বাচ্চা ঘুমায় না? জানুন আসল কারণ ও কার্যকর সমাধান!

Spread the love

শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও স্বাস্থ্যকর মানসিক বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম অপরিহার্য। তবে অনেক অভিভাবক লক্ষ্য করেন যে তাদের শিশু রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছে না। ঘুম না হওয়া শুধুই ক্লান্তি নয়, এটি শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। শিশুর ঘুমের সমস্যা কখনও কখনও সহজভাবে সমাধানযোগ্য, আবার কখনও এর পেছনে গভীর কারণ থাকে। তাই ঘুম না হওয়ার কারণ বোঝা এবং যথাযথ সমাধান গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

১. শারীরিক অসুবিধা বা অস্বস্তি

শিশুর ঘুমের ব্যাঘাতের একটি সাধারণ কারণ হলো শারীরিক অসুবিধা। যেমন: দাঁত ওঠা, হাঁচি-কাশি, জ্বরে আক্রান্ত হওয়া বা হজম সমস্যা। শিশু যখন শারীরিকভাবে অস্বস্তিতে থাকে, তখন সে স্বাভাবিকভাবে গভীরভাবে ঘুমাতে পারে না। এছাড়া অ্যালার্জি বা ত্বকের জ্বালা-চুলকানি শিশুর ঘুম ব্যাহত করতে পারে। অভিভাবকরা প্রায়শই ছোট ছোট অসুবিধা উপেক্ষা করে থাকেন, যা ঘুমের উপর বড় প্রভাব ফেলে।

সমাধান:
শিশুর স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরি। শিশু অসুস্থ হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তাপমাত্রা ঠিক রাখা, হালকা পোশাক ব্যবহার করা, আরামদায়ক বেড ও বালিশের ব্যবস্থা করা ঘুমকে উন্নত করতে সাহায্য করে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এবং শিশুর অস্বস্তি কমানোর দিকে মনোযোগ দেওয়া আবশ্যক।

২. অনিয়মিত ঘুমের সময়সূচি

শিশুর ঘুমের ঘড়ি বা ঘুমের বায়োলজিক্যাল রিদম ঠিকমতো কাজ না করলে ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়। ঘুমের সময়সূচি নিয়মিত না হলে শিশুর শরীর কখন ঘুমাবে তা বোঝে না। কখনও রাতারাতি জেগে থাকা, কখনও সকালে দেরিতে ওঠা শিশুর ঘুমের মান কমিয়ে দেয়।

সমাধান:
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমানোর এবং একই সময়ে উঠার অভ্যাস তৈরি করা জরুরি। শিশুকে ধীরে ধীরে রাতে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুত করা, যেমন হালকা খাবার, শান্ত পরিবেশ, গল্প শোনা বা হালকা গান শোনা ঘুমকে প্রাকৃতিকভাবে আকর্ষণ করে। নিয়মিত রুটিন শিশুর ঘুমের জন্য একটি শক্ত ভিত্তি তৈরি করে।

৩. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ

শিশুর মনের উদ্বেগ বা অতিরিক্ত উত্তেজনা ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। নতুন পরিবেশ, স্কুল বা ক্রয়বাণিজ্যিক চাপ, অথবা পারিবারিক অশান্তি শিশুকে উদ্বিগ্ন করতে পারে। উদ্বিগ্ন শিশু সহজেই গভীর ঘুমে যেতে পারে না।

সমাধান:
শিশুর মানসিক স্বস্তি নিশ্চিত করা জরুরি। রাতে গল্প শোনানো, কোমল সঙ্গীত, আলোক কমানো বা শিশুর কাছে নিজেকে নিরাপদ মনে করানো ঘুমকে সহজ করে। শিশুদের উদ্বেগ শেয়ার করার সুযোগ দিন এবং তাদের অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করুন।

৪. অতিরিক্ত স্ক্রীন সময়

টেলিভিশন, মোবাইল বা ট্যাবলেটের অতিরিক্ত ব্যবহার শিশুর ঘুমের জন্য ক্ষতিকর। এই ডিভাইসগুলোর নীল আলো মেলাটোনিন হরমোনের উৎপাদন কমায়, যা ঘুমের প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। তাই স্ক্রীন সময় বেশি হলে শিশুর গভীর ঘুমে প্রভাব পড়ে।

সমাধান:
শিশুর ঘুমের আগে অন্তত এক ঘন্টা স্ক্রীন ব্যবহার বন্ধ রাখা উচিত। বদলে বই পড়া, গল্প বলা বা আর্টস-ক্রাফটের মতো শান্ত কাজ করতে সাহায্য করুন। শিশুকে স্ক্রীন থেকে দূরে রাখলে ঘুম সহজভাবে আসে।

৫. পরিবেশগত কারণে ঘুম বিঘ্নিত হওয়া

শিশুর ঘুমের পরিবেশ অশান্ত বা অস্বস্তিকর হলে ঘুম বাধাগ্রস্ত হয়। যেমন: বেশি আলো, উচ্চ শব্দ, ঠান্ডা বা বেশি গরম ঘর, আরামদায়ক বিছানা না থাকা ইত্যাদি। শিশু শান্ত ও আরামদায়ক পরিবেশে ঘুমতে বেশি ভালো অনুভব করে।

সমাধান:
শিশুর ঘরকে নিঃশব্দ, শান্ত এবং আরামদায়ক রাখুন। ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করুন, আলো কমান এবং কমফোর্টেবল বিছানা ব্যবহার করুন। প্রয়োজন হলে ঘুমানোর সময় হালকা সঙ্গীত বা হোয়াইট নয়েজ ব্যবহার করতে পারেন।

উপসংহার

শিশুর পর্যাপ্ত ও স্বাস্থ্যকর ঘুম তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমের সমস্যা শারীরিক, মানসিক, পরিবেশগত বা অভ্যাসগত কারণে হতে পারে। কারণ নির্ধারণের পর যথাযথ ব্যবস্থা নিলে শিশুর ঘুমের মান উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। অভিভাবকরা ধৈর্য ধরে শিশুর জন্য উপযুক্ত রুটিন, শান্ত পরিবেশ এবং সঠিক স্বাস্থ্য পরামর্শ নিশ্চিত করলে ঘুমের সমস্যা সহজেই সমাধান করা যায়।

Leave a Comment

You cannot copy content of this page