শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় অনেক বেশি ঘুমের প্রয়োজনীয়তা রাখে। কিন্তু অনেক বাবা-মা লক্ষ্য করেন যে তাদের সন্তান পর্যাপ্ত ঘুম পাচ্ছে না। কম ঘুম শুধু শিশুর শরীরকে দুর্বল করে না, মানসিক বিকাশকেও প্রভাবিত করে। তাই বিশেষজ্ঞরা নানা সহজ কৌশল ও পরামর্শ দিয়ে শিশুর ঘুমের মান বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
১. ঘুমের নিয়মিত সময়সূচি বজায় রাখা
শিশুরা যদি প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যায় এবং একই সময়ে ওঠে, তবে তাদের শরীরের ঘড়ি স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে থাকে। এটি শিশুর গভীর ঘুম ও মানসিক স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিদিনের রুটিনে ঘুমের সময় নির্ধারণ করলে শিশুর মন ও শরীর প্রস্তুত থাকে ঘুমের জন্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুর ঘুমের রুটিনে স্থায়িত্ব মানসিক চাপ কমায়।
শিশুর বয়স অনুযায়ী ঘুমের সময়কাল নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। ছোট শিশুদের জন্য ১০–১২ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন।
রুটিনের মাধ্যমে শিশুর শরীর জানে কখন ঘুমাতে হবে, এতে ঘুমের গভীরতা বৃদ্ধি পায়।
নিয়মিত রুটিন শিশুদের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং তাদের মনকে শান্ত রাখে।
শিশুর ঘুমের মান উন্নত করতে রুটিনের সময়সূচি অবশ্যই পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের দ্বারা সমর্থিত হওয়া উচিত।
২. আরামদায়ক ঘুমের পরিবেশ তৈরি করা
শিশুর ঘুমের ঘর শান্ত ও আরামদায়ক হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আলো কমানো, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, এবং নরম বিছানা ব্যবহার শিশুকে শান্ত ঘুমে সাহায্য করে। অতিরিক্ত শব্দ ও অনিয়মিত আলো শিশুদের ঘুমের গুণমান কমিয়ে দেয়।
বিশেষজ্ঞরা ঘরের পরিবেশকে যতটা সম্ভব শান্ত রাখার পরামর্শ দেন। ঘুমের আগে হালকা আলো ও শান্ত পরিবেশ শিশুদের মস্তিষ্ককে ঘুমের জন্য প্রস্তুত করে। শিশুর ঘর পরিষ্কার ও সংগঠিত রাখা মানসিক শান্তি দেয় এবং ঘুমের মান বাড়ায়।
কিছু বাবা-মা শিশুর জন্য নরম কম্বল বা প্রিয় খেলনা ব্যবহার করে নিরাপত্তার অনুভূতি বাড়ান, যা ঘুমকে গভীর করে। শিশুর ঘুমের পরিবেশে সুগন্ধি বা হালকা ধোঁয়া ব্যবহার করলে মনকে আরামদায়ক অবস্থায় রাখা যায়।
৩. খাদ্যাভ্যাসে সঠিকতা
শিশুর ঘুমের মান বৃদ্ধি করতে খাবারের সময় ও ধরনের প্রতি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত বা ক্যাফেইনযুক্ত খাবার ঘুমে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা ঘুমের আগে হালকা খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। শিশুর পেটে ভারী খাবার থাকলে ঘুম আসে দেরিতে।
ফলমূল, দুধ বা হালকা স্ন্যাকস শিশুর ঘুমের জন্য উপযোগী। শিশুর নিয়মিত জলপান ঘুমের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে, তাই পর্যাপ্ত পানি দেওয়া জরুরি। রাতের খাবারের সময় অল্প পরিমাণে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট থাকা শিশুকে শান্ত ঘুমে সাহায্য করে। খাবারের মধ্যে অতিরিক্ত চিনি বা প্রসেসড ফুড কমানো শিশুর ঘুমকে স্থিতিশীল রাখে।
৪. মনঃসংযোগ ও মানসিক প্রস্তুতি
শিশুকে ঘুমের আগে হালকা গল্প বলা বা শান্ত সংগীত শোনানো মস্তিষ্ককে শিথিল করে। বিশেষজ্ঞরা শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতির গুরুত্ব দেন। ঘুমের আগে খেলাধুলা বা উত্তেজক কার্যকলাপ কমানো উচিত। শিশুর সাথে শান্ত ও বন্ধুত্বপূর্ণ কথোপকথন ঘুমের আগে মানসিক চাপ কমায়।
ধ্যান বা শ্বাসপ্রশ্বাসের অনুশীলন শিশুর মনকে স্থির করতে সাহায্য করে। শিশুর ঘুমের অভ্যাসে ধীরে ধীরে শান্ত রুটিন প্রয়োগ করলে ঘুমের মান উন্নত হয়। মনস্তাত্ত্বিক শান্তি ও নিরাপত্তার অনুভূতি শিশুর গভীর ঘুম নিশ্চিত করে।
৫. শারীরিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি
দিনে পর্যাপ্ত খেলা এবং শারীরিক কার্যকলাপ শিশুদের শারীরিক ক্লান্তি সৃষ্টি করে, যা গভীর ঘুমে সাহায্য করে। অফিসিয়াল রিপোর্ট অনুযায়ী, শারীরিক ক্রিয়াকলাপ কম থাকা শিশুর ঘুমে বিঘ্ন বেশি দেখা যায়।
শিশুকে বাইরের খেলার সুযোগ দেওয়া ঘুমের প্রক্রিয়াকে প্রাকৃতিকভাবে উন্নত করে।
শারীরিক কার্যকলাপের সঙ্গে মানসিক সতেজতা বৃদ্ধি পায়, যা রাতে ভালো ঘুমে সহায়ক। শিশুর বয়স অনুযায়ী হালকা ব্যায়াম বা খেলাধুলা ঘুমের জন্য উপযোগী। নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ শিশুর ঘুমের রুটিনকে স্থিতিশীল রাখে।
উপসংহার
শিশুর ঘুম কম হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা, কিন্তু সঠিক রুটিন, আরামদায়ক পরিবেশ, স্বাস্থ্যকর খাদ্য, মানসিক প্রস্তুতি, এবং পর্যাপ্ত শারীরিক কার্যকলাপের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাবা-মা যদি নিয়মিত এই কৌশলগুলো অনুসরণ করেন, শিশুর ঘুমের মান বৃদ্ধি পায় এবং সে শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকে।