বাংলাদেশে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য মার্কিন দূতাবাস ফি কত? সহজ ধাপে ধাপে গাইড ২০২৫

Spread the love

অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনার জন্য বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে। তার মধ্যে আমেরিকা অন্যতম। কিন্তু আমেরিকায় পড়তে গেলে শুধু ভর্তি হলেই হবে না, প্রয়োজন হয় একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুমতি – স্টুডেন্ট ভিসা। অনেকেই জানেন না, এই ভিসার জন্য মার্কিন দূতাবাসে ফি কত, কোথায় দিতে হয়, কিভাবে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হয়। বিশেষ করে যারা প্রথমবার আবেদন করছেন, তাদের মনে থাকে অনেক প্রশ্ন।

আজকের এই সহজ ও সুন্দর লেখায় আমরা ধাপে ধাপে শিখবো, বাংলাদেশ থেকে স্টুডেন্ট ভিসা ফি কত, কোথায় দিতে হয়, কীভাবে দিতে হয় এবং কী প্রস্তুতি নিতে হবে। আশা করি, এই গাইডটি পড়ার পর আপনার সব প্রশ্নের সহজ উত্তর পেয়ে যাবেন।

১। স্টুডেন্ট ভিসা কী এবং কেন প্রয়োজন?

আমরা যখন পড়াশোনার জন্য আমেরিকায় যেতে চাই, তখন আমাদের একটি বিশেষ অনুমতির দরকার হয়। এই অনুমতির নাম হলো স্টুডেন্ট ভিসা। এটি এমন এক ধরনের ভিসা, যা একজন শিক্ষার্থীকে আমেরিকার স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ দেয়। শুধু টিকিট কেটে আমেরিকায় গেলে হবে না, আমেরিকায় ঢোকার জন্য এই ভিসাটির প্রয়োজন হয়।

অনেকেই মনে করতে পারেন, স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়া খুব কঠিন। আসলে, যদি আমরা সঠিক নিয়ম মেনে আবেদন করি, তবে এটি পাওয়া বেশ সহজ। ভিসা মানে হচ্ছে- আপনি আমেরিকায় গিয়ে পড়াশোনা করার একটা অনুমতি পাচ্ছেন। এটি ছাড়া আপনি ক্লাসে অংশ নিতে পারবেন না।

স্টুডেন্ট ভিসা সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে:
১. F-1 ভিসা – ফুল টাইম পড়াশোনার জন্য।
২. M-1 ভিসা – টেকনিক্যাল বা ভোকেশনাল পড়াশোনার জন্য।

আমাদের বাংলাদেশ থেকে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী F-1 ভিসার জন্য আবেদন করে। কারণ তারা কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চায়। এই ভিসা ছাড়াও আবেদন প্রক্রিয়ায় আরও কিছু খরচ আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভিসা ফি। অনেকেই জানেন না, এই ফি কত, কোথায় দিতে হয়, আর কখন দিতে হয়। এই বিষয়গুলো পরবর্তী ধাপে বিস্তারিতভাবে জানবো।

২। মার্কিন স্টুডেন্ট ভিসার ফি কত এবং কোথায় দিতে হয়?

আমরা যখন আমেরিকার স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করি, তখন আমাদের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ফি দিতে হয়। এই ফি দুই ধরনের হয়। প্রথমটি হলো SEVIS ফি (Student and Exchange Visitor Information System Fee) এবং দ্বিতীয়টি হলো ভিসা আবেদন ফি (Visa Application Fee)

১. SEVIS ফি কত?

SEVIS ফি হচ্ছে এমন একটি ফি, যা আমেরিকার সরকার শিক্ষার্থীদের তথ্য সংরক্ষণের জন্য নেয়। এই ফি না দিলে আপনি ভিসা ইন্টারভিউ দিতে পারবেন না।

  • SEVIS ফি: ৩৫০ মার্কিন ডলার।
  • বাংলাদেশি টাকায় আনুমানিক: প্রায় ৪১,০০০ টাকা (মার্কিন ডলার রেট অনুযায়ী কিছুটা কম-বেশি হতে পারে।)

এই ফি অনলাইনে FMJfee.com ওয়েবসাইটে গিয়ে ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে দিতে হয়।

২. ভিসা আবেদন ফি কত?

এটি হচ্ছে সেই ফি, যা মার্কিন দূতাবাসে ভিসার আবেদন করার সময় দিতে হয়।

  • ভিসা আবেদন ফি (MRV Fee): ১৮৫ মার্কিন ডলার।
  • বাংলাদেশি টাকায় আনুমানিক: প্রায় ২১,৮০০ টাকা।

এই ফি বাংলাদেশে সোনালী ব্যাংকের নির্দিষ্ট শাখায় জমা দিতে হয়। আপনি টাকা জমা দেয়ার পর রসিদ পাবেন, যা ইন্টারভিউয়ের দিন নিয়ে যেতে হবে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

  • আপনি যদি ফি না দেন, তাহলে আপনার আবেদন গ্রহণ করা হবে না।
  • ফি জমা দেয়ার পর রিফান্ড (টাকা ফেরত) হয় না, এমনকি আপনি ভিসা না পেলেও।
  • SEVIS ফি এবং MRV ফি—দুটিই আলাদা এবং দুটোই জমা দিতে হবে।

এই ফিগুলোর বিষয়ে অনেক শিক্ষার্থী ভুল বোঝে। তাই আপনি যেন সহজে বুঝতে পারেন, আমি এখানে সাধারণ ভাষায় বোঝানোর চেষ্টা করেছি।
পরবর্তী ধাপে আমরা জানবো, এই ফি কিভাবে জমা দিব, প্রক্রিয়া কেমন, এবং ইন্টারভিউয়ের আগে কী করতে হবে।

৩ । মার্কিন স্টুডেন্ট ভিসার ফি জমা দেয়ার ধাপ-বাই-ধাপ প্রক্রিয়া

আমরা জেনে গেছি, মার্কিন স্টুডেন্ট ভিসার জন্য দুটি ফি দিতে হয়: SEVIS ফি এবং MRV ফি। এখন চলুন দেখি, কীভাবে এই ফিগুলো সহজে জমা দিতে পারি।

SEVIS ফি জমা দেয়ার ধাপ:

Step 1: প্রথমে আপনার কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে I-20 ফর্ম সংগ্রহ করুন।
Step 2: তারপর www.fmjfee.com ওয়েবসাইটে যান।
Step 3: ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার I-20 ফর্মে থাকা SEVIS ID নম্বর দিন এবং প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করুন।
Step 4: অনলাইনে পেমেন্ট করার জন্য ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড ব্যবহার করুন।
Step 5: পেমেন্ট করার পর রশিদ প্রিন্ট করে রাখুন। ইন্টারভিউয়ের দিন এটি নিয়ে যেতে হবে।

MRV ফি জমা দেয়ার ধাপ:

Step 1: www.ustraveldocs.com/bd ওয়েবসাইটে গিয়ে একটি প্রোফাইল তৈরি করুন।
Step 2: প্রোফাইল তৈরির সময় ভিসা ফি পেমেন্টের জন্য একটি ফি রসিদ নম্বর পাবেন।
Step 3: এই নম্বর নিয়ে সোনালী ব্যাংকের নির্দিষ্ট শাখায় গিয়ে টাকা জমা দিন।
Step 4: ব্যাংক থেকে আপনি জমা দেয়ার রশিদ পাবেন। এটি ইন্টারভিউয়ের দিন নিয়ে যেতে হবে।
Step 5: টাকা জমা দেয়ার পরে ওয়েবসাইটে ফিরে গিয়ে ইন্টারভিউয়ের জন্য তারিখ ঠিক করুন।

বিশেষ টিপস:

• SEVIS ফি ও MRV ফি দুইটিই আবেদন করার আগে জমা দিতে হবে।
• ফি জমা দেয়ার রশিদ হারানো যাবে না।
• ফি জমা দেয়ার সময় সব তথ্য ঠিকঠাক দিন, ভুল হলে ভিসা প্রক্রিয়া আটকে যেতে পারে।


এই ধাপগুলো খুবই সহজ। আপনি যদি ধাপে ধাপে এগিয়ে যান, তাহলে ঝামেলা হবে না। পরবর্তী ধাপে আমি বলবো, ফি জমা দেয়ার পর কী কী কাগজপত্র লাগবে এবং ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতি কেমন হবে।

৪। ফি জমা দেয়ার পর কী করবেন? ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রস্তুতি

আপনি যখন SEVIS ফি এবং MRV ফি সফলভাবে জমা দেন, তখন আপনার সামনে আসবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ – ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতি। চলুন দেখি, ফি জমা দেয়ার পর আপনাকে কী কী করতে হবে এবং ইন্টারভিউতে কীভাবে ভালো করতে পারবেন।

ফি জমা দেয়ার পর করণীয়:

ফি দেয়ার পর আপনাকে নিচের কাজগুলো করতে হবে:

১. DS-160 ফর্ম পূরণ করুন।

এটি অনলাইনে পূরণ করতে হয়। এখানে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, পড়াশোনার উদ্দেশ্য, এবং পাসপোর্টের তথ্য লিখতে হবে। DS-160 ফর্ম পূরণের পর একটি কনফার্মেশন পেজ পাবেন, যা ইন্টারভিউয়ের দিন নিয়ে যেতে হবে।

২. ইন্টারভিউ অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিন ঠিক করুন।

আপনি যখন MRV ফি জমা দেন, তখন ওয়েবসাইট থেকে ইন্টারভিউর তারিখ ঠিক করতে পারবেন। সময় ও দিন বেছে নিন।

৩. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করুন।

ইন্টারভিউয়ের দিন আপনাকে নিচের কাগজপত্র সঙ্গে নিতে হবে:

  • পাসপোর্ট (কমপক্ষে ৬ মাসের মেয়াদ থাকতে হবে)
  • DS-160 কনফার্মেশন পেজ
  • SEVIS ফি জমা দেয়ার রশিদ
  • MRV ফি জমা দেয়ার রশিদ
  • I-20 ফর্ম (কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া)
  • ভর্তি নিশ্চয়তা চিঠি (Admission Letter)
  • ব্যাংক স্টেটমেন্ট (টাকা থাকা প্রমাণ দেখাতে)
  • শিক্ষা সনদপত্র (SSC, HSC বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাগজ)
ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতি:

ইন্টারভিউয়ের সময় আপনাকে কয়েকটি প্রশ্ন করা হবে, যেমন:
• আপনি কেন আমেরিকায় পড়তে যাচ্ছেন?
• কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বেন?
• আপনি কীভাবে খরচ চালাবেন?


ভয়ের কিছু নেই। আপনি যদি সত্যি সত্যি পড়াশোনা করতে চান এবং মন থেকে প্রস্তুতি নেন, তাহলে সহজেই ইন্টারভিউ পাস করবেন।

সহজ কিছু টিপস:

·  ইংরেজিতে কথা বলার চেষ্টা করুন, তবে খুব চাপ নেয়ার দরকার নেই।

·  নিজের পরিকল্পনা পরিষ্কার করে বলুন।

·  আত্মবিশ্বাসী থাকুন।

৫। ভিসা পাওয়ার পর এবং না পাওয়ার পর করণীয়

স্টুডেন্ট ভিসা ইন্টারভিউ দেওয়ার পর আপনি দুই ধরনের ফল পেতে পারেন: হয় আপনি ভিসা পাবেন, অথবা ভিসা পাওয়া নাও যেতে পারে। দুই অবস্থার জন্যই আপনাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। চলুন, সহজভাবে বুঝে নেই – কী করতে হবে।

ভিসা পেলে করণীয়:

যদি আপনি স্টুডেন্ট ভিসা পান, তবে এটি আপনার জীবনের একটি বড় সাফল্য। এখন নিচের কাজগুলো করতে হবে:
• আপনার পাসপোর্টে স্টুডেন্ট ভিসার স্টিকার লাগানো থাকবে। এটি ভালোভাবে দেখে বুঝে নিন।
• বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করুন এবং ক্লাস শুরুর সময় নিশ্চিত করুন।
• বিমান টিকিট বুক করুন এবং ভ্রমণের পরিকল্পনা করুন।
• প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র ব্যাগে রাখুন: পাসপোর্ট, I-20, ভিসা ফি রসিদ, ভর্তি চিঠি, ব্যাংক স্টেটমেন্ট ইত্যাদি।
• আমেরিকায় গিয়ে ইমিগ্রেশনে এই কাগজপত্র দেখাতে হতে পারে, তাই সবসময় কাছে রাখবেন।

ভিসা না পেলে করণীয়:

যদি আপনার ভিসা না হয়, তাহলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। আবার চেষ্টা করার সুযোগ আছে।
• প্রথমে ভিসা না হওয়ার কারণ ভালো করে শুনে নিন।
• আপনার কোথায় ভুল হয়েছে বুঝে নিন – হয়ত কাগজপত্রে সমস্যা, ইংরেজি ভালো বোঝাতে পারেননি, অথবা ফাইন্যান্সিয়াল ডকুমেন্ট দুর্বল ছিল।
• আপনি চাইলে পরবর্তীতে আবার আবেদন করতে পারবেন।
• পরের বার ভিসা ইন্টারভিউয়ের জন্য আরও ভালো প্রস্তুতি নিন।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ:

  • আপনি সবসময় সত্য কথা বলবেন। ভুল তথ্য দিলে ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে।
  • ইন্টারভিউয়ের সময় আত্মবিশ্বাস হারাবেন না।
  • সব কাগজপত্র পরিষ্কারভাবে সাজিয়ে নিবেন, যেন খুঁজে পেতে অসুবিধা না হয়।

উপসংহার:

মার্কিন স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার পথ কিছুটা লম্বা মনে হতে পারে, তবে ধাপে ধাপে এগোলে এটি একেবারেই সহজ। সঠিক ফি জমা দেয়া, সময় মতো কাগজপত্র সংগ্রহ করা এবং আন্তরিকভাবে ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতি নিলে আপনি সহজেই আমেরিকায় পড়াশোনা করার সুযোগ পেতে পারেন।

মনে রাখবেন, প্রতিটি ধাপ গুরুত্বপূর্ণ। ভুল হলে সমস্যা হতে পারে। তাই ধৈর্য ধরে, নিয়ম মেনে, ভালোভাবে গাইড অনুসরণ করে এগিয়ে যান। আপনার স্বপ্নের পথ যেন সুন্দর হয়, সেই শুভকামনা রইলো। যদি মন থেকে চেষ্টা করেন, তাহলে নিশ্চয়ই আপনি সফল হবেন।

Leave a Comment

You cannot copy content of this page