টাকা জমানোর উপায়

Spread the love

টাকা জমানোর উপায়- টাকা ছাড়া সবকিছুই যেন মূল্যহীন। শিশু থেকে শুরু করে সকল বয়স, শ্রেণী, পেশার মানুষেরই টাকার প্রয়োজন। ছাত্র-ছাত্রী, গৃহিণী, ব্যবসায়ী কিংবা চাকুরীজীবী প্রত্যেকেরই টাকার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। আমরা কম-বেশী সকলেই চাই আমাদেরও কিছু ব্যাংক ব্যালেন্স থাকুক। যেন ভবিষ্যতে কোন কাজে লাগে অথবা কোন সমস্যা দেখা দিলে যেন সমাধান করা যায়। কিন্তু আমরা অনেকেই টাকা জমাতে পারি না।

টাকা জমানোর উপায় | টাকা জমানোর কৌশল-

বিশেষ করে অল্প আয়ের লোকেরা টাকা সঞ্চয় করতে পারে না। অল্প আয়ের লোকেরা তো তাদের দৈনন্দিন চাহিদাই পূরণ করতে পারে না। দিন আনে দিন খায় এই অবস্থায় টাকা জমাবে কিভাবে? মনে বাসনা থাকলে কি হবে বাস্তবতায় তা সম্ভব হয়না। যাই হোক, ”টাকা জমানোর কৌশল” শিরোনামের আজকের এই পোষ্টটি মূলত নিম্ন আয়ের লোকদের জন্য। এই পোষ্টটিতে টাকা জমানোর যে কৌশলগুলো বর্ণনা করা হয়েছে সেগুলো অনুসরণ করলে নিম্ন আয়ের লোকেরা টাকা জমানোর কৌশল সম্পর্কে জানতে পারবেন।

অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে- আমরা কি কখনোই অর্থ-সম্পদের মালিক হতে পারব না? আমাদের কি ব্যাংক ব্যালেন্স কখনোই হবে না? আমরা কি সারা জীবন অসহায় বা নিঃস্বই থেকে যাবো? আমরা কি কখনোই আরাম আয়েশ করতে পারব না?

এ প্রশ্নগুলোর উত্তর হলো- হ্যাঁ আপনিও পারবেন অর্থ-সম্পদের মালিক হতে। তার জন্য সহজ কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে।

আপনি কি আসলেই চান, আপনার ব্যাংক ব্যালেন্স থাকুক? যদি সত্যিই চান তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই।

টাকা জমাতে না পারার সংক্ষিপ্ত কিছু কারণ হলো-

ক) টাকা জমানোর জন্য যতটুকু প্রচেষ্টা থাকা প্রয়োজন, তা আমাদের মাঝে খুঁজে পাওয়া যায় না।
খ) আয় স্বল্পতার কারণে টাকা জমানো সম্ভব হয়না।
গ) বে-হিসাবী খরচ করা।
ঘ) অপচয় বা অপ্রয়োজনীয় খরচ করা
ঙ) আয়ের উৎস বৃদ্ধি না করা
চ) লোক দেখানো খরচ করা।
ছ) অলসতা।
জ) ঋণ করা।
ঝ) আড্ডাবাজি করা।
ঞ) ধুমপান বা নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করা।
ট) জুয়া খেলা।
ঠ) ঘরের খাবার না খেয়ে বাইরে খাওয়া।
ড) সঞ্চয়ের টাকা আলাদা করে না রাখা।
ঢ) বিলাসিতা করা।

টাকা জমানোর উপায় | টাকা জমানোর কৌশল-

বর্তমান সমাজের প্রেক্ষাপট হলো- অর্থ আছে বলেই আপনি ক্ষমতাশালী, মর্যাদাবান, আপনি দানবীর, আপনি আলহাজ্ব, মানুষ আপনাকে সম্মান দেয়, ভয় করে। আমাদের সমাজে যারা অনেক অর্থ-সম্পদের মালিক তারা অনেক সময় অর্থের প্রভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে, নানা ধরণের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত থাকে। আবার অনেক সম্পদশালী আছেন যারা সমাজে গঠনমূলক কর্মকান্ডে তাদের সম্পদকে ব্যয় করে থাকেন। প্রতিটি জিনিষেরই ভালো এবং মন্দ দুইটি দিক থাকে।

যাদের টাকা-পয়সা নেই অর্থাৎ যারা নিম্ন আয়ের লোক তারা অর্থ-সম্পদের মালিক হতে চাইলে প্রথমেই যে কাজটি করতে হবে তাহলো- টাকা জমানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। প্রতি মাসে আপনার ইনকাম যাই হোক না কেন, সেখানে থেকেই প্রতি মাসে কিছু কিছু করে টাকা জমাতে হবে। এখন প্রশ্ন আসতে পারে- যা ইনকাম করি তা দিয়ে তো চলতেই পারি না, এখান থেকে আবার টাকা জমাবো কিভাবে?

এ প্রশ্নের উত্তর হলো- হ্যাঁ আপনাকে এর মধ্য থেকেই টাকা জমানোর অভ্যাস করতে হবে।

চাকুরীজীবির টাকা জমানোর উপায় | টাকা জমানোর কৌশল-

চেষ্টা করলে এমন কোন কাজ নেই যা মানুষ করতে পারে না। মানুষ মাঝে মাঝে অনেক অসম্ভব কাজও সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়। আর এটা তো টাকা জমানো। একটু চেষ্টা করলেই টাকা জমানো সম্ভব। টাকা জমানোর বিভিন্ন কৌশল বা উপায় রয়েছে।

আসুন আমরা জেনে নেই টাকা জমানোর উপায় গুলো কি কি?

টাকা জমানোর প্রবল ইচ্ছা বা সংকল্প করা-

টাকা জমানোর অনেক উপায় রয়েছে। সর্বপ্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো নিজের মধ্যে টাকা সঞ্চয় করার প্রবল ইচ্ছা শক্তি গড়ে তুলতে হবে। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে যেভাবেই হোক প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহে অথবা প্রতি মাসে নিজের ইনকাম থেকে কিছু টাকা সঞ্চয় করবোই ইনশা-আল্লহ্। আপনাকে পূর্বেই নির্ধারণ করে নিতে হবে যে, আপনি দৈনিক নাকি মাসিক সঞ্চয় করবেন। মাসিক হোক অথবা দৈনিক হোক একটি সংখ্যা নির্ধারণ করে নিবেন।

যদি সম্ভব হয় বেশি রাখবেন কিন্তু নির্ধারিত সংখ্যার কম রাখবেন না। প্রয়োজনীয় খরচ করার পূর্বেই সঞ্চয়ের টাকা রেখে দিন।

আয়ের উৎস বৃদ্ধি করা | টাকা জমানোর কৌশল –

টাকা সঞ্চয় করার আরও একটি কার্যকরী উপায় হলো আয়ের উৎস বৃদ্ধি করা। আপনি চাকরি বা ব্যবসা যাই করুন না কেন একটি ক্ষেত্র থেকে প্রাপ্ত টাকা থেকে সঞ্চয় করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। আসলে একটি উৎস থেকে ইনকাম করে বেশী দূর আগানো সম্ভব হয়না। এজন্য একাধিক আয়ের উৎস তৈরী করতে হবে।

আপনার যদি ইনকামের দুইটি উৎস তাহলে একটি দিয়ে প্রয়োজনীয় খরচ করবেন এবং অন্যটি সঞ্চয় করে রাখবেন।

এভাবে ইনকামের উৎস বাড়াতে থাকবেন, আস্তে আস্তে সঞ্চয় বৃদ্ধি পাবে।

জমাকৃত অর্থ বিনিয়োগ করা | টাকা জমানোর কৌশল

আপনি যদি সম্পদশালী অথবা কোটিপতি হতে চান, তাহলে এভাবে অল্প অল্প করে টাকা জমিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছানো কখনোই সম্ভব নয়। এ পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করলে হয়তো অল্প কিছু টাকা জমানো সম্ভব হবে। যা আপনার লক্ষ্য থেকে অনেক দূরে।

এভাবে টাকা জমিয়ে কোটিপতি হতে চাইলে কত সময় লাগবে তার একটি চিত্র নিম্নরূপ-

ধরুন, আপনি বিভিন্ন উৎস থেকে অল্প অল্প করে এক জায়গায় করে প্রতি মাসে ৫,০০০ টাকা করে সঞ্চয় করবেন। তাহলে কোটি টাকা জমানোর জন্য কত সময় লাগবে?

প্রতি মাসে- ৫,০০০ টাকা

প্রতি বছরে- ৫,০০০ X ১২ = ৬০,০০০ টাকা

তাহলে ১,০০,০০,০০০ টাকা জমাতে- ১,০০,০০,০০০ ÷ ৬০,০০০ = ১৬৬.৬৬ বছর।

অর্থাৎ প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে সঞ্চয় করলে কোটিপতি হতে সময় লাগবে প্রায় ১৬৭ বছর।

যা একজন মানুষের পক্ষে কোনভাবেই করা সম্ভব নয়। তাহলে কি স্বল্প আয়ের লোকজন সম্পদশালী হতে পারবে না বা তাদের কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন কি কখনো পূরণ হবে না? অবশ্যই পূরণ হওয়া সম্ভব।

টাকা জমিয়ে কোটিপতি হতে চাইলে শুধু টাকা জমালেই হবে না, জমাকৃত অর্থ মাঝে মাঝে বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে হবে।

বিনিয়োগ করার পূর্বে অবশ্যই কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যেমন-

ক) বিনিয়োগ করার পূর্বে দেখে-শুনে বিনিয়োগ করা উচিৎ।
খ) লোকসান বা ক্ষতি হয় এমন কোন ব্যবসা বা প্রকল্পে বিনিয়োগ করা যাবে না।
গ) জমাকৃত অর্থ একেবারে বিনিয়োগ করা যাবে না। যাতে করে বিনিয়োগকৃত প্রকল্প বা ব্যবসায় লোকসান হলেও তা যেন একেবারে শেষ না হয়ে যায়।
ঘ) অল্প অল্প করে বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করা উচিৎ। কেননা একটা প্রকল্প যদি লোকসানও হয়ে যায় অন্যটি দিয়ে যেন তা পুষিয়ে যায়।

ব্যবসাকে বড় বা কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে বিনিয়োগের ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। এছাড়া বিনিয়োগকৃত প্রকল্প বা ব্যবসা থেকে প্রতি মাসে যা ইনকাম হবে তা সঞ্চয় করুন।

একটা সময় দেখা যাবে আপনি আপনার লক্ষ্যে পৌঁছে গেছেন।

প্রতিদিনের খরচগুলো লিপিবদ্ধ করে রাখুন-

প্রতিদিন কোন খাতে কত টাকা খরচ হয়েছে তা লিপিবদ্ধ করে রাখুন। মাস শেষে হিসাব করে দেখুন কত টাকা খরচ হয়েছে? এতে সারা মাসের হিসাব আপনার সামনে থাকবে। এ পদ্ধতিতে খরচ করলে আপনি অপ্রয়োজনীয় খরচ সম্পর্কে সচেতন হতে পারবেন।

আস্তে আস্তে দেখবেন অপ্রয়োজনীয় খরচ বন্ধ হয়ে গেছে এবং আপনার সঞ্চয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রতি মাসে খরচের একটি খসড়া তৈরী করুন | টাকা গোছানোর উপায়-

সারা মাসে কোন খাতে কত টাকা খরচ করবেন, তার সম্ভাব্য একটি তালিকা তৈরী করুন। তবে চেষ্টা করবেন খসড়া তালিকায় যেন অপ্রয়োজনীয় খরচের কোন উৎস না থাকে।

খসড়া তালিকা আপনাকে টাকা সঞ্চয় করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।

ঋণ করা থেকে বিরত থাকুন | টাকা জমানোর সহজ উপায় –

টাকা সঞ্চয় করতে হলে অবশ্যই আপনাকে ঋণ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে হবে। ঋণ আপনার টাকা সঞ্চয়ের পথে বড় বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। কেননা, আপনি ঋণ পরিশোধ করবেন নাকি টাকা সঞ্চয় করবেন। এছাড়া লোন নিলে তো সুদও দিতে হবে। আস্তে আস্তে ঋণের পরিমান বাড়তে থাকবে। আরও একটি কথা- আমরা কখনও কখনও নিজের বা পরিবারের কোন ইচ্ছা বা শখ পূরণের জন্য লোন করে থাকি। এ কাজটি কখনোই করা যাবে না। কেননা অন্যর টাকা দিয়ে শখ পূরণ করা একেবারেই বোকামী।

আড্ডা বর্জন করার চেষ্টা করুন | টাকা জমানোর কৌশল-

আমরা অধিকাংশই আড্ডা দিতে পছন্দ করি। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গেলে পকেটের বারোটা বেজে যায়। অপ্রয়োজনীয় অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। অপ্রয়োজনীয় এই খরচের টাকা আপনি সঞ্চয় করতে পারতেন। যা কিনা অন্য সময় প্রয়োজনীয় কাজে খরচ করতে পারতেন।

এজন্য আড্ডা দেওয়া একেবারে কমিয়ে ফেলুন। তবে আড্ডা পরিহার করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়।

মাসিক বাজার একেবারে করুন | টাকা গোছানোর উপায়-

প্রতিদিনের কাঁচা বাজার ছাড়া সারা মাসের বাজার একসাথে করুন। সকল বাজার একসাথে কিনলে আপনার বেশ কিছু টাকা সেভ হবে যা আপনি সঞ্চয় করে রাখুন। খুচরা বাজারের তুলনামূলক দাম বেশি। কি কি কিনতে হবে তার একটি তালিকা তৈরী করে নিয়ে যান। তালিকা দেখে দেখে বাজার করুন। প্রয়োজনের বাইরে কিছু কিনবেন না।

আরও একটি কথা কখনই বাকিতে বাজার করবেন না। কেননা, বাকিতে পণ্য কিনলে দোকানদাররা প্রতিটি পণ্যের দাম বেশী বেশী ধরে থাকেন। এছাড়া আপনি পণ্য কেনার সময় দামাদামী করতে পারবেন না।

নগদ টাকায় বাজার করলে দামাদামী করে মূল্য যাচাই করে কেনা যায়।

যাতায়াতের খরচ কমান | টাকা গোছানোর উপায়-

প্রতিদিন অফিস সহ বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াতের জন্য আমাদেরকে খরচ করতে হয়।

মাস শেষে হিসাব করলে দেখা যায় আমাদের ইনকামের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ যাতায়াত খরচ বাবদ খরচ হয়ে যায়।

আমরা চাইলে প্রতি মাসে এখান থেকেও খরচ বাঁচিয়ে কিছু টাকা সঞ্চয় করতে পারি। যাতায়াতের খরচ কমানোর উপায় হলো রিক্সা, হোন্ডা ইত্যাদি ব্যবহার না করে পাবলিক বাস ব্যবহার করা। রিক্সা বা হোন্ডার তুলনায় বাসের ভাড়া অনেক কম।

প্রতি মাসে এ খাত থেকেও টাকা জমানো সম্ভব।

স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হন | টাকা জমানোর সহজ উপায়

আমাদের প্রত্যেকেরেই নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হওয়া উচিত। কেননা স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। স্বাস্থ্য ভালো থাকলে সবকিছুই ভালো লাগে, কিন্তু অসুস্থ্য হলে কোন কিছুই ভালো লাগে না।

এছাড়া অসুস্থ্য হলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে, চিকিৎসা নিতে হবে। যার জন্য টাকার প্রয়োজন।

স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতন হলে চিকিৎসার খরচ বেঁচে যাবে। যে টাকা সঞ্চয় হিসেবে আপনার কাছে জমা থাকবে।

লোক দেখানো খরচ পরিহার করুন | টাকা জমানোর কৌশল

অনেক সময় আমরা ফুটানি করে থাকি। অন্যের সাথে পাল্লা দিয়ে আমরা অনেক অপ্রয়োজনীয় খরচ করে ফেলি। এতে কার কি কি হয়? আপনারই ক্ষতি হয়। অমুক এটা কিনেছে আমিও কিনবো, সে ব্যবহার করছে আমিও করবো। ঐ মূহুর্তে যেগুলোর কোন প্রয়োজন ছিল না আপনার। শুধুমাত্র অন্যকে দেখানোর জন্য আপনি টাকা খরচ করেছেন।

এটা নিজের আর্থিক ক্ষতি ছাড়া আর কিছু নয়। নিছক এটা বোকামী কর্মকান্ড। এগুলো না করে আপনি টাকাগুলো সঞ্চয় করুন।

বাইরের খাবার খাওয়া পরিহার করুন | টাকা জমানোর সহজ উপায়-

আমরা অনেকেই সকালের নাস্তা বা দুপুরের খাবার, আবার কখনও কখনও রাতের খাবার ক্যাটারিং সার্ভিস থেকে অথবা হোটেল থেকে কিনে খাই।

ক্যাটারিং সার্ভিস অথবা হোটেল থেকে খাবার খেলে দুইটি জটিল সমস্যা দেখা দেয়। যেমন-

ক) পকেটের বারোটা বাজে। অর্থাৎ এক বেলা হোটেলের খাবার খেতে সাধারণত ১০০-১৫০ টাকা খরচ হয়। এখন তিন বেলার খাবারের হিসাব করে দেখুন কত টাকা খরচ হয়।

খ) শরীরের বারোটা বাজে। হোটেলের খাবার স্বাস্থ্য সম্মত বা মান সম্মত নয়। হোটেলের খাবারে প্রচুর মসলা, ঝাল এবং তেল ব্যবহার করা হয়। এছাড়া বেশীরভাগ হোটেলে পোড়া তেল অর্থাৎ আগের দিনের বেঁচে যাওয়া তেল দিয়ে রান্না করা হয়। যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

প্রতিদিন কর্মস্থলে আসার সময় বাসা থেকে খাবার নিয়ে আসুন। প্রতিনিয়ত বাসার খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।

কেননা, বাসায় স্বাস্থ্য সম্মতভাবে খাবার তৈরী করা হয়। বাসার খাবারে সাধারণত ঝাল ও মসলা কম থাকে এবং ফ্রেশ তেল ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া খরচও অনেক কম লাগে। আপনি এ খাত থেকেও মাসে বেশ কিছু টাকা সঞ্চয় করতে পারেন।

বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে-

বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি এই তিনটি বস্তু ব্যবহারের সময় আমরা অনেক অপচয় করে থাকি। এ অপচয়গুলো অবশ্যই বন্ধ বা রোধ করতে হবে। বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি দেশের মূল্যবান সম্পদ। এগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার না করার কারণে আমরা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। যেমন-

ক) আল্লহর অসন্তুষ্টি অর্জন। আল্লহ্ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না। কেননা, অপচয়কারী শয়তানের ভাই।
খ) আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি।
গ) দেশের মূল্যবান সম্পদ নষ্ট বা শেষ হয়ে যাচ্ছে।

এই তিনটি বস্তুর অপচয় বন্ধ করার ফলে যে টাকা বেঁচে যাবে তা সঞ্চয় করে রাখুন।

সাশ্রয়ী হন, অপচয় রোধ করুন | টাকা জমানোর কৌশল

আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে অপচয় বা অপ্রয়োজনীয় খরচ করে থাকি। যা একসাথে করলে অনেক টাকায় দাঁড়াবে। এগুলো আমরা একদমই খেয়াল করি না।

অপচয় বা অপ্রয়োজনীয় খরচের খাতগুলো নিম্নরূপ-

ক) আড্ডাবাজি করে টাকা খরচ করা।
খ) মোবাইলে ঘন্টার পর ঘন্টা প্রেমিক/প্রেমিকার সাথে কথা বলা। এছাড়া মোবাইলে এমবি কিনে ফেসবুক, ইউটিউব, ম্যাসেঞ্জার ব্যবহার করা।
গ) বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির অপচয় করা।
ঘ) যাতায়াতের সময় পাবলিক বাস ব্যবহার না করে রিক্সা বা হোন্ডা ইত্যাদি ব্যবহার করা।
ঙ) লোক দেখানো বা মানুষের সাথে প্রতিযোগিতা করে খরচ করা।
চ) ধুমপান বা নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করা।
ছ) ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে সুদ প্রদান করা।
জ) ঘরের খাবার না খেয়ে বাইরের বা হোটেলের খাবার খাওয়া।

ছাত্রদের টাকা জমানোর উপায় | টাকা জমানোর কৌশল-

শিক্ষার্থীরা চাইলে তারাও টাকা জমাতে পারে। বিভিন্ন সোর্স থেকে প্রাপ্ত টাকা থেকে কিছু কিছু করে সঞ্চয় করতে পারে। তবে শিক্ষার্থীরা স্তর ভেদে সঞ্চয় করতে পারবেন।

স্কুলের শিক্ষার্থী যেভাবে টাকা জমাবে-

সাধারণত স্কুলের শিক্ষার্থীদের আয় করার তেমন কোন সুযোগ থাকে না। কেননা তারা পরিণত বয়সে উপনীত হয় না। তাছাড়া ইনকাম করার তেমন কোন রিসোর্সও থাকে না।

তবে স্কুল ছাত্রেরও টাকা জমানোর কিছু ক্ষেত্র রয়েছে। যেমন-

ক) প্রতিদিন টিফিন বাবদ প্রাপ্ত টাকা থেকে অর্ধেক টাকা খরচ করে বাকী অর্ধেক টাকা জমাতে পারে।
খ) বিভিন্ন উৎসবে প্রাপ্ত বখশিশগুলো থেকে টাকা জমানো।
গ) আত্মীয়-স্বজনরা বিভিন্ন সময় টিপস দিয়ে থাকে সেখান থেকে টাকা জমানো যায়।

কলেজের শিক্ষার্থীর টাকা জমানোর কৌশল-

স্কুল শিক্ষার্থীর তুলনায় কলেজের শিক্ষার্থীর টাকা জমানোর রিসোর্স বেশী। তারা চাইলে বিভিন্ন উপায়ে টাকা জমাতে পারে। যেমন-

ক) বাবা-মা পকেট খরচ বা টিফিনের জন্য যে টাকা দেয়, তা থেকে টাকা জমানো।
খ) টিউশানি করে উপার্জিত টাকা থেকে জমানো।
গ) অনলাইন থেকে ইনকাম করে টাকা জমানো।
ঘ) মোবাইলে প্রতি মাসে যে পরিমান টাকা অপচয় করা হয়, সেখান থেকেও টাকা বাঁচিয়ে জমানো।
ঙ) হাতের কাজ শিখে জিনিষ বানিয়ে তা বিক্রি করে টাকা জমানো।
চ) অনেক সময় বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। আড্ডা দিয়ে টাকা খরচ না করে সঞ্চয় করা।
ছ) প্রেমিক-প্রেমিকার পিছনে টাকা খরচ না করে টাকা জমানো সম্ভব।
জ) ধুমপান বা নেশা জাতীয় জিনিষ না খেয়ে সে টাকা জমানো।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের টাকা সঞ্চয় করার উপায়-

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইনকাম করার এবং টাকা জমানোর অনেক সুযোগ রয়েছে। কেননা এ সময় তারা লেখাপড়ার পাশাপাশি অন্যান্য কাজের চাপ নিতে পারে। বিভিন্ন উপায়ে তারা ইনকাম করে টাকা জমাতে পারেন। যেমন-

ক) প্রাইভেট পড়িয়ে টাকা ইনকাম করে জমাতে পারেন।
খ) অনলাইনে বিভিন্ন ধরণের কাজ করে টাকা ইনকাম করতে পারেন। যেমন- এফিলিয়েট মার্কেটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন, এ্যানিমেশন, ভিডিও এডিটিং, ওয়েব ডিজাইন, আর্টিকেল রাইটিং ইত্যাদি।
গ) সমস্ত অপচয় রোধ করে সেই টাকা জমিয়ে রাখা। যেমন- মোবাইলে অপচয়, প্রেমের কারণে অপচয়, ধুমপান বা নেশা করার টাকা, বন্ধুদের সাথে আড্ডাবাজির টাকা ইত্যাদি।
ঘ) টেকনিক্যাল বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে আয় করা অর্থ জমানো। যেমন- ইলেকট্রিশিয়ান, মোটর মেকানিক ইত্যাদি।
ঙ) বিভিন্ন কোম্পানীতে পার্ট টাইম চাকরি করে টাকা জমানো।
চ) গ্রামে বিভিন্ন খামার থেকে আয় করে টাকা জমানো। যেমন- মাছের খামার, গরুর খামার, ছাগল ও মুরগীর খামার ইত্যাদি।
ছ) বিভিন্ন ধরণের সবজি চাষ করে বা বিভিন্ন ফলের বাগান করে উপার্জিত টাকা জমানো।

বিঃ দ্রঃ শিক্ষার্থী বন্ধুদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ হলো- টাকা জমানো এবং টাকা ইনকামের নেশায় পড়ে যেন পড়াশুনার কোন ক্ষতি না হয়। পড়াশোনা করার নিয়ম

কেননা, জীবনে সম্পদ গড়ার অনেক সময় পাওয়া যাবে, কিন্তু পড়ালেখার সময় একবার চলে গেলে আর তা ফিরে পাওয়া যাবে না।

তোমরা শুধুমাত্র এতটুকু করতে পারো তাহলো- অপচয় এবং অপ্রয়োজনীয় খরচের খাতগুলো বন্ধ করে সেগুলো সঞ্চয় করা।

শেষকথা- টাকা ছাড়া পৃথিবীর প্রায় সকল কিছুই অর্থহীন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সামাজিক মর্যাদা, ক্ষমতা, সম্মান ইত্যাদি অর্জনের ক্ষেত্রে টাকার প্রয়োজনীয়তা আবশ্যক। টাকা জমানোর উপায় শিরোনামের এই আর্টিকেলে বর্ণিত কৌশলগুলো অবলম্বন করলে আশা করছি আপনি আপনার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করেছি তাহলো- অপচয় বা অপ্রয়োজনীয় খরচ বন্ধ করুন, টাকা সঞ্চয় করুন। এখানে টাকা ইনকাম করার কিছু দিক নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। এখানে একটি পরামর্শ দেওয়া আবশ্যক মনে করছি তাহলো- টাকা সঞ্চয় বা ইনকামের পিছনে ছুটতে গিয়ে আনুসাঙ্গিক অন্যান্য বিষয় যেন হারিয়ে না যায়। স্বাভাবিক উপায়ে টাকা ইনকাম বা সঞ্চয় করার চেষ্টা করুন।

Leave a Comment