শুরুতে যদি নেটওয়ার্ক এর কথায় আসি। তাহলে বলতে হয় কাজের সুবিধার্থে, কিংবা প্রয়োজনের একাধিক কম্পিউটার ও ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস এর মধ্যে, বিভিন্ন তথ্যের আদান – প্রদান করতে হয়। আর যাতে এসব ডিভাইস এর মধ্যে, সহজে তথ্যে আদান – প্রদান করা যায় তার জন্যে ডিভাইস গুলোকে, একে অপরের সাথে কানেক্ট করার নামই হলো নেটওয়ার্ক। আর এই কানেকশন গুলো হতে পারে, বায়ার কিংবা বায়ারলেস। অনলাইন জগতের সাথে আমাদের সংযোগ এখন, অনেকটা মৌলিক চাহিদায় পরিণত হয়েছে।
বর্তমানে প্রতিটা ক্ষেত্রই কোননা কোন ভাবেই, ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত। বিশ্বের সম্মুখসারির দেশগুলো তাদের সেবা এবং ব্যবস্থাসমূস, প্রায় সম্পূর্ণ ইন্টারনেট নির্ভর করে ফেলেছে। এর ফলে একটি বড় অংশের নিয়ন্ত্রন ইন্টারনেট সার্ভিস, প্রোভাইডার বা আইএসপি দের হাতে চলে যাচ্ছে। একদম সহজ ভাষায় বলতে গেলে নেটওয়ার্ক বা নেটওয়ার্কিং এর, অস্তিত্ব সেখানে রয়েছে। যেখানে একাধিক কম্পিউটার একে অপরের সাথে কানেক্টেড হয়ে, ডাটা এবং হার্ডওয়্যার রিসোর্স শেয়ার করে। সিঙ্গেল কম্পিউটার মেশিনটি এমনেই, অনেক পাওয়ারফুল একটা ডিভাইস। কিন্তু এর সাথে আরো কম্পিউটার বা যত্রানুসঙ্গ, যোগ করার মাধ্যমে ।
আপনার মেশিনটির সাহায্য, আরো বেশি কিছু করা সম্ভব। মানুষের চাহিদা অনুসারে কম্পিউটার কে আমরা, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কাজে লাগিয়ে থাকি। তাছাড়া আপনি যে এখন লিখাটা পড়ছেন এটাও কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এর অবদান।
নেটওয়ার্ক কি এবং কত প্রকার
হাজার হাজার কম্পিউটার ডিভাইস পরস্পরে সঁযুক্ত থাকলে, সেটাকেও নেটওয়ার্ক বলা হয়। পৃথিবীর সবচাইতে বড় নেটওয়ার্ক বলা হয়, ইন্টারনেটকে।
Wifi দিয়ে ইন্টারনেট চালানো, ব্লু টুথ এর মাধ্যেমে ছবি বা গান নেয়া, অথবা কম্পিউটারে কোন ছবি যদি পাঠানো হয়। তাহলে এসব কিন্ত আমরা মোবাইল নেটওয়ার্ক, এর মাধ্যেমে করে থাকি। বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার নেটওয়ার্ক এর নাম হচ্ছে “ অরপানেট” ১৯৬০ সালে তৈরী করা হয়েছিল নেটওয়ার্কটি। ১৯৬৯ সালের ২৯শে অক্টোবর দুটি কম্পিউটার একসাথে জোড়া লাগিয়ে, প্রথম তথ্যের আদান – প্রদান করা হয় এই । নেটওয়ার্ক কে ৪ ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
যেমন :-
১. প্যান (পার্সোনাল এরিয়া নেটওয়ার্ক )
২. ল্যান ( লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক )
৩. ম্যান (মেট্রো পলিটন নেটওয়ার্ক )
৪. ওয়্যান(ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক)
নেটওয়ার্ক এর জন্য কার্যকর কৌশলগুলো কি কি
একটি পেশাদার নেটওয়ার্ক হল, সংযোগ বা সম্পর্কের একটি গোষ্ঠি।
যা একজন ব্যাক্তি ক্যারিয়ার বিকাশ এবং অগ্ৰগতির জন্যে তৈরী করে, এবং বজায় রাখে। এটি এমন একদল লোক, যারা একই ধরনের আগ্ৰহ, দক্ষতা,লক্ষ্য ভাগ করে নেয়। ও সহায়তা পরামর্শ, সুযোগ প্রদান করতে পারে। একটি পেশাদার নেটওয়ার্ক থাকা বিভিন্ন কারণে গুরূত্বপূর্ণ হতে পারে।
যেমন :-
১. কাজের সুযোগ।
২. পেশা পরামর্শ ।
৩. সহযোগিতা এবং অংশীদারিত্ব।
৪. মেন্টরিং।
৫. শিল্প অন্তরদৃষ্টি ও
৬. ব্যাক্তিগত উন্নয়ন।
1. কাজের সুযোগ
আপনার পেশাদার নেটওয়ার্ক সার্বজনিনভাবে, বিজ্ঞাপন দেওয়ার আগে চাকরি খোলার বিষয়ে জানতে সাহায্য করতে পারে। তারা আপনাকে পদের জন্য সুপারিশ করতে, বা নিয়োগকারী পরিচালকদের সাথে, পরিচয় করিয়ে দিতে সক্ষম হতে পারে।
2. পেশা পরামর্শ
আমাদের নেটওয়ার্ক আমাদেরকে কর্মজীবনের পথের দিক নির্দেশনা, এবং পরামর্শ প্রদান করতে পারে। যেমন কোনো দক্ষতা বিকাশ করা। বেতন নিয়ে আলোচনা করা, এবং কিভাবে আপনার ক্ষেত্রে অগ্রসর হতে হবে।
3. সহযোগিতা এবং অংশীদারিত্ব
নেটওয়ার্ক আমাদের প্রকল্প বা উদ্যোগে, সহায়তা করার সুযোগ প্রদান করতে পারে। এই সম্পর্কগুলি নিজেদেরকে নতুন সংস্থান,দক্ষতা ও ধারনাগুলোতে এক্সেস প্রদান করে। ব্যাবসা ও ক্যারিয়ার বাড়াতে সহায়তা করতে পারে।
3. মেন্টরিং
আমাদের নেটওয়ার্ক আমাদেরকে পরামর্শ ও সহায়তা, প্রদান করতে পারে। এবং যারা পরামর্শ দিবেন তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতার, ভিত্তিতে প্রতিক্রিয়া, নির্দেশিকা ও পরামর্শ দিতে পারেন।
4. শিল্প অন্তরদৃষ্টি
আপনার ক্যারিয়ার সম্পর্কে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে, ও নতুন সুযোগগুলো বাছাই করতে সহায়তা করতে পারে। আপনার নাটওয়ার্ক আপনাকে শিল্প প্রবণতা, খবর, আর উন্নয়ন সম্পর্কে আপ টু ডেট থাকতে সাহায্য করে।
5. ব্যাক্তিগত উন্নয়ন
অবশেষে একটি পেশাদার নেটওয়ার্ক থাকার কারণে, উপকারী হতে পারে ব্যাক্তিগত উন্নয়ন। এবং অন্যান্য পেশাদার ব্যাক্তিদের সাথে কর্ম সংযোগ স্থাপন করে, তাঁদের অভিজ্ঞতা থেকে কিছু শিক্ষার মাধ্যমে, আপনি নতুন দক্ষতা বিকাশ করতে পারেন। আত্মবিশ্বাস অর্জন করা, ও একজন ভালো বৃত্তাকার হয়ে উঠা যাই।
যোগাযোগ ক্ষেত্রে নেটওয়ার্কিং এর গুরূত্ব
তথ্য ও মনের ভাব আদান -প্রদানের উপায়ই হলো, যোগাযোগ যা আমাদের ব্যাক্তিগত জীবনে বা পেশাগত জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নেটওয়ার্কিং, কোলাবরেশন ও যোগাযোগ নতুন চিন্তা, নতুন কর্মপন্থা ও নতুন সুযোগ তৈরী করে। জীবনের নানা প্রয়োজনীয় কাজের সঙ্গে সঙ্গে, ধীরে ধীরে আমাদের অনেক মানুষের সাথে মিশতে হবে। তাই যোগাযোগের নেটওয়ার্কিং তৈরীতে, আমরা যেসব পদক্ষেপ নিতে পারি। সপ্তাহে না হয় মাসে একবার, পুরনো বন্ধুদের খোজ -খবর নিতে পারি। ক্যারিয়া নেটওয়ার্কিং এর রিলেটেড সভা-সমিতিগুলোতে, অংশ নিতে পারি। এবং তার সাথে নতুন নতুন বন্ধু তৈরী ক্যতে পারি। এবং সর্বোপরি লিংকড ইন ও ফেসবুক সহ বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় থাকতে পারি। যোগাযোগ নেটওয়ার্ক হলো সাধারণত বলা হয় দুটি।
*** ডাক যোগাযোগ ব্যবস্থা ও
***মোবাইল এস এম এস এর মাধ্যমে
যোগাযোগ।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে সামাজিক নেটওয়ার্ক বলতে, সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটকে বুঝায়। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তিতে যে নেটওয়ার্ক এর, জন্ম হয়েছে। সেটিও আমাদের জীবনে একটি নতুন মাত্রা যোগ করে দিয়েছে। আমরা আগে যে কাজগুলো, কোন কিছুর সাহায্য ছাড়াই করতাম। আজ সেই একই কাজ আমরা নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে, অন্যভাবে করতে শিখেছি।
যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে শুধু আমরা একে অপরের সাথে, কথাই বলতে পারিনা। বরং অনেক কিছু শেয়ার ক্যতে পারি। কিছু বছর আগ পর্যন্ত দুরে থাকা কারও সাথে, সহজে কিছু শেয়ার করা যেতনা। কিন্ত আজ একে অপরের সাথে শুধু কথাইনা, বরং ছবি, ভিডিও অনেক কিছু শেয়ার করা যায়। এবং তা শুধু নিজেদের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকেনা। ছড়িয়ে দেওয়া যায় পুরো বিশ্বের মাঝে। এখন কম্পিউটারে আঙুলের টোকায় নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে, যে কেউ ডেটাবেসে, তথ্য রাখতে পারে। প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারে।
আন্তর্জাতিক লেনদেনে নেটওয়ার্ক এর ব্যবহার
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক লেনদেনে বিকল্প নেটওয়ার্ক, ব্যবহারের সুযোগ আইনে যুক্ত করার জন্যে। বানিজ্য মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে, ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। ডলারের পাশাপাশি, যাতে অন্য দেশের মুদ্রা ব্যবহার করে, আন্তর্জাতিক লেনদেন করা যায় সে বিষয়টিও বলা হয়েছে এই প্রস্তাবটিতে। এখন আন্তরর্জাতিক লেনদেন হয়, সুইফট এর মাধ্যমে। এর মাধ্যমে সরাসরি লেনদেন করা যায়না। আন্তর্জাতিক লেনদেনে বিকল্প নেটওয়ার্ক ব্যবহারে সুযোগ করার জন্য (কারেন্সী সোয়াপ) পদ্ধতিতে, রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেনের সুযোগ স্থাপন করার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সুইফট এর বিকল্প হিসেবে রাশিয়ান (এসপিএফএস ) নেটওয়ার্কের মাধ্যমে, আর্থিক লেনদেনে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে, আরো সতর্কতার প্রয়োজন রয়েছে।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায়, নেটওয়ার্ক এর কার্যকারিতা আমাদের জীবনে অপরিহার্য। সামাজিক ক্ষেত্রে, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, দৈনন্দিন জীবনে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এমনকি আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে নেটওয়ার্কিং কার্যকর ভূমিকা পালন করে। নেটওয়ার্কিং এর মাধ্যমে শুধু নয় বরং নেটওয়ার্ককে ঘিরেই চলছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এক কথায় বলতে গেলে, বর্তমানে নেটওয়ার্ক ছাড়া মানুষের জীবন ভাবাই যায়না।
বর্তমান বিশ্বের প্রতিটা ক্ষেত্রই কোন না কোন ভাবে ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত। বর্তমানে নেটওয়ার্ক ছাড়া মানুষের জীবন কল্পনাই করা যায় না। ইন্টারনেট এবং মানুষের জীবনযাত্রা যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ধন্যবাদ লেখককে নেটওয়ার্ক সম্পর্কে এত সুন্দর তথ্য দেয়ার জন্য।