বর্তমান বিশ্বে বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ আর কেড়ে নিয়েছে আবেগ-হাসি। অফিসের কাজ,পারিবারিক ঝামেলা,দুশ্চিন্তা,উদ্বেগ ইত্যাদি ইত্যাদি । তাই সময় কোথায় সঠিক বিশ্রাম,আড্ডা,খোশ গল্প কিংবা আলাপচারিতার।
এমনকি এতোটুকু সময় নেই সামান্য একটু হাসার। আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাপনের মান,পারিপার্শ্বিকতা,আর্থিক সামর্থতা,স্ট্যাটাস,বৈবাহিক অবস্থা,উপার্জন – ব্যয়ের অসমতা ইত্যাদি,নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে ব্যক্তিগতভাবে নানান মানসিক চাপের মধ্যে রাখে।
ধীরে ধীরে এই চাপ আমাদের স্বাস্থ্যের উপর, জীবনযাপনের উপর প্রভাব ফেলতে থাকে। দিন দিন আমরা মানসিক জটিলতা, পরবর্তীতে শারীরিক অসুস্থতার শিকার হই। এমনকি এই জটিলতা সামাজিক বিশৃঙ্খলার জন্ম দেয় । পরিবার ধ্বংস হয় , সামাজিক বন্ধন নষ্ট হয়।
কিভাবে মোকাবেলা করতে পারি
আমাদেরকে বর্তমান পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে যার যার নিজের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে ব্যক্তিগত চাপ গুলো সহজ ও সুন্দর উপায়ে কম করার।
চাপ থাকবেই প্রতিটি মানুষের জীবনে। শিখতে হবে কিছু ছোট ছোট পদক্ষেপ ,যেটা নিজের সঙ্গে মানানসই।
নিজেকে খুঁজে বের করতে হবে নিজের হারানো ছোট ছোট শখগুলো।
মনোযোগ দিতে হবে নিজের কি ভালো লাগে করতে সেই বিষয়গুলোর উপর।
সবার আগে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে সাহায্য চাইতে হবে। প্রতিদিনের নামাজ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপায় ব্যক্তিগত চাপগুলো মোকাবেলা করার জন্য। প্রথম থেকে নতুন ভাবে (না বুঝলেও )পবিত্র কোরআন শরীফ পড়া শুরু করা আপনার জীবনে নতুন দরজা খুলে দিবে ,শান্তি পাবেন।
ধর্ম ও বিশ্বাস এবং আত্মবিশ্বাসের উপরই মানুষের মনোবল বাড়ে।
সবকিছুর প্রথম ধাপটিতে পা আপনাকেই দিতে হবে। একটু নিজেকে নিজে বলতে হবে “তুমি পারবে”।
নিয়তেই বরকত। চেষ্টাটা শুধু আপনাকে করতে হবে।
“একবার না পারিলে দেখো শতবার”তেমন একটা ব্যাপার।
ছোট ছোট পদক্ষেপ কি কি
- ভোর বেলা উঠার চেষ্টা করুন। প্রকৃতি দেখুন, বুক ভরে শ্বাস নিন। তারপর সব কাজ শুরু করেন।
- বারান্দায়, ছাদে, বাগানে, ছোট লনে, উঠোনে গিয়ে একটু বসুন, হাঁটুন, ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম করুন। উৎফুল্ল লাগবে।
- প্রতিদিনের নিয়মিত কাজ গুছিয়ে এসে এক কাপ চা নিয়ে ছোট করে আজকের সারাদিনের আপনার কি কি কাজ/ইচ্ছা লিখে রাখুন। ভুল কম হবে।
- টেলিভিশন যতটা সম্ভব কম দেখার চেষ্টা করা। মনের বিশ্রাম, চোখেরও বিশ্রাম হলো।
- মোবাইলকে স্কিল শেখার টুল হিসেবে ব্যবহার করা,শুধু আনন্দের জন্য নয়।
- অতিরিক্ত পরিমাণে মোবাইল ব্রাউজিং বন্ধ করা।
- প্রতিদিন কমপক্ষে ৫-১০ মিনিট খোলা ছাদে কিংবা উঠোনে হাঁটাচলা করে বিশুদ্ধ বাতাস ও রোদ লাগাতে হবে। বিশুদ্ধ বাতাস শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজন।
- একটু রুম থেকে বেরিয়ে আধা ঘন্টা বাইরে হেঁটে আসুন। ভালো ঘুম হবে।
- নতুন কোন হাতের কাজ শিখা শুরু করা, যেটা কোনদিনই করার সাহস হয়নি যেমন:- (উলের টুপি) নিজের জন্য /সন্তানের জন্য/ ভালোবাসার মানুষের জন্য।
- youtube ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখে নানী-দাদীর আমলের ক্রুশের ছোট ছোট কাজগুলো নতুনভাবে শিখার চেষ্টা করুন। আনন্দ পাবেন।
- সেলাই মেশিন চালাতে শিখতে পারেন। সেলাই পারলে নিজের জন্য জামা বানিয়ে গায়ে দিয়ে দেখুন, পজেটিভ একটা ভাইভ পাবেন।
- ছোট ছোট গাছ লাগানো এবং প্রতিদিন নিয়মিত পরিচর্যা করা নিজের ব্যক্তিগত প্রশান্তির জন্য অনেক কার্যকর।
- বাড়িতে জায়গা থাকলে বিড়াল,মুরগি,কোয়েল পাখি এক/ দুটো করে পালন করা যেতে পারে। অনেক চাপ মুক্ত হবেন।
- রান্না করতে না জানলে লজ্জার কিছু নাই। ছোটখাটো রান্নার কোর্স করতে পারেন।
- নতুন ধরনের কিছু রেসিপি রান্নার চেষ্টা করা । প্রথমে নিজের জন্য, মন ভালো লাগলে সবার জন্য।
- বই পড়া শুরু করা। নতুন বই, পুরনো বই যেটা পছন্দ।
- বাচ্চাদের সাথে সময় কাটাতে পারেন।
- ইসলামিক বইগুলো পড়ার চেষ্টা করা। হাদীস, সাহাবিদের জীবনী, সিরাতের বই ইত্যাদি।
- নিজের ব্যক্তিগত যত্নগুলোর দিকে মনোযোগী হওয়া। যেমন:- ধোয়া, কাটা ,মেহেন্দি লাগানো।
- দাঁতের যত্নের প্রতি মনোযোগী হওয়া। বিলাসিতা নয় প্রয়োজনীয়তা।
- চোখের যত্নের প্রতি মনোযোগী হওয়া। বিলাসিতা নয় প্রয়োজনীয়তা।
- নিয়মিত গোসল করা। এতে মনের প্রফুল্লতা বজায় থাকে।
- ত্বকের ছোট ছোট যত্ন যেমন:- ফেসিয়াল করা, ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা, লিপবাম ব্যবহার করা।
- পাক পবিত্রতা তো ঈমানের অঙ্গ। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন কাপড় পড়ার চেষ্টা করা।
- প্রতিদিন একবার হলেও মনে মনে কিংবা মুচকি হাসুন আর যদি হন সাহসী তবে শব্দ করে অট্টহাসি হাসুন এবং সুস্থ থাকুন।
- পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে যা পুষ্টিকর অথচ সহজ সহজলভ্য।
- প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমের চেষ্টা করতে হবে। সঠিক পদ্ধতিতে বিশ্রাম নিতে হবে।
- রাগ প্রশমিত করার চেষ্টা করুন । কারো ওপরে কিংবা কোন ব্যাপারে অহেতুক রাগারাগি করবেন না। সবার সাথে সুন্দর ব্যবহার করুন । অপরের খারাপ ব্যবহার বা অন্যায়কে হাসিমুখে বরণ না করতে পারলেও বরং চুপচাপ থাকুন।চেঁচামেচি রাগারাগি করে নিজের শরীর খারাপ করবেন না।
- বাড়ির নিরিবিলি স্থান বেছে নিয়ে সময় কাটান। নিরব স্থানে থাকার চেষ্টা করুন। মনের উপর চাপ পড়ে এমন গোলমাল পূর্ণ স্থানে না যাওয়াই ভালো।
- মেডিটেশন করতে পারেন। মানসিক চাপ মোকাবেলায় মেডিটেশন অনেক কার্যকর।
- ডায়েরী লেখার অভ্যাস থাকলে নতুন করে শুরু করুন। ছোট ছোট অনুভুতি লিখে রাখুন।
- পত্রিকা পড়ুন।
- google অ্যাপস থেকে ল্যাংগুয়েজ অ্যাপস ডাউনলোড করে নতুন ভাষা শিখুন।
- ভ্রমণ করার সুযোগ থাকলে বেড়াতে যান। আর সুযোগ না থাকলে কাছাকাছি কোথাও একটু ঘুরে আসুন ।
- “না “বলতে শিখুন। যে কাজ করতে মন সায় দেয় না, সে কাজ লোক দেখানোর জন্য বা বাহবা পাওয়ার জন্য করবেন না । সুন্দরভাবে বুঝিয়ে “না” বলুন।
- মাদক জাতীয় কোন বস্তু গ্রহণ করবেন না।
- সৎ পথে থাকুন। ন্যায় ও সত্যের পথে জীবনকে পরিচালিত করার জন্য প্রতিটি মানুষের বিশেষ সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন।
- সৎ কাজ করুন।
- সৎ চিন্তা করুন।
- সবর ও ধৈর্য্যশীলতা অনুশীলন করুন। অনেক চাপ মুক্ত থাকবেন।
- মাফ করতে শিখুন। সবচেয়ে দামী এই গুনটির চর্চার
মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্যক্তিগত চাপ গুলো সামলানো সহজ হয়।
আল্লাহ প্রদত্ত এই জীবনটাকে অবহেলায়, অলসতায়, অসুস্থতায় অতিবাহিত না করি।
নিজের প্রতি নিজের কিছু দায়িত্ব পালন করি। সব কিছু সবার জন্য না, সব কাজ সবার জন্য নয়। আপনার জন্য যেটা জরুরী ভিত্তিতে করতে হবে সেটা করূন। শুরু টা তো শুরু করূন। দেখবেন লিষ্টের সব কাজ গুলো একদিন আপনিই গুছিয়ে করতে পেরেছেন। গল্প নয় ফ্যাক্ট।
উপসংহার
পরিশেষে বলতে চাই, সব পদক্ষেপই বৃথা হয়ে যাবে যদি আপনার নিজের প্রথম পদক্ষেপ না থাকে। নিজেকে ভালবাসতে পারা , ভালো রাখতে চাওয়া কোনো খারাপ কিছু না। বরং , আপনি ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। এতে আপনার প্রতি আপনার আত্মবিশ্বাস বাড়বে , সাথে অন্যকেও ভালো রাখতে পারবেন।
বিশ্বাস করতে শিখুন নিজের উপরে।বিশ্বাস নামক বস্তুটি আমাদের কাছে অবিশ্বাসের পাত্র হয়ে গেছে বর্তমানে। তবে জীবনের কোন ধূসর ক্ষণে যখন আমরা তৃণকে আঁকড়ে ধরে বিশাল সাগরের উর্মির মধ্যে বেঁচে থাকতে চাই, তখন মনে হয় বিশ্বাস কে বিশ্বাস করি -এর সাহায্য নিই। আমরা যেমন সব সমস্যার সমাধান পাই না, তেমনি কোন কোন অসুখের উপশমে যদি এমন ছোট ছোট কৌশল জোড়া লাগিয়ে ফল পাওয়া যায়,তাহলে পদক্ষেপ নেব না কেন?
সুতরাং, শরীর ও মনকে সুস্থ রাখতে জীবনের সব বিষয়ে কতগুলো নিয়ম মেনে চলতে হয় যা অবশ্যই পালন করা দরকার।