ডিহাইড্রেশন বা শরীরে পানির অভাব একটি সাধারণ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা। যখন আমাদের দেহ পর্যাপ্ত পানি পায় না, তখন বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে, যেমন মাথাব্যথা, ক্লান্তি, ত্বকের শুষ্কতা এবং কোষ্ঠকাঠিন্য।
গরম আবহাওয়া, অতিরিক্ত ব্যায়াম, বা রোগজনিত কারণে দেহ থেকে বেশি পানি নষ্ট হলে ডিহাইড্রেশন আরও গুরুতর হয়ে যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে সচেতন হওয়া এবং পানি ও ইলেকট্রোলাইটের সঠিক পরিমাণ বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই আর্টিকেলে আমরা জানব ডিহাইড্রেশন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৭টি কার্যকর উপায়, যা প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় অনুসরণ করলে দেহ সুস্থ ও সজীব রাখা সম্ভব।
১। পর্যাপ্ত পানি পান করা
শরীরকে হাইড্রেটেড রাখার সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকর উপায় হলো পর্যাপ্ত পানি পান করা। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক প্রায় ৮–১০ গ্লাস পানি গ্রহণ করা উচিত, যদিও জল প্রয়োজন ব্যক্তির শরীরের ওজন, বয়স, আবহাওয়া এবং শারীরিক কার্যক্রমের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে। পানি শুধু শরীরের কোষকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে না, এটি রক্ত চলাচল, হজম প্রক্রিয়া এবং ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
পানি পান করার সময় ছোট ছোট খাওয়ার মতো নিয়মিত পান করা উচিত। হঠাৎ অনেক পানি একবারে পানে কিছুটা হজমের সমস্যা হতে পারে এবং দেহ সহজে তা ব্যবহার করতে পারে না। পানি ছাড়াও দুধ, ফলের রস বা হালকা স্যুপের মতো তরল খাবার শরীরে হাইড্রেশন বজায় রাখতে সহায়ক। বিশেষ করে গরম বা আর্দ্র পরিবেশে বা শারীরিক পরিশ্রমের সময় পানির পরিমাণ বাড়ানো জরুরি। এর মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ক্লান্তি কম হয়।
সুতরাং, পর্যাপ্ত পানি পান করা শুধু ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে না, বরং শরীরকে সতেজ, ফোকাসড এবং সুস্থ রাখে। দিনে অন্তত ২–৩ লিটার পানি নিয়মিতভাবে পান করা এক একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য অভ্যাস হিসেবে বিবেচিত হয়।
২। ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় গ্রহণ করা
শরীরে শুধু পানি পর্যাপ্ত নয়, বরং ইলেকট্রোলাইটের সমতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইলেকট্রোলাইট হলো খনিজ পদার্থ যেমন সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম, যা দেহের জলীয় ভারসাম্য, পেশী সংকোচন এবং নার্ভ ফাংশন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। প্রচণ্ড ঘাম, ব্যথা বা ডায়রিয়ার কারণে দেহ থেকে এই খনিজ পদার্থের অপচয় ঘটে, যা ডিহাইড্রেশনকে আরও গুরুতর করতে পারে।
সাধারণত স্পোর্টস ড্রিংক, নারকেল পানি বা বাড়িতে তৈরি লবণ ও চিনির দ্রবণ শরীরে ইলেকট্রোলাইটের মাত্রা বজায় রাখতে কার্যকর। নারকেল পানি প্রাকৃতিকভাবে ইলেকট্রোলাইটে সমৃদ্ধ, তাই এটি শরীরকে দ্রুত হাইড্রেট করতে সহায়ক। এছাড়াও, গরমে বাইরে কাজ বা ব্যায়ামের সময় নিয়মিত ছোট ছোট পরিমাণে এই ধরনের পানীয় গ্রহণ করলে শরীরের শক্তি ও সজীবতা বজায় থাকে।
তবে মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত চিনি বা কৃত্রিম উপাদান যুক্ত পানীয় বেশি খাওয়া উচিত নয়। প্রাকৃতিক বা হালকা লবণ-চিনি সমন্বিত পানীয় ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদে ভালো প্রভাব ফেলে। এটি শুধুমাত্র পানি নয়, দেহের অভ্যন্তরীণ সিস্টেমকেও সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
৩। ভারসাম্যপূর্ণ খাদ্য গ্রহণ করা
শরীরকে হাইড্রেটেড রাখার জন্য শুধুমাত্র পানি বা ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় যথেষ্ট নয়; খাদ্য থেকেও যথেষ্ট তরল এবং পুষ্টি গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ। ফল ও সবজি যেমন তরমুজ, কমলা, শসা, কিউলি বা স্ট্রবেরি প্রাকৃতিকভাবে পানি এবং ভিটামিন-খনিজে সমৃদ্ধ, যা শরীরকে সঠিকভাবে হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এই ধরনের ফলমূল ও সবজি রাখলে দেহের জলীয় ভারসাম্য বজায় থাকে এবং ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ হয়।
কেবল পানি গ্রহণের উপর নির্ভর না করে, পানিতে সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া শরীরের হাইড্রেশনকে আরও কার্যকর করে। এছাড়াও, স্বাস্থ্যকর প্রোটিন এবং শর্করা সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম, বাদাম, দানা এবং দই শরীরে শক্তি যোগায় এবং দীর্ঘ সময় ধরে সতেজ রাখে। অতিরিক্ত লবণ বা প্রসেসড খাবার কম খাওয়াই ভালো, কারণ এগুলো শরীর থেকে পানি শোষণ কমাতে পারে এবং ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়।
অতএব, ভারসাম্যপূর্ণ এবং পানি সমৃদ্ধ খাদ্য নিয়মিতভাবে গ্রহণ করলে শরীর হাইড্রেটেড থাকে, কোষগুলি ঠিকভাবে কাজ করে এবং স্বাভাবিক শারীরিক কার্যক্রম বজায় থাকে। এটি ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধের একটি প্রাকৃতিক ও নিরাপদ উপায়।
৪। অতিরিক্ত ঘাম হলে দ্রুত হাইড্রেশন পুনরুদ্ধার করা
শারীরিক পরিশ্রম, গরমে থাকা বা ব্যায়ামের সময় দেহ থেকে প্রচুর ঘামের মাধ্যমে পানি ও ইলেকট্রোলাইট নষ্ট হয়। যদি এই ক্ষতিপূরণ না করা হয়, তবে ডিহাইড্রেশন দ্রুত গভীর পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। তাই শারীরিক কার্যক্রমের পর বা ঘামের পরিমাণ বেশি হলে দ্রুত পানি এবং ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় গ্রহণ করা জরুরি।
সাধারণ নিয়ম হিসেবে, ব্যায়ামের প্রতিটি ২০–৩০ মিনিটে ছোট ছোট পরিমাণে পানি পান করা উচিত। একবারে বেশি পানি খাওয়া হজমের সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং দেহ সহজে তা ব্যবহার করতে পারে না। যদি দীর্ঘ সময় ব্যায়াম বা গরমে কাজ করতে হয়, তবে স্পোর্টস ড্রিংক বা নারকেল পানি মতো ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় সাহায্য করে শরীরের ক্ষতিপূরণ দ্রুত পূরণ করতে।
এই পদ্ধতি শুধু ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করে না, বরং ক্লান্তি কমায় এবং শরীরকে সতেজ রাখে। নিয়মিত হাইড্রেশন বজায় রাখলে পেশী সংকোচন ঠিক থাকে, মনোযোগ বাড়ে এবং শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। তাই ঘাম বেশি হলে তা অবহেলা না করে দ্রুত হাইড্রেশন পুনরুদ্ধার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৫। ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল সীমিত করা
ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় শরীরের পানির স্তর কমাতে পারে। চা, কফি বা সোডায় থাকা ক্যাফেইন একটি মৃদু ডিউরেটিক প্রভাব ফেলে, অর্থাৎ এটি শরীর থেকে পানি বের করে দেয়। এছাড়াও, অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়ও শরীরের হাইড্রেশন হ্রাস করে এবং ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করতে এই ধরনের পানীয় সীমিত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত।
যদি আপনি দীর্ঘ সময় গরমে থাকেন বা শারীরিক পরিশ্রম করেন, তবে ক্যাফেইন বা অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়ের পরিবর্তে পানি, নারকেল পানি বা হালকা ফলের জুস গ্রহণ করা উত্তম। এছাড়াও, ক্যাফেইন গ্রহণ করতে হলে সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি খাওয়াই উচিত। এটি শরীরকে সতেজ রাখে এবং ডিহাইড্রেশনের প্রভাব কমায়।
সুতরাং, ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধের জন্য পানীয়ের ধরন বিবেচনা করা জরুরি। নিয়মিত পানি বা ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় গ্রহণ করলে শরীরের জলীয় ভারসাম্য বজায় থাকে, ক্লান্তি কমে এবং দৈনন্দিন কাজের জন্য শক্তি বজায় থাকে। ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল সীমিত করা এই প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর করে।
৬। তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা অনুযায়ী নিজেকে মানিয়ে নেওয়া
গরম এবং আর্দ্র পরিবেশে শরীর থেকে পানি দ্রুত বাষ্পীভূত হয়, যা ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ, গরমে বাইরে কাজ করলে হালকা এবং হাওয়া চলাচলের উপযোগী পোশাক পরা উচিত। শারীরিক পরিশ্রম কমানো বা কাজের সময়ে বিরতি নেয়া শরীরকে অতিরিক্ত পানি হারানো থেকে রক্ষা করে।
যদি সম্ভব হয়, গরম সময়ে ছায়ায় থাকা এবং পর্যাপ্ত পানি নিয়মিতভাবে পান করা উচিত। এছাড়াও, আর্দ্র পরিবেশে ঘরে বা কাজে ফ্যান বা এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। শারীরিক সক্রিয়তার সময় নিজেকে পর্যবেক্ষণ করা এবং ক্লান্তি, মাথাব্যথা বা অল্প ঘামের ক্ষেত্রে অবিলম্বে হাইড্রেশন পুনরুদ্ধার করা উচিত।
এই অভ্যাসগুলি নিয়মিত অনুসরণ করলে শরীরের জলীয় ভারসাম্য বজায় থাকে এবং ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ হয়। তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া শরীরকে দীর্ঘ সময় সুস্থ, সতেজ এবং কার্যকর রাখে।
৭। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও সতর্ক থাকা
ডিহাইড্রেশন প্রাথমিক পর্যায়ে সহজে লক্ষ্য করা যায় না। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং নিজের শরীরের সংকেতগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মাথা ঘোরা, মুখ শুষ্ক হওয়া, ক্লান্তি বা কম প্রস্রাব হওয়া ইত্যাদি প্রাথমিক লক্ষণগুলো। এই সংকেতগুলোর প্রতি সময়মতো মনোযোগ দিলে ডিহাইড্রেশন গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছানোর আগে প্রতিকার করা সম্ভব।
শিশু, বৃদ্ধ এবং দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ জরুরি। তাদের শরীর সাধারণ প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় দ্রুত পানি হারায়, তাই বেশি সতর্ক থাকা প্রয়োজন। যদি প্রয়োজন হয়, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী হাইড্রেশন সমাধান গ্রহণ করা উচিত। এছাড়াও, দৈনন্দিন জীবনে নিজেকে পর্যবেক্ষণ এবং যথাসময়ে পানি বা ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে সহায়ক।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সতর্ক মনোভাব ডিহাইড্রেশনকে দ্রুত শনাক্ত করতে সাহায্য করে। এটি শরীরকে দীর্ঘ সময় সুস্থ, সতেজ এবং কার্যকর রাখে, যা দৈনন্দিন জীবনযাপনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার
ডিহাইড্রেশন থেকে মুক্তি পাওয়া সহজ যদি আমরা সচেতন ও নিয়মিত হাইড্রেশন অভ্যাস অনুসরণ করি। পর্যাপ্ত পানি পান, ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় গ্রহণ, পানি সমৃদ্ধ খাদ্য খাওয়া, ঘামের পর দ্রুত হাইড্রেশন, ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল সীমিত করা, পরিবেশ অনুযায়ী মানিয়ে নেওয়া এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা—এই সাতটি উপায় একত্রে আমাদের শরীরকে সতেজ ও সুস্থ রাখে।
প্রতিদিনের জীবনে এই অভ্যাসগুলো মেনে চললে ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করা যায় এবং শরীরের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম নিয়মিত থাকে। সতর্কতা ও সচেতনতা মিলে আমাদের দেহকে শক্তি ও সজীব রাখার মূল চাবিকাঠি।
ডিহাইড্রেশন সম্পর্কে 10 টি সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর।
প্রশ্ন ১। ডিহাইড্রেশন কি?
ডিহাইড্রেশন হলো শরীরের পানি ও ইলেকট্রোলাইটের অভাবজনিত অবস্থা। যখন শরীর পর্যাপ্ত পানি পান করতে পারে না বা অতিরিক্ত ঘাম বা প্রস্রাবের মাধ্যমে পানি হারায়, তখন কোষ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। এটি ছোট সমস্যার শুরু থেকে গুরুতর স্বাস্থ্য জটিলতা পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে।
ডিহাইড্রেশন বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন গরমে থাকা, ব্যায়াম, জ্বর, ডায়রিয়া বা দীর্ঘ সময় পানি না খাওয়া। প্রাথমিক লক্ষণগুলো হলো মাথা ঘোরা, ক্লান্তি, ত্বক শুষ্ক হওয়া এবং প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া। সময়মতো পানি ও ইলেকট্রোলাইট পূরণ করলে ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করা যায়।
প্রশ্ন ২। ডিহাইড্রেশনের প্রধান লক্ষণগুলো কী কী?
ডিহাইড্রেশনের প্রধান লক্ষণগুলোতে রয়েছে বেশি তৃষ্ণা, মুখ বা ঠোঁট শুষ্ক হয়ে যাওয়া, এবং কম প্রস্রাব বা গাঢ় বর্ণের প্রস্রাব। এছাড়াও মাথা ঘোরা, মাথাব্যথা, ক্লান্তি এবং চোখের নিচে অন্ধকার দাগ দেখা দিতে পারে। ছোট শিশুরা বা বৃদ্ধরা প্রায়ই এই লক্ষণগুলো প্রকাশ করতে পারে না, তাই তাদের সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।
শরীরে জলীয় ভারসাম্য না থাকলে কোষ ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। এর ফলে পেশীতে দুর্বলতা, মনোযোগের কমে যাওয়া এবং ত্বকের নমনীয়তা হ্রাস পাওয়া যায়। প্রাথমিক পর্যায়ে এই লক্ষণগুলো লক্ষ্য করলে দ্রুত পানি ও ইলেকট্রোলাইট গ্রহণ করলে সমস্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব।
প্রশ্ন ৩। ডিহাইড্রেশন কাদের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ?
শিশু, বৃদ্ধ, গর্ভবতী মহিলা এবং দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থ ব্যক্তিরা ডিহাইড্রেশনের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। শিশুদের দেহে পানির পরিমাণ কম এবং তাদের ঘাম বা প্রস্রাবের মাধ্যমে দ্রুত পানি হারায়। বৃদ্ধদের পায়েসনস বা দেহের পানির সঞ্চয় কম থাকায় ঝুঁকি বেশি থাকে।
তাছাড়া, গরম বা আর্দ্র পরিবেশে কাজ করা বা ব্যায়ামের সময় অতিরিক্ত ঘাম হওয়া ডিহাইড্রেশনকে আরও গুরুতর করতে পারে। এই ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য নিয়মিত পানি ও ইলেকট্রোলাইট গ্রহণ, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং শরীরের সংকেত পর্যবেক্ষণ জরুরি।
প্রশ্ন ৪। ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধের জন্য কী করা উচিত?
ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পান করা। দিনে অন্তত ৮–১০ গ্লাস পানি খাওয়া উচিত, তবে ব্যক্তির শরীরের ওজন, বয়স, আবহাওয়া এবং শারীরিক কার্যক্রম অনুযায়ী পানি গ্রহণের পরিমাণ বাড়াতে হতে পারে।
শরীরকে হাইড্রেটেড রাখার জন্য ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় যেমন নারকেল পানি, স্পোর্টস ড্রিংক, অথবা হালকা লবণ-চিনি সমৃদ্ধ জল গ্রহণ করাও উপকারী। এছাড়া, পানি সমৃদ্ধ ফল ও সবজি খাওয়া এবং অতিরিক্ত ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল এড়ানো ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে সহায়ক।
প্রশ্ন ৫। গরম বা ব্যায়ামের সময় ডিহাইড্রেশন কিভাবে প্রতিরোধ করবেন?
গরম আবহাওয়া বা শারীরিক পরিশ্রমের সময় দেহ থেকে প্রচুর পানি এবং ইলেকট্রোলাইট নষ্ট হয়। তাই নিয়মিত ছোট ছোট পরিমাণে পানি পান করা গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি ২০–৩০ মিনিটে কিছু পানি বা ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় গ্রহণ করলে দেহ সতেজ থাকে এবং ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ হয়।
এছাড়াও, হালকা পোশাক পরা, ছায়ায় থাকা, পর্যাপ্ত বিরতি নেওয়া এবং শরীরের সংকেত পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। যদি মাথা ঘোরা, ক্লান্তি বা অতিরিক্ত ঘাম লক্ষ্য করা যায়, অবিলম্বে পানি গ্রহণ করা উচিত। এই অভ্যাসগুলি ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে কার্যকর।
প্রশ্ন ৬। ডিহাইড্রেশনের কারণগুলো কী কী?
ডিহাইড্রেশন মূলত শরীর থেকে পানি এবং ইলেকট্রোলাইটের অতিরিক্ত ক্ষতি বা অপর্যাপ্ত গ্রহণের কারণে হয়। সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, ডায়রিয়া, বেশি ঘাম, দীর্ঘ সময় পানি না খাওয়া এবং অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম। গরম ও আর্দ্র পরিবেশেও পানি ক্ষতি দ্রুত ঘটে।
কিছু ওষুধ যেমন ডিউরেটিক বা ল্যাক্সেটিভও ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এছাড়াও, বৃদ্ধ ও শিশুদের দেহে পানি সংরক্ষণ ক্ষমতা কম থাকায় তারা সহজে ডিহাইড্রেশনের শিকার হতে পারে। তাই কারণ অনুযায়ী সতর্কতা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন ৭। ডিহাইড্রেশন দীর্ঘমেয়াদে কী প্রভাব ফেলতে পারে?
দীর্ঘমেয়াদে ডিহাইড্রেশন দেহের বিভিন্ন অঙ্গ এবং কোষের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে। নিয়মিত পানি কম খাওয়া বা ঘামের মাধ্যমে অতিরিক্ত পানি হারানো হলে কিডনি, লিভার এবং হার্টের ওপর চাপ পড়ে। এতে কিডনিতে পাথর, ব্লাড প্রেশার বৃদ্ধি এবং হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এছাড়াও, দীর্ঘমেয়াদী ডিহাইড্রেশন ত্বক শুষ্ক হওয়া, পেশী দুর্বলতা, মনোযোগ কমে যাওয়া এবং ক্লান্তি বৃদ্ধির মতো সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই নিয়মিত হাইড্রেশন বজায় রাখা স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।
প্রশ্ন ৮। শিশুদের ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধের জন্য কী করা উচিত?
শিশুদের দেহ প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় দ্রুত পানি হারায়, তাই তাদের হাইড্রেশন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। গরমে বা খেলাধুলার সময় নিয়মিত ছোট ছোট পরিমাণে পানি বা ইলেকট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় দেওয়া উচিত। শিশুদের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ রাখা দরকার, যেন তারা ক্লান্তি বা মাথা ঘোরার মতো লক্ষণ দেখালে দ্রুত হাইড্রেশন পুনরুদ্ধার করা যায়।
পানি সমৃদ্ধ ফলমূল যেমন তরমুজ, কমলা বা স্ট্রবেরি খাওয়ানোও কার্যকর। শিশুদের বোঝানো উচিত যে খেলাধুলার সময় পানি পান করা তাদের শক্তি এবং মনোযোগ বজায় রাখে। নিয়মিত অভ্যাসে পানি খাওয়া তাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
প্রশ্ন ৯। ডিহাইড্রেশনের সময় কোন খাবার এড়ানো উচিত?
ডিহাইড্রেশনের সময় অতিরিক্ত লবণ, প্রসেসড খাবার এবং ক্যাফেইন-সমৃদ্ধ পানীয় এড়ানো উচিত। লবণ শরীর থেকে পানি শোষণ কমিয়ে দেয় এবং ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়। একইভাবে, কফি, চা বা সোডার মতো ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় শরীর থেকে পানি বের করে দেয়।
অ্যালকোহলও ডিহাইড্রেশনকে তীব্র করে। সুতরাং, ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধের জন্য প্রাকৃতিক পানি, নারকেল পানি, হালকা ফলের রস এবং পানি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উত্তম। এগুলো শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং দ্রুত পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে।
প্রশ্ন ১০। ডিহাইড্রেশন হলে কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত?
যদি ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ গুরুতর হয়, যেমন অল্প প্রস্রাব হওয়া, তীব্র মাথাব্যথা, চোখ শূন্য বা ঘন হওয়া, স্থায়ী ক্লান্তি বা চেতনা কমে যাওয়া, তখন দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এই অবস্থায় কেবল পানি পান করা পর্যাপ্ত নয়; কখনও কখনও ইন্ট্রাভেনাস ফ্লুইড বা চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।
বাচ্চা, বৃদ্ধ এবং দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে ডিহাইড্রেশন দ্রুত গুরুতর হয়ে যেতে পারে। তাই প্রাথমিক সংকেত লক্ষ্য করে সতর্ক হওয়া এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। এটি জীবনহানির ঝুঁকি কমায় এবং শরীরকে দ্রুত পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে।