বর্তমান যুগে শুধুমাত্র পণ্য উৎপাদন করলেই সফলতা আসে না, বরং সেই পণ্য বা পরিষেবাকে সঠিকভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়াই হচ্ছে আসল চ্যালেঞ্জ। আর এই কাজটিই করে বিপণন বা মার্কেটিং। অনেকেই মনে করেন, বিপণন কেবলমাত্র বিজ্ঞাপন দেওয়া বা বিক্রির চেষ্টা — কিন্তু বাস্তবতা অনেক গভীর। বিপণন শুধুমাত্র ব্যবসাকে এগিয়ে নেয় না, বরং এটি কর্মসংস্থান সৃষ্টির অন্যতম প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে। একটি ভালো বিপণন ব্যবস্থা হাজারো মানুষের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি করতে পারে—চাকরিপ্রার্থী থেকে শুরু করে উদ্যোক্তা, ফ্রিল্যান্সার থেকে শুরু করে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ পর্যন্ত।
এই আর্টিকেলে আমরা সহজ ও সাবলীল ভাষায় জানবো, কিভাবে বিপণন আমাদের দেশের অর্থনীতি ও ব্যক্তি জীবনে কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। আমরা জানবো এর প্রভাব, উদাহরণ, সম্ভাবনা এবং ভবিষ্যৎ প্রস্তুতির দিকগুলো—যা ৭ বছরের একটি শিশুও পড়তে পারবে সহজে।
ধাপ ১: বিপণন কী এবং এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ?
আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে পণ্য বা সেবা কিনে থাকি। যেমন ধরো, তোমার বাবা-মা হয়তো তোমার জন্য চকোলেট কেনেন, কিংবা নতুন জামা। এই পণ্যগুলো দোকানে যেভাবে সাজানো থাকে, অথবা টিভিতে যে বিজ্ঞাপনগুলো আমরা দেখি—এসবই হচ্ছে বিপণনের অংশ।
বিপণন (Marketing) মানে হলো কোনো পণ্য বা সেবাকে মানুষের সামনে এমনভাবে উপস্থাপন করা, যাতে তারা সেটি কিনতে চায়। এটা শুধু বিজ্ঞাপন নয়, এর মধ্যে আছে—পণ্য বানানো, দাম নির্ধারণ, দোকানে পৌঁছানো, মানুষকে জানানো এবং বিক্রি করা পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া। সহজ করে বললে, কোনো কিছু বিক্রি করার আগে যেসব কাজ করা হয়, সবই বিপণনের ভেতরে পড়ে।
এই বিপণন ঠিকঠাক না হলে ভালো পণ্য বানিয়েও তা কেউ কিনবে না। কারণ মানুষ জানবেই না যে এমন কিছু আছে! যেমন ধরো, যদি তোমার এক বন্ধুর খুব সুস্বাদু কেক বানানোর দক্ষতা থাকে, কিন্তু সে যদি কাউকে না বলে বা দেখায় না—তাহলে কেউ তার কেক কিনবে না, তাই না?
তবে বিপণন শুধু ব্যবসায়ীদের লাভের জন্য নয়—এটা সমাজের অনেক মানুষের জন্য চাকরি বা কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি করে। কীভাবে? ধরো একটা কোম্পানি যখন নতুন পণ্য তৈরি করে, তখন তা বাজারে পৌঁছাতে অনেক লোক লাগে—যেমন ডিজাইনার, বিজ্ঞাপন লেখক, ভিডিও বানানো টিম, বিক্রয় প্রতিনিধি, ডেলিভারি বয়, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার ইত্যাদি। অর্থাৎ একটা ছোট্ট বিপণন কাজও অনেক লোকের কর্মসংস্থান তৈরি করে।
আরও মজার কথা হলো, অনেকে শুধু বিপণনেই চাকরি করে, যেমন: ডিজিটাল মার্কেটার, ব্র্যান্ড ম্যানেজার, কনটেন্ট রাইটার ইত্যাদি। তাই বলা যায়, বিপণন একটা বড় চাকরির ক্ষেত্র।
এই ধাপে আমরা শিখলাম:
- বিপণন মানে শুধু বিজ্ঞাপন নয়, বরং পুরো বিক্রয় প্রক্রিয়া।
- সঠিক বিপণন ছাড়া ভালো পণ্যও বিক্রি হয় না।
- বিপণনের কারণে নানা ধরণের কাজের সুযোগ তৈরি হয়।
ধাপ ২: বিপণন কীভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে?
বিপণনের জগৎটা অনেক বড় এবং বৈচিত্র্যময়। এর প্রতিটি স্তরে নানা ধরনের কাজের সুযোগ তৈরি হয়। চল আমরা উদাহরণ দিয়ে সহজভাবে বিষয়টা বুঝে নিই।
ধরো, একটি নতুন জামা বানানো হয়েছে। এখন সেই জামাটি মানুষের কাছে পৌঁছাতে হলে অনেক পর্যায়ে বিপণন কাজ করতে হয়। যেমন:
- পণ্যের ডিজাইন ও প্যাকেজিং: জামাটি দেখতে আকর্ষণীয় করে তুলতে ডিজাইনারদের দরকার হয়। তারা রঙ, ডিজাইন, স্টাইল—সব ঠিক করে। এখানেই সৃষ্টি হয় ডিজাইনার, আর্টিস্ট ও প্যাকেজিং এক্সপার্টদের চাকরি।
- ফটোগ্রাফি ও ভিডিও প্রোডাকশন: জামাটিকে ওয়েবসাইট বা বিজ্ঞাপনে দেখানোর জন্য দরকার হয় ফটোগ্রাফার ও ভিডিও নির্মাতার। তারা সুন্দর করে ছবিতে জামাটিকে উপস্থাপন করেন। কাজেই এই ক্ষেত্রেও তৈরি হয় কর্মসংস্থান।
- বিজ্ঞাপন ও প্রচার: পণ্যটি মানুষের নজরে আনার জন্য প্রয়োজন হয় বিজ্ঞাপন। এতে কাজ করেন কপিরাইটার, বিজ্ঞাপন নির্মাতা, ব্র্যান্ড ম্যানেজার, মিডিয়া পরিকল্পনাকারী ইত্যাদি। টিভি, রেডিও, অনলাইন বা পত্রিকায় প্রচারের জন্য তাদের প্রয়োজন হয়।
- ডিজিটাল মার্কেটিং: আজকাল মানুষ বেশি সময় কাটায় ইন্টারনেটে। তাই ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল ইত্যাদিতে বিজ্ঞাপন দেয়ার কাজ করে ডিজিটাল মার্কেটাররা। SEO এক্সপার্ট, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার, কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের এখানে বিশাল চাহিদা।
- বিক্রয় ও গ্রাহক সেবা: পণ্যটি বিক্রির জন্য দরকার বিক্রয় প্রতিনিধি, দোকান কর্মচারী এবং কাস্টমার কেয়ার অফিসার। গ্রাহক পণ্য নিয়ে প্রশ্ন করলে বা সমস্যায় পড়লে তার সমাধান করাও একটি চাকরি।
- লজিস্টিকস ও ডেলিভারি: পণ্যটি দোকান কিংবা ক্রেতার কাছে পৌঁছাতে দরকার হয় পরিবহন ও ডেলিভারির লোক। এতে চাকরি পান ড্রাইভার, হেলপার, ডেলিভারি বয় ইত্যাদি।
- অনলাইন স্টোর ও ওয়েবসাইট ম্যানেজমেন্ট: অনেক কোম্পানি তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট বা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম চালায়। সেখানে কাজ করেন ওয়েব ডেভেলপার, প্রোডাক্ট আপলোডার, কাস্টমার সাপোর্ট ইত্যাদি।
এইভাবে, শুধু একটি পণ্য বিপণনের পেছনে অনেক রকমের কাজ থাকে এবং প্রত্যেকটিতে নতুন চাকরি তৈরি হয়। কেউ চাকরি পান অফিসে বসে কাজ করে, আবার কেউ মাঠে গিয়ে বিক্রয় করে। কেউ আবার বাড়ি বসেই অনলাইনে মার্কেটিং করেন। অর্থাৎ, বিপণন শুধু শহরের নয়—গ্রামেও কর্মসংস্থানের দরজা খুলে দেয়।
এই ধাপে আমরা শিখলাম:
- বিপণন প্রতিটি পর্যায়ে ভিন্ন ভিন্ন চাকরি তৈরি করে।
- ডিজাইন থেকে শুরু করে ডেলিভারি পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে মানুষের প্রয়োজন হয়।
শহর, গ্রাম, অনলাইন—সব জায়গাতেই বিপণনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বাড়ে।
ধাপ ৩: ছোট ব্যবসা এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিপণনের প্রভাব ও কর্মসংস্থান
অনেকেই মনে করেন, বিপণন শুধু বড় কোম্পানি বা শহরকেন্দ্রিক ব্যবসার জন্য দরকার। কিন্তু বাস্তবে বিপণন ছোট ব্যবসা এবং গ্রামের মানুষের জন্যও আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলুন দেখে নিই, কীভাবে।
- গ্রামের পণ্যের পরিচিতি বাড়ানো:
গ্রামের হস্তশিল্প, মাটির পাত্র, জামদানি শাড়ি, খাঁটি ঘি—এসব অনেক ভালো মানের পণ্য হলেও আগে মানুষ তেমন জানত না। কিন্তু এখন অনলাইন মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে গ্রাম্য পণ্য দেশের বড় শহর এমনকি বিদেশেও পৌঁছায়। ফলে এসব পণ্যের চাহিদা বাড়ে, এবং পেছনের কারিগর, শ্রমিক, বিক্রেতাদের আয় বাড়ে। - ছোট উদ্যোক্তাদের পথ খুলে দেওয়া:
একজন বাড়িতে আচার বানিয়ে ফেসবুকে পেজ খুলে বিক্রি শুরু করেন। আগে হয়তো তিনি বেকার ছিলেন, কিন্তু বিপণনের সাহায্যে এখন তিনি সফল উদ্যোক্তা। এভাবে কেউ পাটের ব্যাগ, কেউ হ্যান্ডমেড জুয়েলারি বানিয়ে নিজেই কর্মসংস্থানের পথ তৈরি করছেন। - স্থানীয় কর্মসংস্থান:
বিপণনের কারণে ছোট উদ্যোক্তারা তাদের পণ্য প্রচার করতে গিয়ে লোক নিয়োগ করছেন—ডেলিভারি বয়, ফেসবুক পেজ ম্যানেজার, কাস্টমার কেয়ার, প্যাকেটিং সহকারী ইত্যাদি। এর মানে হলো, অন্যকেও আয় করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। - অনলাইন মার্কেটপ্লেসে প্রবেশ:
আজকাল Daraz, Bikroy, Evaly-এর মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গ্রামের মানুষও ব্যবসা শুরু করছে। সঠিক মার্কেটিং এবং ছবি আপলোড করেই তারা ক্রেতা পাচ্ছেন সারা দেশজুড়ে। একেকজন হয়ে উঠছেন স্থানীয় উদ্যোক্তা। এখানে ওয়েব ম্যানেজার, ফটোগ্রাফার, পণ্য পরিবহনকারী ইত্যাদি চাকরিও তৈরি হচ্ছে। - নারীদের জন্য নতুন সুযোগ:
বিশেষ করে গ্রামের নারীরা যারা আগে বাড়ির বাইরে কাজ করতে পারতেন না, তারা এখন ঘরে বসেই হস্তশিল্প, খাবার, পোশাক বানিয়ে ফেসবুক বা ইউটিউবে বিপণন করে বিক্রি করছেন। এতে নারীদের মধ্যে আত্মনির্ভরশীলতা বাড়ছে, পরিবারে অবদান রাখার সুযোগও তৈরি হচ্ছে। - কৃষিপণ্যের বিপণন:
কৃষকরা এখন শুধুমাত্র স্থানীয় হাটে বিক্রি না করে অনলাইনে বা সরাসরি কাস্টমারের কাছে পণ্য পাঠাচ্ছেন। ফলে ফড়িয়া বা দালালের মাধ্যমে বিক্রি করে লাভ কম পাওয়া সমস্যা দূর হচ্ছে। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন, এবং গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে।
এই ধাপ থেকে কী শিখলাম:
- বিপণন ছোট ব্যবসার বড় সুযোগ সৃষ্টি করে।
- গ্রামের মানুষ এবং নারীরা আত্মকর্মসংস্থানে উৎসাহ পায়।
- স্থানীয় অর্থনীতিতে চাকরির নতুন নতুন রূপ দেখা যায়।
ধাপ ৪: ডিজিটাল বিপণন ও ফ্রিল্যান্সিং–নতুন কর্মসংস্থানের দিগন্ত
ইন্টারনেট এখন শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, বরং এটি হয়ে উঠেছে আয়ের উৎস। ডিজিটাল বিপণন (Digital Marketing) আজ তরুণ সমাজকে নতুন এক কর্মসংস্থানের পথে নিয়ে যাচ্ছে। এটি এমন এক দিক, যেখানে অফিসে না গিয়েও ঘরে বসে চাকরি করা যায়—বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে বেকারত্ব একটি বড় সমস্যা, সেখানে এটি এক নতুন আশার আলো।
- ডিজিটাল মার্কেটিং মানে কী?
ডিজিটাল মার্কেটিং হলো অনলাইনে পণ্য বা সেবার প্রচার। এটি করা যায় ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল, ইমেইল, ওয়েবসাইট ইত্যাদির মাধ্যমে। এতে প্রোডাক্টের ভিডিও, ছবি, বিজ্ঞাপন বানিয়ে মানুষের নজরে আনা হয়। - নতুন নতুন পেশার উদ্ভব:
ডিজিটাল বিপণন নিয়ে যারা কাজ করছেন, তারা কাজ করছেন SEO Expert, Content Creator, Video Editor, Graphics Designer, Copywriter, Social Media Manager, Affiliate Marketer, Email Marketer ইত্যাদি পরিচয়ে। এগুলোর প্রতিটিই একটি চাকরি, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার পরিবারের দায়িত্ব নিতে পারছেন। - ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং:
ডিজিটাল মার্কেটিং শেখা থাকলে কেউ ঘরে বসেই বিদেশি ক্লায়েন্টের কাজ করতে পারেন। যেমন Upwork, Fiverr, Freelancer-এর মতো সাইটে কাজ পাওয়া যায়। এতে দেশের বাইরে থেকে ডলার ইনকাম করা সম্ভব হয়, যা আমাদের জাতীয় আয়েও প্রভাব ফেলে। - ছাত্রছাত্রীদের জন্য পার্ট টাইম সুযোগ:
বিশ্ববিদ্যালয়ের বা কলেজের অনেক ছাত্রছাত্রী এখন পড়াশোনার পাশাপাশি ফেসবুক পেজ ম্যানেজ করছে, ইনস্টাগ্রামে কনটেন্ট বানাচ্ছে, ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ভিডিও এডিটিং করছে। এতে তাদের নিজের খরচ চালানোর মতো আয় হয় এবং পরবর্তীতে ফুল-টাইম ক্যারিয়ার গড়ার পথ খুলে যায়। - গ্রামীণ যুবকদের সুযোগ:
ডিজিটাল মার্কেটিং শুধু শহরের তরুণদের জন্য নয়। এখন অনেক গ্রামে ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে। সেখানে বসেও ছেলেমেয়েরা ডিজিটাল স্কিল শিখে অনলাইন মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আয় করছে। এটি গ্রামীণ কর্মসংস্থানে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। - স্টার্টআপ এবং নতুন কোম্পানিগুলোর চাহিদা:
বর্তমানে যেকোনো নতুন কোম্পানি শুরু হলেই তারা ডিজিটাল মার্কেটিং এক্সপার্ট খোঁজে। কারণ পণ্য বা সেবা প্রচার করতে হলে অনলাইন উপস্থিতি দরকার। তাই এই পেশায় প্রতিনিয়ত নতুন নতুন নিয়োগ হচ্ছে। - শতভাগ বৈধ ও ঘরে বসে আয়ের সুযোগ:
এই ধরনের কাজগুলো ঘরে বসেই করা যায়, যার জন্য অফিসে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে মহিলারা, শিক্ষার্থী বা শারীরিকভাবে অক্ষমরাও এই পেশায় যুক্ত হতে পারছেন, যা একে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসংস্থান বানিয়েছে।
এই ধাপ থেকে কী শিখলাম:
- ডিজিটাল বিপণন নতুন ধরনের চাকরি তৈরি করছে।
- ঘরে বসে আন্তর্জাতিক মানের কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন তরুণরা।
- গ্রামীণ ও শহুরে তরুণদের কর্মজীবন গঠনের বড় মাধ্যম হচ্ছে এই খাত।
ধাপ ৫: বিপণন খাতে ভবিষ্যতের কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা ও প্রস্তুতির উপায়
বর্তমানের পাশাপাশি ভবিষ্যতেও বিপণন খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ আরও বাড়বে—এটি এখন অনেক বিশেষজ্ঞের পূর্বাভাস। প্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়ন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ব্যবহার, এবং গ্রাহকের ক্রমাগত পরিবর্তিত চাহিদা এই খাতকে করে তুলেছে বহুমুখী ও চ্যালেঞ্জিং। তাই যারা আগেভাগেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করবে, তাদের জন্য এই খাত হবে একটি নিরাপদ ও লাভজনক কর্মজীবনের পথ।
- ভবিষ্যতের বিপণন পেশাগুলো:
আগামী দিনে শুধু প্রচলিত মার্কেটিং নয়, বরং Data Analyst, AI-based Campaign Manager, Automation Expert, Conversion Specialist, ও Personal Branding Consultant-এর মতো পেশার চাহিদা বাড়বে। এই পেশাগুলোতে কাজ করতে হলে প্রযুক্তি ও বিপণনের সংমিশ্রণ জানা জরুরি। - নতুন প্রযুক্তির সংযোজন:
AI, Machine Learning, Big Data ইত্যাদি টুল ব্যবহার করে এখন গ্রাহকের আচরণ বুঝে তার উপযোগী অফার পাঠানো হয়। ফলে ভবিষ্যতে যারা এই প্রযুক্তিগুলো রপ্ত করতে পারবে, তারাই বেশি সুযোগ পাবে। - স্থানীয় বাজারের চাহিদা অনুযায়ী প্রস্তুতি:
বাংলাদেশে এখন স্থানীয় পণ্যের প্রচারেও বিপণন এক বড় ভূমিকা রাখছে। বিভিন্ন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা (SME) ও ই-কমার্স ব্র্যান্ড ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে তাদের পণ্য বিক্রি বাড়াচ্ছে। তাই যারা স্থানীয় বাজার বুঝে বিপণন পরিকল্পনা সাজাতে পারে, তাদের জন্য কাজের অভাব হবে না। - কর্মসংস্থানে মান ও পরিমাণে উন্নতি:
আগে যেখানে একজন বিক্রয় কর্মীকে শুধু মুখে পণ্য বর্ণনা করতে হতো, এখন একজন বিপণন পেশাদারকে মার্কেট স্ট্র্যাটেজি, গ্রাহক সেগমেন্ট, ব্র্যান্ডিং, ও বিজ্ঞাপন ক্যাম্পেইন সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হয়। ফলে চাকরির মান যেমন বাড়ছে, তেমনি বেতনও বাড়ছে। - নিজস্ব উদ্যোগেও কাজের সুযোগ:
শুধু চাকরি নয়, বিপণন জেনে কেউ চাইলে নিজের পণ্য/পরিসেবা শুরু করতে পারে। একজন উদ্যোক্তা নিজের ব্র্যান্ড তৈরি করে সঠিক বিপণনের মাধ্যমে ব্যবসা দাঁড় করাতে পারে। এতে নিজে যেমন আয় করে, তেমনি অন্যদের চাকরি দেওয়ার সক্ষমতাও অর্জন করে। - ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট অ্যাক্সেস:
ডিজিটাল মার্কেটিং জানলে দেশের বাইরের ক্লায়েন্টদের সাথেও কাজ করা যায়। একদিকে যেমন আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতা অর্জিত হয়, অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগও বাড়ে, যা দেশের অর্থনীতির জন্যও উপকারী। - প্রশিক্ষণ ও শিক্ষার গুরুত্ব:
এই খাতে সফল হতে হলে শুধু ডিগ্রি যথেষ্ট নয়। চাই বাস্তব অভিজ্ঞতা ও নির্দিষ্ট প্রশিক্ষণ। বর্তমানে অনেক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, অনলাইন কোর্স ও ফ্রি রিসোর্স পাওয়া যাচ্ছে, যা থেকে যে কেউ সহজে এই স্কিলগুলো শিখে নিতে পারে।
এই ধাপ থেকে কী শিখলাম:
- ভবিষ্যতে বিপণনের কর্মক্ষেত্র আরও বিস্তৃত ও প্রযুক্তিনির্ভর হবে।
- দক্ষতা অর্জন ও বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনই হবে কর্মসংস্থানে সাফল্যের চাবিকাঠি।
- এই খাতে উদ্যোগ, উদ্ভাবন ও আত্মনির্ভরশীলতা একসাথে বেড়ে উঠছে।
উপসংহার:
বিপণন এখন আর কেবল পণ্যের প্রচার নয়, এটি একটি বিশাল কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী প্ল্যাটফর্ম। এটি যেমন দেশের অর্থনীতিতে নতুন গতি এনে দেয়, তেমনি ব্যক্তি পর্যায়ে স্বনির্ভরতা গড়ে তোলে। একজন ব্যক্তি শুধু মার্কেটিং শিখেই চাকরি পেতে পারেন, নিজের ব্যবসা গড়ে তুলতে পারেন বা অন্যকে চাকরি দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন। আজকের এই ডিজিটাল যুগে বিপণনের সুযোগ আরও বিস্তৃত হয়েছে—ফেসবুক মার্কেটিং, ইউটিউব প্রোমোশন, ইমেইল ক্যাম্পেইন, কনটেন্ট মার্কেটিং—সবই নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি করছে।
তাই, বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য বিপণন জ্ঞানকে মূল্য দেওয়া এবং সঠিক প্রস্তুতি নেওয়াই হবে একটি মজবুত ক্যারিয়ার গড়ার প্রথম ধাপ। আমরা প্রত্যেকে যদি এর গুরুত্ব বুঝি এবং দক্ষতা অর্জনের দিকে এগিয়ে যাই, তাহলে বিপণন খাতই হতে পারে দেশের অন্যতম বড় কর্মসংস্থান উৎস।