সার্বজনীন পেনশন হলো বাংলাদেশ সরকারের অবসরভাতা উদ্যোগের একটি ব্যবস্থা। একজন ব্যক্তির বয়স ও অবদানের হিসাবের উপর নির্ভর করে এই সুবিধার তারতম্য হয়ে থাকে। যদি অবদানের ন্যূনতম সংখ্যক অবদানের যোগ্যতার বছর থাকে সেক্ষেত্রে কেউ পেনশন দাবি করতে পারে।
দেশের নাগরিকদের পেনশনব্যবস্থার আওতায় আনতে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি (স্কিম) চালু করছে সরকার। গত ১৭ আগষ্ট, ২০২৩ বৃহস্পতিবার বহুল প্রতীক্ষিত এ কর্মসূচি উদ্বোধন করেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি উন্মুক্ত হয়েছে সবার জন্য।
সার্বজনীন পেনশন স্কিম প্রকারভেদ
সার্বজনীন পেনশনের অধীনে চার ধরনের অবসরভাতা প্রদান করা হবে
প্রগতি: এটি বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের জন্য। এর মাসিক চাঁদার হার ৳১০০০ থেকে ৳৫০০০ হবে।
সুরক্ষা: এটি আত্মনির্ভরশীল ব্যক্তিদের জন্য। এর মাসিক চাঁদার হার ৳৫০০ থেকে ৳৫০০০ হবে।
সমতা: এটা নিম্ন আয়ের লোকদের জন্য যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। এর মাসিক চাঁদার হার হল ৳৫০০। চাঁদার ৫০% সরকার প্রদান করবে।
প্রবাসী: এটি দেশের বাইরে কর্মরত নাগরিকদের জন্য। এর মাসিক চাঁদার হার ৳৫০০ থেকে ৳৫০০০ হবে।
সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি বা স্কিম
সম্প্রতি সরকার প্রবর্তিত ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম’ দেশের সর্ব স্তরের মানুষকে টেকসই সামাজিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বলয়ে অন্তর্ভুক্তি করতে কার্যকর ও সময়োপযোগী একটি উদ্যোগ। এটি সরকারের একটি জনবান্ধব উদ্যোগ, যা দেশের অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করবে।
পেনশন কর্মসূচি বা স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হলে ৬০ বছর বয়সের পর থেকে আজীবন পেনশন সুবিধা পাবেন একজন চাঁদাদাতা। তবে চাঁদাদাতা মারা গেলে তাঁর নমিনি বা উত্তরাধিকারী পেনশন পাবেন। তবে এ ক্ষেত্রে চাঁদাদাতার ৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত হতে যত বছর বাকি থাকত, সেই সময় পর্যন্ত নমিনি পেনশন উত্তোলন করতে পারবেন।
এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে জারি করা হয়েছে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা; আর গঠন করা হয়েছে সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি ‘ইউপেনশন’ নামক ওয়েবসাইট উদ্বোধন করা হয়েছে। এ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ১৭ আগষ্ট, ২০২৩ থেকেই যে কেউ পেনশন কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারছেন।
ইমেজ : যেভাবে নিবন্ধিত হবেন সর্বজনীন পেনশন স্কিমে
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে গেলে ইউপেনশন ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। পেনশন কর্তৃপক্ষ বলেছে, ভুল তথ্য দিয়ে আবেদন করলে সেই আবেদন বাতিল হবে এবং জমাকৃত অর্থ ফেরতযোগ্য হবে না।
নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় প্রথমেই একটি প্রত্যয়ন পাতা আসবে; যেখানে লেখা থাকবে—‘এই মর্মে প্রত্যয়ন করছি যে আমি সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নই। সর্বজনীন পেনশন স্কিমবহির্ভূত কোনো ধরনের সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান থেকে সুবিধা গ্রহণ করি না। আমি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় কোনো ধরনের ভাতা গ্রহণ করি না।’
এই পাতার নিচের দিকে ‘আমি সম্মত আছি’ অংশে ক্লিক করলে দ্বিতীয় পাতায় গিয়ে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করা যাবে। এখানে আবেদনকারীকে প্রবাস, সমতা, সুরক্ষা বা প্রগতি—এই চার স্কিমের মধ্য থেকে প্রযোজ্য স্কিম বাছাই করতে হবে। একই সঙ্গে ১০, ১৩ বা ১৭ সংখ্যার এনআইডি নম্বর, জন্মতারিখ, মোবাইল নম্বর, ই–মেইল আইডি লিখে দিতে হবে। এরপর পাতার নিচের দিকে থাকা ক্যাপচা লিখে পরের পাতায় যেতে হবে।
ক্যাপচা দেওয়ার পরে আবেদনকারীর মোবাইল নম্বর ও ই–মেইলে একটি ওটিপি বা একবার ব্যবহারযোগ্য গোপন নম্বর আসবে, যা ফরমে দিয়ে পরবর্তী ধাপে যেতে হবে।
নিবন্ধন প্রক্রিয়ার পরের ধাপে আসবে ব্যক্তিগত তথ্যের পাতা। এ পাতায় এলে ব্যক্তির এনআইডি অনুযায়ী এনআইডি নম্বর, ছবি, আবেদনকারীর বাংলা ও ইংরেজি নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসবে (যেহেতু আগের পাতায় এনআইডি নম্বরের মাধ্যমে এ তথ্যগুলো দেওয়া হয়েছে)।
আরও পড়ুন
একটি মোবাইল হতে পারে আপনার জীবিকা নির্বাহের অন্যতম মাধ্যম
যেভাবে, যখন, যাদের দেওয়া হবে সার্বজনীন পেনশন
তবে এখানে আবেদনকারীর বার্ষিক আয় লিখতে হবে এবং পেশা, নিজ বিভাগ, জেলা ও উপজেলার নাম নির্বাচন করতে হবে। পেশা বাছাইয়ের ঘরে শিক্ষক, বেসরকারি চাকরিজীবী, ছোট ব্যবসায়ী, ব্যবসা, দিনমজুর, আইনজীবী, সাংবাদিক ইত্যাদি পেশার উল্লেখ আছে। সেখান থেকে নিজের পেশা নির্বাচন করতে হবে। সব লেখা সম্পন্ন হলে পরের ‘স্কিম তথ্য’–এর পাতায় যেতে হবে।
স্কিম তথ্যের পাতা এলে সেখান থেকে মাসিক চাঁদার পরিমাণ ও চাঁদা পরিশোধের ধরন বাছাই করতে হবে। চাঁদা পরিশোধের ধরনের মধ্যে মাসিক, ত্রৈমাসিক ও বার্ষিক—এ তিন অপশন রয়েছে। এরপর ব্যাংক তথ্যের ধাপে যেতে হবে।
ব্যাংক তথ্যের পাতায় আবেদনকারীর ব্যাংক হিসাবের নাম ও নম্বর, হিসাবের ধরন (সঞ্চয়ী অথবা চলতি), রাউটিং নম্বর, ব্যাংকের নাম (বাংলায়) ও ব্যাংকের শাখার নাম (ইংরেজিতে) লিখতে হবে। এরপর পরবর্তী নমিনি তথ্যের পাতায় যেতে হবে।
নমিনি তথ্যের পাতায় গিয়ে নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্মতারিখ দিয়ে নমিনিকে যুক্ত করতে হবে। এখানে একাধিক নমিনিও যুক্ত করা যাবে। এ সময় নমিনির মোবাইল নম্বর, নমিনির সঙ্গে সম্পর্ক, নমিনির প্রাপ্যতার হারের (একাধিক নমিনি হলে) তথ্য দিয়ে সর্বশেষ ‘সম্পূর্ণ ফরম’ ধাপে যেতে হবে।
এটিই নিবন্ধনের শেষ ধাপ। এ ধাপে আগে পূরণ করা ব্যক্তিগত তথ্য, স্কিম তথ্য, ব্যাংক তথ্য ও নমিনি তথ্য দেখানো হবে। সেখানে কোনো ভুল থাকলে আবার শুরুতে গিয়ে তথ্যের প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে হবে। আর সব তথ্য ঠিক থাকলে তাতে সম্মতি দিয়ে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। এ সময় চাইলে সম্পূর্ণ আবেদনটি ডাউনলোডও করতে পারবেন আবেদনকারী।
উল্লেখ্য, নিবন্ধনের পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে সব পাতার কাজ শেষ না করে পেছনে (ব্যাক) যাওয়া যাবে না। পেছনে গেলে সব প্রক্রিয়া নতুন করে শুরু করতে হবে। তবে সে ক্ষেত্রে পুরোনো তথ্যগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংরক্ষিত থাকবে; নতুন করে আর লিখতে হবে না।
সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা ২০২৩ দেখতে ভিজিট করুন ।
আপনি যদি বাংলাদেশ সরকারি ও বেসরকারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সহ গুরুত্বপূর্ন নিবন্ধ দেখতে আগ্রহী হন তাহলে ভিজিট করুন https://a2zchakri.com/ এই ওয়েবসাইটটি। আর আপনি চাইলে নিচে থাকা শেয়ার বাটন থেকে এই নিবন্ধটি আপনার পরিচিতদের মাঝে শেয়ার করতে পারেন। মনোযোগ দিয়ে আমাদের এই নিবন্ধটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।