন্যদের সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলতে পারবে।
ছোটদের জন্য গল্পের বই, রূপকথার বই বা বিজ্ঞানভিত্তিক সহজ বই পড়া খুব ভালো। তুমি চাইলে পছন্দের বই থেকে প্রতি দিন একটি নতুন গল্প শিখতে পারো।
আর বই পড়ার সময় মনোযোগ দেওয়াও জরুরি। তাই যখন বই পড়বে, অন্য কাজ বন্ধ রেখে শুধু বইটাতেই মন দাও।
বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুললে তুমি স্কুলে ভালো করবে, নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়বে, আর মস্তিষ্ক থাকবে সতেজ।
তাই আজ থেকে ছোট ছোট সময় বই পড়া শুরু করো, তোমার মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে শক্তিশালী হবে।
১১। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নাও — মস্তিষ্ককে রিচার্জ করার সময় দাও
তুমি জানো, যখন আমরা খেলাধুলা করি বা পড়াশোনা করি, তখন শরীর ও মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তাই আমাদের উচিত মাঝেমধ্যে বিশ্রাম নেওয়া, যাতে মস্তিষ্ক ভালোভাবে কাজ করতে পারে।
বিশ্রাম মানে শুধু ঘুমানো নয়, ছোট ছোট বিরতি নেয়াও। যেমন পড়াশোনা করার মাঝে ৫-১০ মিনিটের বিরতি নিলে তোমার মস্তিষ্ক নতুন তথ্য শিখতে আরও প্রস্তুত হয়।
তুমি যখন বিশ্রাম নেবে, তখন মস্তিষ্ক পুরনো তথ্য সাজিয়ে রাখে আর নতুন শেখার জন্য প্রস্তুত হয়। আর বিশ্রামের সময় তোমার চোখ বন্ধ রাখা, কিছু মৃদু শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া, কিংবা শান্ত কিছু দেখা মস্তিষ্ককে শান্ত করে।
বিশ্রামের কারণে তুমি ক্লান্ত অনুভব করবে না, মন ভালো থাকবে, আর পড়াশোনাতেও মনোযোগ বাড়বে।
তাই কাজের মাঝে বিরতি নেয়া ও পর্যাপ্ত ঘুমানো তোমার মস্তিষ্কের সুস্থতার জন্য খুব জরুরি।
উপসংহার:
তোমার মস্তিষ্ক হলো তোমার সবচেয়ে বড় ধন। এই ধনকে ভালোভাবে যত্ন না নিলে সেটা দুর্বল হয়ে যেতে পারে। আজকে আমরা শিখেছি, কিভাবে সহজ ১২টি ধাপ মেনে চললে তোমার মস্তিষ্ক আরও শক্তিশালী, স্মরণশক্তি উন্নত ও মনোযোগ বাড়ানো সম্ভব।
ভালো ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম, নতুন কিছু শেখা, পর্যাপ্ত পানি খাওয়া, মস্তিষ্কের ব্যায়াম, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, মনোযোগ বাড়ানো, স্ট্রেস কমানো, বই পড়া, এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম — এই সব মিলিয়ে তোমার মস্তিষ্ককে সুস্থ ও শক্তিশালী রাখবে।
তুমি যদি আজ থেকে এই টিপসগুলো মেনে চলো, তাহলে স্কুলে ভালো করবে, বন্ধুদের সঙ্গে মজার সময় কাটাবে, আর বড় হয়ে জীবনে অনেক সাফল্য পাবে।
স্মরণ রেখো, মস্তিষ্কের যত্ন নেওয়া মানে নিজের ভবিষ্যতের যত্ন নেওয়া। তাই আজ থেকেই শুরু করো তোমার মস্তিষ্কের যত্ন।