ক্যারিয়ার গড়ার জন্য কিভাবে লক্ষ্য নির্ধারন করব?

Spread the love

ক্যারিয়ার কি এই সম্পর্কে আমাদের অনেকের এখনো স্পষ্ট কোন ধারণাই নাই।অনেকে ক্যারিয়ার বলতে একটি স্মার্ট চাকরিকে বুঝে থাকেন।মানুষের জীবনে সুনির্দিষ্ট যে কাজ বা কর্মের মাধ্যমে জীবন অতিবাহিত করে তাকেই ক্যারিয়ার বলে। এটি যেকোনো কর্ম হতে পারে। হতে পারে উদ্যোক্তা,চাকরি, ফ্রিল্যান্সিং যে কোন কিছু। একটি সফল ও সুন্দর ক্যারিয়ার গড়ার জন্য আমাদের সর্বপ্রথম দরকার হয় প্লানিং এর।প্লানিং ছাড়া কেউ কখনো সফল হতে পারেনা।বেশিরভাগ মানুষ সঠিক গাইডলাইন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহনের অভাবে একটি সুন্দর ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেনা।ক্যারিয়ার সম্পর্কে সঠিক পথ দেখানোর জন্য আমরা কাওকে পাইনা।জীবনের এতো বড় একটা সিদ্ধান্ত নেয় আমরা কোনরকম চিন্তা ভাবনা ছাড়াই।তাই আমি ক্যারিয়ার নিয়ে যাবতীয় আলাপ আলোচনা করব এই লেখাই।

ক্যারিয়ার কী?

মানুষ জীবিকা নির্বাহের জন্য বা নিজের চাহিদা পূরনের জন্য যে পেশাজীবনকে বেছে নেয় মূলত তাকে ক্যারিয়ার বুঝায়।বর্তমানে ক্যারিয়ার শুধু চাকরি বা ব্যাবসার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নয়।এক একজন মানুষের কাছে ক্যারিয়ার এক একরকম।এটি অঞ্চল, দেশ,জাতি,সমাজ এবং ব্যাক্তিত্ব ভেদে ক্যারিয়ারের সংজ্ঞা আলাদা হয়ে থাকে।

সহজ ভাবে বলা যায়, ক্যারিয়ার হচ্ছে মানুষের কর্মময় জীবনের একটা অংশ। মূলত মানুষ পেশা হিসেবে ব্যাক্তিগত জীবনের বাইরে যে বিষয়ের সাথে যুক্ত থাকেন, যা তাকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ব করে তাই হচ্ছে ক্যারিয়ার।

ক্যারিয়ারের গঠনের  লক্ষ্য নির্ধারণ

পড়াশোনা শেষ করে একটি আদর্শ ক্যারিয়ার গঠনের প্রত্যেকেরই একটা স্বপ্ন থাকে । কিন্তু অনেকেরই সেই স্বপ্ন পুরন হয়না সঠিক পরিকল্পনাও পূর্বপ্রস্তুতির। তাই একটি সফল ক্যারিয়ার গঠনের জন্য সঠিক পরিকল্পনা থাকা দরকার।ছাত্রজীবন থেকেই এই প্রস্তুতি নেওয়া আবশ্যক । এ প্রস্তুতি গ্রহণের কিছু কার্যকরী উপায় নিচে উল্লেখ করা হলো। যেমন :

১। লক্ষ্য নির্ধারন

আমি কি হতে চায়?ভবিষ্যতে আমি কি ধরনের কাজ করতে চায়?এসব কিছু নির্ভর করে আমার শিক্ষার উপর। তাই ছাত্র জীবন থেকেই নিজেকে নিয়ে ভাবতে  হবে। ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তরগুলো ক্যারিয়ার গঠনের শুরুতেই খুঁজতে হবে এবং সে অনুসারে পরিকল্পনা করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে ।

২।  অনুসরণ করা

সাফল্যের দুয়ারে পৌছাতে হলে আমাদের উচিৎ অবশ্যই সফল ব্যাক্তিদের অনুসরণ করা।সফল ব্যাক্তিরা কিভাবে চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সফলতা লাভ করেছে, কিভাবে দুঃখ কষ্ট সহ্য করেছেন এসব কিছু তাদের জীবন থেকে শিক্ষা নিতে হবে। তাহলে একটা সুন্দর ক্যারিয়ার গঠনের জন্য অনেক সহজ হবে।

৩। পরামর্শ নেয়া

একটি সঠিক ও সুন্দর ক্যারিয়ার নির্বাচনের জন্য সঠিক অভিজ্ঞদের পরামর্শ দরকার। যাতে আমরা সেই পরামর্শ মেনে নিজেদের ভুল ত্রুটিগুলো ঠিক করে সুন্দরভাবে আমাদের ক্যারিয়ারকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারি। যেহেতু জীবন ও জগৎ নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা বেশী, তাই তাদের পরামর্শকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা।

৪। ক্যারিয়ার নির্ভর পড়াশোনা

ক্যারিয়ারে সাফল্য পেতে হলে ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও মনের চাওয়ার সাথে মিল রেখে পড়াশোনার বিষয় নির্ধারণ করতে হবে। ক্যারিয়ার গঠনের পথে এভাবে যারা এগিয়েছেন, তাদের সফলতার হার অন্যদের চেয়ে অনেক বেশী। তাই সবার উচিৎ ক্যারিয়ার নির্ভর পড়াশোনার প্রতি মনোযুগী হওয়া।

৫। মানসিকভাবে প্রস্তুতি

প্রতিযোগিতা মূলক এই জীবনযুদ্বে জয়ী হওয়ার জন্য ছাত্রজীবন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে । দ্রুত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না । ধৈর্য নিয়ে এ সময় থেকেই জীবনযুদ্ধে লড়তে নিজেকে উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে ।কোন কিছুতে হাল ছেড়ে দেয়া যাবে না এই মনোভাব রাখতে হবে।

৬। কৌশলী হতে হবে

ছাত্রজীবন থেকেই কৌশলী হতে হবে। এটি ক্যারিয়ার গঠনে অন্যতম সহায়ক ভুমিকা পালন করে। সময়ের সাথে সাথে কৌশলী হবার উপায় গুলো আয়ত্ত করতে হবে ।যে যত বেশি জানবে সে তত বেশি  কৌশলী।তাই অজানা  বিষয় গুলো বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জেনে নিতে হবে ।বর্তমান সময়ে প্রতিযোগিতা মূলক এই সমাজে টিকে থাকতে হলে কৌশলী হওয়ার কোন বিকল্প নেই।

৭। ভয়কে জয় করা

ছাত্রজীবন থেকেই অনেকের মনে নানারকম ভয় কাজ করে।যেমন :আর্থিক অসচ্ছলতা,সামাজিক, পারিবারিক ইত্যাদি চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। দৃঢ়প্রত্যয়ী হতে হবে, ভয়কে জয় করার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে ।বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে হবে।

৮।সহ শিক্ষা গ্রহণ

ভালো লাগাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।কোন বিষয় আমার জন্য আনন্দদায়ক সেটা আবিষ্কার করে সেই দিকে ধাবিত হতে হবে।একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি জ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন শাখা প্রশাখায় বিচরণ করতে হবে। নিয়মিত পত্রিকা পড়তে হবে। এক্সট্রা কারিকুলার বা সহ শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন কো কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিস-এ যুক্ত থাকার চেষ্টা করতে হবে।

৯। স্মার্ট করে গড়ে তোলা

নিজেকে ছাত্রজীবন থেকেই স্মার্ট করে গড়ে তুলতে হবে। একজন মানুষের ব্যাক্তিত্ব ফুটে উঠে তার ভাষাগত  জ্ঞান, বাচনভঙ্গি, পোষাক-পরিচ্ছদ পরিধানে সচেতনতার মাধ্যমে। এছাড়া নিজেকে  ইংরেজি ও তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।  সবার সাথে সুন্দর আচরণ করতে হবে। সবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।

১০। দক্ষতা বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দেওয়া

জানার কোন শেষ নেই আর শেখার কোন সময় নেই।যে যত বেশি জানবে সে ততবেশি এগিয়ে থাকবে । তাই সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হলে দক্ষ হওয়ার কোন বিকল্প নেই।নিজের দূর্বলতা গুলো খুঁজে বের করে সেই অনুযায়ী দক্ষ হতে হবে। দক্ষতা বাড়ানোর কৌশল জেনে নিতে হবে এবং প্রতিদিনকার কাজে বিশ্লেষণী ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হবে ।

সফল ক্যারিয়ার গঠনের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় গুনাবলী

সফল ক্যারিয়ার গড়ার লক্ষ্যে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে পরিবেশ, শিক্ষা, অভিজ্ঞতা এবং নিজ প্রচেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতেই একটি সুন্দর ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারব।যিনি ছাত্র তার একাডেমিক ক্যারিয়ারের শিক্ষা যদি ছাত্রসুলভ না হয় তাহলে তার ক্যারিয়ার কখনো সমৃদ্ব হবে না।সফল ক্যারিয়ার গঠনের জন্য নিচের গুনাবলীগুলো থাকা আবশ্যক। সেগুলো হচ্ছে –

১।নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতা।

২।যেকোনো পরিস্থিতিতে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা থাকতে হবে।

৩।কোন বিশেষ ব্যাক্তিকেন্দ্রীক মানসিকতা পরিহার করা।

৪।চারপাশে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলা।

৫।মানুষকে বুঝানোর ক্ষমতা থাকতে হবে।

৬।সঠিক সময়ে সঠিক কৌশল অবলম্বন করা।

৭।ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা করা।

৮।সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহনের সাহস থাকতে হবে।

৯।দাম্ভিকতা পরিহার করা।

১০।কোন কাজকে ছুটো করে না দেখা।

১১। সবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং নমনীয় হওয়া।

এইসমস্ত গুনাবলী যার থাকবে তারজন্য খুব সহজ হবে ক্যারিয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা।বর্তমান সময়ে খুবই জনপ্রিয় একটি ক্যারিয়ার গোল হচ্ছে উদ্যোক্তা হওয়া,ফ্রিল্যান্সার, স্বাধীন -কন্সাল্টেন্ট হওয়া এরকম আরো অনেক ক্যারিয়ার পথ আছে। উদ্যোক্তা হলে নিজের কাজের স্বাধীনতা যেমন থাকে, তেমনি অনেক বেকার যুবক যুবতীর কর্মসংস্থান করা যায়।আর এতে দেশের উন্নয়নিও অবদান রাখা যায়।

শেষকথায়

পরিশেষে বলা যায়, সঠিক ক্যারিয়ার নির্বাচনের ওপর নির্ভর করে মানুষের ভবিষ্যৎ জীবনের পুর্ণ সফলতা ।মানুষ সাফল্যের চূডায় উত্তীর্ণ হতে নানা ধরনের প্রতিযোগিতামূলক কাজে লিপ্ত হয়।অনেক পরিশ্রম করে সেই সাফল্যকে নিজের করে নেয়।কাজের ক্ষেত্রে যারা ধৈর্যশীল হয় তাদের সফলতা অর্জনের সম্ভাবনা শতভাগ।  তাই সঠিক সময়ে সঠিক ক্যারিয়ার গ্রহণের মাধ্যমে জীবনের চলার পথকে মসৃণ, অর্থবহ ও সার্থক করে গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই ।

Leave a Comment