প্রোগ্রামিং শিখতে কি কি লাগে: সহজভাবে বিস্তারিত আলোচনা

Spread the love

প্রোগ্রামিং শিখতে হলে যেগুলো জানা দরকার

বর্তমান ডিজিটাল যুগে প্রোগ্রামিং বা কোড শেখা শুধু একটি দক্ষতা নয়, বরং এটি ভবিষ্যতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠি। আপনি যদি কখনও ভেবে থাকেন, “এই অ্যাপটা কিভাবে বানানো হয়?” কিংবা “আমি নিজেই একটা ওয়েবসাইট বানাতে পারি কি না?” — তাহলে প্রোগ্রামিং শেখার আগ্রহ আপনার ভেতরে ইতিমধ্যেই জেগে উঠেছে। তবে অনেকেই মনে করেন প্রোগ্রামিং শিখতে হলে হয়তো খুব জটিল কিছু লাগে, বা এটি শুধুই আইটি ছাত্রদের কাজ। এই ধারণা কিন্তু একেবারেই ভুল।


প্রোগ্রামিং শিখতে চাইলে আপনাকে সবার আগে জানতে হবে কী কী প্রয়োজন, কীভাবে সহজে শুরু করবেন, এবং কোন পথে এগোলে শেখার গতি বাড়বে। এই লেখায় আমরা খুব সাধারণ ভাষায়, ধাপে ধাপে ব্যাখ্যা করেছি — একজন একেবারে নতুন শিক্ষার্থী কীভাবে ঘরে বসেই প্রোগ্রামিং শিখতে পারে। মনোযোগ, আগ্রহ, ধৈর্য এবং নিয়মিত প্র্যাকটিসই হতে পারে আপনার সফলতার মূল চাবিকাঠি। তাহলে চলুন শুরু করি, সহজভাবে জেনে নিই: প্রোগ্রামিং শিখতে আসলে কী কী লাগে?

১. কৌতূহল আর শেখার আগ্রহ

প্রোগ্রামিং শেখার জন্য সবচেয়ে প্রথম যেটা দরকার, সেটা হলো শেখার আগ্রহ। আপনি যদি সত্যিই জানতে চান, “এই সফটওয়্যারটা কীভাবে কাজ করে?” বা “এই অ্যাপটি আমি কীভাবে নিজেই বানাতে পারি?” — তাহলেই আপনি প্রোগ্রামিং শেখার উপযুক্ত। যে কেউই শুরুতে কিছু না বুঝলেও আগ্রহ থাকলে সব শিখে নেওয়া যায়।

শুধু বই মুখস্থ করলেই প্রোগ্রামিং শেখা যায় না। মন থেকে জানতে চাইলে, গুগলে সার্চ করে, ভিডিও দেখে, নিজে চেষ্টা করে শেখা যায়। আগ্রহ না থাকলে প্রোগ্রামিংয়ের কোড গুলো দেখতে বিরক্ত লাগবে। তাই যদি কৌতূহল থাকে, তাহলেই আপনি শিখতে পারবেন।

২. একটি কম্পিউটার বা স্মার্টফোন

প্রোগ্রামিং শেখার জন্য একটা কম্পিউটার থাকা সবচেয়ে ভালো। কারণ কম্পিউটারে কোড লেখা, প্রোগ্রাম রান করানো, এবং সফটওয়্যার তৈরি করা সহজ। তবে শুরুতে যদি কম্পিউটার না থাকে, তাহলে মোবাইল দিয়েও শেখা শুরু করা যায়।

অনেক ফ্রি অ্যাপস আছে, যেমন Sololearn, Programming Hero — যেগুলো মোবাইলেই কোড শেখায়। যখন প্রোগ্রামিং ভালো লাগা শুরু হবে, তখন একটা কম্পিউটার কিনে নিলে শেখা আরও সহজ হয়ে যাবে। শুরুতে যেটা আছে সেটাই যথেষ্ট।

৩. ইন্টারনেট সংযোগ

ইন্টারনেট ছাড়া প্রোগ্রামিং শেখা কঠিন। কারণ অনেক কোর্স, ভিডিও টিউটোরিয়াল, আর্টিকেল সবই অনলাইনে পাওয়া যায়। Stack Overflow, W3Schools, GeeksforGeeks — এগুলো দারুণ সব সাইট যেগুলো প্রোগ্রামাররা প্রতিদিন ব্যবহার করে।

ইউটিউবে হাজার হাজার ভিডিও আছে যেগুলো একেবারে নতুনদের জন্য বানানো হয়েছে। আপনি যদি ইংরেজি বুঝতে পারেন, তাহলে আরও অনেক রিসোর্স খুঁজে পাবেন। তবে বাংলাতেও এখন অনেক ভালো কোর্স আছে। সঠিকভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারলে শেখার গতি বেড়ে যাবে।

৪. একটি প্রোগ্রামিং ভাষা বেছে নেওয়া

প্রোগ্রামিং শেখার জন্য প্রথমেই একটা ভাষা বেছে নেওয়া দরকার। C, C++, Python, JavaScript — অনেক রকমের ভাষা আছে। নতুনদের জন্য Python সবচেয়ে সহজ, কারণ এর সিনট্যাক্স অনেকটা ইংরেজির মতো। তাই সহজে পড়া ও বোঝা যায়।

যারা ওয়েবসাইট বানাতে চায়, তাদের জন্য HTML, CSS, JavaScript শেখা ভালো। আবার যারা গেম বা অ্যাপ বানাতে চায়, তাদের জন্য C# বা Java ভালো। তবে শুরুতে একটিই ভাষা বেছে নিয়ে ভালোভাবে শেখা উচিত।

৫. টাইপিং দক্ষতা

প্রোগ্রামিং মানে অনেক কোড লেখা। তাই টাইপিং যদি ধীরে হয়, তাহলে শেখা কিছুটা কষ্টকর হয়। টাইপিং খুব দ্রুত হওয়া জরুরি না, কিন্তু আপনার হাত যেন কীবোর্ডে অভ্যস্ত হয় — এটা দরকার।

অনলাইনে অনেক টাইপিং প্র্যাকটিস করার ওয়েবসাইট আছে, যেমন 10fastfingers.com। আপনি প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট টাইপিং অনুশীলন করলে দ্রুত টাইপ করতে শিখে যাবেন। এতে কোড লেখা সহজ হবে।

৬. একটি ভালো কোর্স বা গাইডলাইন

যেখানে যেমন গাইড থাকে, শিখে ফেলা ততটাই সহজ হয়। একজন নতুন প্রোগ্রামারের জন্য ভালো গাইডলাইন থাকা খুব জরুরি। ফ্রি কোর্স যেমন Programming Hero, Anisul Islam YouTube channel ইত্যাদি চমৎকার অপশন।

আপনি চাইলে udemy, coursera বা edX থেকেও কোর্স করতে পারেন। তবে যেটা-ই করেন, মনোযোগ দিয়ে করবেন। একটা কোর্স শুরু করে মাঝপথে অন্যটায় চলে গেলে কিছুই ভালো করে শেখা হবে না।

৭. ধৈর্য ও মনোযোগ

প্রোগ্রামিং শেখা মানে প্রতিদিন কিছু না কিছু ভুল করা। কোড ভুল হবে, ফলাফল আসবে না, কিন্তু চেষ্টা করতে হবে। ধৈর্য না থাকলে অনেকেই মাঝপথে হাল ছেড়ে দেয়। এটা একদমই উচিত না।

প্রথম এক মাসে আপনি বেশি কিছু বুঝবেন না, কিন্তু তিন মাস পর নিজেই অবাক হবেন কত কিছু শিখে ফেলেছেন। ধৈর্য রেখে মনোযোগ দিয়ে কাজ করলে সফলতা নিশ্চিত। ভুল করা মানেই শেখা শুরু।

৮. প্র্যাকটিস, প্র্যাকটিস এবং প্র্যাকটিস

প্রোগ্রামিং কেবল পড়ে শেখা যায় না, কোড লিখে প্র্যাকটিস করতে হয়। যত বেশি কোড লিখবেন, তত ভালো শিখবেন। প্রথমে ছোট ছোট সমস্যা সমাধান করা শুরু করুন।

Codeforces, HackerRank, Leetcode — এসব সাইটে প্র্যাকটিস করলে দক্ষতা অনেক বাড়বে। দৈনিক একটি করে সমস্যা সমাধান করার লক্ষ্য রাখুন। এক বছর পর আপনি নিজেই বুঝবেন আপনি কতদূর এগিয়ে গেছেন।

৯. গিটহাব (GitHub) এবং প্রজেক্ট

যখন কিছুটা শিখে ফেলবেন, তখন নিজের প্রজেক্ট বানানো শুরু করুন। এটি হতে পারে একটি ছোট ক্যালকুলেটর, একটি ওয়েবসাইট, বা একটি গেম। এরপর সেগুলো GitHub-এ আপলোড করুন। GitHub হলো প্রোগ্রামারদের ফেসবুকের মতো।

এখানে নিজের কোড সংরক্ষণ করা যায় এবং অন্যের কোডও দেখা যায়। চাকরি পেতে গেলে GitHub প্রোফাইল অনেক কাজে আসে। তাই শেখার শুরু থেকেই নিজের প্রজেক্ট বানানো শুরু করুন।

১০. কমিউনিটি ও বন্ধুদের সাহায্য

প্রোগ্রামিং শেখা একা একা কঠিন হতে পারে। তাই একটি কমিউনিটির অংশ হওয়া ভালো। ফেসবুকে প্রোগ্রামিং গ্রুপ আছে, যেমন: Programming Hero Community, CSE Students of Bangladesh ইত্যাদি।

আপনার প্রশ্ন করলে অনেকেই সাহায্য করবে। আবার আপনি অন্যদেরও সাহায্য করতে পারেন। এতে আপনার শেখাও মজবুত হবে। শেখার সময় সমস্যা হলে কাউকে জিজ্ঞাসা করতে দ্বিধা করবেন না। একসাথে শিখলে পথটা সহজ হয়।

উপসংহার

প্রোগ্রামিং শেখার জন্য বিশেষ কিছু লাগে না, লাগে মনোযোগ, ধৈর্য, আর চেষ্টা। আপনার যদি একটি মোবাইল আর ইন্টারনেট থাকে, তাহলে আপনি আজ থেকেই শেখা শুরু করতে পারেন। এই লেখাটি যদি আপনার কাজে আসে, তবে সেটাই আমাদের সবচেয়ে বড় পুরস্কার। প্রোগ্রামিং শেখা শুরু করুন আজই!

Leave a Comment

You cannot copy content of this page