ভাষা হলো মানুষের চিন্তা, ভাবনা ও অনুভূতির সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম। আমরা ভাষার মাধ্যমে শুধু কথা বলি না, বরং নতুন জ্ঞান অর্জন করি, সম্পর্ক গড়ি এবং সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত থাকি। পৃথিবীতে হাজারো ভাষা রয়েছে, কিন্তু সেগুলোর মধ্যে কিছু ভাষা এমন যা কোটি কোটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
আজকের এই বিশ্বায়িত যুগে ভাষার গুরুত্ব আরও বেড়ে গেছে। আন্তর্জাতিক যোগাযোগ, শিক্ষা, ব্যবসা এবং সংস্কৃতির আদান-প্রদানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভাষাগুলো বিশেষ ভূমিকা রাখে। এই ভাষাগুলো শেখা মানে শুধু অন্যের সাথে সহজে যোগাযোগ করা নয়, বরং জীবনের নানা ক্ষেত্রে সুযোগ-সুবিধা অর্জনের পথ খুলে দেওয়া।
এই লেখায় আমরা জানবো বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০টি ভাষা সম্পর্কে। প্রতিটি ভাষার নিজস্ব একটি গল্প, ইতিহাস ও গুরুত্ব আছে যা আমাদের জীবন ও সমাজকে আলোকিত করে। তাহলে চলুন, ভাষার এই যাত্রায় আমাদের সাথে থাকুন এবং শিখুন সেই ভাষাগুলো যেগুলো আজকের বিশ্বকে একত্রিত করে।
১। ভাষা – মানব সভ্যতার সবচেয়ে শক্তিশালী উপহার
আমরা প্রতিদিন কথা বলি, অনুভব প্রকাশ করি, গল্প বলি কিংবা কিছু শিখি — সবই সম্ভব হয় একটি শক্তিশালী মাধ্যমের মাধ্যমে, আর তা হলো ভাষা। ভাষা শুধু শব্দ নয়, এটি আমাদের চিন্তা, সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং ভবিষ্যতের সাথে গভীরভাবে জড়িত। ছোট একটা শব্দও অনেক বড় অর্থ প্রকাশ করতে পারে, এবং একটি ভাষা পারে পুরো জাতিকে গড়ে তুলতে।
ভাষা আমাদের একে অপরের সাথে যুক্ত করে। যেমন ধরুন, তুমি যখন তোমার বন্ধুকে বলো “চলো খেলতে যাই”, তখন সে তোমার কথা বুঝে, কারণ তোমরা একই ভাষায় কথা বলো। এখন ভাবো, পৃথিবীতে যদি হাজার হাজার ভাষা থাকে, তাহলে কত রকমভাবে মানুষ পরস্পরের সঙ্গে কথা বলে! এটাই ভাষার বৈচিত্র্য।
বর্তমান বিশ্বের কিছু ভাষা এতটাই জনপ্রিয় ও ব্যবহৃত হয় যে, সেগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ, ব্যবসা, শিক্ষা ও যোগাযোগে ব্যবহৃত হয়। এই ভাষাগুলোর মাধ্যমে এক দেশের মানুষ অন্য দেশের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে সহজে।
ভাষা শুধু মনের ভাব প্রকাশের জন্য নয়, এটি কাজ, ভবিষ্যৎ ও জীবন গড়ার হাতিয়ার। তুমি যদি পৃথিবীর জনপ্রিয় ভাষাগুলো শিখতে পারো, তবে তোমার জন্য খুলে যাবে নতুন দিগন্ত। তুমি নতুন বন্ধু তৈরি করতে পারবে, ভালো শিক্ষায় যুক্ত হতে পারবে, এমনকি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজের সুযোগও পাবে।
আজকে আমরা এমন ১০টি ভাষা সম্পর্কে জানব, যেগুলো পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় এবং জনপ্রিয়। প্রতিটি ভাষার পেছনে আছে একটা ইতিহাস, আছে একটা বিশাল জনগোষ্ঠী যারা সেই ভাষা দিয়ে কথা বলে, স্বপ্ন দেখে এবং জীবন গড়ে।
২। ১ম ভাষা – ইংরেজি (English): বিশ্বকে যুক্ত করার সেতু
ইংরেজি হলো এমন একটি ভাষা যা আজ পৃথিবীর প্রায় সব দেশের মানুষ কিছু না কিছু জানে বা শেখে। এটি এমন একটি আন্তর্জাতিক ভাষা যা ব্যবসা, শিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এমনকি বিনোদনের ক্ষেত্রেও ব্যবহার হয়।
বিশ্বে বর্তমানে প্রায় ১৫০ কোটিরও বেশি মানুষ ইংরেজি ভাষায় কথা বলেন। যদিও ইংরেজিকে মাতৃভাষা হিসেবে ব্যবহার করে এমন মানুষ প্রায় ৩৭ কোটি, তবুও এটি দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি শেখা ভাষা। মানে হলো, যারা প্রথমে অন্য ভাষায় কথা বলেন, তারাও পরবর্তীতে ইংরেজি শেখেন।
ইংরেজি ভাষার এমন জনপ্রিয়তার কারণ অনেক।
প্রথমত, বিশ্বের অনেক দেশের অফিসিয়াল বা সরকারি ভাষা এটি।
দ্বিতীয়ত, প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের অধিকাংশ বিষয় ইংরেজিতে পাওয়া যায়।
তৃতীয়ত, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষায় লেখা বই, গবেষণা ও প্রবন্ধের গুরুত্ব অনেক বেশি।
ইংরেজি ভাষা জানলে একজন মানুষ সহজে অন্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে, বিদেশে পড়াশোনার সুযোগ পায় এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ পায়।
ধরো, তুমি ইংরেজি জানো, তাহলে তুমি ইউটিউবের ভিডিওগুলো সহজে বুঝতে পারবে, গুগল থেকে ভালোভাবে খোঁজ করতে পারবে, এমনকি ChatGPT-এর মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্ল্যাটফর্মও ইংরেজিতে চালাতে পারবে।
ইংরেজি শেখা এখন আর বিলাসিতা নয়, বরং জীবনের প্রয়োজনীয় অংশ হয়ে উঠেছে। এমনকি বাংলাদেশেও ইংরেজি এখন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, এমনকি চাকরির জন্য অপরিহার্য।
অনেকেই ভাবে ইংরেজি কঠিন, কিন্তু যদি প্রতিদিন একটু একটু করে শেখা যায়, তাহলে এটিকে ভালো বন্ধু বানানো যায়।
এইজন্যই ইংরেজিকে বলা হয় — “The Global Language”, মানে বিশ্বভাষা।
তাই পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় ভাষার তালিকায় ইংরেজি নিশ্চিতভাবেই রয়েছে শীর্ষে।
৩। ২য় ভাষা – চীনা (ম্যান্ডারিন) ভাষা: বৃহত্তম মাতৃভাষা
চীনা ভাষার সবচেয়ে প্রচলিত রূপ হলো ম্যান্ডারিন। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষ মাতৃভাষা হিসেবে ব্যবহার করে। আজকের দিনে প্রায় ৯০ কোটি লোক ম্যান্ডারিন ভাষায় কথা বলেন। চিন ছাড়াও অনেক এশীয় দেশে এই ভাষার ব্যবহার দেখা যায়।
ম্যান্ডারিন ভাষার গুরুত্ব অনেকদিক থেকে বিশাল। চীন হচ্ছে বিশ্বের জনসংখ্যায় প্রথম, আর অর্থনীতিতে দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। তাই ব্যবসা, প্রযুক্তি এবং সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানে ম্যান্ডারিন ভাষার ভূমিকা অপরিসীম।
চীনা ভাষার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এর লেখন পদ্ধতি, যা হায়ারোগ্লিফিক বা চিহ্নের মত। বাংলার অক্ষরের মতো এটি বর্ণমালা নয়, বরং প্রতিটি চিহ্নের একটি অর্থ ও উচ্চারণ থাকে। তাই অনেকেই মনে করেন চীনা ভাষা শেখা কঠিন।
তবুও, যারা ম্যান্ডারিন শিখতে পারেন, তারা সহজেই চীনের বিশাল বাজার ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সাথে যুক্ত হতে পারেন।
চীনা সিনেমা, গান, ও খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ম্যান্ডারিন ভাষা শেখার প্রবণতাও বেড়েছে বিশ্বজুড়ে।
স্মার্টভাবে শিখলে, ম্যান্ডারিন ভাষা তোমার জন্য নতুন দরজা খুলে দিতে পারে — ব্যবসায়িক সুযোগ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক বন্ধু পর্যন্ত।
৪। ৩য় ভাষা – স্প্যানিশ (Spanish): সারা দুনিয়ায় আলোড়ন
স্প্যানিশ ভাষা বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ভাষা। প্রায় ৫৮ কোটি মানুষ স্প্যানিশকে তাদের মাতৃভাষা হিসেবে ব্যবহার করে। এটি স্পেন, ল্যাটিন আমেরিকার বেশির ভাগ দেশ, এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অঞ্চলে প্রধান ভাষা।
স্প্যানিশ ভাষার একটি বড় সুবিধা হলো এর সরল উচ্চারণ এবং ব্যাকরণ, যা অনেকের জন্য শেখা সহজ করে তোলে। অনেক ইংরেজি ভাষাভাষীর জন্য স্প্যানিশ শেখা তুলনামূলক সহজ। তাই স্প্যানিশ বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের কাছে খুবই জনপ্রিয়।
বিশ্বজুড়ে স্প্যানিশ ভাষার গুরুত্ব বাড়ছে কারণ এটি ব্যবসায়, সংস্কৃতি, সিনেমা, সংগীত এবং রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ভাষা। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্প্যানিশ ভাষাভাষীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, যা স্প্যানিশ ভাষার চাহিদা আরও বৃদ্ধি করছে।
স্প্যানিশ শেখা মানে শুধু আরেকটি ভাষা শেখা নয়, এটি একটি সম্পূর্ণ নতুন সংস্কৃতি এবং মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করার সুযোগ। স্প্যানিশ ভাষার মাধ্যমে তুমি ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশের ঐতিহ্য, গান, নাচ ও খাবারের সঙ্গে পরিচিত হতে পারো।
এছাড়া, যদি তুমি ভ্রমণ ভালোবাসো, তাহলে স্প্যানিশ শেখা তোমার জন্য অনেক দরজা খুলে দিতে পারে। কারণ স্পেন ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোতে স্প্যানিশ প্রধান ভাষা।
৫। ৪র্থ ভাষা – হিন্দি (Hindi): ভারত ও পাশ্ববর্তী অঞ্চলের প্রাণ স্পন্দন
হিন্দি ভাষা মূলত ভারতের অন্যতম প্রধান ভাষা এবং বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ভাষা। প্রায় ৪৫ কোটি মানুষ এই ভাষাকে মাতৃভাষা হিসেবে ব্যবহার করে। ভারতের পাশাপাশি ফিজি, মরিশাস, নাইপাল এবং মধ্যপ্রাচ্যের কিছু অঞ্চলেও হিন্দি ভাষাভাষী মানুষের বসবাস রয়েছে।
হিন্দির গুরুত্ব শুধু সংখ্যায় নয়, বরং এটি ভারতীয় সংস্কৃতি, সিনেমা ও সাহিত্যের মূল ভাষাও বটে। বলিউড, অর্থাৎ ভারতীয় সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির প্রধান ভাষা হলো হিন্দি, যা বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।
হিন্দি ভাষায় প্রচুর লোকগীতি, গল্প, কবিতা ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান রচিত হয়েছে। তাই এটি ভারতীয় জনজীবনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।
যারা হিন্দি শিখেন, তারা ভারতের বৃহৎ জনসংখ্যার সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ করতে পারে এবং ভারতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য উপভোগ করতে সক্ষম হয়।
হিন্দি ভাষা শেখার মাধ্যমে আপনি ভারতের বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেও প্রবেশ করতে পারেন, কারণ দেশটি দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
৬ । ৫ম ভাষা – আরবি (Arabic): ধর্ম ও সংস্কৃতির ভাষা
আরবি ভাষা বিশ্বের এক অন্যতম প্রাচীন এবং সম্মানিত ভাষা। প্রায় ৩৭ কোটি মানুষ আরবি ভাষাকে মাতৃভাষা হিসেবে ব্যবহার করে। এটি প্রধানত মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতে প্রচলিত।
আরবি ভাষার গুরুত্ব শুধু সংখ্যায় নয়, বরং ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কারণে বিশাল। ইসলাম ধর্মের পবিত্র কোরআন শরীফ আরবি ভাষায় নাজিল হয়েছে, তাই মুসলিম বিশ্বের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভাষা।
আরবি ভাষা শেখার মাধ্যমে আপনি মুসলিম বিশ্বের ঐতিহ্য, সাহিত্য, ইতিহাস এবং ধর্মীয় শিক্ষার গভীরে প্রবেশ করতে পারেন। এছাড়া, মধ্যপ্রাচ্যের ব্যবসা, রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও আরবির ভূমিকা বড়।
আরবির বিভিন্ন ডায়ালেক্ট বা উপভাষা আছে, কিন্তু লেখার জন্য সাধারণত ফুসল্লাহ (ফরমাল আরবি) ব্যবহার করা হয়, যা শিক্ষিত ও সরকারি কাজে ব্যবহৃত হয়।
বিশ্বের গ্যাস, তেল ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের বড় একটি অংশ এই অঞ্চলে থাকায় আরবি ভাষা শেখা ব্যবসায়ীদের জন্যও মূল্যবান।
আরবি ভাষার আলফাবেট, অর্থাৎ বর্ণমালা, বাংলার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এবং ডান থেকে বাম দিক থেকে লেখা হয়, যা শেখার প্রথম ধাপে একটু চ্যালেঞ্জ হতে পারে। তবে ধৈর্য্য ধরে শেখা সম্ভব।
৭ । ৬ষ্ঠ ভাষা – বাংলা (Bangla): হৃদয়ের ভাষা
বাংলা ভাষা বিশ্বের সবচেয়ে মিষ্টি ও সমৃদ্ধ ভাষাগুলোর একটি। প্রায় ২৭ কোটি মানুষ এই ভাষাকে মাতৃভাষা হিসেবে ব্যবহার করে। বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম ইত্যাদি অঞ্চলে বাংলা ভাষার প্রচলন রয়েছে।
বাংলা ভাষা কেবল কথা বলার মাধ্যম নয়, এটি এক বিশাল সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বাহক। বাঙালির সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়সহ অসংখ্য মহান লেখক ও কবি রয়েছেন, যাঁরা বাংলা ভাষাকে বিশ্বমঞ্চে পরিচিত করেছেন।
বাংলা ভাষা শেখার মাধ্যমে শুধু মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায় না, বরং এর মাধ্যমে হাজার হাজার বছরের সাহিত্য, সংগীত ও ইতিহাসের সমৃদ্ধ ভান্ডারও উপভোগ করা যায়।
বাংলা ভাষায় কথা বলা, লেখা এবং শোনার মাধ্যমে আমরা আমাদের পরিচয় ও সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে পারি। এটি আমাদের ভাব প্রকাশের সবচেয়ে সহজ এবং প্রাণবন্ত মাধ্যম।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশী ও বাঙালি সম্প্রদায় বাংলা ভাষাকে প্রাণ দিয়ে ধরে রেখেছে। তাই বাংলা শেখা আমাদের সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হওয়ার এক বিশেষ উপায়।
৮ । ৭ম ভাষা – ফরাসি (French): সৌন্দর্য ও কৃষ্টির ভাষা
ফরাসি ভাষা বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ভাষা, যার প্রায় ২৭ কোটি মানুষ বিভিন্ন দেশে ব্যবহার করে। এটি ফ্রান্স, কানাডার কুইবেক, অনেক আফ্রিকান দেশ, সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়ামসহ অনেক জায়গায় অফিসিয়াল ভাষা।
ফরাসি ভাষা তার নরম এবং সুন্দর উচ্চারণের জন্য খ্যাত। অনেকেই এটিকে “ভাষাগুলোর রানি” বা “সৌন্দর্যের ভাষা” বলে ডাকে। ফরাসি ভাষার সাহিত্য, শিল্প, রান্না ও ফ্যাশনে বিশেষ মর্যাদা রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় এবং কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ফরাসি ভাষার গুরুত্ব অনেক। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থায় ফরাসি ভাষা অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ফরাসি ভাষা শেখার মাধ্যমে আপনি ইউরোপীয় সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং আধুনিক জীবনযাত্রার সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন। এছাড়া ফরাসি ভাষা শেখা তোমাকে বিশ্বমানের শিল্পকলা ও সাহিত্যের দুনিয়ায় প্রবেশ করিয়ে দেয়।
ফরাসি ভাষার ব্যাকরণ ও উচ্চারণ প্রথমে কিছুটা কঠিন মনে হলেও নিয়মিত অনুশীলনে সহজ হয়ে যায়। বিশেষ করে যারা অন্য ইউরোপীয় ভাষা শেখেন, তাদের জন্য ফরাসি শেখা তুলনামূলক সহজ।
৯ । ৮ম ভাষা – রাশিয়ান (Russian): বিশাল ভূখণ্ডের ভাষা
রাশিয়ান ভাষা বিশ্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষা, যেটি প্রায় ১৫ কোটি মানুষের মাতৃভাষা। এটি রাশিয়া, বেলারুশ, কাজাখস্তান ও অন্যান্য পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোতে প্রচলিত।
রাশিয়ান ভাষা শুধু সংখ্যায় নয়, বরং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সাহিত্য ও ইতিহাসের ক্ষেত্রেও ব্যাপক প্রভাব রাখে। রাশিয়ান সাহিত্য বিশ্বসাহিত্যের অমূল্য অংশ, যেখানে লেভ টলস্তয়, ফিওদর দস্তয়েভস্কি ও আন্না আখমাতোভার মতো মহৎ কবি-সাহিত্যিক রয়েছেন।
রাশিয়ান ভাষা শেখার মাধ্যমে আপনি পূর্ব ইউরোপ ও সেন্ট্রাল এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অঞ্চলের সাথে সহজেই যুক্ত হতে পারবেন।
রাশিয়ান ভাষার বর্ণমালা স্লাভিক বর্ণমালা, যা ল্যাটিন বর্ণমালার থেকে আলাদা। প্রথমে এটি শেখা চ্যালেঞ্জিং মনে হতে পারে, তবে নিয়মিত অনুশীলনে দ্রুত দক্ষতা অর্জন সম্ভব।
বিশ্ব রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও রাশিয়ান ভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। তাই অনেক ডিপ্লোম্যাট, গবেষক ও ব্যবসায়ী রাশিয়ান ভাষা শিখে থাকেন।
১০ । ৯ম ভাষা – জাপানি (Japanese): প্রযুক্তি ও সংস্কৃতির মিলনস্থল
জাপানি ভাষা প্রায় ১২ কোটি মানুষের মাতৃভাষা, প্রধানত জাপানে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি আধুনিক এবং ঐতিহ্যবাহী ভাষা যার নিজস্ব এক বিশেষত্ব আছে।
জাপানি ভাষার লেখা পদ্ধতি তিনটি প্রধান অংশে বিভক্ত – কানজি, হিরাগানা ও কাটাকানা। কানজি চীনা ভাষার অক্ষরের উপর ভিত্তি করে তৈরি, আর হিরাগানা ও কাটাকানা জাপানি শব্দ লেখার জন্য ব্যবহৃত হয়।
জাপানি ভাষা শেখা মানে শুধু ভাষা শেখা নয়, বরং জাপানের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, খাবার, সিনেমা, কার্টুন ও প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচিত হওয়া। জাপানের অ্যানিমে ও মাঙ্গা বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত জনপ্রিয়, এবং এই ভাষা শেখার মাধ্যমে তাদের আসল অর্থ বুঝতে অনেক সুবিধা হয়।
জাপানি ভাষার উচ্চারণ সহজ হলেও ব্যাকরণ কিছুটা জটিল হতে পারে, তাই ধৈর্য্য ধরে শেখা প্রয়োজন। জাপানের প্রযুক্তি ও ব্যবসায়িক শক্তি বিশ্বে তাৎপর্যপূর্ণ, তাই অনেক ছাত্র ও পেশাজীবী জাপানি ভাষা শিখতে আগ্রহী।
১১ । ১০ম ভাষা – পর্তুগিজ (Portuguese): বিশ্বের গ্লোবাল কানেক্টর
পর্তুগিজ ভাষা বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ভাষার মধ্যে রয়েছে, যার প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ এটি মাতৃভাষা হিসেবে ব্যবহার করে। এটি মূলত পর্তুগাল, ব্রাজিল, মজাম্বিক, অ্যাঙ্গোলা, গিনি-বিসাউ, তিমোর-লেস্তে ও কিছু আফ্রিকান ও এশিয়ান দেশে প্রচলিত।
পর্তুগিজ ভাষার জনপ্রিয়তার পেছনে রয়েছে এর ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক প্রভাব। এটি ইউরোপীয় দেশ পর্তুগালের ভাষা হলেও, ব্রাজিলের বৃহৎ জনসংখ্যার কারণে আজ এটি দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ভাষাগুলোর মধ্যে অন্যতম।
ব্রাজিলের অর্থনীতি এবং সাংস্কৃতিক প্রভাব বিশ্বে ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা পর্তুগিজ ভাষার গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি করছে। ব্রাজিলের ফুটবল, সংগীত, নৃত্য এবং উৎসব বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেছে এবং এই সংস্কৃতিকে বোঝার জন্য পর্তুগিজ ভাষা শেখা প্রয়োজন।
পর্তুগিজ ভাষার ব্যাকরণ ও উচ্চারণ তুলনামূলক সহজ, বিশেষ করে যারা ইতালীয় বা স্প্যানিশ ভাষায় দক্ষ, তাদের জন্য এটি শেখা অনেক সহজ হয়। এছাড়া, এটি ল্যাটিন বর্ণমালায় লেখা হয়, যা বাংলাভাষীদের জন্য শেখা সহজ করে তোলে।
বিশ্বে যেখানে বিভিন্ন সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক শক্তির মেলবন্ধন ঘটছে, সেখানে পর্তুগিজ ভাষার গুরুত্ব ক্রমশ বাড়ছে। যারা বিদেশি ভাষা শিখতে আগ্রহী তাদের জন্য এটি একটি চমৎকার বিকল্প।
উপসংহার:
এখন আমরা দেখলাম বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ১০টি ভাষা — ইংরেজি, ম্যান্ডারিন, স্প্যানিশ, হিন্দি, আরবি, বাংলা, ফরাসি, রাশিয়ান এবং জাপানি। প্রত্যেক ভাষার নিজস্ব ইতিহাস, সংস্কৃতি ও গুরুত্ব রয়েছে।
ভাষা শেখা মানে কেবল কথা বলা নয়, এটি একটি নতুন দুনিয়ায় প্রবেশের চাবিকাঠি। এই ভাষাগুলো শেখার মাধ্যমে আপনি নতুন সুযোগ, বন্ধু ও জ্ঞান লাভ করতে পারবেন।