“কেন আজকের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে? শিক্ষা বিমুখতার ৫টি কারণ ও সমাধান”

Spread the love

শিক্ষা হলো একটি জাতির গড়নের অন্যতম মূল ভিত্তি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আজকের অনেক শিক্ষার্থী পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে বা সম্পূর্ণ বিমুখ হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের এই শিক্ষা বিমুখতার কারণগুলো নানা দিক থেকে উদ্ভূত—পরিবারিক পরিবেশ, শিক্ষা ব্যবস্থা, প্রযুক্তির আধিপত্য, শিক্ষকের ভূমিকা এবং শিক্ষার্থীর নিজস্ব মনোভাবসহ আরও অনেক। 

আমাদের এই লেখায় আমরা এই কারণগুলো বিশ্লেষণ করব এবং বুঝার চেষ্টা করব কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। কারণ শিক্ষার প্রতি ভালোবাসা ও আগ্রহ তৈরি করাই জাতির উন্নতির প্রথম সোপান।

১। পরিবার এবং পরিবেশের প্রভাব – শিক্ষার প্রতি অনাগ্রহের সূচনাবিন্দু

শিক্ষার্থীরা যখন শিক্ষা থেকে বিমুখ হয়ে পড়ে, তখন প্রথমে আমাদের তাকাতে হয় তাদের পরিবার ও আশেপাশের পরিবেশের দিকে। একটি শিশুর বেড়ে ওঠার প্রাথমিক পাঠশালা হলো তার পরিবার। যদি পরিবারে শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া না হয়, তাহলে শিশুদের মনেও শিক্ষার প্রতি আকর্ষণ তৈরি হয় না। 

অনেক সময় দেখা যায়, বাবা-মা নিজেরাও শিক্ষিত না হওয়ায় পড়ালেখার গুরুত্ব ঠিকভাবে বুঝতে পারেন না এবং শিশুর প্রতি উৎসাহ দেখাতে ব্যর্থ হন। ফলে শিশুটি ধীরে ধীরে বই-খাতা থেকে দূরে সরে যায়।

অনেক পরিবারে শিক্ষার চেয়ে জীবিকার চিন্তা প্রাধান্য পায়। দরিদ্র পরিবারের শিশুরা স্কুলে যাওয়ার পরিবর্তে রোজগারের কাজে নিযুক্ত হয়, কারণ সংসারে অর্থনৈতিক চাহিদা তাদের জন্য শিক্ষা নয়, আয়কেই জরুরি করে তোলে।

এই সামাজিক বাস্তবতাই তাদের শিক্ষা বিমুখ করে তোলে। আবার কিছু পরিবারে অতিরিক্ত পড়ার চাপ শিশুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এতে করে তারা শিক্ষাকে এক ধরনের যন্ত্রণা মনে করে এবং ধীরে ধীরে বিমুখ হয়ে পড়ে।

শুধু পরিবার নয়, শিশুর আশেপাশের পরিবেশ যেমন—পাড়া-মহল্লার বন্ধুবান্ধব, সামাজিক আচরণ, মিডিয়া ব্যবহারের প্রবণতাও শিক্ষার আগ্রহ কমিয়ে দেয়। যদি চারপাশে তারা এমন কাউকে দেখে যে পড়ালেখা না করেও “সফল” বা “জনপ্রিয়”, তাহলে তারা মনে করতে শুরু করে—শিক্ষা ছাড়াও জীবন চলে। তাই শিশুর মন গঠনমূলক পথে রাখার জন্য পরিবার এবং সমাজের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পরিবারে শিশুর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ, শিক্ষাকে আনন্দদায়কভাবে উপস্থাপন, সঠিক সময়ে সঠিক উৎসাহ প্রদান, এবং একটি শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করাই হতে পারে শিক্ষা বিমুখতার শুরু থেকে শিক্ষানুরাগী হয়ে ওঠার প্রথম ধাপ।

২। শিক্ষা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা – আগ্রহ হারানোর অন্যতম বড় কারণ

শিক্ষার্থীদের শিক্ষা বিমুখ হওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা। অনেক সময়ই পাঠ্যক্রম এতটা কঠিন, রুটিনমাফিক এবং মুখস্থনির্ভর হয় যে শিক্ষার্থীদের শেখার আগ্রহ কমে যায়। তারা পড়ে শুধুমাত্র পরীক্ষায় ভালো ফল করার জন্য, শেখার আনন্দের জন্য নয়। “এর ফলে ক্লাসরুমে এক ধরনের একঘেয়েমি সৃষ্টি হয়”, আর শিক্ষার উদ্দেশ্যও হয়ে পড়ে শুধুই নম্বর তোলার লড়াই। 

আরেকটি বড় সমস্যা হলো পাঠদানের পদ্ধতি। অনেক শিক্ষক এখনো ‘লেকচার’ বা একমুখী পাঠদানের ওপর নির্ভর করেন। এতে করে শিক্ষার্থীরা পাঠে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে না।  “শিশুরা স্বাভাবিকভাবেই কৌতূহলী, তারা প্রশ্ন করতে ভালোবাসে এবং নতুন কিছু আবিষ্কার করে শেখার আনন্দ পায়।” কিন্তু আমাদের ক্লাসরুমগুলোতে সেই সুযোগ প্রায় অনুপস্থিত। শিক্ষকের মুখস্থ পড়ানো আর পরীক্ষার খাতায় মুখস্থ লেখা—এই সীমিত চক্রে ঘুরপাক খেতে খেতে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাকে একটা ভার মনে করে।

তাছাড়া পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তু অনেক সময় বাস্তব জীবনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় না। শিশুদের আগ্রহ বাড়াতে হলে শিক্ষাকে করতে হবে বাস্তবমুখী ও কার্যকর। তারা যদি শিখতে পারে কিভাবে এই জ্ঞান তাদের জীবনকে উন্নত করবে, তাহলে তারা শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট হবে। কিন্তু পরীক্ষার চাপ, গ্রেডের দৌড় এবং অলিখিত “টপারে” হবার প্রতিযোগিতা অনেককে মানসিকভাবে ক্লান্ত করে তোলে।

এছাড়া স্কুলে পর্যাপ্ত সহায়ক উপকরণের অভাব, লাইব্রেরি না থাকা, বিজ্ঞান শিক্ষায় ল্যাব ব্যবহারের সুযোগ না পাওয়া, কিংবা সৃজনশীল বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব না দেওয়া শিক্ষার্থীদের মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে দেয়। তারা তখন মনে করে—এই পড়াশোনা হয়তো তাদের জীবনে তেমন কিছু পরিবর্তন আনবে না।

তাই শিক্ষাব্যবস্থাকে যুগোপযোগী, আনন্দমুখর এবং অংশগ্রহণমূলক করতে পারলেই শিক্ষার্থীরা আবারও শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে।

৩। প্রযুক্তি ও ডিজিটাল আসক্তি – শিক্ষার প্রতি বিমুখতার আধুনিক কারণ

বর্তমান যুগে প্রযুক্তি আমাদের জীবনে যেমন আশীর্বাদ, তেমনি কিছুক্ষেত্রে অভিশাপও হয়ে দাঁড়িয়েছে—বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য। মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট, ভিডিও গেমস, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মে সময় কাটানো এখন অনেক শিক্ষার্থীর প্রধান অভ্যাস হয়ে উঠেছে। এই ডিজিটাল আসক্তি শিক্ষার প্রতি তাদের আগ্রহ কমিয়ে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত।

অনেক অভিভাবক ছোট বয়স থেকেই শিশুদের হাতে মোবাইল তুলে দেন, যাতে তারা চুপ থাকে বা ব্যস্ত থাকে। কিন্তু ধীরে ধীরে এই শিশুরা বাস্তবের বই-পুস্তক, গল্প বা লেখার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। কার্টুন, রিলস বা গেমের উত্তেজনা তাদের এতটাই অভ্যস্ত করে তোলে যে, পাঠ্যবইয়ের সাধারণ তথ্য আর তাদের ভালো লাগে না। ফলে তারা ধীরে ধীরে পড়াশোনা থেকে দূরে সরে যায়।

সোশ্যাল মিডিয়াতেও তৈরি হচ্ছে এক ধরনের ভ্রান্ত ধারণা—যেখানে শুধুমাত্র লাইক, ফলোয়ার বা “ভাইরাল” হলেই কেউ “সফল” হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা অনেক সময় দেখে যে—অনেকে পড়ালেখা না করেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এতে করে তাদের মনে প্রশ্ন জাগে: “আমাকে এত কষ্ট করে পড়তে হবে কেন?” এই চিন্তাই ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে শিক্ষার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলায়।

আরেকটি বিষয় হলো ঘুম ও মনোযোগের অভাব। প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে শিশুরা রাতে ঠিকমতো ঘুমায় না, সকালে ক্লান্ত থাকে, ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারে না। এতে শিক্ষার প্রতি নেতিবাচক মনোভাব গড়ে ওঠে। আবার অনলাইনে পড়াশোনার সময়ও অনেক সময় গেম বা চ্যাটিংয়ের কারণে মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে।

তবে প্রযুক্তি একেবারে খারাপ নয়। বরং সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এটা হতে পারে শিক্ষার চমৎকার মাধ্যম। কিন্তু সেটা হতে হলে পরিবার ও বিদ্যালয়ের যৌথভাবে শিশুকে ডিজিটাল ভারসাম্য শেখাতে হবে। নির্দিষ্ট সময়, সঠিক কন্টেন্ট এবং নজরদারির মাধ্যমে প্রযুক্তিকে শিক্ষার সহচর বানানো সম্ভব।

৪। শিক্ষকের ভূমিকা ও শিক্ষাদানের পদ্ধতি – শিক্ষার্থীদের মনোভাব গঠনে প্রভাবশালী

শিক্ষক হলেন শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পথপ্রদর্শক এবং তাদের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবশালী ব্যক্তি। তাই শিক্ষকের আচরণ, মনোভাব এবং শিক্ষাদানের পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা বিমুখতা বা আকর্ষণ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে। যদি শিক্ষক ভালোভাবে শিক্ষাদান করতে না পারেন, তাহলে শিক্ষার্থীরা সহজেই বিরক্ত হয়ে পড়তে পারে।

অনেক সময় দেখা যায়, কিছু শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করেন বা শুধুমাত্র বাধ্যতামূলক কাজ হিসেবে পড়ান। এতে শিশুরা শিখতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। আবার শিক্ষক যদি ক্লাসে উদ্ভাবনী ও সৃজনশীল পদ্ধতি ব্যবহার না করেন, তাহলে পাঠ উপভোগ্য হয় না। শেখার আনন্দ কমে গিয়ে পড়াশোনা হয়ে ওঠে এক রকম বাধ্যবাধকতা।

শিক্ষকের পক্ষ থেকে যদি শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত সমস্যা বুঝে তাদের প্রতি সহযোগিতা ও উৎসাহ দেওয়া হয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে এবং শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়ে। শিক্ষকের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ ও শ্রদ্ধাশীল সম্পর্ক গড়ে উঠলে শিশুরা অনেক সহজে মন খুলে প্রশ্ন করতে পারে এবং শেখার প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশ নেয়।

এছাড়া শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে সঠিক যোগাযোগ ও নিয়মিত ফিডব্যাক খুবই প্রয়োজন।  “যদি শিশুর দুর্বল দিকগুলো শনাক্ত করে তদনুযায়ী সহায়তা প্রদান করা হয়, তবে শিশুরা নিজেদের উন্নতির জন্য উৎসাহিত হয়।” অন্যদিকে, শুধুমাত্র দোষারোপ বা কঠোর শাসন শিক্ষার্থীদের বিমুখ করে।

শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে শুধু পাঠ্যবইয়ের ওপর নির্ভর না করে খেলাধুলা, নাটক, দলগত কাজ, বিজ্ঞান প্রজেক্টের মতো বিভিন্ন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করলে শিক্ষার্থীরা শিখতে আগ্রহী হবে এবং শিক্ষাকে জীবনের অংশ হিসেবে গ্রহণ করবে।

সুতরাং, শিক্ষকের দক্ষতা ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা বিমুখতা দূর করতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৫। শিক্ষার্থীর নিজস্ব মনোভাব ও মানসিকতা – শিক্ষা বিমুখতার অন্তর্নিহিত কারণ

শিক্ষার্থীদের শিক্ষা বিমুখ হওয়ার মূল কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো তাদের নিজস্ব মনোভাব এবং মানসিকতা। কোনো শিক্ষার্থী যদি মনে করে যে পড়াশোনা তার জন্য জরুরি নয়, বা তার জীবনে কোনো গুরুত্ব নেই, তাহলে সে সহজেই শিক্ষা থেকে দূরে সরে যায়। ছোটবেলা থেকেই তাদের মধ্যে শেখার প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলা প্রয়োজন।

অনেক সময় শিক্ষার্থীরা মনে করে, তারা ভালো না করলে তাদের মূল্যায়ন কম হবে, বা তারা অন্যদের থেকে পিছিয়ে থাকবে। এই ভয় তাদের শিক্ষার আগ্রহকে হ্রাস করে এবং তারা ধীরে ধীরে ক্লান্ত ও হতাশ হয়ে যায়। আবার কেউ কেউ মনে করে, পড়ালেখা খুব কঠিন এবং নিজের ক্ষমতার বাইরে, তাই চেষ্টা করাটাই বৃথা।

শিক্ষার প্রতি আগ্রহ হারানো একটি মানসিক অবস্থা, যেটা বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ, সঠিক প্রেরণা এবং সময়মতো সমর্থন পেলে পাল্টানো সম্ভব। শিক্ষার্থীদের উচিত নিজেকে বিশ্বাস করা, ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া, ধৈর্য ধারণ করা এবং নিজের গতিতে অগ্রসর হওয়া।

সতর্কতা হিসাবে, শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমানোও খুব গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার, শিক্ষক ও বন্ধুবান্ধবদের সহযোগিতায় তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো গেলে শিক্ষায় আগ্রহ সৃষ্টি হয়। পড়াশোনাকে শুধু একটি বাধ্যবাধকতা নয়, বরং জীবনের একটি সুন্দর যাত্রা হিসেবে দেখা উচিত।

শিক্ষার্থীদের যদি শেখানো যায় কিভাবে নিজের লক্ষ্য স্থির করতে হয়, সময় পরিচালনা করতে হয় এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হয়, তাহলে তারা শিক্ষায় আগ্রহী হবে এবং ভবিষ্যতে সফলতা অর্জন করবে।

উপসংহার

শিক্ষার্থীদের শিক্ষা বিমুখতার পেছনে বহু কারণ কাজ করে এবং এগুলোকে পর্যায়ক্রমে বুঝে সঠিক সমাধান প্রয়োজন। পরিবার, শিক্ষক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমাজ সবাই মিলে সচেতন হলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষায় আগ্রহ ফিরিয়ে আনা সম্ভব। 

প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার, আধুনিক ও অংশগ্রহণমূলক শিক্ষাদান, মনোভাব গঠন—সব মিলিয়ে একটি স্বাস্থ্যকর শিক্ষা পরিবেশ গড়ে তোলা জরুরি। শিক্ষার্থীরাই আমাদের ভবিষ্যৎ, তাই তাদের পড়াশোনায় অনুপ্রেরণা ও সাহায্য দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। শুধু তখনই আমরা সফল শিক্ষার সমাজ গড়তে পারব।

Leave a Comment

You cannot copy content of this page