বই পড়লে বাড়ে সুখ হরমোন: ডোপামিন ও সেরোটোনিনের চমক

Spread the love

আমরা সবাই সুখী হতে চাই। কখনো মজার খাবার খেলে, প্রিয় গান শুনলে বা প্রিয় কারও সঙ্গে কথা বললে আমাদের মন ভালো হয়ে যায়। কিন্তু জানেন কি, বই পড়লেও এমন একটি আনন্দ পাওয়া যায় যা শুধু মনকেই নয়, শরীরকেও ভালো রাখে? বই পড়া মানেই শুধু জ্ঞান বাড়ানো নয়, এটি আমাদের শরীরে কিছু বিশেষ রাসায়নিক বা হরমোন তৈরি করে, যেগুলোকে বলে “সুখ হরমোন”। বিশেষ করে ডোপামিন আর সেরোটোনিন

ডোপামিনকে বলা হয় “reward hormone” বা পুরস্কারের হরমোন। যখন আমরা কোনো ভালো কাজ করি বা কিছু অর্জন করি, তখন ডোপামিন আমাদের মস্তিষ্কে আনন্দের বার্তা পাঠায়। অন্যদিকে সেরোটোনিন হলো “mood stabilizer” বা মনের ভারসাম্য রক্ষাকারী হরমোন। যখন এই হরমোনের পরিমাণ ঠিক থাকে, তখন মন খুশি হয়, দুশ্চিন্তা কমে যায় এবং ঘুমও ভালো হয়।

বই পড়া আমাদের মস্তিষ্ককে এমনভাবে সক্রিয় করে যে ডোপামিন ও সেরোটোনিন নিঃসরণ বেড়ে যায়। ধরা যাক, আপনি একটি গল্পের বই পড়ছেন। চরিত্রগুলোর সঙ্গে হাসি, কান্না, উত্তেজনা—সবকিছু অনুভব করছেন। এতে মস্তিষ্ক বারবার সুখের সংকেত দেয়। ফলে আপনি অনেক সময় না জেনেই শান্ত, হাসিখুশি এবং ইতিবাচক হয়ে ওঠেন।

আজকের এই আলোচনায় আমরা ধাপে ধাপে জানব—কেন বই পড়লে সুখ হরমোন বাড়ে, কীভাবে এটি আমাদের শরীর ও মনের ওপর কাজ করে, এবং বই পড়ার অভ্যাস কীভাবে আমাদের জীবনের মান উন্নত করতে পারে। প্রতিটি ধাপে থাকছে সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা, যেন ছোট্ট একটি বাচ্চাও পড়তে বুঝতে পারে।

১। বই পড়া আর ডোপামিন – আনন্দের পুরস্কার

ভাবুন তো, আপনি একটি বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠা খুললেন। শুরুতেই গল্পের এক রোমাঞ্চকর ঘটনা আপনাকে টেনে নিলো। আপনি যত পড়তে থাকবেন, ততই নতুন কিছু জানবেন, নতুন চরিত্রের সঙ্গে পরিচিত হবেন, আর গল্পের ভেতরে ডুবে যাবেন। ঠিক তখনই আপনার মস্তিষ্কে কাজ শুরু করে ডোপামিন

ডোপামিন হলো এমন একটি হরমোন, যা আমাদের পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতি দেয়। ধরুন, আপনি কোনো পরীক্ষা ভালো দিলেন বা খেলায় জিতলেন—তখন যেমন খুশি লাগে, বই পড়লেও তেমনি এক ধরনের “ছোটখাটো জয়” মনের ভেতরে জমতে থাকে। প্রতিটি অধ্যায় শেষ করা, কোনো জটিল রহস্যের উত্তর খুঁজে পাওয়া, অথবা প্রিয় চরিত্রকে সুখী হতে দেখা—সবকিছুতেই মস্তিষ্ক ডোপামিন নিঃসরণ করে।

এটাকে বলা যায় “মাইক্রো-অ্যাচিভমেন্ট” বা ছোট ছোট অর্জন। আমরা যখন একটি বই ধীরে ধীরে পড়ি, প্রতিটি পাতায় নতুন কিছু আবিষ্কার করি, তখন আমাদের মস্তিষ্ক ভাবে, “ওহ! আমি কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে ফেললাম।” এর ফলে ডোপামিন বাড়ে, আর আমরা আরও পড়তে আগ্রহী হই।

ডোপামিন শুধু আনন্দই দেয় না, এটি আমাদের প্রেরণা বা মোটিভেশন বাড়ায়। এজন্যই দেখা যায়—যারা নিয়মিত বই পড়েন, তারা নতুন কিছু শেখার জন্য সবসময় উদ্দীপিত থাকেন। এমনকি পড়াশোনায় ভালো করার ক্ষেত্রেও এটি বড় ভূমিকা রাখে, কারণ মস্তিষ্ক তখন শেখার কাজকে আনন্দদায়ক মনে করে।

আরও মজার বিষয় হলো, ডোপামিন আমাদের মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে। যখন আপনি গল্পের গভীরে ঢুকে যান, তখন চারপাশের অনেক কিছুই ভুলে যান। এটিই হলো মস্তিষ্কের একটি পুরস্কার ব্যবস্থা, যা বলে—“চলো, আরও একটু পড়ি!”

তাই বলা যায়, বই পড়া শুধু সময় কাটানো নয়, এটি আমাদের মস্তিষ্কের জন্য এক প্রকার আনন্দের খেলা। প্রতিটি অধ্যায়, প্রতিটি ঘটনা যেন মস্তিষ্ককে বলে—“তুমি ভালো করছো, চালিয়ে যাও!” আর এই অনুভূতিই ডোপামিনকে সক্রিয় করে তোলে, যা আমাদের প্রতিদিনের জীবনে সুখী থাকার একটি প্রাকৃতিক উপায়।

২। সেরোটোনিন – বই পড়া মনের ভারসাম্যের বন্ধু

আমরা যখন দুশ্চিন্তায় থাকি, রাগ করি বা মন খারাপ হয়, তখন মনে হয় যেন কিছুই ভালো লাগছে না। ঠিক এখানেই সাহায্য করে সেরোটোনিন নামের সুখ হরমোন। বই পড়ার সময় এই হরমোন বাড়তে শুরু করে এবং আমাদের মনকে শান্ত করে তোলে।

ভাবুন, আপনি প্রকৃতি নিয়ে লেখা একটি বই পড়ছেন। সেখানে আছে পাহাড়ের দৃশ্য, নদীর বয়ে যাওয়া স্রোত, কিংবা পাখির কিচিরমিচির। এই লেখাগুলো পড়তে পড়তে আপনার মাথায় এক ধরনের শান্তি নেমে আসে। মস্তিষ্ক তখন সেরোটোনিন নিঃসরণ করে, যা আপনার মনের ভেতরে প্রশান্তি আনে।

সেরোটোনিনকে বলা হয় “mood stabilizer”। অর্থাৎ এটি আমাদের মেজাজকে ঠিক রাখে। যখন সেরোটোনিনের পরিমাণ সঠিক থাকে, তখন আমরা খুশি থাকি, সহজে রাগ করি না এবং মন খারাপও তাড়াতাড়ি দূর হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, বই পড়ার সময় মানুষ গভীরভাবে মনোযোগী হয়, ফলে নেতিবাচক চিন্তা কমে যায়। এভাবে সেরোটোনিন আমাদের মনকে হালকা করে দেয়।

শুধু মন শান্ত করা নয়, সেরোটোনিন আমাদের ঘুমের মানও ভালো করে। আপনি যদি শোবার আগে প্রিয় বই পড়েন, তাহলে ধীরে ধীরে আপনার মাথা হালকা হয়ে আসে, টেনশন কমে যায়, আর ঘুম তাড়াতাড়ি আসে। এর কারণ হলো—মস্তিষ্ক সেরোটোনিন তৈরি করে শরীরকে জানায়, “এখন বিশ্রাম নাও।”

আরেকটি দারুণ দিক হলো, সেরোটোনিন আমাদের সামাজিক আচরণেও প্রভাব ফেলে। যারা নিয়মিত বই পড়েন, তারা অনেক সময় সহজে কথা বলতে পারেন, বন্ধুত্ব করতে পারেন এবং অন্যের অনুভূতি বুঝতে পারেন। কারণ গল্প পড়ার সময় আমরা চরিত্রগুলোর অনুভূতি কল্পনা করি, যা আমাদের ভেতরে সহানুভূতি জাগায়।

তাই বলা যায়, বই পড়া শুধু জ্ঞান দেয় না, এটি আমাদের মনের ভারসাম্য রাখার এক প্রাকৃতিক ওষুধ। বই যখন আমাদের হাসায়, কাঁদায় বা স্বপ্ন দেখায়—তখন মস্তিষ্ক সেরোটোনিন নিঃসরণ করে আমাদের ভিতর থেকে প্রশান্তি এনে দেয়।

৩। বই পড়া মানসিক চাপ কমায় – হরমোনের জাদু

আজকের দিনে চাপ বা স্ট্রেস আমাদের জীবনের সঙ্গী হয়ে গেছে। পড়াশোনার চাপ, কাজের চাপ, কিংবা ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে অনেক সময় আমরা অস্থির হয়ে যাই। এই চাপ যদি দীর্ঘদিন ধরে থেকে যায়, তবে শরীরে কর্টিসল নামের এক হরমোন বেড়ে যায়, যা আমাদের মন খারাপ করে দেয়। সুখবর হলো—বই পড়া এই কর্টিসল কমাতে সাহায্য করে এবং তার জায়গায় সুখ হরমোন বাড়িয়ে তোলে।

ভাবুন, সারাদিন কাজের ব্যস্ততায় মাথা ঘুরছে। আপনি যদি একটু সময় নিয়ে প্রিয় বই হাতে নেন, ধীরে ধীরে মন অন্যদিকে চলে যাবে। গল্পের চরিত্র, কাহিনীর মোড় কিংবা নতুন তথ্যগুলো আপনার দুশ্চিন্তা ভুলিয়ে দেবে। এতে কর্টিসলের প্রভাব কমে গিয়ে মস্তিষ্ক থেকে ডোপামিন ও সেরোটোনিন নিঃসরণ বাড়ে। ফলে আপনি হালকা, আনন্দিত আর শান্ত অনুভব করবেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে মাত্র ৩০ মিনিট বই পড়া আমাদের মানসিক চাপ অনেকটা কমিয়ে দিতে পারে। যারা নিয়মিত বই পড়েন, তারা উদ্বেগ ও হতাশা থেকে দ্রুত বের হয়ে আসতে পারেন। এর কারণ হলো—বই পড়ার সময় আমরা অন্য এক জগতে ডুবে যাই, যা আমাদের মনকে নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে সরিয়ে আনে।

এছাড়া বই পড়া আমাদের হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। যখন আমরা টেনশনে থাকি, তখন হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। কিন্তু বই পড়ার সময় মন শান্ত হয়, শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়ে আসে এবং হৃদস্পন্দন ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। এই শারীরিক পরিবর্তনই আবার মস্তিষ্ককে সুখ হরমোন বাড়াতে উৎসাহিত করে।

আরেকটি দিক হলো—স্ট্রেস কমলে আমাদের সৃজনশীলতা বাড়ে। দুশ্চিন্তায় থাকলে মস্তিষ্ক যেন এক জায়গায় আটকে যায়, কিন্তু বই পড়া নতুন ভাবনা দেয়, কল্পনা শক্তি জাগায়। তখন ডোপামিন আমাদেরকে আরও সৃষ্টিশীল হতে সাহায্য করে।

তাই বলা যায়, বই পড়া হলো এক ধরনের প্রাকৃতিক স্ট্রেস থেরাপি। এটি শুধু মন ভালো করে না, শরীরকেও সুস্থ রাখে। প্রতিদিন অল্প কিছু সময় বইয়ের সঙ্গে কাটানো মানে হলো নিজের জীবনে শান্তি ও সুখ বাড়ানো।

৪। বই পড়া আত্মবিশ্বাস ও ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলে

আমাদের জীবনে অনেক সময় মনে হয়—“আমি পারব তো?” বা “আমি কি যথেষ্ট ভালো?” এই ধরনের সন্দেহ আসলেই আত্মবিশ্বাসকে কমিয়ে দেয়। কিন্তু বই পড়া ধীরে ধীরে আমাদের মনের ভেতরে আত্মবিশ্বাস আর ইতিবাচক চিন্তা গড়ে তোলে, আর এ কাজটাও হয় সুখ হরমোনের সহায়তায়।

যখন আমরা একটি বই পড়ি, তখন অনেক নতুন জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করি। এই শেখার আনন্দে ডোপামিন বাড়ে। প্রতিবার কিছু শিখে মস্তিষ্ক আমাদের পুরস্কার দেয়—যা আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে তোলে। উদাহরণস্বরূপ, একটি বিজ্ঞান বিষয়ক বই পড়লে আমরা নতুন তথ্য জানি, যা আলোচনা করার সময় আমাদের আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।

এছাড়া গল্প বা জীবনী পড়লে আমরা দেখি—কত মানুষ চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে সফল হয়েছেন। এসব পড়তে পড়তে আমাদের ভেতর সেরোটোনিন নিঃসৃত হয়, যা মানসিক ভারসাম্য আনে এবং ইতিবাচক মনোভাব গড়ে দেয়। তখন মনে হয়—“হ্যাঁ, আমিও পারব।”

বই পড়া আমাদের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতাও বাড়ায়। কারণ গল্প পড়ার সময় আমরা চরিত্রগুলোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ভাবি, তারা ঠিক করেছে না ভুল করেছে তা বিচার করি। এতে আমাদের মস্তিষ্ক চিন্তা করতে শিখে যায়। যখন কোনো সমস্যার সমাধান করতে পারি, তখন ডোপামিন আবার সক্রিয় হয় এবং আমাদের আরও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।

একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—বই পড়া আমাদের ভয় ও দুশ্চিন্তা কমায়। যেমন, যদি আমরা স্বাস্থ্য নিয়ে কোনো ভালো বই পড়ি, তাহলে অনেক অজানা ভয় দূর হয়ে যায়। আবার, প্রেরণামূলক বই পড়লে হতাশা থেকে বের হতে সাহায্য করে। এতে সেরোটোনিন কাজ করে মনকে স্থির রাখে।

এভাবে ধীরে ধীরে বই পড়া আমাদের মস্তিষ্কে এমন এক পরিবেশ তৈরি করে যেখানে সুখ হরমোনগুলো সক্রিয় থাকে। ফলাফল হলো—আমরা আরও আত্মবিশ্বাসী, ইতিবাচক এবং আশাবাদী হয়ে উঠি। আর এই আত্মবিশ্বাস আমাদের জীবনের প্রতিটি কাজে সাফল্যের পথে এগিয়ে নেয়।

৫। সুখী জীবনের সঙ্গী হিসেবে বই পড়া

প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনে আমরা অনেক সময় খেয়াল করি না, কতটা চাপ আর দুশ্চিন্তা আমাদের ঘিরে রাখে। কিন্তু বই পড়া হতে পারে সেই সহজ উপায়, যা আমাদের ভেতরে সুখ হরমোন বাড়িয়ে দেয় এবং জীবনকে আরও সুন্দর করে তোলে।

যখন আমরা নিয়মিত বই পড়ি, তখন মস্তিষ্কে ডোপামিন ও সেরোটোনিনের মাত্রা ঠিক থাকে। ফলে মন সবসময় ভালো থাকে, ছোটখাটো বিষয়ে বিরক্তি কমে যায়, আর জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়। প্রতিটি অধ্যায় পড়তে পড়তে আমাদের মনে আনন্দ জমা হতে থাকে, যা আমাদের দিনের ক্লান্তি দূর করে।

বই পড়া শুধু একা থাকলেই আনন্দ দেয় না, এটি পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ককেও মজবুত করে। ধরুন, আপনি একটি মজার গল্প পড়লেন এবং সেটা আপনার সন্তান বা বন্ধুকে শোনালেন—তখন একসঙ্গে হাসাহাসি হলো, অনুভূতি ভাগাভাগি হলো। এতে অক্সিটোসিন নামের আরেকটি সুখ হরমোন সক্রিয় হয়, যা সম্পর্ককে আরও উষ্ণ করে তোলে।

আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো, বই পড়া আমাদের দীর্ঘমেয়াদে সুখী ও সুস্থ রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত বই পড়েন তারা মানসিকভাবে অনেক বেশি স্থিতিশীল হন। বয়স বাড়লেও তারা স্মৃতিশক্তি ভালোভাবে ধরে রাখতে পারেন এবং ডিপ্রেশনে ভোগার সম্ভাবনা কমে যায়।

বই পড়া আমাদের জীবনে এক ধরনের মানসিক ব্যায়ামের মতো। যেমন শরীরের জন্য ব্যায়াম দরকার, তেমনি মস্তিষ্কের জন্য দরকার বই। প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট বই পড়া মানে হলো সুখ হরমোনের একটি স্বাভাবিক উৎস খুঁজে পাওয়া, যেখানে কোনো ওষুধ লাগে না, কোনো খরচ হয় না—শুধু দরকার একটু সময় আর মন।

সবশেষে বলা যায়, বই পড়া আমাদের জীবনের সুখের সঙ্গী। এটি একদিকে মন ভালো রাখে, অন্যদিকে জ্ঞান বাড়ায়, চিন্তাভাবনা প্রসারিত করে এবং জীবনের মান উন্নত করে। তাই প্রতিদিনের অভ্যাসে বই পড়াকে জায়গা দিন, কারণ এটি সুখী জীবনের এক অমূল্য চাবিকাঠি।

উপসংহার

বই পড়া শুধু জ্ঞান অর্জনের মাধ্যম নয়, এটি আমাদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার এক চমৎকার উপায়। প্রতিদিন কিছু সময় বই পড়লে মস্তিষ্কে ডোপামিন ও সেরোটোনিন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা আমাদের মনকে আনন্দিত, প্রশান্ত ও ইতিবাচক রাখে। এই হরমোনগুলো আমাদের চাপ কমাতে, আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এবং জীবনের প্রতি ভালো দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলতে সাহায্য করে।

প্রতিটি গল্প, প্রতিটি অধ্যায় আমাদের নতুন কিছু শিখায়, নতুন অনুভূতি দেয় এবং আমাদের ভেতরের সুখকে আরও সমৃদ্ধ করে। বই পড়ার মাধ্যমে আমরা শুধু অন্যের জীবনের অভিজ্ঞতা পাই না, বরং নিজের মনের শান্তি, আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও চিন্তাভাবনার ক্ষমতাও বৃদ্ধি করি। এটি হলো এক প্রাকৃতিক উপায়, যা কোনো দুশ্চিন্তা বা হতাশাকে দূরে সরিয়ে আমাদের আনন্দে ভরিয়ে দেয়।

শুধু তাই নয়, বই পড়া পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তেও সাহায্য করে। যখন আমরা গল্প শেয়ার করি বা বইয়ের শিক্ষাকে অন্যের সঙ্গে ভাগ করি, তখন আনন্দের সঙ্গে অক্সিটোসিন হরমোন নিঃসৃত হয়, যা সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে। এটি প্রতিদিনের জীবনে সুখ, স্বাস্থ্য এবং মানসিক স্থিতিশীলতার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।

সর্বশেষে বলা যায়, বই পড়া আমাদের জীবনের জন্য এক ধরনের মানসিক ও আবেগিক প্রশিক্ষণ। এটি শুধু মনকে আনন্দ দেয় না, জীবনকে সমৃদ্ধ করে এবং আমাদের সুখী ও সুস্থ রাখে। তাই প্রতিদিনের রুটিনে বই পড়াকে অন্তর্ভুক্ত করুন এবং নিজের ভেতরের সুখ হরমোনকে জাগিয়ে তুলুন—ডোপামিন ও সেরোটোনিনের চমক আপনার জীবনে আনার জন্য প্রস্তুত।

Leave a Comment

You cannot copy content of this page