পড়াশুনা শেষ করে সবাই একটা ভালো চাকুরী পাওয়ার আশা করে, কেউ পায় আবার কেউ আশানুরুপ পায় না, দ্রব্যমূল্যের সাথে তাল মিলিয়ে স্বল্পমূল্যে চলা খুব কঠিন ।সবাই তাই চাকুরীর পাশাপাশি আয়ের কথা চিন্তা করে ।বর্তমানে মানুষ যে কাজে তার দক্ষতা আছে সেই কাজই করে আরও কিছু অতিরিক্ত অর্থ হাতে আসার ব্যবস্থা করতে চায় । এমনই কিছু আয়ের উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো, চলুন জেনে নেয়া যাকঃ
চাকরির পাশাপাশি আয়ের ১৪ টি উৎস
নিচে ১৪ টি সহজ আয়ের উৎস সম্পর্কে আলোচনা করা হলঃ
কোচিং
আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষ হয়ে থাকেন তবে অনলাইনে টিউটরিং বা কোচিং শুরু করতে পারেন। আপনি কারুশিল্প শেখাতে পারেন, কোন নির্দিষ্ট বিষয়ে(সাবজেক্টে) পড়াতে পারেন, কোনো অনলাইন প্ল্যাটফর্মের সঙ্গেও যুক্ত হতে পারেন।যেখানে আপনি যে ক্ষেত্রে ভালো সে বিষয়ে কোর্স শেখাতে পারেন। এভাবে আপনি আয়ের পথ তৈরি করতে পারবেন।
বাসার ছাদ বা উঠোনে নার্সারি
নার্সারি করা একটি শখের বিষয়, আজকাল এটি ভালো ইনকামের মাধ্যম হয়ে উঠছে । আপনার বাসার ছাদে বা উঠোনে যদি কিছুটা জায়গা থাকে সেখানে আপনি লাভজনক কিছু গাছ চাষ করতে পারেন। আজকাল ফুল এর ব্যাপক চাহিদা আছে। কোন ধরনের ফুল চাষ করা সুবিধাজনক এবং লাভজনক সেটা বের করে এরকম কিছু ফুলের চাষ করে আপনি আয় করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে আপনাকে আগে কিভাবে ফুল বা গাছ চাষ করতে হয় তা জেনে নিতে হবে ।
পশু-পাখি পালন
পশু -পাখি পালন চাকুরীর পাশাপাশি আয়ের উৎস হতে পারে। অনেক পশু আছে যেগুলো পালন করা খুব একটি কঠিন কাজ নয় আবার ভালো আয়ও করা যায়। আপনার কোন ধরনের পশু পালতে ভাল লাগে তা দেখে সেই ধরনের পশু পালন করা শুরু করতে পারেন। অনেকে খাঁচার ভিতরে পাখি পালন করে ।বিদেশী অনেক পাখি আছে যা অনেক দামী , তাদের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে তা একটু বড় করে বিক্রি করে অনেক আয় করা যায়। আবার কুকুরের অনেক জাত আছে যা অনেক দামী যেমন , এলসেসিয়ান,জার্মান শেফার্ড, লাসা ,স্পিটিজ,সাইবেরিয়ান হাস্কি, রডউইলার ইত্যাদি বিভিন্ন ব্রিডের কুকুর যদি লালন পালন করে বাচ্চা বিক্রি করা যায় তবে বেশ ভালো আয় করা যাবে ।
মুক্তো ও ঝিনুক চাষ
মুক্তো চাষ করেও আয় করা যেতে পারে , তবে এর জন্য প্রশিক্ষণ নিতে হবে । মুক্তো চাষের জন্য অবশ্যই একটি পুকুরের প্রয়োজন। এরজন্য নিজ খরচে পুকুর খনন করা যেতে পারে, একইসঙ্গে সরকারের কাছ থেকে ঋণ ও নেওয়া যেতে পারে।মুক্তো চাষের জন্য ঝিনুককে প্রথমে একটি জালে বেঁধে পুকুরে ১০-১৫ দিন রাখা হয় ।এরপর সেগুলি বের করে ঝিনুকের ভিতরে একটি কণা বা ছাঁচ ঢোকানো হয় । এই ছাঁচে প্রলেপ পরার পর, ঝিনুকের স্তর তৈরি হয়, যা পরে মুক্তোতে পরিণত হয়। মুক্তোর ব্যবসায় ৫০০ ঝিনুক তৈরি করতে খরচ হয় ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। একটি ঝিনুক থেকে ২ টি মুক্তো বের হয় এবং একটি মুক্তো কমপক্ষে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়।
আপনার চাকুরীর পাশাপাশি বাড়তি আয়ের আরেকটি মাধ্যম ফ্রিল্যান্সিং। ফ্রিল্যান্সিং এর হাজারো স্কিলস থেকে যেকোনো একটিতে দক্ষ হয়ে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে পারেন । নিচে এমনই কিছু কাজের কথা উল্লেখ করা হলোঃ
ব্লগিং বা লেখালেখি করা
আপনি যদি লেখায় পারদর্শী হন, লেখার মাধ্যমে অন্যদের আকর্ষণ করতে পারেন তাহলে লেখালিখির সাহায্যে ভার্চুয়াল জগতের বিভিন্ন সাইট থেকে খুব সহজেই ঘরে বসেই আয় করতে পারবেন । এ ধরনের কাজ করতে চাইলে ফ্রিল্যান্সার সাইটগুলিতে গিয়ে আপনার একটি সম্পূর্ণ প্রোফাইল তৈরি করে গিগ দিতে হবে। তাছাড়া এই লেখালিখির জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারন না থাকায় আপনি যেকোন সময় তা করতে পারেন।
অনলাইন গবেষণা কাজ করা
যখন কোন নতুন প্রতিষ্ঠান ব্যবসা শুরু করে তখন গবেষণা ভিত্তিক অনেক তথ্যের প্রয়োজন হয়। এর জন্য একজন গবেষকের দরকার পড়ে।যদি আপনার তথ্য সংগ্রহ ও রিপোর্ট লেখার অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে এ কাজ খুব সহজেই করতে পারেন। যেহেতু অনলাইনেই সব তথ্য পাওয়া যায়, সুতরাং অনলাইনে তথ্য সংগ্রহ করে ভালো মানের রিপোর্ট তৈরি করতে পারবেন। ব্লগিং লেখার মতো এর জন্যও প্রোফাইল তৈরি করে Google এ গিয়ে সার্চ করে কাজ খুজে নিতে হবে ।
এফিলিয়েট মার্কেটিং
অনলাইনে প্রায় প্রত্যেকটি কোম্পানি তাদের প্রোডাক্টের জন্য অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম চালু রাখে। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ব্লগিং এর সাথে করা যায় আবার চাইলে ব্লগিং ছাড়াই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারবেন। অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এ আপনি সম্পূর্ণ ফ্রি কাজ শুরু করতে পারবেন, এখানে আপনি ক্রেতাগণকে অন্য ওয়েবসাইটে রেফার করবেন এবং কমিশন পাবেন।প্রথমে আপনাকে যে সাইটে কাজ করবেন অর্থাৎ যদি অ্যামাজন , ইবেতে কাজ করতে চান তাহলে অ্যামাজন ও ইবেতে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে এবং আপনার Facebook page এ ভার্চুয়াল স্টোর তৈরি করতে হবে।এরপর আকর্ষণীয় পণ্য গুলোর লিংক আপনার স্টোরে প্রদর্শন করতে হবে। ভিডিও বানাতে হবে।এক্ষেত্রে ডিজিটাল মার্কেটিং এর ভালো ধারণা লাগবে। উপার্জন নির্ভর করবে আপনার দক্ষতা ও কার্যক্রমের উপর।
কার্টুন ডিজাইন করা
আপনার যদি কার্টুন তৈরির দক্ষতা থাকে তাহলে কার্টুন তৈরি করে আয় করা সম্ভব । ।যাদের গ্রাফিক্স এর উপর জ্ঞান আছে তারা দ্রুত কার্টুন তৈরি করা শিখতে পারবেন।অনেক ওয়েবসাইট মালিক ও কনটেন্ট লেখকদের বিভিন্ন কার্টুন প্রয়োজন হয়। যদি আপনি মান সম্পন্ন কার্টুন তৈরি করতে পারেন, এ কাজে ভালো পরিমাণ উপার্জন করতে পারবেন। এর জন্য প্রোফাইল তৈরি করে Fiverr, upwork এ কাজ পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
ভয়েজ আর্টিষ্ট
আপনার যদি কণ্ঠস্বর ভালো হয়, তাহলে আপনি কনটেন্টের অডিও তৈরি করতে পারেন। অডিও রেকর্ড করতে আপনার হেডফোন, মাইক্রোফোন , সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে। এই কাজে আপনাকে পারদর্শী হতে হবে। একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে আপলোড দিতে হবে। ওয়েবসাইটকে মনিটাইজ করতে হবে। নিয়মিত অডিও দিতে হবে। আপনার ওয়েবসাইটের যত পাঠক বাড়বে, আপনার উপার্জন তত বাড়বে।
ডিজিটাল অথবা ফিজিক্যাল প্রডাক্ট বিক্রি করা
অনেক ডিজিটাল ও ফিজিক্যাল পণ্য রয়েছে যেগুলো পাইকারি দামে কিনে তা খুচরা দামে বিক্রি করতে পারেন যেমন মধু ,গুড় ,শাড়ি । এক্ষেত্রে আপনার অফিস কলিগ বা পরিচিতদের মাঝে আপনার প্রডাক্ট সম্পর্কে জানালে অনেকেই তা কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করতে পারে। এছাড়াও তা অনলাইনে প্রচার করে বেশি বেশি বিক্রি করতে পারেন। আমাদের দেশে বিক্রয় ডট কম রয়েছে ।এখানে সেলার একাউন্ট খুলে বিভিন্ন ধরনের প্রোডাক্ট সেল করতে পারেন । আপনি আপনার বাসাতেই বিভিন্ন প্রোডাক্ট রেখে ব্যবসা শুরু করতে পারেন। আপনাকে bikroy.com এ আপনার অ্যাকাউন্টে অ্যাড দিতে হবে । এরপর কেউ অর্ডার করলে সেই পণ্য মার্কেট থেকে কিনে কাস্টমারকে ডেলিভারি করতে পারবেন। ডিজিটাল প্রডাক্টের মধ্যে রয়েছে হোস্টিং রিসেল করা ।যদিও এ ব্যাপারটি একটু কঠিন। হোস্টিং রিসেল হল পাইকারি মূল্যে হোস্টিং প্যাকেজ কিনে তা পরে ছোট ছোট প্যাকেজে বিক্রি করা।এটা যদি আপনি বুঝেন তবে এটাও করতে পারেন। তাছাড়া পুরাতন জিনিস বিক্রি করেও আয় করতে পারেন।বাড়িতে যদি কোন অপ্রয়োজনীয় জিনিস থাকে যা কাজে লাগে না , সেই জিনিসটা যদি অনলাইনে বিক্রির বিজ্ঞাপন দেন, খুব দ্রুতই বিক্রি হয়ে যাবে।
ভার্চুয়াল সহকারী (Virtual assistant)
আপনি যদি সংগঠনের কার্যাবলী,গবেষণার কাজে,অফিসের কাজে পারদর্শী হন, তবে আপনি ভার্চুয়াল সহকারীর কাজ নিতে পারেন।ভার্চুয়াল সহকারীদের কাজ হলো মিটিং সময় সূচি নির্ধারণ, প্রতিদিনের কার্যাবলী সংগঠিত করা, ফোন গ্রহণ করা ইত্যাদি ।যদি আপনি এ ধরনের কাজ করতে চান তাহলে ফ্রিল্যান্সার সাইটগুলিতে গিয়ে আপনার একটি সম্পূর্ণ প্রোফাইল তৈরি করে গিগ দিতে পারেন।
ওয়েবসাইট তৈরি করা
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন অনুযায়ী ওয়েবসাইট তৈরি করে উপার্জন করা সম্ভব। Fiverr বা upwork এ নিজের একটি অ্যাকাউন্ট খুলে উপার্জন করতে পারেন। আবার আপনি একটি ব্লগের সাইট খুলে তাতে আর্টিকেল লিখে পাব্লিশ করার পর গুগলে র্যাংক করলে, আপনার ওয়েবসাইটটির মূল্য বৃদ্ধি পাবে। আপনি তা বিক্রি করে ভালো মুনাফা অর্জন করতে পারবেন ।
অনুবাদ করা
আপনি যদি বাংলার পাশাপাশি অন্য কোন ভাষা জানেন তবে আপনি ভাষার অনুবাদ করার মাধ্যমে আয় করতে পারেন ।গুগলে সার্চের মাধ্যমে বা ফ্রিল্যান্সিং সাইট গুলোর মাধ্যমে অনুবাদের কাজ পেতে পারেন।
ভিডিও তৈরি
আপনি যদি ভিডিও তৈরি করতে পারেন, তাহলে এর মাধ্যমে প্রচুর উপার্জন করতে পারবেন।এ কাজের জন্য দরকার ভালো ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, এডিটিং সফটওয়্যার ও উপযুক্ত কম্পিউটার। আরো দরকার ভিডিও শ্যুট করার ও এডিট করার দক্ষতা। মান সম্পন্ন ও মজাদার ভিডিও তৈরি করতে পারলে ভালো উপার্জন করা সম্ভব ।প্রতিটি ভিডিওর জন্য সময়কাল অনুসারে চার্জ করতে পারেন।
ফোরামে মডারেটর হিসাবে কাজ করা
ফোরামে মডারেটরের কাজ ভালো লাগলে এই কাজটি করতে পারেন ।এদের কাজ হলো ফোরামটিতে সদস্যরা সব প্রশ্ন পাচ্ছেন কিনা, কোন সমস্যা ছাড়া চলছে কিনা, ফোরামের নেগেটিভ মন্তব্য গুলো ব্লক করা, স্প্যাম মুছে ফেলা, অনিয়মকারীদর পোস্ট সাময়িক বন্ধ করা, ইউজারদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ইত্যাদি।কাজটি করার আগ্রহ থাকলে ফ্রিল্যান্সার সাইটগুলিতে গিয়ে আপনার একটি সম্পূর্ণ প্রোফাইল তৈরি করে, এ কাজের নিয়ম গুলো জেনে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করতে পারেন।
উপসংহার
আপনি এর মধ্যে থেকে যে কোন এক বা একাধিক কাজ বেছে নিন ও আপনার চাকরির পাশাপাশি বাড়তি আয় করতে থাকুন। এখানে অনেক কাজ অনলাইন ভিত্তিক আবার অনেক কাজ অফলাইনেই করা যায়। অনলাইন কাজগুলো আমি বেশি পছন্দ করি কারণ সেক্ষেত্রে আপনাকে তেমন কোন ইনভেস্ট করতে হবে না। অন্যদিকে অফলাইনের কাজগুলো ইনস্টমেন্ট নির্ভর তাই সেক্ষেত্রে রিস্ক রয়েছে ।