প্রতি বছরই চীন সরকার বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা খরচে উচ্চশিক্ষার দার খুলে দেয়। ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষেও একই সুযোগ দিচ্ছে দেশটি। চীনের বিভিন্ন সরকারি ও প্রাদেশিক স্কলারশিপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা টিউশন ফি, আবাসন, চিকিৎসা এবং মাসিক ভাতা সহ নানা সুবিধা পেয়ে থাকেন। চলুন চীনের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ স্কলারশিপ সম্পর্কে সহজভাবে জেনে নেই।
১. চীনের শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের উজ্জ্বল সুযোগ
চীন প্রতি বছর আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপের সুযোগ তৈরি করে। ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষেও এই ধারা অব্যাহত থাকবে। চীনের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য টিউশন ফি, আবাসন, চিকিৎসা ও মাসিক ভাতা প্রদানসহ বিনা খরচে উচ্চশিক্ষার সুযোগ দিচ্ছে। এটি বাংলাদেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য সত্যিই বড় একটি সুযোগ, কারণ এতে ব্যয়বহুল বিদেশে পড়াশোনার স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব।
২. চীনে পড়াশোনার সুবিধাসমূহ
চীনের স্কলারশিপের অন্যতম আকর্ষণ হলো, এখানে শুধু টিউশন ফি মওকুফই নয়, বরং সম্পূর্ণ আবাসন সুবিধা, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা এবং প্রতি মাসে জীবনযাত্রার জন্য নির্দিষ্ট ভাতা প্রদান করা হয়। ফলে শিক্ষার্থীরা অর্থনৈতিক চাপ ছাড়া পুরো মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে পারেন। বিশেষ করে যারা মধ্যবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের, তাদের জন্য এই সুবিধাগুলো অনেক বড় সহায়তা।
৩. সিএসসি স্কলারশিপ (CSC Scholarship): চীনের সর্ববৃহৎ স্কলারশিপ প্রোগ্রাম
Chinese Government Scholarship বা CSC Scholarship হলো চীনের সবচেয়ে বড় স্কলারশিপ প্রোগ্রাম। এটির আওতায় চীনের প্রায় ২৮০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা স্নাতক, মাস্টার্স ও পিএইচডি পর্যায়ে বিনা খরচে পড়ার সুযোগ পান। শিক্ষার্থীরা মাসে সর্বোচ্চ ৩,৫০০ ইউয়ান পর্যন্ত ভাতা পেতে পারেন। আবেদন করতে হয় অনলাইনে CSC ওয়েবসাইটে এবং সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে আলাদাভাবে।
৪. তিয়াঞ্জিন গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ (Tianjin Government Scholarship) : নান্কাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুযোগ
তিয়াঞ্জিন গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ প্রধানত নান্কাই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযোজ্য। এই স্কলারশিপে মাসিক সর্বোচ্চ ২,০০০ ইউয়ান আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। আবেদন করার জন্য নির্ধারিত ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অনুমোদন পাওয়া গেলে স্কলারশিপ নিশ্চিত হয়। এটি একটি ভালো সুযোগ কারণ সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করে সুবিধা পাওয়া যায়।
৫. সাংহাই গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ (Shanghai Government Scholarship): সম্পূর্ণ ও আংশিক সুবিধা
সাংহাই গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়: ফুল ফান্ডিং (টাইপ A), আংশিক ফান্ডিং (টাইপ B), এবং দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের জন্য প্রযোজ্য নয় (টাইপ C)। এখানে মাসিক ভাতা, চিকিৎসা, আবাসন এবং টিউশন ফি মওকুফের সুবিধা রয়েছে। যারা উচ্চশিক্ষা নিতে চান, তাদের জন্য টাইপ A অত্যন্ত উপকারী।
৬. বেইজিং গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ (Beijing Government Scholarship) : উচ্চ পরিমাণ আর্থিক সহায়তা
বেইজিং গভর্নমেন্ট স্কলারশিপের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বছরে সর্বোচ্চ ৪০,০০০ ইউয়ান পর্যন্ত পেতে পারেন। এটি চীনের অন্যতম পুরাতন প্রাদেশিক স্কলারশিপ প্রোগ্রাম। আবেদন প্রক্রিয়া সরাসরি বেইজিং সরকারের ওয়েবসাইটে করা যায়। যারা বেইজিং শহরের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ার সুযোগ খুঁজছেন, তাদের জন্য এটি বড় সুযোগ।
৭. হুবেই গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ (Hubei Government Scholarship): বিভিন্ন স্তরে আর্থিক সহায়তা
হুবেই গভর্নমেন্ট স্কলারশিপের আওতায় স্নাতক, মাস্টার্স ও পিএইচডি পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন আর্থিক সহায়তা পান। স্নাতকে বছরে ১০,০০০ ইউয়ান, মাস্টার্সে ১৫,০০০ ইউয়ান এবং পিএইচডিতে ২০,০০০ ইউয়ান প্রদান করা হয়। এটি হুবেই প্রদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য অত্যন্ত সহায়ক।
৮. CIS স্কলারশিপ: ভাষা ও গবেষণার বিশেষ সুযোগ
Confucius Institute Scholarship (CIS) হলো যারা চীনা ভাষা ও সংস্কৃতি শিখতে চান বা গবেষণা করতে চান, তাদের জন্য আদর্শ। এখানে চীনের ১৫০টিরও বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ আছে। মাসিক ভাতা, চিকিৎসা, আবাসন এবং টিউশন ফি বিনা খরচে পাওয়া যায়। মে ও নভেম্বর মাসে আবেদন গ্রহণ করা হয়, যা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য সময়মত প্রস্তুতির সুযোগ দেয়।
৯. ইউনান প্রভিন্সিয়াল স্কলারশিপ (Yunnan Provincial Government Scholarship) : দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার
ইউনান প্রদেশের এই স্কলারশিপ বিশেষ করে বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের আওতায় দক্ষিণ এশীয় শিক্ষার্থীদের জন্য তৈরি। ফুল ফান্ডিং এর আওতায় রয়েছে টিউশন ফি মওকুফ, ফ্রি আবাসন, মাসিক ভাতা এবং চিকিৎসা সুবিধা। এটি ইউনান নরমাল ইউনিভার্সিটি সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পাওয়া যায়।
১০. জিনজিয়াং উইঘুর স্কলারশিপ (Xinjiang Uygur Autonomous Region Government Scholarship): স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের শিক্ষা সুবিধা
জিনজিয়াং উইঘুর অটোনমাস রিজিওন স্কলারশিপের মাধ্যমে স্নাতক, মাস্টার্স, পিএইচডি এবং চীনা ভাষা কোর্স পড়া যায়। সম্পূর্ণ অর্থায়ন পাওয়া যায়, যার মধ্যে রয়েছে জীবনযাত্রার ভাতা, আবাসন, চিকিৎসা এবং টিউশন ফি। আবেদন করার জন্য নির্দিষ্ট স্কলারশিপ ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ফরম পূরণ করতে হয়।
১১. নানজিং গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ (Nanjing Government Scholarship): আংশিক ফান্ডিং সহায়তা
নানজিং গভর্নমেন্ট স্কলারশিপ শুধু নানজিং ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির জন্য প্রযোজ্য। এখানে স্নাতক পর্যায়ে সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে প্রতি বছর সর্বমোট ১৫,০০০ ইউয়ান সহায়তা পাওয়া যায়। মাস্টার্স পর্যায়ে মোট সহায়তা ২০,০০০ ইউয়ান পর্যন্ত। তবে অন্য কোনো স্কলারশিপ একসাথে গ্রহণ করা যায় না।
১২. ইয়াংঝৌ ইউনিভার্সিটি স্কলারশিপ (Yangzhou University Scholarship) : সম্পূর্ণ ফান্ডিং সুবিধা
ইয়াংঝৌ ইউনিভার্সিটি সরাসরি তাদের বৈশ্বিক শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ দেয়। এখানে স্নাতক, মাস্টার্স ও পিএইচডি পর্যায়ে টিউশন ফি এবং আবাসন ফ্রি। মাস্টার্স পর্যায়ে মাসে ১,৫০০ ইউয়ান এবং পিএইচডিতে মাসে ২,৫০০ ইউয়ান ভাতা পাওয়া যায়। যারা কম খরচে ভালো মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান, তাদের জন্য এটি চমৎকার একটি সুযোগ।
উপরোক্ত স্কলারশিপগুলো বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের পড়াশোনার এক দুর্দান্ত সুযোগ। সময়মতো আবেদন, সঠিক তথ্য প্রদান এবং ভালো প্রস্তুতির মাধ্যমে চীনের এই ফুল ফ্রি স্কলারশিপ পাওয়া অনেকটাই সহজ হতে পারে।