অনলাইনে বিমানের টিকেট বুকিং ও কাটার নিয়ম

Spread the love

আজকের যুগে অনলাইনে বিমানের টিকেট বুকিং করা যেমন সহজ, তেমনই দ্রুততম। ঘরে বসেই বিশ্বের যেকোনো স্থানে টিকেট কাটতে পারার সুবিধা অনেকের জীবন সহজ করেছে। বিশেষ করে যারা প্রথমবার অনলাইনে টিকেট কাটতে চান, তাদের জন্য ধাপে ধাপে সঠিক নির্দেশনা জানা খুবই জরুরি। 

এই গাইডে , আমরা কিভাবে অনলাইনে টিকেট বুকিং করতে হয়, এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব যাতে আপনিও সহজেই এটি করতে পারেন।

অনলাইনে টিকেট বুকিংয়ের  কি কি সুবিধা রয়েছে ?

অনলাইনে টিকেট বুকিং এর সুবিধা অনেক। কয়েকটি প্রধান সুবিধা হলো:

  1. সময় বাঁচায়: আগে যেখানে আপনাকে সরাসরি এজেন্সি বা এয়ারলাইন্স অফিসে যেতে হতো, অনলাইনে বুকিং করার মাধ্যমে এই সময়টি বাঁচানো যায়।
  2. অবস্থান ও সময়ের স্বাধীনতা: আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই বুকিং করা সম্ভব।
  3. মূল্য তুলনা করা যায়: বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের অফার এবং ডিসকাউন্ট দেখে তুলনা করে সেরা টিকেটটি কেনা সম্ভব।

বুকিংয়ের জন্য কি কি দরকার?

বিমানের টিকেট অনলাইনে বুকিং করার জন্য কয়েকটি মূল জিনিসের প্রয়োজন হয়:

  • একটি স্মার্টফোন বা কম্পিউটার: ইন্টারনেটে সংযুক্ত ডিভাইসের মাধ্যমে বুকিং করতে হয়।
  • ইন্টারনেট সংযোগ: অনলাইনে বুকিংয়ের জন্য ইন্টারনেট অপরিহার্য।
  • পর্যাপ্ত তথ্য: যেমন আপনার গন্তব্যস্থল, যাত্রার তারিখ, এবং যাত্রীর নাম ইত্যাদি।
  • একটি বৈধ পেমেন্ট অপশন: ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড, বা অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম (যেমন বিকাশ, নগদ ইত্যাদি) প্রয়োজন হতে পারে।

২: অনলাইনে আপনি কিভাবে  বিমানের টিকেট বুকিং করবেন তার ধাপ 

অনলাইনে টিকেট বুকিং করার জন্য ধাপে ধাপে কিছু প্রসেস অনুসরণ করতে হয়। নিচে প্রতিটি ধাপকে সহজভাবে ব্যাখ্যা করা হলো:

ধাপ ১: বুকিং প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন করা

প্রথমেই একটি বিশ্বাসযোগ্য এবং জনপ্রিয় বুকিং প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন করুন। এয়ারলাইন্সের নিজস্ব ওয়েবসাইট বা বিশ্বস্ত তৃতীয় পক্ষের বুকিং সাইট (যেমন Skyscanner, Expedia, বা Goibibo) হতে পারে। এভাবে সঠিক প্ল্যাটফর্ম বাছাই করলে আপনি নিরাপদে টিকেট বুক করতে পারবেন।

ধাপ ২: গন্তব্য এবং যাত্রার তারিখ নির্ধারণ করা

ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনি কোথায় যেতে চান এবং যাত্রার তারিখটি নির্ধারণ করুন। এ সময় অন্যান্য বিকল্পও বেছে নেওয়া যেতে পারে যেমন:

  • ওয়ান ওয়ে বা রিটার্ন টিকেট: একমুখী অথবা যাওয়া-আসার টিকেট বেছে নিন।
  • কতজন যাত্রী যাচ্ছেন: শিশুসহ মোট যাত্রীর সংখ্যা উল্লেখ করুন।

ধাপ ৩: ফ্লাইটের মূল্য তুলনা করা

একাধিক ফ্লাইটের সময়সূচি এবং মূল্য তালিকা দেখে নিন। বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের মধ্যে তুলনা করে আপনি সবচেয়ে সাশ্রয়ী টিকেটটি খুঁজে পেতে পারেন। অনেক সময় কিছু এয়ারলাইন্স ছাড় এবং ডিসকাউন্ট দেয়, যা দেখে উপযুক্ত টিকেট বাছাই করা যেতে পারে।

এই ধাপে আপনি কীভাবে বুকিং প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন, সেটি নিয়ে আলোচনা করা হলো। পরবর্তী খণ্ডে আমরা দেখব, কীভাবে টিকেট বুকিংয়ের চূড়ান্ত ধাপগুলি সম্পন্ন করা যায়।

৩: টিকেটের বিবরণ এবং যাত্রীর তথ্য প্রদান

এখন আপনি ফ্লাইট নির্বাচন করে পরবর্তী ধাপে যাবেন, যেখানে আপনার এবং অন্যান্য যাত্রীর ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ করতে হবে। এই ধাপে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রয়োজন হয়:

যাত্রীর ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ করা

প্রতিটি যাত্রীর নাম, জন্ম তারিখ, পাসপোর্ট নম্বর (আন্তর্জাতিক যাত্রার ক্ষেত্রে), এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করতে হবে। এসব তথ্য ভুলভাবে দিলে যাত্রার সময় সমস্যা হতে পারে।

যোগাযোগের ঠিকানা এবং ফোন নম্বর

আপনার যোগাযোগের ঠিকানা, ফোন নম্বর, এবং ইমেইল ঠিকানা সঠিকভাবে প্রদান করুন। ইমেইলের মাধ্যমে আপনাকে টিকেট এবং যাত্রা সম্পর্কিত অন্যান্য তথ্য পাঠানো হবে, তাই এটি সঠিকভাবে দেওয়া জরুরি।

আসন নির্বাচন (যদি প্রযোজ্য)

অনেক এয়ারলাইন্স আসন নির্বাচন করার সুযোগ দেয়, যা আপনি বুকিংয়ের সময়ে করতে পারেন। এয়ারক্রাফটের আসন মানচিত্রে গিয়ে জানালার পাশে অথবা করিডরের আসন বেছে নেওয়ার সুযোগ পাবেন। এই  জন্য প্রয়োজনীয় হলেও, অনেক ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট আসনের জন্য অতিরিক্ত ফি প্রযোজ্য হয়।

৪: পেমেন্ট প্রক্রিয়া

এখন পেমেন্টের মাধ্যমে আপনার টিকেট নিশ্চিত করার সময়। এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইট বা বুকিং প্ল্যাটফর্মটি সাধারণত বিভিন্ন পেমেন্ট অপশন সরবরাহ করে, যা নিরাপদে সম্পন্ন করা যায়। এখানে পেমেন্ট প্রক্রিয়ার বিস্তারিত ধাপ দেওয়া হলো:

পেমেন্ট অপশন নির্বাচন করা

অনলাইনে টিকেট কাটার জন্য নানা ধরণের পেমেন্ট অপশন উপলব্ধ থাকে:

  • ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড: অধিকাংশ বুকিং প্ল্যাটফর্ম ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড গ্রহণ করে।
  • মোবাইল ব্যাংকিং: বিকাশ, নগদ, রকেট ইত্যাদি মোবাইল ব্যাংকিং অপশন ব্যবহার করে সহজেই পেমেন্ট করা যায়।
  • ইন্টারনেট ব্যাংকিং: কিছু এয়ারলাইন্স এবং বুকিং প্ল্যাটফর্ম ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও পেমেন্ট গ্রহণ করে।

পেমেন্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা

পেমেন্ট অপশন নির্বাচন করার পর, সঠিকভাবে তথ্য প্রদান করুন। কার্ডের তথ্য বা ব্যাংকিং ডিটেইলস সঠিকভাবে প্রদান করা হলে পেমেন্ট দ্রুত সম্পন্ন হবে। পেমেন্ট সফল হলে সাইটে একটি কনফার্মেশন মেসেজ দেখানো হবে এবং আপনার ইমেইলে টিকেটের একটি ইলেকট্রনিক কপি পাঠানো হবে।

এই অংশে আমরা কিভাবে টিকেটের পেমেন্ট প্রসেস সম্পন্ন করতে হয় তা আলোচনা করেছি। সবকিছু ঠিক থাকলে, পরবর্তী খণ্ডে আমরা টিকেট ডাউনলোড এবং যাত্রার প্রস্তুতি সম্পর্কে আলোচনা করব।

৫: কিভাবে টিকেট ডাউনলোড ও যাত্রার প্রস্তুতি নিবেন

পেমেন্ট সফলভাবে সম্পন্ন করার পর, আপনার টিকেট নিশ্চিত হয়ে যাবে এবং এটি ইলেকট্রনিক ফর্ম্যাটে ডাউনলোড করা যাবে। এই ধাপটি শেষ করার জন্য নিচের নির্দেশনা অনুসরণ করুন:

টিকেট ডাউনলোড এবং প্রিন্ট করা

অনেক এয়ারলাইন্স পেমেন্টের পরপরই টিকেটটি ইমেইল করে পাঠায়। আপনি আপনার ইমেইল চেক করে টিকেটটি ডাউনলোড করতে পারেন। এটি আপনার ফোনে সেভ করা যায় বা প্রয়োজন হলে প্রিন্ট করে সঙ্গে রাখতে পারেন। প্রিন্ট কপি থাকলে এয়ারপোর্টে প্রবেশ এবং বোর্ডিং সুবিধাজনক হয়।

যাত্রার আগে প্রস্তুতি

টিকেট নিশ্চিত হওয়ার পর যাত্রার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তুতি নেয়া উচিত:

  • গন্তব্যস্থলের আবহাওয়া এবং স্থানীয় সময় সম্পর্কে ধারণা রাখা: বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে গন্তব্যস্থলের আবহাওয়া সম্পর্কে জানা খুবই দরকারি।
  • বিমানবন্দরে আসার সময় নির্ধারণ: অন্তত ২-৩ ঘণ্টা আগে এয়ারপোর্টে পৌঁছানো নিরাপদ, কারণ সিকিউরিটি চেক এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতায় সময় লাগতে পারে।
  • প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস: পাসপোর্ট, টিকেট, আইডি কার্ড, এবং ভিসা (যদি প্রয়োজন হয়) সঙ্গে রাখুন।

এই ছিল অনলাইনে বিমানের টিকেট বুকিং এবং যাত্রার প্রস্তুতি সম্পর্কিত সম্পূর্ণ নির্দেশনা।

জনপ্রিয় এয়ারলাইন্স এবং তাদের টিকেট বুকিং লিংক

অনলাইনে টিকেট বুক করতে নিচের জনপ্রিয় এয়ারলাইন্সগুলোর ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে পারেন। এই এয়ারলাইন্সগুলো নির্ভরযোগ্য এবং বিভিন্ন গন্তব্যে ভ্রমণের সুবিধা প্রদান করে থাকে।

  1. বাংলাদেশ বিমানের টিকেট
    • Biman Bangladesh Airlines: বাংলাদেশ বিমানের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, যেখান থেকে আপনি সহজেই দেশি ও আন্তর্জাতিক গন্তব্যের টিকেট কাটতে পারবেন।
  2. এমিরেটস এয়ারলাইন্স
    • Emirates Airlines: এমিরেটসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন গন্তব্যের টিকেট বুক করা যায়।
  3. কাতার এয়ারওয়েজ
    • Qatar Airways: কাতার এয়ারওয়েজ আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের জন্য একটি জনপ্রিয় এয়ারলাইন্স, যেখানে অনলাইনে বুকিং এর সুবিধা রয়েছে।
  4. সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স
    • Singapore Airlines: সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকার বিভিন্ন গন্তব্যে ভ্রমণের টিকেট অনলাইনে কাটা যায়।
  5. থাই এয়ারওয়েজ
    • Thai Airways: থাই এয়ারওয়েজের ওয়েবসাইট থেকে আপনি দক্ষিণ এশিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন রুটের টিকেট সহজেই বুক করতে পারবেন।
  6. ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স
    • US-Bangla Airlines: বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক রুটে ভ্রমণের জন্য ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স জনপ্রিয় একটি বিকল্প।
  7. মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স
    • Malaysia Airlines: মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং অন্যান্য অঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যের টিকেট বুক করার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম।

এই এয়ারলাইন্সগুলোর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে সরাসরি টিকেট বুক করতে পারেন এবং গন্তব্য অনুযায়ী তুলনামূলক দাম দেখে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

Leave a Comment

You cannot copy content of this page