বাংলাদেশ রেলওয়ে টিকিট ফেরত দেওয়ার নিয়ম

Spread the love

বাংলাদেশে ট্রেনের টিকিট কেনার পর নানা কারণে যাত্রা বাতিল হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই জানতে চান, কীভাবে টিকিট ফেরত দিলে টাকা ফেরত পাওয়া যাবে।

 বাংলাদেশ রেলওয়ে অনলাইনে টিকিট বিক্রির পাশাপাশি রিফান্ড সুবিধাও প্রদান করে। যাত্রীরা সহজেই রেল সেবা অ্যাপ বা রেলওয়ের ওয়েবসাইট থেকে টিকিট ফেরত দিতে পারেন।

টিকিট ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া

প্রথমে, যেই অ্যাকাউন্ট দিয়ে টিকিট ক্রয় করা হয়েছে, সেটিতে লগ ইন করতে হবে। অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করার পর “purchase history ” নামে একটি অপশন থাকবে, যেখানে ক্রেতার টিকিট ক্রয়ের তথ্য দেখা যাবে। 

টিকিট বাতিলের জন্য ঐ তালিকার ডান পাশে একটি ‘ক্যান্সেল’ বাটন থাকবে। এই বাটনে ক্লিক করলে টিকিট ফেরতের প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং কত টাকা ফেরত পাওয়া যাবে তাও জানা যাবে।

টিকিট ফেরত দেওয়ার আবেদন করলে, পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে টাকা ফেরত দেওয়া হবে, যা সর্বোচ্চ ৮ কার্যদিবসের মধ্যে ক্রেতার কাছে পৌঁছে যাবে। যদি এর মধ্যে টাকা ফেরত না আসে, তাহলে [email protected] এই ঠিকানায় ই-মেইল করে অভিযোগ জানাতে হবে।

টিকিট রিফান্ডের সময়সীমা এবং সার্ভিস চার্জ

টিকিট ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট সময়সীমা এবং সার্ভিস চার্জ প্রযোজ্য হয়। যাত্রার সময়ের ওপর নির্ভর করে চার্জের হার পরিবর্তিত হয়। নিচে বিভিন্ন সময়সীমা এবং সংশ্লিষ্ট চার্জের বিবরণ দেওয়া হলো:

  1. ৪৮ ঘণ্টার বেশি আগে টিকিট ফেরত: এই সময়ে টিকিট ফেরত দিলে, এসি ক্লাসের জন্য ৪০ টাকা, প্রথম শ্রেণির জন্য ৩০ টাকা এবং অন্যান্য শ্রেণির জন্য ২৫ টাকা সার্ভিস চার্জ কেটে রাখা হবে।
  2. ৪৮ ঘণ্টার কম এবং ২৪ ঘণ্টার বেশি আগে টিকিট ফেরত: এই ক্ষেত্রে মোট টিকিটের ভাড়ার ২৫ শতাংশ কেটে নেওয়া হবে।
  3. ২৪ ঘণ্টার কম এবং ১২ ঘণ্টার বেশি আগে টিকিট ফেরত: এই সময়ে টিকিট ফেরত দিলে ভাড়ার ৫০ শতাংশ কেটে নেওয়া হবে।
  4. ১২ ঘণ্টার কম এবং ৬ ঘণ্টার বেশি আগে টিকিট ফেরত: এই ক্ষেত্রে ভাড়ার ৭৫ শতাংশ কেটে রাখা হবে।
  5. ৬ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে টিকিট ফেরত: এই সময়ে টিকিট ফেরত দিলে কোন টাকা ফেরত দেওয়া হবে না।

এছাড়া, অনলাইন ক্রয়ের ক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জ অ-ফেরতযোগ্য থাকে। তাই, টিকিট কেনার পর যথাসময়ে বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে যাতে আর্থিক ক্ষতি কমানো যায়।

অনলাইনে টিকিট ফেরত দেওয়ার ধাপসমূহ

অনলাইনে টিকিট ফেরত দেওয়া এখন খুব সহজ। যাত্রীরা নিজস্ব আইডি ব্যবহার করে রেলওয়ের টিকিটিং ওয়েবসাইট বা রেল সেবা অ্যাপে লগ ইন করে টিকিট বাতিলের আবেদন করতে পারেন। নিচে অনলাইনে টিকিট ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হলো:

  1. অ্যাকাউন্টে লগ ইন করুন: প্রথমেই রেল সেবা অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে সেই অ্যাকাউন্টে লগ ইন করতে হবে যেটি দিয়ে টিকিট ক্রয় করা হয়েছে।
  2. পার্চেজ হিস্ট্রি দেখুন: লগ ইন করার পর “পার্চেজ হিস্ট্রি” অপশনে যান। এখানে আপনার ক্রয় করা সব টিকিটের তালিকা দেখতে পাবেন।
  3. ক্যান্সেল বাটনে ক্লিক করুন: যে টিকিটটি ফেরত দিতে চান, সেই টিকিটের পাশে থাকা ‘ক্যান্সেল’ বাটনে ক্লিক করুন।
  4. ফেরতযোগ্য পরিমাণ দেখুন: ক্যান্সেল বাটনে ক্লিক করলে সিস্টেমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ফেরতযোগ্য টাকার পরিমাণ দেখানো হবে।
  5. আবেদন নিশ্চিত করুন: ফেরতযোগ্য টাকার পরিমাণ দেখে টিকিট বাতিলের জন্য চূড়ান্ত আবেদন নিশ্চিত করুন। আবেদন সম্পন্ন হলে পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে টাকা ফেরত দেওয়া হবে।

এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনলাইনেই টিকিট ফেরত দিয়ে টাকা ফেরত পাওয়া যায়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অনলাইনে রিফান্ড প্রক্রিয়াকে সহজতর করেছে যাতে যাত্রীরা সহজেই প্রয়োজন অনুযায়ী এই সুবিধা গ্রহণ করতে পারেন।

টাকা ফেরতের সময়কাল এবং সমাধানের উপায়

টিকিট বাতিল করার পর টাকা ফেরত পেতে সাধারণত ৮ কার্যদিবস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। টাকা ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহৃত হয় এবং সেই গেটওয়ের মাধ্যমেই অর্থ ফেরত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। তবে কোনো কারণে ৮ কার্যদিবসের মধ্যে টাকা ফেরত না পাওয়া গেলে, যাত্রীরা সহজেই অভিযোগ জানাতে পারেন।

অভিযোগ জানানোর উপায়

  1. ই-মেইল করুন: যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা ফেরত না আসে, তাহলে [email protected] ঠিকানায় একটি ই-মেইল পাঠান।
  2. সমস্যার বিবরণ দিন: ই-মেইলে সমস্যার বিস্তারিত বিবরণ উল্লেখ করুন, যেমন টিকিট নম্বর, যাত্রার তারিখ, এবং টিকিট কেনার সময়ের তথ্য।
  3. সময়ের মধ্যে সমাধান পাবেন: সাধারণত ই-মেইলের জবাব ৭ কার্যদিবসের মধ্যে দেওয়া হয় এবং রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ দ্রুত সমস্যার সমাধান করতে কাজ করে।

এই ব্যবস্থাগুলি যাত্রীদের জন্য আরামদায়ক এবং সহজ করেছে যাতে তারা অনলাইনে টিকিট ফেরতের সাথে সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানে সহায়ক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন।

টিকিট ফেরতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য

অনলাইনে টিকিট ফেরতের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে রাখা প্রয়োজন, যা টিকিট রিফান্ড প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করে তোলে:

  • টিকিট ফেরত দেওয়ার নীতি পরিবর্তন হতে পারে: রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সময়ে সময়ে টিকিট ফেরতের নীতি এবং শর্তাবলি পরিবর্তন করতে পারে। তাই টিকিট ফেরতের আগে সর্বশেষ নীতিমালা সম্পর্কে জেনে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
  • সার্ভিস চার্জ অ-ফেরতযোগ্য: যেকোনো অনলাইন টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সার্ভিস চার্জ অ-ফেরতযোগ্য। এটি টিকিট ফেরতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য থাকে এবং এই অর্থ ফেরত পাওয়া যায় না।
  • যাত্রা বাতিলের কারণে বিশেষ ছাড় নেই: কোন বিশেষ কারণ বা পরিস্থিতির জন্য টিকিট ফেরতের ক্ষেত্রে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত ছাড় বা সুবিধা প্রদান করে না। তাই নিয়মিত রিফান্ড পলিসি অনুসরণ করে টিকিট ফেরত দিতে হবে।
  • যোগাযোগে স্বচ্ছতা: টাকা ফেরতের যে কোন বিষয়ে সমস্যার সম্মুখীন হলে যোগাযোগের মাধ্যম যেমন ই-মেইল ব্যবহার করুন এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও তথ্য প্রদান করতে প্রস্তুত থাকুন।

এই নির্দেশনাগুলি অনুসরণ করে যাত্রীরা রেলওয়ে টিকিট ফেরতের সময় তাদের অভিজ্ঞতা আরও সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় করতে পারবেন।

Leave a Comment

You cannot copy content of this page