ক্যারিয়ার গঠনের জন্য বিভিন্ন সময়ে সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয়। প্রতিটি সিদ্ধান্তই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জীবনযাত্রার ধরন মান, আয়, জীবনের গতি ইত্যাদি দ্বারা নির্ধারিত হতে পারে৷ আমাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তগুলি কেবল আমাদের নিজের জীবনকেই নয়, পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয় এবং বৈশ্বিক স্তরকেও প্রভাবিত করতে পারে৷
যেমন বাহিরের দেশের চাকরির বাজার, দেশের চাকরির অবস্থা, সমাজের চাহিদা ইত্যাদি দেখে অনেক সময় মানুষ শিক্ষার জন্য একটি নির্দিষ্ট ধারা বা শাখা বেছে নেয়। যেহেতু ক্যারিয়ারের সিদ্ধান্তগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলিকে চিন্তা করে দেখা দরকার।
ক্যারিয়ার কর্মজীবন জীবনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিক, যা আপনার ভবিষ্যৎকে রূপ দেবে এবং আপনাকে একটি নির্দিষ্ট সৃষ্টিতে আত্মবিশ্বাস ও পুরষ্কার পেতে সাহায্য করতে পারে। এটি আবেগ, উদ্দীপনা এবং আবেগ জড়িত করতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদের জন্য একটি দিকনির্দেশনায় আপনার জীবনকে গাইড করতে সহায়তা করতে পারে।
এটি আপনাকে নতুন কিছু শেখার সুযোগ দেবে, আপনাকে আপনার দক্ষতা এবং ক্ষমতা উন্নত করতে সাহায্য করবে এবং আপনার উচ্চ লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে। যাইহোক, যখন আপনি একটি পেশা বেছে নেন তখন আপনার শখ এবং আপনার আত্মবিশ্বাসকে একটি ভূমিকা পালন করতে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক ধারণা পাওয়া এবং এগিয়ে যাওয়া আপনার ক্যারিয়ারে সাফল্য অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ক্যারিয়ারের গুরুত্ব আলোচনা করা হল
১।শেখার জন্য অনুপ্রেরণা
কর্মজীবন শিক্ষা অনুশীলনের মাধ্যমে, শিক্ষার্থীরা যখন বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে একটি বেছে নেয়, তখন তারা স্বাভাবিকভাবেই সংশ্লিষ্ট বিষয় শেখার আগ্রহ তৈরি করে। কর্মজীবন শিক্ষার মাধ্যমে, আমরা বুঝতে পারি যে আমরা যা শিখছি তা আমাদের জন্য কীভাবে দরকারী এবং ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। এই উপলব্ধি শেখার আগ্রহ বাড়ায় এবং প্রেরণা তৈরি করে।
২। উচ্চতর জ্ঞান ও দক্ষতার বিকাশ
দিন যত যাচ্ছে, বিভিন্ন চাকরির জন্য আগের তুলনায় আরও জ্ঞান এবং দক্ষতার প্রয়োজন। ন্যূনতম স্তরের ভাষা দক্ষতা, বিশেষ করে মৌখিক যোগাযোগ দক্ষতা, গাণিতিক দক্ষতা, উপার্জনের প্রেরণা, সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলা ইত্যাদি যেকোনো ধরনের কাজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্কুলে বিভিন্ন বিষয় এবং কর্মজীবন শিক্ষার ধারণা শিক্ষার্থীদের এই যোগ্যতা এবং দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করে।
আরও পড়ুন
শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলার গুরুত্ব
মা হিসেবে নারীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য
৩। সংবেদনশীলতা তৈরি
কর্মজীবন শিক্ষার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন চাকরি, পেশা এবং পেশাদার ব্যক্তিদের সম্পর্কে জানতে পারি। তাদের সম্মান করতে শিখুন। এটি আমাদের বিভিন্ন পেশা ও কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত ব্যক্তিদের প্রতি সহনশীল, সহানুভূতিশীল এবং সংবেদনশীল হতে শেখায়।
৪। কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের প্রস্তুতি
প্রতিটি পেশার জন্য নির্দিষ্ট দক্ষতার প্রয়োজন। আমরা নির্দিষ্ট বিষয়ে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতা ইত্যাদির মাধ্যমে এই দক্ষতাগুলো অর্জন করি। এছাড়াও, কিছু সাধারণ দক্ষতা যেমন বিভিন্ন লোকের সাথে একত্রে কাজ করা, অন্যকে সাহায্য করা ইত্যাদির পাশাপাশি মনোযোগ, ধৈর্য, কাজের প্রতি নিষ্ঠা ইত্যাদির দক্ষতাও কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজন। ক্যারিয়ার শিক্ষা আমাদের অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত গুণাবলী ও দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা দেয়।
৫। সিদ্ধান্ত গ্রহণ
ক্যারিয়ার তৈরীর জন্য আমাদের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যেমন আমি কোন বিভাগে পড়ব বা ভবিষ্যতে কোন পেশা বা স্কলারশিপ বেছে নেব ইত্যাদি প্রতিটি সিদ্ধান্তই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জীবনযাত্রার ধরন মান, আয়, জীবনের গতি ইত্যাদি দ্বারা নির্ধারিত হতে পারে। আমাদের এই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র আমাদের নিজের জীবনকেই নয়, পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয় ও বৈশ্বিক স্তরকেও প্রভাবিত করতে পারে।
উদাহরণ স্বরূপ, আমাদের অধিকাংশ শিক্ষার্থী যদি বিজ্ঞান অধ্যয়ন করে এবং সংশ্লিষ্ট পেশায় নিয়োজিত হয়, তাহলে সমাজ এক হবে এবং অধিকাংশ শিক্ষার্থী যদি মানবিক বিষয়ে অধ্যয়ন করে এবং সংশ্লিষ্ট চাকরি করে, তাহলে সমাজ ভিন্ন হবে। এছাড়াও, বিজ্ঞান স্নাতকদের জন্য বিশ্ববাজারে অনেক চাকরি থাকলে, যা দেশে পাওয়া যায় না, অনেকে আরও ভালো চাকরির সন্ধানে অন্য দেশে চলে যেতে পারে।
আবার পুরো বিষয়টি উল্টো দেখা যায়। যেমন বহির্বিশ্বের চাকরির বাজার, দেশের চাকরির অবস্থা, সমাজের চাহিদা ইত্যাদি বিবেচনা করে অনেক সময় মানুষ শিক্ষার জন্য একটি নির্দিষ্ট ধারা বা শাখা বেছে নেয়। তাই আমরা জগত, সমাজ, পরিস্থিতি ইত্যাদির উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নিই। আবার পৃথিবী, সমাজ, পরিস্থিতি ইত্যাদিও আমাদের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল।
৬। পরিকল্পনা করতে উদ্বুদ্ধকরণ
কর্মজীবন শিক্ষা আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবন পরিকল্পনা করতে শেখায়। এটি পড়ে, আমরা কেবল শিক্ষা, বৃত্তি বা কাজের জন্য পরিকল্পনা করি না, বরং বৃহত্তর অর্থে জীবনের পরিকল্পনাও করি। এটা কখনো স্থির বা স্থির নয় বরং পরিবর্তনশীল। কিন্তু পরিকল্পনা মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে, কীভাবে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে তা নির্ধারণ করুন। সঠিক পরিকল্পনা অনেক সমস্যার সমাধান করে।
৭। সমাজজীবনে কর্ম ও পেশার চাহিদা
সমাজের জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। সমাজের মানুষ বিভিন্ন বৃত্তি, চাকরি ও পেশার মাধ্যমে উপার্জন ও জীবিকা নির্বাহ করে। সমাজের বিভিন্ন প্রয়োজনে মানুষ সমাজে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে যেমন পাপ, অস্ত্র, আশ্রয়, চিকিৎসা, নিরাপত্তা ইত্যাদি। কেউ নিজের বা তাদের পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য কাজ করে, কেউ আত্মতৃপ্তির জন্য কাজ করে।
জীবনে মানুষ কাজ করে চাহিদা পূরণ করে, তৃপ্তি আনে। এতে সমাজেরও উপকার হয়। কর্মজীবন শিক্ষা আমাদের এমন একটি চাকরি বেছে নিতে সাহায্য করে যেটিতে আমরা তুলনামূলকভাবে আগ্রহী এবং সফল। এটি কাজের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তুলতেও সাহায্য করে।
৮। পরিবর্তনশীল কাজের ধরন সম্পর্কে ধারণা
দেশে বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কাজের চাহিদা ও সুযোগ রয়েছে। প্রত্যেকের কাজের এই চাহিদা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। কর্মজীবন শিক্ষা আমাদের এই পরিবর্তনশীল চাহিদা সম্পর্কে জানতে এবং সেই অনুযায়ী বিভিন্ন জ্ঞান, দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা দিয়ে নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করে।
শেষ কথা
মস্তিষ্কের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে ব্যক্তিগত সাফল্যের পাশাপাশি মানবজাতির উপকার করাই ক্যারিয়ার চিন্তার মূল উদ্দেশ্য। ক্যারিয়ার শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ সম্পর্কিত বিষয়। যেখানে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ নেই সেখানে কর্মজীবন অনুপস্থিত। এই কারণে, একজন অশিক্ষিত কৃষক এবং একজন শিক্ষিত কৃষিবিদ যখন কৃষিকে জীবিকার ক্ষেত্র হিসাবে গ্রহণ করেন, তখন কৃষি কৃষকের জন্য একটি পেশা হলেও এটি কৃষিবিদদের জন্য একটি পেশা। অধিকন্তু, কর্মজীবন মানে শুধু পেশা নয়, পেশা ছাড়াও ব্যক্তির অন্তর্নিহিত গুণাবলী, জীবনের লক্ষ্য, উচ্চাকাঙ্ক্ষা, লালিত বিশ্বাস ও আদর্শ, সন্তুষ্টি, মানুষের দায়িত্ব, অর্থ উপার্জন ইত্যাদি।
প্রতিটি মানুষের জীবনে ক্যারিয়ারের গুরুত্ব অপরিসীম। ক্যারিয়ার সঠিক না হলে কখনোই একজন মানুষের জীবনে শতভাগ সফলতা আসেনা।কারণ যার ক্যারিয়ার যত বেশি উন্নত তার জীবন তত বেশি সুন্দর। জীবনের লক্ষ্য, উচ্চাকাঙ্ক্ষা, লালিত বিশ্বাস ও আদর্শ, সন্তুষ্টি, মানুষের দায়িত্ব, অর্থ উপার্জন ইত্যাদি বিষয়ে শতভাগ প্রাপ্তি আসবে কি আসবেনা তা নির্ভর করে ক্যারিয়ারের উপর।তাই ক্যারিয়ার গঠনের সিদ্ধান্ত গুরুত্বের সাথে নিতে হবে।কারণ এই সিদ্ধান্ত ব্যক্তি স্বার্থকে ছাপিয়ে পরিবার,সমাজ এবং বৈশ্বিক স্তরে প্রভাব ফেলে।
পড়াশোনা শেষ করে একটি আদর্শ ক্যারিয়ার গঠনের স্বপ্ন প্রত্যেকেরই থাকে। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনাও পূর্বপ্রস্তুতির অভাবে অনেকেরই সেই স্বপ্ন পুরন হয়না। তাই একটি সফল ক্যারিয়ার গঠনের জন্য ছাত্রজীবন থেকেই এই প্রস্তুতি নেওয়া আবশ্যক।